তিনি ববিয়া গ্রামের একজন কৃষক৷ সিং যখন থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে এই তথ্য দিচ্ছিলেন তখন তাঁর সঙ্গে থাকা অন্য কৃষকরাও মাথা ঝুঁকিয়ে এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানান৷
তাঁরা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও ল্যান্ডমাইন বসানো হয়েছে৷ ফলে শত শত কৃষক তাঁদের কৃষিজমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ অনেক সময় কোনোরকম সতর্ক সংকেত কিংবা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই এমন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের৷ ‘‘ফলে কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কারণ তাঁদের আয়ের অন্য কোনো বিকল্প নেই,'' বলেন বরিয়াম সিং৷
এই অবস্থায় সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রী ভর্তি ১০টি ট্রাক তাঁদের এলাকায় গেলে বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করেন৷ কারণ তাঁদের মনে সামরিক বাহিনীর কাছে আরও জমি হারানোর শঙ্কা জেগে উঠেছিল৷
সীমান্তের বাসিন্দাদের কল্যাণে কাজ করা সংগঠন ‘বর্ডার ওয়েলফেয়ার কমিটি' বলছে, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষা বাহিনী জম্মু-কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে জমি অধিগ্রহণ করছে৷
কমিটির প্রেসিডেন্ট নানক চাঁদ জানান ২০০৪ সালে যখন প্রথম কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয় তখন তাঁর আট হেক্টর জমি নিয়ে নেয়া হয়৷ আর তিন মাসে আগে অবশিষ্ট দুই হেক্টর জমিও অধিগ্রহণ করে সামরিক বাহিনী৷ তাই ‘‘আমি এখন জমিহীন,'' বলেন তিনি৷
চাঁদ জানান, ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁকে ৩০ লাখ রুপি দেয়া হয়েছে৷ তবে তা কোনো নিরাপদ জায়গায় একই পরিমাণ জমি কেনার জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানান তিনি৷
সম্প্রতি ভারত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করায় সীমান্ত এলাকার কৃষকেরা আরও বেশি জমি হারানোর আশঙ্কায় আছেন বলে জানিয়েছেন ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ফোরাম ফর পিস অ্যান্ড টেরিটোরিয়াল ইন্টিগ্রিটি'র প্রধান আইডি খাজুরিয়া৷ কারণ ‘‘স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এখন জম্মু-কাশ্মীর সরকার পরিচালনায় বেশি কিছু বলতে পারবেন না,'' বলে মনে করছেন তিনি৷
জম্মুর বিভাগীয় কমিশনার সঞ্জীব ভার্মা জানিয়েছেন, ক্রমান্বয়ে জম্মুর সব কৃষকদের জমির মূল্য দেয়া হবে৷ ইতিমধ্যে কয়েকজনকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ তবে কতজন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তা জানাতে অস্বীকার করেন ভার্মা৷
জেডএইচ/কেএম (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)
গত বছরের মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...
শেষমেষ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে নামতে হলো ভারতের বেশ কয়েক হাজার কৃষককে৷ ঋণ মওকুফ, পণ্যের ভালো দাম আর জমির অধিকার নিশ্চিতে তাদের রাপজথের আন্দোলন ইতোমধ্যে ফল দিতে শুরু করেছে৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/R. Choudharyমাথায় লাল টুপি পরে আর হাতে লাল পতাকা নিয়ে নাসিক থেকে সপ্তাহান্তে ১৮০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ে পৌঁছান কয়েক হাজার কৃষক৷ তাঁদের লক্ষ্য ছিল মুম্বইয়ে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের সংসদ ঘিরে ফেলা৷ কৃষকদের অধিকাংশই দরিদ্র৷ মার্চের গরমের মধ্যে খালি পায়ে লম্বা পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকের পায়ে ফোস্কা পড়ে যায়, অসুস্থও হয়ে পড়েন কেউ কেউ৷
ছবি: REUTERSকৃষকদের দাবি, কৃষিকাজে তাঁদের যে খরচ হয়, শষ্য বিক্রি করে যেন তার দেড়গুণ লাভ করা যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে৷ পাশাপাশি, কৃষি ঋণে জর্জরিতদের ঋণ মওকুফের দাবি জানান তাঁরা৷ আন্দোলনকারী কৃষকদের মধ্যে অনেক উপজাতি ছিলেন, যাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে জমিতে চাষ করছেন, অথচ সেই জমির মালিকানা এখনো পাননি৷
ছবি: AFP/Getty Imagesমহারাষ্ট্র সরকার অবশ্য কৃষকরা মুম্বই পৌঁছানোর পর তাঁদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়৷ গতবছর মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ জানিয়েছিলেন যে কৃষকদের ৩০৫ বিলিয়ন ভারতীয় টাকার যে ঋণ রয়েছে, তা মওকুফের চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এবার কৃষকদের আন্দোলন বেগে পেলে সব দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয় রাজ্য সরকার৷
ছবি: P. Paranjpe/AFP/Getty Imagesমহারাষ্ট্র হচ্ছে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষি রাজ্য৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় তীব্র খরা দেখা দেয়৷ ফলে চরম বিপাকে পড়েন কৃষকরা৷ রাজ্যটিতে শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই আত্মহত্যা করেছেন আড়াই হাজারের বেশি কৃষক৷ তবে কৃষকদের সমস্যা শুধু মহারাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarupগত কয়েকমাস ধরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কৃষকরা নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন৷ কৃষিখাতের প্রতি সরকারের আরো সহায়তা চান তাঁরা৷ এ সব আন্দোলনে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র কৃষক এবং কৃষিখাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত দিনমজুরদের অংশগ্রহণ বেশি দেখা গেছে৷
ছবি: APঅনেক কৃষকই ঋণে জর্জরিত৷ একদিনে ঋণের কিস্তি শোধের চাপ, অন্যদিকে ফসলের ন্যায্য মজুরি না পাওয়ার কারণে তাঁদের অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে৷ মধ্যসত্ত্বভোগীরা অনেক সময় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে কৃষকদের শষ্য বিক্রি করতে বাধ্য করে৷ মোটের উপর, প্রকৃতির বৈরি আচরণও ভোগাচ্ছে কৃষকদের৷
ছবি: picture alliance/AP Photoবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষকদের ঋণ মওকুফ করা হলে তা তাঁদের অসন্তোষ কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে শষ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত নানা পর্যায়ে কৃষকদের ঠকানোর যে চর্চা রয়েছে, তা বন্ধে আরো উদ্যোগের প্রয়োজন৷ তাই কৃষকরা যাতে তাঁদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পান, তা নিশ্চিতে সরকারকে আরো সক্রিয় হতে হবে৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/R. Choudharyভারতের কৃষকদের মধ্যে এই অসন্তোষ দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে, যিনি কিনা ঘোষণা করেছিলেন পাঁচ বছরের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা হবে৷ ক্ষুব্ধ কৃষকদের শান্ত করতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচির পরিধি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা ভবিষ্যতে নির্বাচনের উপরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarupভারতের এক দশমিক তিন বিলিয়ন নাগরিকের দুই-তৃতীয়াংশই জীবিকার জন্য কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল, যদিও দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কৃষিখাতের অবদান ১৪ শতাংশ৷ গত দুই দশকে দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষ শহরে চলে আসলেও এখনো গ্রামাঞ্চলে রয়ে গেছেন অর্ধেক জনগোষ্ঠী৷
ছবি: UNI