1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা রাজনীতির বাইরে নয়

৪ অক্টোবর ২০২৪

ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা কোনো একটি সরকারের হাতে নয়৷ কেন্দ্র এবং রাজ্যের সমান অধিকার আছে৷ কিন্তু তারপরেও শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করা যায়নি৷

Madhya Pradesh, Indien Schule Corona Lockdown
শিক্ষাকে যতটা সম্ভব রাজনীতিমুক্ত রাখতে চেয়েছে ভারতের সংবিধান কিন্তু কতোটা রাজনীতিমুক্ত করা গেছে সে প্রশ্ন উঠেছে বার বার৷ ফাইল ফটোছবি: Usha Dubey/Privat

ভারতীয় সংবিধানের ৪২তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শিক্ষা ছিল একটি রাজ্যের বিষয়৷ অর্থাৎ, রাজ্যগুলি নিজের মতো করে নিজের রাজ্যে পাঠ্যক্রম তৈরি করতে পারবে৷ আবার কেন্দ্রও কেন্দ্রীয় শিক্ষায়তনগুলির পাঠ্যক্রম নিজের মতো করে তৈরি করতে পারবে৷

১৯৭৬ সালে সংবিধানের এই অনুচ্ছেদটিতে একটি সংশোধন করা হয়৷ শিক্ষাকে কেন্দ্র এবং রাজ্য দুইজনেরই আওতাভুক্ত করা হয়৷ অর্থাৎ, রাজ্যের শিক্ষানীতি রাজ্য তৈরি করতে পারলেও কেন্দ্র সেখানে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে পারবে৷ বস্তুত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই কাজটিই করে ইউজিসি বা ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিটি৷ তারা একটি কেন্দ্রীয় নিয়মাবলি তৈরি করে৷ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেদের মতো করে সেই নিয়মাবলি নিজেদের রাজ্যে রূপায়ন করে৷ তবে বেসরকারি বা অসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়মাবলি মানতে বাধ্য না-ও থাকতে পারে৷

স্কুল পাঠ্যক্রম

স্কুলের ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব বোর্ড আছে৷ রাজ্যের সেই বোর্ড নিজেদের সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম তৈরি করে৷ সেখানে কেন্দ্রের কোনোরকম হস্তক্ষেপ থাকে না৷ সেখানে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য সরকারের কমিটি নিজেদের মতো করে পাঠ্যক্রম তৈরি করতে পারে৷ তবে খেয়াল রাখা হয়, তা যেন বাকি দেশের পাঠ্যক্রম থেকে খুব বেশি আলাদা না হয়৷

রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের বোর্ডও যে কোনো রাজ্যে তাদের স্কুল খুলতে পারে৷ সেখানে আবার রাজ্য সরকারের পাঠ্যক্রম নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের কমিটির তৈরি পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হয়৷ তাদের বোর্ড হলো কেন্দ্রীয় বোর্ড৷ আবার এই দুই বোর্ডের বাইরে অসরকারি বোর্ডও আছে৷ যারা তাদের পাঠ্যক্রম নিজেদের মতো করে তৈরি করতে পারে৷ গোটা দেশেই সেই বোর্ড তাদের স্কুল তৈরি করতে পারে৷

বিশ্ববিদ্যালয় স্তর

স্কুল পাশ করার পর ছাত্রছাত্রীরা যখন কলেজে ভর্তি হয়, তখন তারা রাজ্যের বা কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালিত কলেজে ভর্তি হয়৷ তবে এর বাইরে অসরকারি বা বেসরকারি কলেজও আছে৷ রাজ্য বা কেন্দ্রের কলেজ হলে এর একটি নিয়ামক সংস্থা আছে৷ যার নাম ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন৷ এই কমিশনের সুপারিশ রাজ্য এবং কেন্দ্র দুই বিশ্ববিদ্যালয়কেই মেনে চলতে হয়৷ তবে প্রয়োজন মতো রাজ্য এবং কেন্দ্র তাদের পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারে৷

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ

আপত চোখে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার ভিতটি খুব পোক্ত৷ যেহেতু এখানে কোনো একটি সরকার বা একটি কমিটি গোটা ব্যবস্থার নিয়ামক নয়, তাই এখানে রাজনীতি ঢোকার সুযোগও কম৷ কিন্তু বাস্তব অন্যরকম৷

রাজ্য হোক বা কেন্দ্র-- যে দল যখন যেখানে ক্ষমতায় আসে, তারা নিজেদের মতো করে শিক্ষাব্যবস্থায় বদল ঘটানোর চেষ্টা করে৷ সার্বিক পরিকাঠামোয় নয়, রাজনৈতিক ভাষ্যে৷ ইতিহাস এবং সাহিত্যের বিষয়গুলিতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে৷

উদাহরণ দেওয়া যাক৷ একুশ শতকের একেবারে গোড়ায় বিজেপি যখন প্রথমবারের জন্য ভারতে ক্ষমতায় আসে অটলবিহারী বাজপেয়ীর হাত ধরে, সে সময় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন মুরলী মনোহর জোশী৷ সেই প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের স্কুলপাঠ্য ইতিহাস বই থেকে মুঘল আমলের ইতিহাস কার্যত তুলে দেওয়া হয়৷ এ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি৷ কিন্তু কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্ত অটুট ছিল৷ কিন্তু রাজ্যগুলির পাঠ্য বইয়ে মুঘল ইতিহাস যেমন থাকার তেমনই রাখা হয়৷ কেন্দ্র এক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে কোনো নির্দেশ বা চাপ দিতে পারেনি৷

আবার নব্বইয়ের দশকে পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকার স্থির করে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়া হবে৷ বহু বিতর্ক সত্ত্বেও সরকার কয়েকবছরের জন্য তা করতে সক্ষম হয়েছিল৷ কেন্দ্র আপত্তি জানালেও রাজ্যকে পরাস্ত করতে পারেনি৷

যত দিন গেছে রাজনৈতিক দলগুলির চাপ ততই বেড়েছে শিক্ষাব্যবস্থার উপর৷ যে কারণে বাম সরকারের পতনের পর পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে স্কুল পাঠ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতাও স্থান পেয়েছে স্কুল পাঠ্যে৷ উত্তরপ্রদেশের যোগী-রাজ্যে রবীন্দ্রনাথের লেখা পাঠ্য বই থেকে তুলে সেখানে বাবা রামদেবের রচনা ঢোকানো হয়৷ আর কেন্দ্রীয় সরকার তো গোটা ইতিহাসই নতুন করে লেখার ফরমান জারি করেছে৷

তা যদি হয়ও অবিজেপি রাজ্যগুলি সে পথে হাঁটবে না, তা বলাই বাহুল্য৷ কিন্তু রাজনীতির এই টানাপড়েনে বহু সময়েই দেখা যায় ছাত্ররা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে৷ রাজ্য বোর্ডের স্কুল থেকে কেন্দ্রীয় বোর্ডে কোনো ছাত্র বদলি হলে তার কী দশা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷

সংবিধান চেয়েছিল শিক্ষাকে যতটা সম্ভব রাজনীতিমুক্ত রাখতে৷ সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছিল সংবিধানের অনুচ্ছেদে৷ কিন্তু যে দেশে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে সেখানে রাজনীতি সংসর্গহীন শিক্ষা আসলে সোনার পাথরবাটি৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ