এই প্রথম কাশ্মীর প্রসঙ্গে মুখ খুলল চীন। ভারত জবাবে জানিয়েছে, এ বিষয়ে কথা বলার অধিকার নেই চীনের।
বিজ্ঞাপন
কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের এক বছর পূর্তির মুহূর্তে ফের বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে এশিয়ার রাজনীতিতে। এই প্রথম এ বিষয়ে মুখ খুলল চীন। জাতি সঙ্ঘে ফের বিষয়টি উত্থাপন করার চেষ্টা করল পাকিস্তান। ভারতও জবাব দিয়েছে। অন্য দিকে, সম্প্রতি লাদাখে চীনের সঙ্গে ভারতের সংঘাত নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রকের ওয়েবসাইটে 'চীনের আগ্রাসন' শীর্ষক একটি নথি ছিল। যেখানে চীন ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে বলে জানানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তা তুলে নেওয়া হয়।
২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট ভারতীয় সংসদে দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কাশ্মীর থেকে ৩৭০ এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণা করেন। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটিকে ভেঙে দিয়ে লাদাখ এবং কাশ্মীরকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়। যা নিয়ে তখনই সমালোচনা করেছিল পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিষয়টি উত্থাপন করে ভারতকে আক্রমণের চেষ্টা চালিয়েছিল। কূটনীতিবিদদের মতে, ওই সময়ে পাকিস্তানকে প্রচ্ছন্নভাবে সমর্থন করেছিল চীন। কিন্তু সরাসরি কোনও কথা বলেনি। ভারত জানিয়েছিল, বিষয়টি একান্তই অভ্যন্তরীণ। এ বিষয়ে অন্য কোনও রাষ্ট্রের কিছু বলার থাকতে পারে না।
কাশ্মীরে গুলিতে নিহত দাদা, বেঁচে গেল নাতি
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের সোপোর শহরে বুধবার সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর সৈনিকদের সাথে সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের মাঝে পড়ে যায় একটি গাড়ি৷ তাতে সেই গাড়ির একজন মারা গেলেও প্রাণে বেঁচে যায় তাঁর তিন বছরের নাতি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Mattoo
মসজিদের কাছেই মর্মান্তিক ঘটনা
সিআরপিএফ সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, স্থানীয় এক মসজিদের কাছে সিআরপিএফের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময় হয়৷এর মাঝেই গাড়ি থেকে নেমে পালাতে উদ্যোগী হন চালক৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo
সাম্প্রতিক আরেক ঘটনা
কিছুদিন আগে কাশ্মীরের অনন্তনাগ অঞ্চলে সিআরপিএফ-এর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষে ৬ বছরের একটি ছেলের মৃত্যু হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Khan
শোকস্তব্ধ পরিবার
বুধবারের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির শরীরের ওপর বসে কাঁদতে দেখা যায় তাঁর তিন বছর বয়সি নাতিকে৷ সেই দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ ছবিতে নিহত বাশির আহমেদের পরিবারের সদস্যদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AFP/T. Mustafa
শিশুটি এখন নিরাপদ আশ্রয়ে
বেঁচে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করেছে কাশ্মীর পুলিশ৷ পুলিশ তাকে মায়ের কাছে পৌঁছে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদসংস্থা এএনআই৷ ছবিতে সে হাসিমুখে স্বজনের কোলে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Mattoo
প্রশ্নের মুখে কাশ্মীরে নাগরিক জীবন
তিন বছরের শিশুর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে শুরু হয় জম্মু ও কাশ্মীরে সাধারন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা৷ অনেকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন কাশ্মীর পুলিশের দিকে৷ তাদের বক্তব্য, যে পুলিশ গুলি চালায়, তারাই পরে শিশুকে রক্ষা করে, আবার তারাই কাঁদতে থাকা শিশুর ভিডিও ছড়ায়৷ ওপরের ছবিতে মৃত বাশিরের জানাজার দৃশ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
5 ছবি1 | 5
এক বছর পর কাশ্মীর নিয়ে মুখ খুলল চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র বুধবার বলেছেন, ভারত যে ভাবে কাশ্মীরে বিশেষ আইন বাতিল করেছে এবং রাজ্যটিকে ভেঙে দিয়েছে, তা অবৈধ। চীনের বক্তব্য, কাশ্মীর নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব স্বাধীনতার পর থেকেই। জাতি সংঘও সেখানে হস্তক্ষেপ করেছে। এ বিষয়ে জাতি সংঘের চার্টার রয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীর প্রসঙ্গকে অভ্যন্তরীণ বলতে পারে না ভারত ।
চীনের এই মন্তব্যের পরেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জবাব দিয়েছেন। সেখানে আরও একবার বলা হয়েছে, কাশ্মীর ভারতের অংশ। ফলে সেখানে যা হয়েছে, তা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে অন্য কোনও রাষ্ট্রের মতামত দেওয়ার অধিকার নেই।
বিতর্ক অবশ্য এখানেই থেমে থাকেনি। শুক্রবার জাতি সঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ফের বিষয়টি উত্থাপন করে চীন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পাকিস্তানের অনুরোধেই বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তোলা হয়। জাতি সংঘে ভারতের প্রতিনিধি তিরুমূর্তি টুইট করে জানিয়েছেন, চীন কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুললেও নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্যরা তা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়নি। বলা হয়েছে, কাশ্মীর নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিতর্ক আছে। এ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ আলোচনা করবে না।
এশিয়ার মানচিত্রের যত রাজনীতি
এক দেশ থেকে আরেক দেশে বদলে যায় একই ভূখণ্ডের মানচিত্র৷ এশিয়ায় কেমন এই মানচিত্রের রাজনীতি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/F. J. Brown
সরকারের যত কড়াকড়ি
ভারতের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, উত্তর ভারতের অভিন্ন অঙ্গ জম্মু ও কাশ্মীর৷ তাই সেদেশের মানচিত্রে পাকিস্তান ও চীন নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকেও ভারতের অংশ হিসাবে দেখানো হয়৷ শুধু তাই নয়, ভারতে সরকার অনুমোদিত নকশা ছাড়া কাশ্মীরের অন্য সব মানচিত্র অবৈধ৷
পাকিস্তান যা বলছে
পাকিস্তানেও কাশ্মীরের মানচিত্র বেশ স্পর্শকাতর একটি বিষয়৷ কিন্তু ভারতের মতো সেখানে গোটা কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসাবে দেখানো হয়না৷ এর বদলে মানচিত্রে কাশ্মীরের কিছু অংশের গায়ে ‘বিতর্কিত অংশ’ বা ‘অনির্দিষ্ট সীমান্ত’ লেখা থাকে৷
সরকারি মানচিত্র কতটা সঠিক?
জাতিসংঘের বৈশ্বিক জিওস্প্যাশিয়াল তথ্যবিষয়ক কমিটির প্রধান টিম ট্রেনর বলেন, ‘‘মানচিত্রের ক্ষমতা অনেক৷ একটি মানচিত্র দেখলেই আমরা ভেবে নিই যে তা আসলে সঠিক তথ্য দিচ্ছে৷’’ তাঁর মতে, মানচিত্র বিশ্বের মানুষের চিন্তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে৷ তিনি আরো বলেন যে, এশিয়ার অনেক দেশের সরকারি মানচিত্রের সাথে সত্যের খুব কমই মিল আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. J. Brown
দক্ষিণ চীন সাগরের উদাহরণ
২০১৯ সালের ‘এবোমিনেবল’ ছবিতে একটি বিশেষ মানচিত্র দেখানোর ফলে দক্ষিণ চীন সাগরের দখল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ সেই মানচিত্রে তাইওয়ান ও গোটা দক্ষিণ চীন সাগরকে চীনের অংশ হিসাবে দেখানো হয়৷ যদিও আন্তর্জাতিক মহলে এই অঞ্চলের ওপর মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন্স, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের দাবি রয়েছে৷
মানচিত্র বিশেষজ্ঞ টিম ট্রেনর বলেন, যে কোনো মানচিত্রকে সঠিক ধরে নেবার আগে প্রশ্ন করতে হবে যে সেই মানচিত্রের কাজটা ঠিক কী, আর কারাই বা তৈরি করেছে সেই মানচিত্র৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো মানচিত্রের একটি মাত্র নির্দিষ্ট নকশা থাকতে পারেনা৷’’ তাঁর মতে, ভালো মানচিত্র সেটাই যেখানে তথ্যের সূত্র ও তথ্যপ্রাপ্তির তারিখ দেওয়া থাকে৷ পাশাপাশি, বিতর্কিত সীমান্তের উল্লেখও থাকা উচিত৷
ছবি: Public Domain
অবস্থান অনুযায়ী বদলায় মানচিত্র
বিশ্বের বেশিরভাগ গবেষক ও সাধারণ নাগরিক মানচিত্র বিষয়ে ধারণা পেতে গুগল ম্যাপস বা গুগল আর্থ-এর মতো অ্যাপের ওপর নির্ভর করেন৷ কিন্তু ডয়চে ভেলেকে গুগল জানিয়েছে, অ্যাপ ব্যবহারকারী কোন মানচিত্র দেখতে পাবেন তা তার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে৷ যেমন ভারতের বাসিন্দারা ভারত সরকার অনুমোদিত মানচিত্রই দেখতে পান৷ কিন্তু কেন অন্যান্য মানচিত্রের তথ্য দেয়না গুগল, সেবিষয়ে তাঁরা কিছু বলেনি৷
ছবি: Knight-Mozilla-MIT “The Open Internet” Hack Day/opennews.kzhu.io
6 ছবি1 | 6
এ দিকে সম্প্রতি ভারত-চীন সংঘাতের বিষয়টি নিয়েও নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে একটি নথি আপলোড করেছিল। যেখানে বলা হয়েছিল, চীন পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে। চীনের সঙ্গে ভারতের একাধিক সেনা পর্যায়ের বৈঠক এবং তার ফলাফলের কথাও ওই নথিতে লেখা ছিল। বৃহস্পতিবার আচমকাই নথিটি ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি বিদেশমন্ত্রকের কোনও আধিকারিক।
তবে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে এ ভাবে নথি তুলে নেওয়া নজিরবিহীন। কেন নথিটি তুলে নেওয়া হলো, তা নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধী দলনেতাদের বৈঠকে বলেছিলেন, চীন আমাদের এলাকায় ঢোকেনি। ভারতের জমি দখল করেনি। তার পর বিরোধী দলগুলি বিশেষ করে কংগ্রেস প্রশ্ন করে, তা হলে ভারতীয় সেনা কেন পিছনে সরছে? এই বিতর্কের জেরে নথিটি তোলা হলো কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।