২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার সময় ৬৯ জন মুসলমান হত্যার দায়ে ১১ জন হিন্দুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ভারতের এক আদালত৷ মুসলিম অধ্যুষিত এক আবাসিক এলাকায় আগুন ধরিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
একই অভিযোগে আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে সাত বছরের ও একজনের বিরুদ্ধে ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন আহমেদাবাদের এক বিশেষ আদালত৷ এর আগে গত সপ্তাহে একই মামলায় ৩৬ জনকে মুক্ত করে দেয়ার রায় দিয়েছিলেন একই আদালত৷ ২০০৯ সালে শুরু হওয়া এই মামলার কাজ বিভিন্ন সময়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়৷ এই দীর্ঘ সময়ে অভিযুক্ত ছয়জন মারা যান৷ নিখোঁজ হন আরও একজন৷
দাঙ্গার সূত্রপাত হিন্দুদের প্রাণহানির ঘটনা দিয়ে৷ ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি ট্রেনে আগুন লেগে ৫৯ জন হিন্দু নিহত হন৷ অগ্নিকাণ্ডের জন্য মুসলমানদের দায়ী করে তাদের উপর হামলা শুরু করে হিন্দুরা৷ যদিও ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মুসলমানদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি৷
ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের ‘গুলবার্গ সোসাইটি’ আবাসিক এলাকায় হামলা চালায় হিন্দুরা৷ এতে ৬৯ জন মুসলিম প্রাণ হারান৷ এর মধ্যে একজন ছিলেন সাবেক সাংসদ এহসান জাফরি৷ তাঁর স্ত্রী জাকিয়া জাফরি ১১ জনকে যাবজ্জীবন দেয়ার রায়ে রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ তিনি হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন৷ তবে বিশেষ আদালতের বিচারক পি বি দেশাই বলেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের' বিষয়টি বিচারকরা প্রমাণ করতে পারেননি বলে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে৷
সপ্তাহখানেক ধরে চলা দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ সেই সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ রাজ্যের প্রধান হিসেবে দাঙ্গা নিরসনে ভূমিকা না রাখায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো মোদির সমালোচনা করেছে৷ তবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের গঠন করা একটি তদন্ত কমিটি মোদির বিরুদ্ধে এমন কোনো প্রমাণ পায়নি যার ভিত্তিতে তাঁর বিচার শুরু করা যায়৷ দাঙ্গা সংশ্লিষ্ট মোট ১০টি ঘটনা তদন্তে ২০০৮ সালে কমিটি গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, এপি)
অনেক হিন্দুও গরু বা মহিষের মাংস খান
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে থাকলেও ভারতে গরু বা মহিষের মাংস অনেকেই খেয়ে থাকেন৷ সে দেশে যত মানুষ গরু বা মহিষের মাংস খান তাদের মধ্যে সোয়া কোটিই হিন্দু৷
ছবি: AP
গরু কম, মহিষ বেশি
হিন্দু প্রধান দেশ ভারতে ধর্মীয় কারণেই গরুর মাংস কম খাওয়া হয়৷ তবে মহিষের মাংস খান অনেকেই৷ গরু এবং মহিষের মোট ভোক্তা প্রায় ৮ কোটি৷ ২০১১-১২-তে একটি জরিপ চালিয়েছিল ভারতের ‘দ্য ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস’ (এনএসএসও)৷ সেই জরিপ থেকে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
সাধারণ মানুষের মাঝে মাংস নিয়ে বিরোধ কোথায়?
জরিপ থেকে আরো জানা গেছে, যাঁরা গরু বা মহিষের মাংস খান তাঁদের বেশিরভাগই মুসলমান হলেও সেখানে সোয়া এক কোটি হিন্দুও এসব মাংস খান৷
ছবি: Getty Images/P. Guelland
সংখ্যাটা বাড়ছে
জরিপ থেকে আরো জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে গরু বা মহিষের মাংস খাওয়া বাড়ছে৷ এক কোটি মানুষের মধ্যে জরিপটি চালিয়েছিল এনএসএসও৷
ছবি: DW/S.Waheed
মাংস খাওয়ায় ভারত সবার পেছনে
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) ১৭৭টি দেশে সব ধরণের মাংস খাওয়ার হার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তালিকায় সবার নীচে রয়েছে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
রপ্তানিতে সবার আগে
এফএও-র তথ্য অনুযায়ী, গবাদি পশুর, বিশেষ করে গরু এবং মহিষের মাংসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ভারত৷ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং নগরায়ণের কারণে মানুষের মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ তারপরও অবশ্য অন্য সব দেশের তুলনায় ভারতের মানুষ এখনো অনেক কম মাংস খায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
হিন্দুরা দ্বিতীয়
ভারতের মোট মুসলমানের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি মুসলমান গরু বা মহিষের মাংস খান৷ সংখ্যার দিক থেকে তারপরেই রয়েছে হিন্দুরা৷ নিজেদের মোট সংখ্যার শতকরা হারের বিচারে মুসলমানদের পরেই রয়েছেন খ্রিষ্টানরা৷
ছবি: DW/S.Waheed
যাঁরা বেশি খান
মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নিম্ন বর্ণের হিন্দু বা উপজাতিরাও যথেষ্ট গরু বা মহিষের মাংস খান৷ উচ্চ বর্ণের অনেক হিন্দুও গরু বা মহিষের মাংস পছন্দ করেন৷