স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল ফিফা। সময়সূচি মেনে ফুটবল সংস্থায় নির্বাচন না করালে ভারতকে নিষিদ্ধ করা হবে।
ফিফার নির্দেশ না মানলে সাসপেন্ড করা হবে ভারতকে। ছবি: Mohammed Dabbous/AA/picture alliance
বিজ্ঞাপন
গত মঙ্গলবার ফিফা ও এএফসি-র প্রতিনিধিরা ভারতে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার তারা ফিরে যান। তারা এআইএফএফ অফিসে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের সঙ্গে কথা বলেন, রাজ্য ফুটবল ফেডারেশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেন, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন(এআইএফএএফ)-এর সাবেক প্রধান প্রফুল্ল প্যাটেলের সঙ্গেও আলোচনা হয়। এমনকী মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গেও তারা দেখা করেন।
তারপর তারা যে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তা হলো, ফিফার দেয়া সময়সূচি মেনেই এআইএফএফের নির্বাচন করাতে হবে। তার আগে গঠনতন্ত্র তৈরি করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট তা অনুমোদন করবে। নির্বাচন কোন তারিখের মধ্যে করতে হবে, সেটাও তারা জানিয়ে দিয়েছেন।
এই সময়সূচি না মানলে বিশ্ব ফুটবল থেকে ভারতকে নির্বাসিত করা হবে। ভারত থেকে মেয়েদের বিশ্বকাপ সরিয়ে দেয়া হবে। আগামী অক্টোবরে সেই বিশ্বকাপ হওয়ার কথা। ভারতের পুরুষ ও মেয়েদের ফুটবল দল কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না। সুনীল ছেত্রীও নতুন করে কোনো রেকর্ড করতে পারবেন না।
ফুটবলই এই গরিব, প্রান্তিক মেয়েদের মুক্তির জায়গা
তাদের একটাই পরিচয়, তারা গরিব। তাদের একটাই আনন্দের জায়গা, ফুটবলের মাঠ। ফুটবলই পশ্চিমবঙ্গের এই মেয়েদের দুঃখ ভুলে যাওয়ার জায়গা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মুক্তির আনন্দ
তারা সকলেই খুব গরিব পরিবারের। পরিবারের মাসিক আয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অনেক বাধা উপেক্ষা করে তারা ফুটবল খেলেন। ফুটবলের মাঠ, বল নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া, প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়ার মধ্যেই তারা মুক্তির আনন্দ পান। ফুটবল মাঠ তাদের কাছে সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে নিজেদের প্রতিভার ঝলক দেখানোর জায়গা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কলকাতা-নেপলস ফ্রেন্ডশিপ কাপ
কলকাতায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো কলকাতা-নেপলস ফ্রেন্ডশিপ কাপ। সেখানেই খেললো এই গরিব, পিছিয়ে পড়া এলাকার মেয়েদের নিয়ে গঠিত আটটি টিম। নেপলস শহরের পক্ষ থেকে ক্লাবগুলিকে দেয়া হয় ম্যারাডোনার মূর্তি ও স্মারক। কয়েকজন মেয়েকে নেপলস নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিভিন্ন জেলা থেকে
পুরুলিয়া, মালদহ, সোনারপুর, বর্ধমানের দল এসেছিল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। খেলেছেন আদিবাসী মেয়েরা, খুবই গরিব পরিবারের মেয়েরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কলকাতার দল
কলকাতার চারটি দল ছিল। দুর্বার, পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাব, রোশনি উইথ গ্রুপ এবং শান্তি মল্লিক অ্যাকাডেমি। প্রতিটি ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল। প্রতিটি ম্যাচে আর্থিক দিক থেকে কোণঠাসা মেয়েদের লড়াই ছিল দেখার মতো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অনেক বাধা পেরিয়ে
বর্ধমানের মুসলিম পরিবারের মেয়ে সোনিয়া খাতুন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। ফুটবল খেলতে গিয়ে অনেক বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। সানিয়া জানিয়েছেন, হাফপ্যান্ট পরতে হয়, বাড়ি ফিরতে দেরি হয়, বাইরে যেতে হয় খেলতে, এ সব নিয়ে পরিবারের আপত্তি ছিল। সানিয়ার বাবা ঘাস কেটে রোজগার করেন। মাসে রোজগার হাজার চারেক টাকা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সোনালি সোরেনের কাহিনি
বর্ধমানের টিমে খেলেন আদিবাসী পরিবারের মেয়ে সোনালি সরেন। বাবা ছোট কৃষক। মাসে রোজগার হাজার পাঁচেক টাকা। তবে তার ফুটবল খেলাকে বাবা-মা সমর্থন করেছেন। ইস্টবেঙ্গলে মেয়েদের দলেও খেলেছেন সোনালি। জাতীয় পর্বের প্রতিযোগিতাতেও খেলা হয়ে গেছে তার।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দীপিকা নস্করের কথা
দক্ষিণ ২৪ পরগনার দীপিকা নস্করকে প্রথমে বাবা-মা ফুটবল খেলতে নিষেধ করতেন। দীপিকা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাবা-মা বলতেন, ফুটবল খেললে হাত-পা ভেঙে যেতে পারে। তখন বিয়ে দিতে সমস্যা হবে। কিন্তু সেই বাধা অতিক্রম করে ফুটবলকে আঁকড়ে ধরেছেন তিনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফুটবলকে সম্বল করে
মল্লিকা সাঁপুইয়ের পরিবারের অবস্থা ভালো নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই মেয়েকে তার প্রশিক্ষকরা যতটা সম্ভব সাহায্য করেন। ফুটবলকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায় মল্লিকা। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ফুটবল খেলে অনেক দূর যেতে চাই। প্রচুর প্র্যাকটিস করি। লক্ষ্যপূরণ করবই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পাথরপ্রতিমার মেয়ে
সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমার মেয়ে নয়ন্তিকা মণ্ডল। ফুটবল তার ধ্যানজ্ঞান। বাড়ির বাধা ছিল না। দুর্বারের টিমে খেলেন তিনি। খুব ছোট থেকে ফুটবল খেলছেন। এই মাঠই তার লড়াইয়ের জায়গা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চাক দে ইন্ডিয়া
একসময় এই মেয়েরাই হয়তো ভারতীয় মেয়েদের ফুটবলে নক্ষত্র হয়ে উঠবে। তাদের ওই দারিদ্র্য, কষ্ট, বাধা সব অতিক্রম করে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। দেশকে গর্বিত করবে। আর প্রেরণা যোগাবে অন্য মেয়েদের। ফুটবলই এই মেয়েদের কাছে প্রাণের আরাম, স্বপ্নপূরণের এক টুকরো পৃথিবী।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
ফিফার সময়সীমা
ফিফা জানিয়েছে, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এআইএফএফের গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করতে হবে। আর সেই গঠনতন্ত্র যেন ফিফার চার্টারের বিরোধী না হয়। এরপর ৫ অগাস্টের মধ্যে এআইএফএফের বিশেষ সাধারণ সভা ডাকতে হবে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট করে ফেলতে হবে। না হলে ভারতকে সাসপেন্ড করা হবে।
কেন এই নির্দেশ?
এর আগে গঠনতন্ত্র ও নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কাজটা করে উঠতে পারেনি এআইএফএফ। তারপর সুপ্রিম কোর্ট এআইএফএফের কমিটি বাতিল করে তাদের মাথায় তিন সদস্যের কমিটি অফ অ্যাডমিনিসট্রেটর(সিওএ) বসিয়ে দেয়। সেই কমিটিতে আছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার কুরেশি, সাবেক বিচারপতি অনিল দাভে এবং সাবেক ফুটবল অধিনায়ক ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়।
সিওএ আবার ১২ সদস্যের পরামর্শদাতা কমিটি গঠন করেছিল। ফিফা প্রতিনিধিরা এআইএফএফ অফিসে পা দেয়ার আগে সেই কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। তাতে ফিফা ও এএফসি প্রতিনিধিরা খুশি।
১৩০ বছরে কলকাতার মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব
15:35
This browser does not support the video element.
কিন্তু ফিফার নিয়ম হলো, ফেডারেশনের নির্বাচিত সদস্যদের বাইরের মানুষদের দিয়ে সংগঠন চালানো যায় না। কিন্তু ফিফা ও এএফসি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্য ফেডারেশন জানায় সিওএ যেভাবে কাজ করছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট। সিওএ-ও জানায় তারা ফিফার সময়সীমা মেনেই সব কাজ করবেন। ফিফার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তারা নিয়মিত গঠনতন্ত্রের বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ রাখবেন।
সুপ্রিম কোর্টে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২১ জুলাই। তার আগে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে গঠণতন্ত্র অনুমোদনের জন্য দিতে হবে।
সমস্যাটা কোথায়?
সমস্যার শুরু এআইএফএফ সময়মতো সভাপতি নির্বাচন না করানোয়। তখন যুক্তি দেয়া হচ্ছিল, গঠনতন্ত্র ঠিক হয়নি বলে সভাপতি নির্বাচন করা যাচ্ছে না।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে। প্রফুল্ল প্যাটেলকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। কমিটি নিয়োগ করা হয়। এবার সিওএ গঠনতন্ত্র ও নির্বাচন করাবে। সেই গঠনতন্ত্র আগে অনুমোদন করবে সুপ্রিম কোর্ট। তার আগে ফিফা জানিয়ে দিয়েছে, তাদের চার্টার মেনে সেই কাজ করতে হবে। ফিফা আরো বলেছে, যেহেতু এআইএফএফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাই ফরেনসিক অডিট করাতে হবে। সেই অডিট নতুন কমিটিকে করাতে হবে। এ সব না করলে শাস্তি পেতে হবে ভারতকে।