ট্রাম্পের আরো ২৫ শতাংশ শুল্ক, ভারত বললো 'অন্যায় ও অযৌক্তিক'
৭ আগস্ট ২০২৫
ভারতের উপর আরো ২৫ শতাংশ শুল্ক বসালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। দিল্লি জানালো, এটা অন্যায় ও অযৌক্তিক।
ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসালেন ট্রাম্প। ভারত বললো, অন্যায়। ছবি: Andrew Caballero-Reynolds/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবারই ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালু রাখার জন্য তিনি একদিনের মধ্যে ভারতের উপর আরো শুল্ক বসানোর ঘোষণা করবেন। বুধবার তিনি প্রশাসনিক নির্দেশে সই করে ভারতের উপর আরো ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর আগে তিনি ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসিয়েছিলেন। ফলে সবমিলিয়ে ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্কবসানো হলো। শুধুমাত্র ব্রাজিল ও ভারতের উপরেই ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়া বিবৃতি দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, আমরা আগেই এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলাম। আমরা জানিয়েছিলাম, ''আমাদের আমদানি সবসময় বাজারের উপর নির্ভর করে এবং ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করি। তাই এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক যে কারণে বসিয়েছে, সেই একই কাজ বিশ্বের অনেক দেশই তাদের নিজেদের জাতীয় স্বার্থে করে।''
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''আমরা আবার জানাচ্ছি, এই সিদ্ধান্ত অন্যায্য ও অযৌক্তিক। ভারত তার জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।''
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর আগে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ''ইউক্রেন সংঘাতের পর ভারত একাই রাশিয়ার পণ্য আমদানি করছে এমন নয়। ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়া থেকে শুধু জ্বালানি কিনছে তাই নয়, তারা সার, খনিজ দ্রব্য, রাসায়নিক, ইস্পাত এবং পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানি করছে। অ্যামেরিকাও তাদের পরমাণু শিল্পের জন্য রাশিয়া থেকে হেক্সাফ্লোরাইড, ইলেকট্রিক ভেহিকেলের জন্য প্যালাডিয়াম, সার ও অন্য়ান্য রাসায়নিক আমদানি করছে।''
ট্রাম্পের শুল্কের চাপ বিশ্বব্যাপী যেমন প্রভাব ফেলতে পারে
ঘোষণার এক সপ্তাহ পর ৯০ দিনের জন্য পারস্পরিক শুল্ক স্থগিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ছবিঘরে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কোথায় কী প্রভাব ফেলতে পারে তার বিস্তারিত...
ছবি: Mark Schiefelbein/AP Photo/picture alliance
শুল্কের ঘোষণা
২ এপ্রিল বিশ্বের সব দেশের পণ্য আমদানির উপর নানা হারে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ঘোষণার এক সপ্তাহ পর অবশ্য চীন, ক্যানাডা ও মেক্সিকো ছাড়া বাকি রাষ্ট্রগুলোর উপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প৷ ৯০ দিন পর যদি এই শুল্ক তিনি আবার আরোপ করেন, তাহলে ভোক্তা পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি- সব জায়গাতেই এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের৷
ছবি: Jim Lo Scalzo/UPI Photo/Newscom/picture alliance
মার্কিন শুল্কের ইতিহিস
অ্যামেরিকার বাণিজ্যের শুরুর দিক থেকেই শুল্ক আরোপের ইতিহাস রয়েছে৷ দেশটি ১৮২০ সালে বিদেশি পণ্যের উপর ৩০ ভাগের মতো শুল্ক আরোপ করেছিল৷ ১৯৩০ সালে ফেডারেল ইনকাম ট্যাক্স দপ্তর গঠনের পর থেকে শুল্ক কমাতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র৷ ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শুল্ক নিয়ে চীনের সাথে বাদানুবাদ শুরু হয়৷ ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে, অর্থাৎ, ১৮২০ সালের দুইশ বছর পর মার্কিন শুল্কের হার আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে৷
ছবি: Liu Jie/Xinhua/IMAGO
শুরু হয় ‘শুল্ক-যুদ্ধ’
ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ করে, যা আগে ছিল ৩৪ শতাংশ৷ পাল্টা জবাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ চীনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ট্রাম্পের প্রাথমিক ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের উপর শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নও৷ যদিও ট্রাম্পের স্থগিতাদেশের ঘোষণায় পিছু হটে ইইউ৷
ছবি: Mark Schiefelbein/AP Photo/picture alliance
তেলের দাম, শেযার বাজার
ট্রাম্পের ঘোষণার সাথে সাথেই অস্থিরতা দেখা যায় তেল ও শেয়ারের বাজারে৷ তেলের দাম কমেছে প্রতি ব্যারেলে ৫০ ডলার পর্যন্ত৷ ভয়াবহ পরিস্থিত তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারে৷ মন্দার আশঙ্কায় ট্রাম্পের ঘোষাণার প্রথম দুই দিনে শুধুমাত্র মার্কিন শেয়ারবাজার ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার হারিয়েছে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP
অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা
পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করা হলে চলতি বছরের শেষের দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান জে পি মর্গ্যান জানায়, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর চলতি বছরের শেষ নাগাদ মন্দার শঙ্কা ৬০ ভাগে দাঁড়িয়েছে৷ অর্থনৈতিক মন্দা চরম পর্যায়ে গেলে ভূগতে হবে বিশ্বের প্রায় সব মানুষকেই৷
ছবি: Gregor Fischer/Getty Images
প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কা
শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়বে আমদানি-রপ্তানিতে৷ এর ফলে বিভিন্ন দেশের আশানুরূপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব না-ও হতে পারে৷ ২ এপ্রিল ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ইউরোপের দেশ ইটালি চলতি বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এক দশমিক দুই থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ছয়-এ নামিয়ে এনেছিল৷ অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ফলে চলতি বছর জার্মানির জিডিপি প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক এক ভাগে নেমে আসতে পারে৷
ছবি: natatravel/Depositphotos/IMAGO
ক্রেতাদের ভোগান্তি
শুল্ক আরোপের প্রভাব পণ্যের দামের উপর পড়বেই৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশে অধিক শুল্কের মাশুল সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলবে৷ শুধু তাই নয়, পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন শুল্ক বাড়ানোয় তার প্রভাবও ক্রেতাদের উপর পড়বে৷
ছবি: Frank Hoermann/SVEN SIMON/IMAGO
ক্ষতিগ্রস্ত হবে উৎপাদন
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাণিজ্যে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, এমনটাই মনে করেন সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনাভির্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জান-ইন চোং৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, এই শুল্ক বিশ্বব্যাপী পণ্যের চাহিদার উপর প্রভাব ফলেবে, যার প্রভার পড়বে উৎপাদনে৷
ছবি: CFOTO/NurPhoto/IMAGO Images
বাজারে অবস্থান হারাতে পারে অনেক দেশ
ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো, যাদের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, সেই দেশগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বাজারে তাদের অবস্থান হারাতে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের৷ এর প্রভাব এমন দেশগুলোর অর্থনীতিতে মারাত্মকভাবে পড়তে পারে৷
ছবি: Joy Saha/ZUMA Press Wire/picture alliance
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও বাণিজ্য জোটে প্রভাব
বাণিজ্য ক্ষত্রে অনিশ্চিয়তা ফলে অনেক দেশ নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগী খুঁজে পাওয়ার দিকে ধাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা অনেক বিশেষজ্ঞের৷ এরই মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে চীনের সাথে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছে অনেক দেশ- এমনটাই দাবি সিঙ্গাপুরের গবেষণা সংস্থা আইএসইএএস-ইউসোফ ইশাক ইনস্টিটিউটের এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টিনা ফং৷
ছবি: Ute Grabowsky/photothek/picture alliance
অসমান্তরাল বাণিজ্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে যেমন ক্ষতির মুখে ফেলবে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ঠিক ততটাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ এক নিবন্ধে বিজনেস হার্ভার্ড রিভিউ ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ৩৬০ ডিগ্রির বাণিজ্য যুদ্ধ বলে মন্তব্য করে৷
ছবি: Anna Moneymaker/Getty Images
11 ছবি1 | 11
ট্রাম্প যা বলেছেন
প্রশাসনিক নির্দেশে ট্রাম্প বলেছেন, ''রাশিয়ার নীতি ও কাজ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতিকে অস্বাভাবিক ও অসাধারণ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এই জাতীয় জরুরি অবস্থায় আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভারতের পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানোটা জরুরি। ভারত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে।''
নির্দেশে ট্রাম্প বলেছেন, অন্য কোনো দেশ রাশিয়া থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তেল কিনছে কিনা, তা দেখার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বলেছেন। অন্যরা তেল কিনলে তাদের উপরেও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে কিনা, সেই বিষয়েও মতামত জানাতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে ভারতকে ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছেন। ভারতকে ভয় দেখিয়ে অন্য়ায় বাণিজ্য চুক্তিতে বাধ্য করাতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত, জাতীয় স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দেয়া।''
কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের মত হলো, ''ট্রাম্পের এই ঘোষণা ভারতের কাছে সুখবর নয়। এর ফলে অ্যামেরিকায় ভারতীয় জিনিসের দাম অনেক বেড়ে যাবে এবং অনেক মানুষ তা কিনতে পারবেন না। ভিয়েতমান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন্স, এমনকী বাংলাদেশের উপর শুল্কের হার ভারতের থেকে অনেক কম। ফলে অ্যামেরিকার মানুষ অন্য দেশ থেকে আসা কম দামে জিনিস পাবে। এর ফলে আমাদের অন্য দেশের বাজারের দিকে তাকাতে হবে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, ইইউ-র সঙ্গে কথা চলছে। তবে স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে ট্রাম্পের ঘোষণা ভারতের কাছে ধাক্কা।''
রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ওব্রায়েন সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেছেন, ''ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে ৫৬ ইঞ্চি কী বলবেন? এখন আমরা বুঝতে পারছি মোদী ও তার জোট কেন সংসদ চলার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে।''