ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ভারতের বিভিন্ন মহলে চলছে জোর বিচার-বিশ্লেষণ৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক ভারত নীতিতে কোনো নাটকীয় পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না কেউ৷
বিজ্ঞাপন
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের মসনদে বসলেন রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ গোটা বিশ্বের সঙ্গে ভারতেও নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মূল্যায়ন এবং ভারতের ওপর তার প্রভাব নিয়ে হিসেব-নিকেশ শুরু হয়েছে৷ সকলেই বলছেন, প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের নির্বাচন এই মূহূর্তে ভারতের পক্ষে ইতিবাচক হবে নাকি নেতিবাচক হবে, তা বলার সময় আসেনি৷ অর্থাৎ বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথ অপরিবর্তিত থাকবে বলেই মনে হয়৷ মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির একটা ছক আছে, সেটা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না৷
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি ভাষণ থেকে কোনো সূত্র বের করা মুশকিল৷ কারণ তাঁর মতিগতি বোঝা দায়৷ ডেমোক্র্যাটিক দলের হিলারি ক্লিন্টনের দৃষ্টিভঙ্গি বা নীতি সম্পর্কে আমরা একটা ধারণা করতে পারি, কিন্তু ট্রাম্প কী করতে পারেন আর পারেন না – সে বিষয়ে পূর্ব-ধারণা করা এখনি সম্ভব নয়৷''
নির্বাচনি ভাষণে ট্রাম্প হিন্দু ভোট সুসংবদ্ধ করার কথা বলেছিলেন৷ হিন্দু বলতে তিনি স্বাভাবিকভাবেই ভারতকে বুঝিয়েছেন৷ পরমাণু সরঞ্জাম সরবরাহকারী দেশগোষ্ঠী বা এনএসজিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তির জন্য ওবামা চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ চীনের বিরোধিতায় তা আটকে আছে৷ ট্রাম্পও এ বিষয়ে চীনকে রাজি করাতে প্রাণ ঢেলে দেবেন বলে মনে হয় না৷
কোন কোন রাজ্যে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প ও হিলারি
সিএনএন-এর দেওয়া তথ্যমতে, শেষ পাওয়া ভোটের ফলাফলে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৮৯ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট৷ আর হিলারি পেয়েছেন ২১৮টি৷ সর্বমোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ২৭০ ভোট৷
ছবি: Reuters/A. Wroblewski
ক্যালিফোর্নিয়া (৫৫টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি৷ তিনি পেয়েছেন ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট আর ট্রাম্প ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
টেক্সাস (৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে ট্রাম্প জয়ী৷ ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প, ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি৷
ছবি: picture-alliance /newscom/M. Graff
নিউ ইয়র্ক (২৯টি ইলেকটোরাল ভোট)
এখানেও হিলারি জিতেছেন৷ পেয়েছেন ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট৷ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W. Lee
ফ্লোরিডা (২৯টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী ট্রাম্প৷ তিনি পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ ভোট এবং হিলারি পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/A. Wroblewski
পেনসিলভেনিয়া (২০টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প৷ তার পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং হিলারির পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইলিনয় (২০টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি পেয়েছেন ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট, অন্যদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/M. Anzuoni
ওহায়ো (১৮টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী ট্রাম্প পেয়েছেন ৫২ দশমিক ১ শতাংশ ভোট এবং হিলারি পেয়েছেন ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
জর্জিয়া (১৬টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী ট্রাম্প পেয়েছেন ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট এবং হিলারি পেয়েছেন ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
নর্থ ক্যারোলাইনা (১৫টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী ট্রাম্প পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট৷ অন্যদিকে হিলারি পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/B. Pugliano
নিউজার্সি (১৪টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি পেয়েছেন ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট৷ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪২ শতাংশ৷
ছবি: REUTERS/B. Snyder
ভার্জিনিয়া (১৩টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট, ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/B. Snyder
ওয়াশিংটন (১২টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি পেয়েছেন ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট, ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/C. Barria
ম্যাসেচুসেটস (১১টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি পেয়েছেন ৬১ শতাংশ ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/A. Latif
অ্যারিজোনা (১১টি ইলেকটোরাল ভোট)
ট্রাম্প এই রাজ্যে জয়ী৷ তিনি পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ আর হিলারি পেয়েছেন ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট৷
ছবি: Reuters/A. Wroblewski
14 ছবি1 | 14
বরং তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত ও চীনকে একই বন্ধনিতে রাখতে চাইবেন, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য কারণে৷ তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বাড়াতে ট্রাম্প ‘আউটসোর্সিং'-এর বিরোধী৷ অথচ ভারতীয় তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থাগুলি তো এর দৌলতেই দাঁড়িয়ে আছে? এ প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উদয়ন বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা নতুন কথা নয়৷ ওবামাও একসময় এ কথাই বলেছিলেন৷ কিন্তু মার্কিন কোম্পানিগুলি কম পয়সায় ভারতের দক্ষ তথ্য-প্রযুক্তি কর্মী হাতছাড়া করতে চাইবে না সহজে৷'' মোদ্দা কথা, ট্রাম্প আপাতদৃষ্টিতে ভারতবিদ্বেষী নন, এমনটাই মনে করেন তিনি৷
ওদিকে প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. অমল মুখোপাধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে দেখছেন অশনিসংকেত৷ এক সাক্ষাত্কারে ডয়চে ভেলেকে সোজাসাপটা ভাষায় তিনি বলেন, ‘‘ট্রাম্পের জয় উগ্র মার্কিন জাতীয়তাবাদেরই প্রমাণ, যা সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে বেনজির৷ দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যা হওয়া উচিত ছিল, তা না হওয়ায় অভিবাসী এবং বহিরাগত নীতিতে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী বলে আমি মনে করি৷ সবথেকে দুশ্চিন্তার কথা ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি যুদ্ধমুখী৷ অ্যামেরিকাকে বিশ্বের সামনে বড় করে তুলে ধরার চেষ্টা করতে পারেন তিনি৷
নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য যা অপেক্ষা করছে
নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বদেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সমস্যা ও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে, যার উপর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়, সেই সঙ্গে আধা দুনিয়ার ভালো-মন্দ নির্ভর করবে৷ কী ভাবছেন দুই প্রতিযোগী এই সব সমস্যা সম্পর্কে?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Nelson
বারাক ওবামা যা করে যেতে পারেননি
তার মধ্যে প্রথমেই আসে স্বাস্থ্য বীমার সংস্কার৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের কোনো স্বাস্থ্য বীমা নেই, এছাড়া আছে চলতি বীমা পদ্ধতির নানা ঘাটতি ও দুর্বলতা৷ এর বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘ওবামাকেয়ার’ কিছুদূর এগোলেও, এখনও অনেক কাজ বাকি৷ এছাড়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও অবকাঠামোর চরম দুরবস্থার কথা ভুললে চলবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
ধনি-দরিদ্রের ব্যবধান
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধিকাংশ সমর্থক যে পর্যায়ের মানুষদের মধ্য থেকে উঠে এসেছেন, তারা হলেন শিল্পায়ন পরবর্তী যুগের অ্যামেরিকায় যারা সবচেয়ে বেশি হারিয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ বড় বড় শহরগুলি ছেড়ে একটু বাইরে গেলেই সে ধরনের অবক্ষয় চোখে পড়ে: রোগগ্রস্ত, অসুস্থ মানুষ; উপেক্ষিত, অবহেলিত শিশুরা যাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই৷ এই ব্যবধান থেকেই জন্ম নিয়েছে এক নতুন পরস্পরবিরোধিতা৷
ছবি: picture alliance/U. Baumgarten
ইরান
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিকে ‘‘ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চুক্তিগুলির মধ্যে একটি’’ বলে খারিজ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে এই চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলাপ-আলোচনা করবেন৷ অপরদিকে হিলারি ক্লিন্টন এই চুক্তিকে ‘‘মহান কূটনীতি’’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে ইরানের প্রতি ক্লিন্টনের মনোভাব অতীতে বেশ কড়াই ছিল এবং তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চেয়ে বেশি ইসরায়েল ঘেঁষা বলে কথিত৷
ছবি: Colourbox/Getty Images
সিরিয়া
ক্লিন্টন সিরিয়ায় নো-ফ্লাই জোন স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ‘সেফ জোন’ কামনা করেছেন৷ নো ফ্লাই জোন থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের বিপদ বাড়বে, বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷ ট্রাম্প তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, ‘‘আমাদের আইএস-এর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, সিরিয়ার দিকে নয়’’৷ বস্তুত তাঁদের প্রথম ৯০ মিনিটের টেলিভিশন বিতর্কে ২২ বার আইএস-এর নাম করা হলেও, আলেপ্পোর নাম করা হয়েছিল মাত্র একবার৷
ছবি: Reuters/A.Ismail
রাশিয়া
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের একটি রেস্টুরেন্টের দেয়ালে আঁকা ছবি, যাতে ট্রাম্পের সম্ভাব্য পুটিন-প্রীতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে৷ ট্রাম্পকে পরে বলতে শোনা গেছে, ‘‘আমি পুটিনকে চিনি না....রাশিয়া সম্পর্কেও কিছু জানি না’’৷ তবে রাশিয়ার সঙ্গে মিলে আইএস-এর মোকাবিলা করলে ভালো হয়, বলে তাঁর ধারণা৷ অপরদিকে ক্লিন্টনের দৃষ্টিতে ক্রেমলিন শুধুমাত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে আগ্রহী৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Malukas
ন্যাটো ও ইউরোপ
ছবিতে পোল্যান্ডের প্যারাট্রুপার সৈন্যরা ন্যাটোর একটি সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে৷ ট্রাম্প এর আগে ন্যাটো ও ইউরোপের সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে নানা অবহেলাকর মন্তব্য করেছেন৷ অপরদিকে ক্লিন্টন যদিও ‘অ্যাটলান্টিসিস্ট’ হিসেবে পরিচিত, তাঁর মুখেও প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে একবার বা দু’বারের বেশি ইউরোপ কিংবা ন্যাটোর নাম শোনা যায়নি৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর এতে সন্তুষ্ট না হবারই কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Skarzynski
চীন
ছবিতে চীনের একটি বোমারু বিমান দক্ষিণ চীন সাগরের উপর টহল দিচ্ছে৷ এলাকার বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জগুলিকে নিয়ে বিরোধে ক্লিন্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট করতে চান না, কিন্তু ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রণালী স্থাপন করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মিত্রদের আশ্বস্ত করতে চান৷ নয়তো ট্রাম্পের ধারণা যে, চীন তাঁর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক স্বার্থের হানি ঘটাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Xinhua/Liu Rui
পরিবেশ
ছবিতে ক্যালিফর্নিয়ার মৌহাভি মরুভূমিতে অবস্থিত একটি সৌরবিদ্যুৎ পার্ক৷ ট্রাম্প কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বলেছেন ‘‘অনির্ভরযোগ্য ও ভয়ঙ্কর’’; বিশ্বের উষ্ণায়নকে বলেছেন ‘‘মার্কিন শিল্পোৎপাদনকে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার অযোগ্য করে তোলার জন্য চীনাদের তৈরি একটি কল্পকাহিনি’’৷ অপরদিকে ক্লিন্টন ওবামার পরিবেশ নীতি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করলেও, তাঁর প্রচার অভিযান বা রাজনৈতিক জীবনে পরিবেশ বিশেষ গুরুত্ব পায়নি৷
ছবি: Getty Images
8 ছবি1 | 8
আর সেদিক থেকে তিনি হতে পারেন বিশ্বশান্তির পক্ষে বিপজ্জনক৷'' ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বলেন ড. মুখোপাধ্যায়৷ তিনি জানান, এই মুহূর্তে শেষকথা বলা যায় না৷ তবে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নিজের প্রতিষ্ঠা কায়েম রাখতে ট্রাম্প যতটা মরিয়া, তাতে আউটসোর্সিং এবং অভিবাসীদের ওপর কোপ পড়তে পারে৷ বলা বাহুল্য, এতে ভারতের স্বার্থ বিপন্ন হবে৷ আর তখন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক পড়বে চাপের মুখে৷
বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক অনিন্দ্য জ্যোতি মজুমদার৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘দেখুন ব্যক্তিবিশেষের জন্য জাতীয় নীতির কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না৷ কোনো ব্যক্তিবিশেষ ক্ষমতায় এলে রাজনৈতিক সমীকরণে খুব হেরফের হয় না৷ কারণ নির্বাচনে জেতা এক জিনিস আর দেশ চালানো অন্য জিনিস৷ নির্বাচনে সবাই কিছু বাগাড়ম্বর করেই থাকে৷ সেটা ধরা হয় না৷ তাই ট্রাম্পকে ইতিমধ্যেই বলতে শোনা গেছে যে, তিনি সব অ্যামেরিকাবাসীর প্রেসিডেন্ট৷ কোনো দল বা গোষ্ঠীর নয়৷ জাতীয় স্বার্থে ভারতের বাজার ধরে রাখা এবং বাণিজ্যিক বা কর্পোরেট স্বার্থ বজায় রাখা ট্রাম্পের পক্ষে জরুরি৷ আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষিতে ভারত-মার্কিন সহযোগিতার পরিসর যেভাবে বিস্তীর্ণ হচ্ছে, সেই সুবাদে প্রথম কিছুদিন হয়ত একটা অনিশ্চয়তা থাকবে৷ তবে পরে সেটা কেটে যাবে এবং পুরানো সম্পর্ক ফিরে আসবে৷ এছাড়া আউটসোর্সিং সম্পর্কে নির্বাচনি প্রচারে ট্রাম্প যা বলেছিলেন, তা বাস্তবায়িত করা ট্রাম্পের পক্ষে কঠিন হবে কর্পোরেট মহলের চাপে৷ ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বললেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক অনিন্দ্য মজুমদার৷
স্লোভেনিয়ার লাজুক কিশোরী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি
ট্রাম্প তখন একটা করে জয় পাচ্ছেন, সেই সঙ্গে বাড়ছে স্লোভেনিয়া থেকে আসা এক নারীকে নতুন রূপে দেখার সম্ভাবনা৷ দরিদ্র দেশের সাধারণ কিশোরী থেকে মডেল, তারপর ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ঘরণী৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফার্স্ট লেডি’ও হলেন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
লাজুক মেয়ে
স্লোভেনিয়া তখনো যুগোস্লাভিয়ার অংশ, সেখানে তখনো চলছে ‘সমাজতান্ত্রিক শাসন’, সেই সময়েই সেভনিকা নামের ছোট্ট এক শহরে জন্ম মেলানিয়া নাভস-এর৷ ছোটবেলা থেকেই মেলানিয়া খুব লাজুক প্রকৃতির৷
ছবি: picture alliance/AP Images/A. Harnik
স্কুলের শান্ত, সুবোধ বালিকা
বাবা ভিক্টর নাভস ছিলেন গাড়ির ডিলার৷ মা আমালিয়া কাজ করতেন পোশাক কারখানায়৷ বাড়ির পাশেই ছিল মেলানিয়ার স্কুল৷ কর্মজীবী বাবা-মায়ের কাছে কোনোদিন স্কুল থেকে মেয়ের নামে নালিশ আসেনি৷ বার্তা সংস্থা এপি-র প্রতিবেদকের কাছে কয়েকদিন আগেও মেলানিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সেই স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা আর শিক্ষার্থীরা৷ সবার এক কথা, ‘‘বড় ভালো মেয়ে ছিল মেলানিয়া৷ খুব মৃদুভাষী আর ভদ্র মেয়ে৷’’
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
স্বপ্নের পথের সন্ধান
প্রাথমিক স্কুল পর্ব শেষে স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবিয়ানার এক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে যায় মেলানিয়া৷ সেখানেই তাকে দেখে ফেলে ফটোগ্রাফার স্টেইন জেরকো৷ ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী কিশোরীটির ছবি তুলে নিতে ভুল করেননি স্টেইন৷ সেভনিকায় থাকতেই মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মেলানিয়া৷ স্টেইনের চোখে পড়ায় স্বপ্ন পূরণে বেশি সময় লাগেনি৷
ছবি: imago/UPI Photo
সুপার মডেল
মাত্র ১৬ বছর বয়সে মডেল হিসেবে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু৷ প্রথমে স্লোভেনিয়ায়, তারপর ইটালির মিলান, ফ্রান্সের প্যারিস হয়ে ১৯৯৬ সালে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে৷ বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলোতে তখন তাঁর খুব চাহিদা৷ ইংরেজি, ইটালিয়ান, ফরাসি এবং জার্মান ভাষা শিখে প্রতিষ্ঠা সহজসাধ্য করার কাজও অনেকটাই সেরে নিয়েছেন ততদিনে৷ ওপরে ফিলাডেলফিয়া স্টাইল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নিজের ছবির সামনে মেলানিয়া৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় এবং পরিণয়
নিউইয়র্কে প্রথম সাক্ষাতেই মেলানিয়াকে ট্রাম্পের ভালো লেগে যায়৷ নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন, ‘ফোন করো৷’ মেলানিয়া পাত্তা দেননি৷ পরে ট্রাম্পই আবার ফোন করে দেখা করতে চান৷ সেই দেখার সুবাদেই ১৯৯৬ সালে ২৪ বছরের বড় ট্রাম্পকে বিয়ে করেন মেলানিয়া৷
ছবি: Reuters/J. Bourg
অমিল নিয়েই সুখি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী হলেও মেলানিয়ার কম এবং যৌক্তিক কথা বলার সুনাম রয়েছে৷ স্বামীর নির্বাচনি প্রচারে নেমেও নিজের কথা সুস্পষ্ট যুক্তিতেই বলেছেন৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢুকতে দেবেন না, মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তেও দেয়াল দাঁড় করাবেন৷ মেলানিয়া বলেন, কেউ বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চাইলে সে সুযোগ রাখা উচিত৷
ছবি: Getty Images/K. Winn
‘ফার্স্ট লেডি’
বিশ্লেষকদের ভুল প্রমাণ করে, নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন ট্রাম্প৷ মেলানিয়া হয়ে গেলেন ‘ফার্স্ট লেডি’৷