প্রশ্নটা শুরু থেকেই ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন প্রথমেই করোনার ভ্যাকসিন নিলেন না? এতদিন নিজের ভ্যাকসিন নেয়া নিয়ে একটা কথাও বলেননি প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন দেয়া শেষ হতেই এবার দ্বিতীয় পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার কাজ শুরু হলো। এখন ভ্যাকসিন পাচ্ছেন প্রবীণ নাগরিক ও ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সীরা, যাঁদের অন্য গুরুতর রোগ আছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথমেই এইমসে গিয়ে টিকা নিলেন মোদী। তিনি অক্সফোর্ড-অ্য়াস্ট্রাজেনেকার টিকা নেননি। নিয়েছেন দেশীয় সংস্থা ভারত বায়োটেকের কোভ্য়াকসিন।
টিকা নেয়ার পরই মোদী টুইট করে বলেছেন, ''কোভিড ১৯-টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছি, এইমসে। আমাদের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা করোনার বিরুদ্ধে যেভাবে লড়ছেন, তা চমকপ্রদ। করোনার টিকা নেয়ার জন্য যাদের নাম উঠেছে, তাদের ভ্যাকসিন নেয়ার আবেদন জানাচ্ছি। আমরা সকলে মিলে ভারতকে করোনা-মুক্ত করি।''
প্রধানমন্ত্রীর এই ভ্যাকসিন নেওয়ার মধ্যেও প্রতি পদে ভোটের বার্তা ছিল। তিনি গলায় যে অঙ্গবস্ত্র পরেছিলেন সেটি আসামের। যে দুই জন নার্স তাঁকে ভ্যাকসিন দিয়েছেন, তাঁরা কেরালা ও পুদুচেরির। এই তিন রাজ্যেই ভোট আসন্ন। তিনি ভারতীয় সংস্থার টিকা নিয়েছেন। পিএমও জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যখন এইমসে গেছেন, তখন কোনো স্পেশ্যাল রুট ছিল না। প্রধানমন্ত্রী চাননি, তাঁর এইমসে যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কোনো কষ্ট হোক। রোগী বা তাঁদের আত্মীয়রা বিপাকে পড়ুন। সে জন্য তিনি খুব ভোরে গিয়ে টিকা নেন।
১৭০০ কিলোমিটার দূর থেকে টিকা এলো কাছে
জানির খুব ভয় ছিল৷ তার কিছু হয়ে গেলে সন্তানদের কী হবে! ১৭০০ কিলোমিটার দূর থেকে টিকা এসে নিশ্চিন্ত করেছে তাকে৷ রিনা জানির পুরো গল্প থাকছে ছবিঘরে...
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
জীবন বাঁচান জানি
ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের এক পাহাড়ি এলাকার ছোট্ট গ্রাম পেন্ডাজামের স্বাস্থ্যকর্মী রিনা জানি৷ বিশেষত প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ করলেও, মাত্র ৫০০ জনের গ্রামের সবাইকে সাধারণ জ্বর, ম্যালেরিয়া এবং ডায়রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসাও দেন তিনি৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
সেবার প্রতিদান
সম্প্রতি কোভিড-১৯-এর টিকা দিতে শুরু করেছে ১৪০ কোটি মানুষের বিশাল দেশ ভারত৷ প্রথম পর্বে দেয়া হচ্ছে করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা স্বাস্থ্যখাতের কর্মীদের৷ সেই সুবাদের উড়িষ্যার কোরাপুট জেলার মাথালপুট কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে ডাক পড়ে তার৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সবার আগে টিকা দেয়ার জন্য যে একশ জনের তালিকা করেছে, রিনা জানি-ও যে আছেন সেখানে!
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
সুখবরেও দুশ্চিন্তা
গ্রামের সবার মতো রিনা জানিও বহুদিন ভেবেছেন একদিন টিকা আসবে, এলেই নিশ্চিত করবেন করোনার সংক্রমণমুক্ত থাকা৷ কিন্তু মাথালপুট কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে ডাক পড়তেই শুরু হয়ে গেল দুশ্চিন্তা৷ ৩৪ বছর বয়সি স্বাস্থ্যকর্মী জানালেন, টিকার মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে- এমন গুজব শুনে ভয় হয়েছিল তার, ‘‘তখন মনে হয়েছিল আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সন্তানদের কী হবে!’’
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
পাহাড় আর মেঠোপথ পেরিয়ে...
কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীর ভয় পেলে চলে না৷ তাই সেদিন খুব ভোরে তিন সন্তানকে ঘরে রেখে রিনা জানি বেরিয়ে পড়েছিলেন৷ পেন্ডাজামের এক প্রতিবেশী পাহাড়ের ওপারের রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন মোটরসাইকেল নিয়ে৷ সেই মোটরসাইকেলের পেছনে বসেই শুরু হলো ৪০ কিলোমিটার দূরের পথে যাত্রা৷ সবুজ ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার সময়ও টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তাগুলো ঘুরছিল রিনা জানি-র মাথায়৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
ভ্যাকসিনের আগমন
অবশ্য তাদের জন্য ভ্যাকসিনকে কত পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় তা জানলে রিনা জানিসহ কোরপুট জেলার সবার মনই হয়ত ভালো হয়ে যেতো৷ প্রথমে বিমানে, তারপর ট্রাকে এবং সবশেষে ভ্যানে চড়ে ১৭০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তবেই উড়িষ্যার কোরাপুট জেলার মাথালপুট কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে পৌঁছাতে পারে ভ্যাকসিন৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
চিন্তা বিনা রিনা
রিনা জানির মনে এখন অবশ্য কোনো দুশ্চিন্তা নেই৷ টিকা দেয়া হয়ে গেছে আর সেই সঙ্গে জানা হয়ে গেছে লোকে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলেছিল, সব ভুল৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
আসল ধাক্কা বাকি
আপাতত তিন ধাপে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা করেছে ভারত৷ কোরাপুটের ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর মধুসুদন মিশ্র মনে করেন প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপ মোটামুটি নির্বিঘ্নেই পার করা গেলেও তৃতীয় ধাপে সমস্যা হতে পারে, কারণ, ‘‘তখন টিকা দেয়া হবে আম জনতাকে৷’’
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
7 ছবি1 | 7
এর আগে কোভ্যাকসিন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী কোভ্য়াকসিন নিতে চাননি। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগে এই ভ্যাকসিন চালু করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে অনেক রাজ্যে ভ্যাকসিন দেয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী এই ভ্যাকসিন নিয়ে এটা বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, ভারত বায়োটেকের টিকা নিরাপদ। তিনি নিজে নিয়ে সাধারণ মানুষকে ভরসা দিতে চেয়েছেন।
টিকা দেয়া হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মোদী নার্সদের বলেন, ''হয়ে গেছে। আমি তো কিছু বুঝতেই পারলাম না।'' তিনি নার্সদের জিজ্ঞাসা করেন, তাঁরা আসলে কোন রাজ্যের। নার্সরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন নিতে এসে খুবই স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন।
দ্বিতীয় পর্বে ২৭ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা। সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন নেয়া যাবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলি সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা নিতে পারবে।