1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতীয় গরু না আসায় বাংলাদেশের ‘লাভ’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ জুলাই ২০২২

মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী কয়েকদিন আগেই দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ এখন গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ ঈদের পশুর হাটে সত্যিই এবার ভারতীয় গরু নজরে পড়ছে না৷

মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী কয়েকদিন আগেই দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ এখন গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ ঈদের পশুর হাটে সত্যিই এবার ভারতীয় গরু নজরে পড়ছে না৷
ছবি: Mortuza Rashed

শুক্রবার মন্ত্রী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আমাদের জানা মতে একটি ভারতীয় গরুও এবার আসেনি৷ ভারত থেকে গরু আমদানির কোনো অনুমতি নেই৷’’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করে দেয়৷ আর সেটাই হয়েছে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ৷ এখন বাংলাদেশ গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গরুর মাংস রপ্তানিও শুরু করেছে৷

এবার কোরবানির ঈদে গবাদি পশুর যে চাহিদা তার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে৷ চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশু বেশি৷ সরকারি হিসেব বলছে, দেশে এবার দেশে কোরবানির জন্য ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার গরু-ছাগলের চাহিদা রয়েছে৷ কিন্তু প্রস্তুত আছে এক কোটি ২৫ লাখ ২৪ হাজার৷

বিবিএস-এর জরিপ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ যে হিসেব দিয়েছে তাতে  দেশে গরু ছাগলের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে৷ গত মাসে তারা কৃষি শুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন  গরু-ছাগলে প্রায়  স্বয়ংসম্পূর্ণ৷

রীতিমতো একটা বিপ্লব হয় এই সেক্টরে: শাহ ইমরান

This browser does not support the audio element.

শুমারির ফল থেকে জানা যায়, দেশে এখন গরুর সংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখ ১৪ হাজার ১৪৪, ২০০৮ সালে যা ছিল ২ কোটি ৫৭ হাজার ৮৫৩৷ এক যুগের ব্যবধানে গরু বেড়েছে ৪০ লাখের বেশি৷ অন্যদিকে দেশে বর্তমানে ছাগলের সংখ্যা এক কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ২০০, যা এক যুগ আগে ছিল এক কোটি এক লাখ ৫৯ হাজার ৫০৯৷ এক যুগে ছাগল বেড়েছে প্রায় ৬১ লাখ৷

২০২০ সালে বিবিএস এই কৃষি শুমারি পরিচালনা করে, যার প্রাথমিক রিপোর্ট চলতি বছরে তারা প্রকাশ করে৷ বিশ্লেষকরা বলেছেন গত দুই বছরে পশু সম্পদের আরো উন্নতি হয়েছে৷

গত এক যুগে ভেড়ার উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ৷ বর্তমানে ভেড়ার সংখ্যা ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৬১৯টি৷ ২০০৮ সালে ছিল চার লাখ ৭৮ হাজার ১৭৷ মহিষের সংখ্যাও বেড়েছে শতকরা ৩০ ভাগ৷ এখন ছয় লাখ ২৯ হাজার ৬৪০টি মহিষ আছে৷ ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল চার লাখ ৩১ হাজারের মতো৷  আর সব মিলিয়ে দুধ দেয় এমন গরু, মহিষ ও ছাগল আছে ১৮ লাখের মতো৷

যেভাবে আসে সাফল্য

গাজীপুরের গিয়াসউদ্দিন সরকার ২০১৫ সালে মাত্র একটি গরু দিয়ে শুরু করেন তার গরুর ফার্ম ‘সাফ গ্রিন অ্যাগ্রো'৷ তার খামারে এখন ১৬০টিরও বেশি গরু রয়েছে৷ তিনি একই সঙ্গে মাংস এবং দুধ উৎপাদন করেন তিনি৷ প্রতিদিন দুধ পান ৭০০ লিটার৷  তিনি বলেন, ‘‘একটি খামার দুই-তিন বছরের মধ্যেই লাভে চলে যায়৷” এইরকম সাফল্যের কাহিনি বাংলাদেশে এখন প্রত্যেক এলাকায়ই পাওয়া যাবে৷ তার কথা, "সরকার যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এখন ছোট খামারিরাও দুধ এবং মাংস দেশের বাইরে রপ্তানি করতে পারবে৷”

২০১৪ সালে  ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে সেখান থেকে গরু আসা বন্ধ করে দেয়৷ আর সেটাই বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হয়েছে৷ চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশে গবাদি পশুর লালনপালন বেড়ে যায়৷ আর সেটাই বাংলাদেশকে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে৷ বাংলাদেশে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ লাখ খামার আছে৷

এর আগে প্রতি বছর ভারত থেকে প্রতি বছর ৩০ লাখের মতো গরু-ছাগল আসতো বৈধ এবং অবৈধ পথে৷ শুধু কোরবানির ঈদেই আসতো ২০-২২ লাখের মতো৷  মিয়ানমার থেকেও আসতো৷ ২০১৮ সালেও ভারত থেকে এক লাখ ৫০ হাজার গরু আসে৷ কিন্তু এখন চিত্র পুরোই পাল্টে গেছে৷ উল্টো প্রতি বছর দেশি গরুরই একটি অংশ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে৷

বাংলাদেশে দুধের উৎপাদনও বেড়ে গেছে তিনগুণ৷ বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক  শাহ ইমরান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আগে থেকেই ভারতীয় গরু আসার বিপক্ষে ছিলাম৷ কারণ, ভারতীয় গরুর কারণে খামারিরা দাঁড়াতে পারছিল না৷ এই অবস্থায়  ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর আমরা গবাদি পশু লালন-পালনের প্রশিক্ষণের ব্যাপক উদ্যোগ নিই৷ আর এটা আমরা করি অনলাইনে৷ এর ফলে দেশে এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত তরুণরা ব্যাপক আগ্রহী হয়ে ওঠেন৷ দেশে তো বটেই  বিদেশে পড়াশুনা শেষ করে অনেক শিক্ষিত তরুণ গরুর খামার  প্রতিষ্ঠা করে৷ তাদের এই উদ্যোগ স্থানীয় পর্যায়ের সাধারণ মানুষকেও উৎসাহী করে৷ ফলে রীতিমতো একটা বিপ্লব হয় এই সেক্টরে৷’’

তিনি জানান, এখন আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো গরু, তথা মাংসের দাম কমিয়ে আনা৷ সরকারের কিছু নীতি সংশোধন কললেই এই দাম কমে আসবে৷ বিশেষ করে পশু খাদ্যের আমদানি নীতিতে পরিবর্তন দরকার৷ আর দরকার অ্যামেরিকা ও ইউরোপের কিছু গরুর ক্রস ব্রিডিংয়ের অনুমতি৷ এখন আমরা অনেকটাই অষ্ট্রেলিয়ার ফ্রিজিয়ানা জাতের ওপর নির্ভরশীল৷ আর ছাগলের ক্ষেত্রে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটের ওপর৷ কিন্তু আমরা চাই আফ্রিকার কিছু ছাগল, যা দ্রুত বাড়ে তার অনুমতি দেয়া হোক৷’’

একই সাথে সরকারের ঋণ ও নীতি সহায়তার কথাও বলেন তিনি৷ বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ননী গোপাল দাস বলেন, ‘‘এখানে বিদেশ থেকে উন্নত জাতের গরু এনে ক্রস ব্রিডিংয়ের সুবিধা দেয়ায় এই খাতটি দ্রুত এগিয়ে যায়৷ আর বাংলাদেশে মাংসের বিশাল একটি বাজার আছে৷ ফলে খামারিরা সহজেই লাভ করতে পারেন৷ এখানকার পরিবেশ এবং সরকারের নীতি সহায়ক হওয়ায় দ্রুতই গবাদি পশুর উৎপাদন বেড়ে যায়৷’’

‘আমাদের জানা মতে একটি ভারতীয় গরুও এবার আসেনি’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় কথা হলো এই খাতে তরুণরা এগিয়ে এসেছেন৷ তারা পথপ্রর্দশকের কাজ করেছেন৷ এখন বড় বড় বিনিয়োগকারী এই খাতে বিনিয়োগ করছেন৷’’ গত সাত-আট বছরের মধ্যে বাংলাদেশে গবাদি পশু উৎপাদনের এই বৈপ্লবিক সাফল্যের জন্য মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরই কৃতিত্ব দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের আমরা স্বল্প সুদে ঋণ দিয়েছি৷ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি৷ চিকিৎসা এবং ঔষধ সহজলভ্য করেছি৷ পশু খাদ্য আমদানি সহজ করেছি৷ আর বিদেশ থেকে উন্নত জাতের গরু এনে কৃত্রিম প্রজনের ব্যবস্থা করেছি৷’’

তার কথা, ‘‘এবার ভারত থেকে আমরা একটি গরুও আমদানি করতে দেইনি৷ এখন আমদানি বন্ধ আছে৷ ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হবে বলে মনে করি না৷’’

গরুর মাংস রপ্তানি

শ. ম রেজাউল করিম জানান, বালাদেশ থেকে এরইমধ্যে বেঙ্গল মিটসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি উদ্যোগে বিদেশে হিমায়িত গরুর মাংস রপ্তানি শুরু করেছে৷ বিশ্বের ৩০টি দেশে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের গরুর মাংসের চাহিদার কথা জানা গেছে৷ 

তিনি বলেন, ‘‘এখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে সেগুলোর সমাধান করে আমরা গরুর মাংস রপ্তানি বাড়াতে চাই৷ আমাদের প্রস্তুতি চলছে৷ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অচিরেই রপ্তানি শুরু করবে৷” তিনি জানান, বাংলাদেশ এখন আর বিদেশ থেকে গরুর মাংস আমদানি করে না৷ কিছু ভেড়ার মাংস আমদানি করা হয়৷ প্রসঙ্গত বাংলাদেশে এখন বছরে গরুর মাংসের চাহিদা ৭০ লাখ টন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ