এক সময় অরুণাচালাম মুরুগানানথাম, ওরফে মুরুগাকে কেউ চিনতো না৷ এমনকি নিজের স্ত্রীও ‘পাগল' আর ‘বিকৃতমনস্ক’ ভেবে তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করেছিল৷ কিন্তু আজ ভারতে তো বটেই, বিদেশেও মুরুগাকে অনেকে চেনেন৷ তিনি যে ভারতের ‘ঋতুস্রাব পুরুষ'!
ছবি: Imago
বিজ্ঞাপন
ঋতুস্রাবের সঙ্গে একজন পুরুষের কী গভীর সম্পর্ক থাকতে পারে, সেটা অরুণাচালাম মুরুগানানথামের গল্পটা না জানলে বুঝতে পারবেন না৷ দক্ষিণ ভারতের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া মুরুগানানথাম এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, যা দেশের অগুনতি দরিদ্র নারীকে মাসিকের লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছে৷ সস্তা এবং টেকসই একটা ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন' মুরুগানানথাম পৌঁছে দিয়েছেন ভারতের গ্রামে গ্রামে, দিয়েছেন অস্বস্তিক এক সমস্যার সহজ সমাধান৷ তাই তো তিনিই ভারতে স্যানিটারি প্যাড বিপ্লবের নেপথ্যের নায়ক!
অরুণাচালাম মুরুগানানথাম, ওরফে মুরুগার গল্পের শুরু ১৯৯৮ সালে৷ সদ্য বিয়ে করেছেন৷ একদিন দেখলেন, স্ত্রী তাঁর কাছ থেকে কিছু একটা লুকোনোর চেষ্টা করছেন৷ জোর করেই দেখতে চাইলেন জিনিসটা কী৷ দেখলেন, ঋতুস্রাবের কারণে একটা নোংরা ন্যাকড়া ব্যবহার করছেন তাঁর স্ত্রী, শান্তি৷ টাকা খরচ করে স্যানিটারি প্যাড কেনার সাধ্য যে তাঁর নেই...৷ খুব কষ্ট পেলেন মুরুগা৷ পরের মাসে নিজেই স্যানিটারি প্যাড কিনে আনলেন স্ত্রীর জন্য৷ কিন্তু অবাক হলেন – কাপড়ে মোড়ানো দশ গ্রাম তুলোর একটি প্যাডের দাম এত? খোঁজ নিয়ে জানলেন, গ্রামের বেশিরভাগ মেয়েরই আসলে স্যানিটারি প্যাড কেনার সাধ্য নেই৷
কীভাবে কম খরচে দরিদ্র মেয়েদের জন্য স্যানিটারি প্যাড তৈরি করা যায়? অনেক চেষ্টা, অনেক পরিশ্রম, এমনকি নিজে স্যানিটারি প্যাড পরে নানা গবেষণার পর মুরুগানানথাম উদ্ভাবন করলেন এমন একটা মেশিন, যা দিয়ে খুব সস্তায় প্যাড তৈরি করা যায়৷
তাঁর সেই মেশিন একটা সময় জাতীয় পুরস্কার পায়৷ স্ত্রীও ফিরে আসেন ঘরে৷ আর আজ, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে অরুণাচালাম মুরুগানানথামের স্যানিটারি প্যাড তৈরির মেশিন৷ শুধু তাই নয়, গ্রামের মেয়েদের জন্য কর্মসংস্থানও করেছেন মুরুগা৷ এখন গ্রামের দরিদ্র মহিলারাই এসব মেশিনে স্যানিটারি প্যাড তৈরি করছেন, তারপর সেই প্যাড বিক্রিও করছেন তাঁরাই৷
ডিজি/এসিবি
ভিডিওটা দেখলেন? মুরুগানানথামকে কি আপনি বিকৃত মনের মানুষ বলবেন? জানান নীচের ঘরে৷
মেয়েদের গোপন সমস্যায় ঔষধি গাছ
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই মেয়েদের কিছু সমস্যা ঘুরে ঘুরে আসে প্রতিমাসেই৷ তখন শরীর যত না খারাপ থাকে, তার চেয়েও মেজাজ থাকে বেশি খারাপ৷ সে সময়ে সাহায্য করতে পারে এমন কিছু ঔষধি গাছের কথা জানিয়েছেন এক জার্মান বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: Colourbox/L. Dolgachov
নানা সমস্যা
পিরিয়ড বা মাসিক হওয়ার আগে, পরে, চলাকালীন অবস্থায় এবং পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার পরও অনেকের মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, কোমর ব্যথা, পা ব্যথা, বমিভাব, ওজন বাড়া, খিঁচুনি, মেজাজ খারাপ, ঘুমের ব্যঘাত, বার বার টয়লেটে যাওয়া, ত্বকের সমস্যা, নার্ভাসনেস – এ ধরণের নানা সমস্যা হয়ে থাকে, মূলত শরীরের হরমোনজনিত কারণে৷
ছবি: Fotolia/Picture-Factory
হরতকি বা ‘সেন্ট জন্স ওয়ার্ট’
পিরিয়ডের সময় অনেকেই বিষন্নতায় ভোগেন, যা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত৷ তাই এক চামচ হরতকি বা হরিতকি, জার্মানে যা কিনা ‘ইয়োহানেস ক্রাউট’, ১৫০ মিলি লিটার ফুটন্ত পানিতে ঢেলে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন৷ এই চা সকালে ও রাতে এক-দুই কাপ পান করুন, দেখবেন শরীরকে কেমন ঝরঝরে হয়ে গেছে! এই ঔষধি পাতার তৈরি ট্যাবলেট, ক্যাপস্যুল এবং রস বাজারে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hummel
পা ব্যথা, খিঁচুনিতে ক্যামেলিয়া
মাসিকের সময় পা দুটোয় কেমন যেন ব্যথার ভাব বা খিঁচুনির মতো লাগে, প্রায় সকলেরই৷ পরিপাক নালিতেও অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়৷ এক্ষেত্রে ১৫০ মিলি লিটার ফুটন্ত পানিতে তিন চামচ ক্যামেলিয়া ফুল ছেড়ে দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ঢেকে রাখুন৷ এমন ক্যামেলিয়া চা প্রতিদিন তিন-চার কাপ পান করলে খুব আরাম হয়৷ ক্যামেলিয়ার গুণের কথা অবশ্য অনেকেরই জানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
নিসিন্দা গাছ বা ‘চেইস্ট ট্রি’
অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সময় কেমন যেন এক অস্থিরতা কাজ করে শরীর, স্তনে ও মনে৷ এ থেকে মুক্তি পেতে সেবন করুন নিসিন্দা গাছের নির্যাস থেকে তৈরি ট্যাবলেট, ক্যাপস্যুল বা ড্রপ৷ জার্মান ভাষায় একে বলে ‘ম্যোন্শফেফার’৷ তবে এটি কমপক্ষে তিন মাস নিয়মিত খেতে হবে৷ তবে যাঁদের সবসময়ই অনিয়মিত পিরিয়ড হয়, তাঁদের স্ত্রী বিশেষজ্ঞকে দেখানোই শ্রেয়৷
ছবি: imago/blickwinkel
মেনোপজে সালবাই বা ‘সেইজ’
যাঁদের বয়স ৩৫ বা তার বেশি, তাঁদের মেয়েলি সমস্যা বা মেনোপজ-এর সময় সালবাই পাতা বেশ উপকারী৷ সালবাই বা সেইজ পাতা, বাংলাদেশে যা বাবুই তুলসী বলে পরিচিত, অন্যান্য চায়ের মতোই ফুটন্ত পানিতে একটু বেশিক্ষণ, অর্থাৎ দশ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন এবং প্রতিদিন তিন থেকে চার কাপ পান করুন৷ এমনটা করলে উপকার হবেই, জানান ডা. ইয়োর্গ গ্রুনভাল্ড৷
ছবি: Fotolia/steheap
সয়াবিন বা সয়ার বিচি
মাসিক বা মেনোপজ-এর সমস্যায় সয়াবিন, সয়ার বিচি, বিভিন্ন ধরণের ডাল খুবই উপকারী৷ এশিয়ার দেশগুলোতে মুগের ডাল বা অন্যান্য ডালের বিচি নিয়মিত খাওয়া হয় বলে এশীয় নারীদের এ ধরণের সমস্যা ইউরোপীয় বা অ্যামেরিকানদের তুলনায় অনেক কম হয়ে থাকে৷ তাছাড়া ডালে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন৷ তাই ডাল সকলের জন্যই উপকারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আয়ত্বে রাখুন
মাসিকের আগে, পরে বা চলাকালীন মেয়েরা কিছুটা সচেতন থাকলে শরীর ও মন দুটোই ভালো রাখা সম্ভব৷ এর মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা একটা বড় শর্ত৷ এছাড়া পিরিয়ড প্রতিমাসে হবেই৷ তাই মাসিকের কথা ভুলে গিয়ে মনকে নিজের আয়ত্বে রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ এ কথা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ডা. ইয়োর্গ গ্রুনভাল্ড৷