চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্যের ট্রানজিট সুবিধার ক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ডের ন্যূনতম ফি ধার্য করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারের জন্য টন প্রতি ৫৮৯ টাকা৷ গত সোমবার রাজস্ব বোর্ড এই চূড়ান্ত বিধিমালা প্রকাশ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
তবে এর বাইরে সড়ক ব্যবহারের জন্য আলাদা ফি ধার্য হবে৷ সড়ক ব্যবহারে প্রতি কিলোমিটারের জন্য টন প্রতি ১ টাকা ৮৫ পয়সা ফি দিতে হবে৷
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদায়যোগ্য ফি ও চার্জের তালিকা অনুযায়ী, ট্রানজিট সুবিধার ক্ষেত্রে প্রতিটি চালানে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি দিতে হবে ৩০ টাকা৷ প্রতি মেট্রিক টন পণ্যের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ২০ টাকা, সিকিউরিটি চার্জ ১০০ টাকা, বিবিধ প্রশাসনিক চার্জ ১০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে৷ এ ছাড়া, প্রতিটি কন্টেইনারের জন্য ২৫৪ টাকা পরিশোধ করতে হবে স্ক্যানিং ফি হিসেবে৷ প্রতিটি কন্টেইনার, ট্রাক, ট্রেইলার বা কাভার্ড ভ্যানের জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কিলোমিটার প্রতি ৮৫ টাকা এসকর্ট চার্জ দিতে হবে৷ সেইসঙ্গে নির্ধারিত পরিমাণে ইলেক্ট্রিক লক অ্যান্ড সিল ফি দিতে হবে৷
ভারতীয় পণ্যের ট্রানজিট রুট
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্যের ট্রানজিট সুবিধা দিতে মোট ১৬টি রুট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ সেগুলো হচ্ছে:
১. চট্টগ্রাম বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা
২. মোংলা বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা
৩. চট্টগ্রাম বন্দর-তামাবিল-ডাউকি
৪. মোংলা বন্দর-তামাবিল-ডাউকি
৫. চট্টগ্রাম বন্দর-শেওলা-সুতারকান্দি
৬. মোংলা বন্দর-শেওলা-সুতারকান্দি
৭. চট্টগ্রাম বন্দর-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর
৮. মোংলা বন্দর-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর
৯. আগরতলা-আখাউড়া-চট্টগ্রাম বন্দর
১০. আগরতলা-আখাউড়া-মোংলা বন্দর
১১. ডাউকি-তামাবিল-চট্টগ্রাম বন্দর
১২. ডাউকি-তামাবিল-মোংলা বন্দর
১৩. শেওলা-সুতারকান্দি-চট্টগ্রাম বন্দর
১৪. শেওলা-সুতারকান্দি-মোংলা বন্দর
১৫. শ্রীমন্তপুর-বিবিরবাজার-চট্টগ্রাম বন্দর
১৬. শ্রীমন্তপুর-বিবিরবাজার-মোংলা বন্দর
এনএস/কেএম (দ্য ডেইলি স্টার)
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মূলকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর
বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দরের অবস্থান চট্টগ্রামে৷ সে কারণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরটিকে বলা হয় বন্দর নগরী৷ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ঘিরে চোরাচালানি, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কাজ এগিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: cpa.gov.bd
প্রধান সমুদ্র বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর৷ প্রতিবছর কয়েক লাখ কন্টেইনার এই বন্দর থেকে পরিবহন হয়৷ বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহনের পরিমাণ ছিল ৫,৫৬,৭৮১ টি৷
ছবি: gemeinfrei
বহু পুরনো বন্দর
কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর চালু হয়েছিল উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামলের শুরুর দিকে৷ উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলি নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন, পরে ১৮৬০ খৃষ্টাব্দে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়৷’’
ছবি: Getty Images
পৃথিবীর নব্বইতম ব্যস্ত বন্দর
সমুদ্র সংক্রান্ত পত্রিকা লয়েড-এর প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হচ্ছে পৃথিবীর ৯০তম ব্যস্ত সমুদ্র বন্দর৷ প্রতিনিয়ত এই বন্দরের চাহিদা বাড়ছে৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য পোশাক খাত অনেকটা এই বন্দরের উপরই নির্ভরশীল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: imago
রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি
রাজনৈতিক অস্থিরতায় মাঝেমাঝেই ক্ষতির শিকার হয় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর৷ কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, কনটেইনার পরিবহনের প্রায় ৯৫ শতাংশ সড়কপথ এবং ৫ শতাংশ রেলপথে হয়ে থাকে৷ হরতাল, অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পণ্য পরিবহনে বিঘ্ন ঘটে৷ এতে করে আমদানি পণ্য যেমন বন্দরে আটকে যায়, তেমনি রপ্তানির জন্য পণ্য জাহাজে তোলা যায় না৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
চোরাচালান, দুর্নীতি
চোরাচালানের জন্য মাঝেমাঝেই চট্টগ্রাম বন্দর পত্রিকার পাতায় স্থান করে নেয়৷ এছাড়া চুরি, ডাকাতির ঘটনাও ঘটে৷ বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সতর্ক নিরাপত্তা বাহিনী
চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছে কোস্টগার্ড৷ গত বছর এক সংবাদ সম্মেলনে কোস্টগার্ড দাবি করে, আগের বছরের তুলনায় ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ-দস্যুতা ৫০ ভাগ কমেছে৷ ২০১২ সালে ৫৮৬ কোটি, ২০১১ সালে ৩০২ কেটি টাকার চোরাচালানি পণ্য আটক করা হয়েছে বলেও ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: REUTERS
ভারত, ভুটানের আগ্রহ
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং ভুটানের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে৷ এই আগ্রহের বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বাংলাদেশের বাড়তি অর্থ আয়ের একটি উপায় তৈরি হবে৷ তবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
প্রয়োজন আরো নৌবন্দর
চট্টগ্রাম এবং মংলায় সমুদ্রবন্দর চালু থাকলেও আরো একটি সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বাংলাদেশে৷ এই চাহিদার কথা বিবেচনা করে নভেম্বরে বাংলাদেশের পটুয়াখালিতে পায়রা সমুদ্র বন্দর স্থাপনের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: dapd
গতি মন্থর
তবে পায়রা সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হলেও কাজ আগাচ্ছে খুব ধীর গতিতে৷ বিশেষ করে বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় জমিই এখনো পুরোপুরি অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি৷ আর বন্দরের সংযোগ সড়কও তৈরি হয়নি৷ ফলে কবে নাগাদ তৃতীয় সমুদ্র বন্দর চালু হবে, তা এখনো জানা যাচ্ছে না৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Getty Images
তথ্যের ঘাটতি
উল্লেখ, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে (http://cpa.gov.bd/portal/) তথ্যের বেশ ঘাটতি রয়েছে৷ বন্দরে পণ্য পরিবহন সংক্রান্ত হালনাগাদ কোনো তথ্য সাইটটিতে নেই৷ সর্বশেষ ২০১১ সালের বিভিন্ন পরিসংখ্যান রয়েছে সাইটটিতে৷