মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত বেশ কিছু পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত৷ ধারণা করা হচ্ছে, ভারতকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের জবাবেই পাল্টা এ পদক্ষেপ নিয়েছে মোদী সরকার৷
বিজ্ঞাপন
রোববার থেকে সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা৷ বাদাম ও আপেলসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮টি পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে হলে শুল্ক প্রদান করতে হবে৷
ভারত সরকারের এ পদক্ষেপে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য রপ্তানি খাত৷ দেশটির কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত বাদাম সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ভারতে৷ ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বাদাম আমদানি করেছিল ভারত, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী রপ্তানিকৃত মোট বাদামের অর্ধেক৷ শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত আপেলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্রেতাও ভারত৷ দেশটি ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের আপেল আমদানি করেছিল বলে জানিয়েছে অ্যামেরিকার কৃষি বিভাগ৷
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারতকে দেয়া বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা—জিএসপি প্রত্যাহার করে নেয় ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিশেষ বাণিজ্য সুবিধার সবচেয়ে বড় ভোক্তা ছিল ভারত৷ জিএসপির আওতায় দেশটি প্রতিবছর গড়ে সর্বোচ্চ পাঁচ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করেছে৷
সে হিসেবে, বাণিজ্য বিষয়ে দু'দেশের মাঝে চলমান এ অস্থিরতায় উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ এদিকে চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সেক্রেটারি মার্ক পম্পেও'র ভারত সফর করার কথা রয়েছে৷ গত সপ্তাহে এক আলোচনায় পম্পেও বলেন, ভারতের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশের বাধা দূর করতে ও চলমান বাণিজ্য অস্থিরতা নিরসনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় বসতে আগ্রহী৷
গত কয়েকবছর ধরেই ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক বাণিজ্যের আকার বাড়ছে৷ ২০১৮ সালে এ বাণিজ্যের আকার ছিল ১৪ হাজার ২শ' বিলিয়ন ডলার৷
বাণিজ্য যুদ্ধ হলে কী ক্ষতি হবে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতি রূপায়ন করতে আমদানির পথে বাধা সৃষ্টি করছেন৷ সেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্য কাঠামোর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago/Ralph Peters
বাণিজ্য যুদ্ধের অর্থ কী?
কোনো দেশ কোনো এক বা একাধিক পণ্য আমদানির উপর কর, শুল্ক বা অন্য কোনো আর্থিক বোঝা চাপালে বাকি দেশগুলিও পালটা পদক্ষেপ নিতে পারে৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকা ও চীনের মতো বিশাল দেশের সংঘাতের জের ধরে গোটা বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য যুদ্ধের আকার নিতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা মোটেই সহজ হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Peter
অতীত দৃষ্টান্ত
১৯৩০-এর দশকে শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ বা বিশাল মন্দা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুবার সে বছর শুল্ক সংক্রান্ত নতুন আইন কার্যকর করার ফলে ২০ হাজারেরও বেশি পণ্যের উপর শুল্ক চাপানো হয়েছিল৷ ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে যে, এ ক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ও দেশের জন্য শুল্ক চাপানো হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/Library of Congress
ট্রাম্প কেন বাণিজ্য যুদ্ধের পথে এগোচ্ছেন?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রতিকূল বাণিজ্য ঘাটতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তোপ দেগে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে সমালোচকদের মতে, এমন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ফলে তিনি অ্যামেরিকার সার্বিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্বার্থ দেখতে পাচ্ছেন না৷ কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কাঠামো তোলপাড় হয়ে গেলে আখেরে অ্যামেরিকারই ক্ষতি হবে৷ ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাবে, রপ্তানি কমে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
ছবি: picture-alliance/K. Ohlenschläger
পালটা পদক্ষেপ
ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করলে বাকি দেশগুলিও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না৷ ক্যানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যামেরিকার বিরুদ্ধেও পালটা পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এমন বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার চেয়ে বহুপাক্ষিক সমাধানসূত্রের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
অ্যামেরিকার ক্ষতি
সব সাবধানবাণী উপেক্ষা করে ট্রাম্প যদি সত্যি আমদানির উপর বাড়তি শুল্ক চাপান, তার পরিণতি অ্যামেরিকার জন্যও ইতিবাচক হবে না৷ যেমন, ইস্পাত আমদানির উপর শুল্ক চাপালে অ্যামেরিকার বাজারেও তার মূল্য বেড়ে যাবে৷ তার ফলে মার্কিন ইস্পাত কোম্পানিগুলির লাভ হলেও ক্রেতাদের বাড়তি মূল্য গুনতে হবে৷ যে কোম্পানিগুলি ইস্পাত ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে, তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Weihrauch
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অ্যামেরিকায় ইস্পাত রপ্তানি করতে না পারলে চীন ইউরোপের বাজারে তা আরও সস্তায় বিক্রি করার চেষ্টা করতে পারে৷ স্বাভাবিক বাণিজ্য ব্যাহত হলে এমন আরও দৃষ্টান্ত দেখা যেতে পারে৷ সামগ্রিকভাবে এমন অস্বাভাবিক প্রবণতা নানাভাবে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক নানা সংকট কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন সবে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, তখন নতুন করে এমন বিপদ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/XinHua
আইনি লড়াই
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন ডাব্লিইউটিও সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব বাণিজ্যের বিধিনিয়ম স্থির করে এসেছে এবং বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছে৷ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে মামলার সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে৷ সব পক্ষ ডাব্লিইউটিও-র রায় না মানলে এই সংগঠন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে৷ এমন কাঠামো তার কার্যকারিতা হারালে ভবিষ্যতে সেই ক্ষতি পূরণ করা সহজ হবে না৷