1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে দলিত রাজনীতি

৭ এপ্রিল ২০০৯

ধর্মভিত্তিক রাজনীতির রক্তাক্ত কাহিনী ইতিহাসের আয়নায় খুঁজলেই হয়তো পাওয়া যায়৷ এমন কি ভারতবর্ষেও৷ জন্ম থেকে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান - কারুরই মস্তিস্ক আলাদা নয়৷

যারা দলিত নামে চিহ্নিত, তাদের সংখ্যা ১৬ কোটির মতো৷ছবি: AP

তবুও, জাতিভেদ প্রথার বেড়াজালে তৈরি হয় অধম মানুষ এবং উত্তম মানুষ বা ব্রাহ্মণ ব্রাত্য তৈরি করার অভিযান৷

যা এই একবিংশ শতাব্দিতে থেমে না গেলেও, পেয়েছে এক নতুন মাত্রা৷ আধুনিক ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে উঠে এসেছে এক নতুন শক্তি৷ দলিত৷

ভারতে জাতপাতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে দলিত ইস্যু, আজ স্রেফ এক আর্থ-সামাজিক বিষয় নয়৷ এর রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম৷ ২০০১ সালের জন গণনায়, সমাজের সব থেকে নীচু জাতি, যারা দলিত নামে চিহ্নিত, তাদের সংখ্যা ১৬ কোটির মতো৷ এর সঙ্গে অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণী, যেমন তপসিলি জাতি, উপজাতি ও অনগ্রসর সম্প্রদায়কে নিলে, মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫২%৷ এদের অধিকাংশই দলিত হিন্দু৷ পেশায় মুচি, মেথর, হাড়ি, ডোম আর ভূমিহীন ক্ষেত-মজুর৷

মহাত্মা গান্ধী দলিতদের হরিজন বা ঈশ্বরের সন্তান নাম দিলেও, তাতে এদের অবস্থার ইতর বিশেষ কিছু হয়নি৷ আজও এরা অচ্ছুত৷ এদের মন্দিরে যাবার অধিকার নেই, উচ্চবর্ণের স্কুলে যাবার অধিকার নেই, উঁচু জাতের সঙ্গে এক কুঁয়ো থেকে জল নেবার অধিকার নেই৷ এমন কী একই শশ্মানে দাহ করারও অধিকার নেই৷ জাতিভেদের এই নিষ্ঠুর প্রথায় অনেকে ধর্মান্তরিত হয়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন৷ নব-বৌদ্ধ বলে পরিচিত হন৷ ভারতের সংবিধান রচয়িতা বি.আর আম্বেদকর এদেরই একজন৷ ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের একটা বড় রাজনৈতিক কারণ এই ধর্মান্তর৷ ভারতীয় সংবিধানে দলিতদের আর্থ-সামাজিক বিকাশে কোটা সিস্টমের যে সংস্থান আছে, তা শুধু হিন্দু দলিতদের জন্য, ধর্মান্তরিত দলিতদের জন্য নয়৷

বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী কি হতে পারবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?ছবি: UNI

ভারতের গণতন্ত্র কিন্তু সব দলিতকে দিয়েছে পূর্ণ ভোটাধিকার৷ দিয়েছে সরকার গঠনের ক্ষমতা৷ কিন্তু কোনোদিনই এরা কেন্দ্রে সরকার গড়তে পারেনি৷ ২০০৯ এর নির্বাচনী মানচিত্রটা দলিত ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেনীর ভোটে কী পাল্টে যেতে পারে? অবিসংবাদী দলিত নেত্রী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, বহুজন সমাজপার্টি সংক্ষেপে বিএসপির চেয়ারপার্সন মায়াবতী বলেছেন, পারে৷ যেমন করে তিনি পেরেছেন ২০০৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে দলিত ভোটের জোরে৷ কিন্তু সেটাতো একটা রাজ্যে৷ সংসদীয় নির্বাচনে দিল্লির মসনদ কী উনি দখল করতে পারবেন?

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি নাও পারেন, তবু তাঁর দল বিএসপি একটা আঞ্চলিক দল থেকে উঠে আসবে জাতীয় স্তরে৷ সর্বভারতীয় ভোট-বেস্ বাড়াতে মায়াবতী তাই উত্তর প্রদেশের পরিবর্তে তাঁর নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন দক্ষিণী রাজ্য থেকে৷ দেশের সব রাজ্যের দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে আত্মিক ও আবেগের সম্পর্ক স্থাপন করতে চান যা তাঁর পূর্বসুরী বি আর আম্বেদকর, জগজীবন রাম থেকে কাঁসিরাম, কেউ করতে পারেননি৷

তামিলনাড়ুতে প্রায় ২০% শতাংশ দলিত৷ এদের ৯০ শতাংশ ভোট দেয়৷ মায়াবতী তামিল নাড়ুর ৪০টি আসনের সবকটিতেই প্রার্থী দিয়ে রাজ্যের দলিত ভোট টানতে চাইছেন৷ যদিও রাজ্যের দলিত পার্টি ডিএমকে তাতে ভাগ বসাবে৷ কিন্তু ডিএমকে আবদ্ধ শুধু তামিলনাড়ুর গন্ডিতেই৷ অতীতে মহারাষ্ট্রের দলিত ভোট যেত কংগ্রেসের ঝুলিতে৷ গত নির্বাচনে গেছে বিএসপির বক্সে৷ মায়াবতী এবার মহারাষ্ট্রে ৪৮টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছেন৷

কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীছবি: AP

বিহারকে বলা হয় দলিত রাজ্য৷ ২১% শতাংশ দলিত ভোট৷ রাজ্যের রণবীর সেনা নামে উঁচু জাতের জোতদারদের লেঠেল বাহিনী, দলিত-বিরোধী৷ সহিংস পথে দলিতদের দাবিয়ে রাখতে চায়৷ এরই বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে জন্ম নেয় সহিংস মাওবাদী আন্দোলন৷ ছড়িয়ে পড়ে ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশে৷ এরা ভোট বর্জনের আওয়াজ তুলেছে৷ এদের ভোট বাক্সের দিকে ফেরাতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার মহাদলিত কমিশন বসিয়েছেন৷ হাতে নিয়েছেন ৪০০ কোটি টাকার দলিত কল্যাণ কর্মসূচী৷ অতীতে রাজ্যের দলিত ভোট যেত দলিত রাজ্য রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি ও আরজেডির দিকে৷ এবারে বিহারের দলিত সম্প্রদায় চাইছে পরিবর্তন৷ সেটা বুঝতে পেরে মায়াবতী হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁদের দিকে৷ রাজ্যের সবকটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছেন৷

উত্তর প্রদেশের দলিতরা প্রধানত: ভূমিহীন ক্ষেতমজুর৷ সেখানেও দলিতের ওপর জমির মালিকের অত্যাচার৷ ঘটছে সহিংস সংঘর্ষ৷ মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী, উচ্চবর্ণ ও দলিতদের মধ্যে সুকৌশলে একটা রাজনৈতিক সমীকরণের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জমি শক্ত করে আজ প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্নে মশগুল৷ সে স্বপ্নে সরকার হবে কিনা তা নির্বাচনের ফলাফলই বলবে৷ তবে দলিতদের রাজনৈতিক চেতনা, গণতান্ত্রিক নব জাগরণে, মায়াবতী নিঃসন্দেহে এক চালিকা শক্তি৷

মানবাধিকারের প্রশ্নে রাষ্ট্র ক্ষমতার সঙ্গে মানুষের যেন সাপে-নেউলে সম্পর্ক৷ যুগ যুগ ধরে বৈষম্য আর বঞ্চনার শিকার হয়েছে ভারতের পিছিয়ে পড়া আদিবাসী গোষ্ঠী, গরিব কৃষক এবং সমাজ ব্যবস্থার এক্কেবারে নীচু স্তরে বসবাস দলিতদের৷ ব্রাহ্মণ আর দলিতের মধ্যে মানসিকতার ফারাক না থাকলেও, সমাজে দলিতরা যেন পণ্য ছাড়া আর কিছুই নয় ! আর তাই, সুযোগ পেলে উঁচু জাতের হিন্দুরা এখনও দলিতদের ওপর অত্যাচার চালায়৷ তাদের হত্যা করে, ধর্ষণ করে অথবা লুট করে নেয় সমস্ত সম্পত্তি৷ কিন্তু সে আর কতোদিন? ইতিমধ্যেই দলিত রাজনীতি ভারতীয় নির্বাচনে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে৷

প্রতিবেদক: অনিল চট্টোপাধ্যায়, দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারুক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ