রাতে এই ঘটনা ঘটেছে। বন্ধ পরিষেবা। তুলনায় ছোট ব্য়াংকগুলিতে এই সাইবার হামলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
যে সফটওয়্য়ারের সাহায্য়ে এই হামলা চালানো হয়েছে, তার নাম ‘র্যানসমঅয়্যার'। দেশের অন্তত ৩০০টি ব্য়াংক এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ব্য়াঙ্কগুলিতে সি এজ টেকনোলজির সাহায্য়ে পরিষেবা দেওয়া হয়। সফটওয়্যারটি ওই সি এজ টেকনোলজিতে আক্রমণ চালিয়েছে। ফলে পরিষেবা পুরোপুরি ব্য়াহত হয়েছে।
রিসার্ভ ব্য়াংক অফ ইন্ডিয়া এখনো এই হামলা নিয়ে কোনো কথা না বললেও, ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এনপিসিআই) বুধবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে এ খবর জানিয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বে রাশিয়ার সাইবার হামলার আতঙ্ক
গোয়েন্দা তথ্যের উল্লেখ করে জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা করতে পারে রাশিয়া৷ পশ্চিমের আরো কিছু দেশও এ আতঙ্কে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কিভাবে সাইবার হামলা চালাতে পারে রাশিয়া? ছবিঘরে দেখুন..
ছবি: Kacper Pempel/REUTERS
পশ্চিমা বিশ্বজুড়ে হ্যাকিং
ক্রেমলিনের স্বার্থে সাইবার যুদ্ধকে কেন্দ্রীয় নীতির অন্তর্ভুক্ত করেছিল রাশিয়া৷ এই নীতির বেশিরভাগটাই ছিল গোপনীয়৷ ক্রেমলিনে কম্পিউটার হ্যাকারদের নিয়ে একটি দল গড়ে তোলার খবর নিশ্চিত করেছিল একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম৷ এরপরই পশ্চিমা বিশ্বে রাশিয়ার সাইবার হামলার ভয়টা আরো বেশি জাঁকিয়ে বসেছে৷
ছবি: Rafael Ben-Ari/Photoshot/picture alliance
ইউক্রেনে ব্ল্যাক এনার্জি হামলা
ইউক্রেনকে অনেক সময় রাশিয়ার হ্যাকারদের ‘খেলাঘর’ বলা হয়৷ নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে তা যাচাই করতে ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়ে এসেছেন রুশ হ্যাকাররা৷ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এবার ইউক্রেনে ‘সাইবার আগ্রাসন’ চালাতে পারে রাশিয়া৷
ছবি: Dominic Lipinski/PA Wire/picture alliance
হামলা পশ্চিমের অন্য দেশেও?
২০১৫ সালে সাইবার হামলায় ব্যাহত হয়েছিল ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা৷ ওই সাইবার হামলার নামকরণ করা হয় ‘ব্ল্যাকএনার্জি’৷ ওই হামলায় অস্থায়ীভাবে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে সমস্যায় পড়েন পশ্চিম ইউক্রেনের ৮০ হাজার নাগরিক৷ কিয়েভেও হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে এক বছর পরে৷ এবার একইরকম হামলা কি পশ্চিমের অন্য দেশেও চালাতে পারে রাশিয়া? এই প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসছে বারবার৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Iamges
নিশ্চিত সাইবার হামলা?
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করার উভয় ঘটনার তদন্তের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ইউক্রেনের সাইবার নিরাপত্তা কর্মী মারিনা ক্রোৎফিল৷ তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘রাশিয়া চাইলে এমন সক্ষমতার দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে৷’’ তবে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল৷ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিসাধন বিল্ট ইন নিরাপত্তার কারণে সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছিলেন মারিনা৷ কিন্তু তবুও শঙ্কাটা রয়ে গিয়েছে৷
ছবি: Torsten Sukrow/SULUPRESS/picture alliance
নটপেটইয়া ম্যালওয়্যার
নটপেটইয়া ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে সাইবার হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছিল অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল সাইবার হামলা হিসেবে পরিচিত৷ সেই সময় কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমে প্রভাব পড়ায় এক হাজার কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল৷ গোটা পৃথিবী যেখানে মুঠোফোনে বন্দি, সেখানে এ জাতীয় হামলার ভয়ও এড়াতে পারছে না পশ্চিমা বিশ্ব৷
ছবি: Fotolia/bofotolux
হ্যাকারদের নিয়োগ ও পশ্চিমের সতর্কতা
২০১৭ সাল থেকেই কলেজের ছাত্র ও পেশাদার প্রোগ্রামারদের চাকরির প্রস্তাব দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছে রাশিয়া৷ সাইবার অপরাধ জগতের সম্ভাব্য প্রতিভার খোঁজেও প্রকাশ্যে তৎপরতা দেখা গিয়েছিল দেশজুড়ে৷ সামরিক ঘাঁটিতে স্থাপন করা সায়েন্স স্কোয়াড্রনস নামের ইউনিটে একাধিক প্রতিভাবানকে নিয়োগ করা হয়েছিল৷ তাই সাইবার অপরাধ থেকে সতর্ক থাকতে বদ্ধপরিকর পশ্চিমা শক্তিগুলি৷
ছবি: Jochen Tack/IMAGO
কলোনিয়ান পাইপলাইনে অ্যামেরিকায় হামলা
২০২১ সালের মে মাসে হ্যাকাররা মার্কিন জ্বালানি তেলের পূর্বাঞ্চলীয় নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ পাইপলাইন বন্ধ করে দেয়৷ এর ফলে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়েছিল অ্যামেরিকা৷ হামলাটি চালিয়েছিল ‘ডার্কসাইড’ নামের হ্যাকারদের একটি দল৷ অনুমান, দলটি রাশিয়াকেন্দ্রিক৷ প্রতিষ্ঠানটি কম্পিউটার সিস্টেমে নিয়ন্ত্রণ পেতে মুক্তিপণ হিসেবে হ্যাকারদের ৪৪ লাখ ডলারের বিটকয়েন দিতে বাধ্য হয়৷
ছবি: Kendall Warner/The News/AP/picture alliance
র্যানসমওয়্যার হামলার আশঙ্কা
বিশ্বের বৃহত্তম গো-মাংস প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান জেবিএসে র্যানসমওয়্যার হামলা চালায় হ্যাকারদের দল ‘আরইভিল’৷ সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা এটা ভেবে শঙ্কিত যে ক্রেমলিন হয়ত হ্যাকারদের যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যগুলোর উপর একসঙ্গে হামলা করার নির্দেশ দেবে যাতে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে বড় আকারের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়৷
ছবি: Frank Rumpenhorst/dpa/picture alliance
সাইবার হামলায় আর্থিক ক্ষতি
র্যানসমওয়্যারের মাধ্যমে হামলার ফলে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে পশ্চিমা বিশ্বে৷ এর ফলে আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে পারে তারা৷ সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে রাশিয়া৷
ছবি: Panthermedia/imago images
পাল্টা জবাব
সংবাদসংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, ইউক্রেনকে রক্ষা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হ্যাকারদের একটি বাহিনী সাইবারস্পেসে গড়ে উঠছে৷ প্রায় ২৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী হ্যাকার যোগ দিয়েছেন ‘তথ্য প্রযুক্তি বাহিনী’-তে৷ রাশিয়াকে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত তারা, উল্লেখ করা হয়েছে এ কথা৷ রয়েছে টেলিগ্রাম গ্রুপও৷ তবে এ হামলায় কী ধরনের জবাব দেয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে৷ সাইবার যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Jakub Porzycki/NurPhoto/imago images
10 ছবি1 | 10
দেশের বড় শহরের বাইরে গ্রামে-মফস্বলে অন্তত দেড় হাজার ছোট এবং মাঝারি মাপের ব্য়াংক আছে। এই ধরনের ব্য়াংককে সমবায় এবং আঞ্চলিক ব্য়াংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। চলতি কথায় একে কৃষক-মজুরদের ব্য়াংক বলেও চিহ্নিত করেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। কারণ গ্রামে গ্রামে এই ধরনের ব্য়াংকেই টাকা রাখেন কৃষক-মজুরেরা। সরকার তাদের যে টাকা দেয়, তা-ও এই ব্য়াংকগুলিতেই জমা হয়।
বুধবার যে সাইবার আক্রমণ হয়েছে, তাতে এই ব্য়াংকগুলিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে সফটওয়্য়ার এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা দিয়ে মূলত খুচরো টাকা লেনদেন করা হতো। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাইবার হামলা হয়েছে, এটা বোঝার পর সি এজ টেকনোলজি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওই ব্য়াংকগুলিতে। ফলে আপাতত ওই ব্য়াংকগুলি থেকে কেউ টাকা লেনদেন করতে পারবেন না।
ভারতীয় ব্য়াংকগুলিতে যে সাইবার হামলা হতে পারে, তা অনেকদিন ধরেই আশঙ্কা করছিল সাইবার ক্রাইম দপ্তর। বড়-ছোট সমস্ত ব্য়াংককেই সতর্ক করা হয়েছিল। বুধবারের ঘটনার পর বড় ব্য়াংকগুলিকে নতুন করে সতর্ক করা হয়েছে।
তবে কারা এবং কেন এই হামলা চালালো, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এই ঘটনায় বিদেশি কোনো শক্তির হাত আছে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়।