চাঁদের বুকে অবতরণ করলো চন্দ্রযান-৩। ইতিহাস তৈরি হলো। সবার আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গেল ভারতই।
বিজ্ঞাপন
চন্দ্রযান-৩ পারলো। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামতে। ঠিক যে পরিকল্পনা করেছিলেন বৈজ্ঞানিকরা, সেটাই হলো। সন্ধ্যা ছয়টা বেজে চার মিনিটে চাঁদের মাটি স্পর্শ করলো ল্যান্ডার বিক্রম।
ইসরোর বৈজ্ঞানিকরা হাততালি দিতে শুরু করলেন। এক অসাধারণ মাইলফলক স্পর্শ করলেন বৈজ্ঞানিকরা।
এবার রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে পরীক্ষা করবে। দেখবে জলীয় বরফ আছে কি না। বিশ্লেষণ করবে তার চরিত্র। ফলে চন্দ্রযান-৩-এর অপরিসীম গুরুত্ব আছে।
এর আগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, অ্যামেরিকা, চীনের চন্দ্রাভিযান সফল হয়েছে। ভারত সেই এলিট গ্রুপে শামিল হলো। তবে অন্য কেউ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যায়নি। ভারত প্রথম গেল। সেজন্যই চন্দ্রযান-৩ বাড়তি গুরুত্ব পচ্ছে।
কয়েকদিন আগেই চাঁদে নামতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায় রাশিয়ার লুনা ২৫। কিন্তু চন্দ্রযান-৩ এর নামার ক্ষেত্রে কোনো গোলমাল হয়নি। একেবারে মসৃনভাবে তা চাঁদের মাটি ছোঁয়।
ভারতের সফল চন্দ্রাভিযানের পরই মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা অভিনন্দন জানায় ইসরোকে।
চন্দ্রযান-৩ চাঁদ স্পর্শ করার পরই শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ। ব্রিকস শীর্ষসম্মেলন যোগ দিয়েছেন মোদী। তিনি এখন সাউথ আফ্রিকায় আছেন। সেখান থেকেই মোদী বিজ্ঞনীদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, এ বার সূর্য অভিমুখে যাবে আদিত্য এল ওয়ান মিশন, ইসরো শুক্রেও মহাকাশযান পাঠাবে। মহাকাশে মানুষও পাঠাবে ভারত।
মহাকাশে ভারতের কয়েকটি সাফল্য
৭ সেপ্টেম্বর ভারতের চন্দ্রযান-২ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয় পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ৷ ফলে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদ স্পর্শ করার সফলতার জন্য ভারতের অপেক্ষা বাড়লো৷
ছবি: Reuters/Indian Space Research Organisation
চন্দ্রমিশন
ভারতের প্রথম চন্দ্রমিশন চন্দ্রযান-১৷ চাঁদে নামার উদ্দেশ্য এর ছিল না৷ এটি শুধু অর্বিটে ঘুরেছে৷ ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর রওয়ানা হয়েছিল এটি৷ দশ মাস তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল৷ এরপর ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট হঠাৎ করে চন্দ্রযান-১ এর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়৷ তবে এই সময়ের মধ্যে অভিযানের মূল উদ্দেশ্যের ৯৫ ভাগ কাজ সম্পাদিত হওয়ায় একে সফল অভিযান হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ চাঁদে পানির উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছিল চন্দ্রযান-১৷
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
চন্দ্রযান-২
২০১৯ সালের ২২ জুলাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিল চন্দ্রযান-২৷ ৭ সেপ্টেম্বর তার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ৷ ফলে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদ স্পর্শ করার সফলতার জন্য ভারতের অপেক্ষা বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
রকেট
স্যাটেলাইট প্রেরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যরা স্পেসএক্স-এর মতো বাণিজ্যিক কোম্পানির রকেটের উপর নির্ভরশীল৷ তবে ভারতের রয়েছে নিজস্ব রকেট, নাম জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক- থ্রি (জিএসএলভি এমকে-থ্রি)৷ এতে করেই চন্দ্রযান-২ পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Indian Space Research Organisation
জিপিএস-এর পরিবর্তে নাভিক
‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম’ বা জিপিএস ছাড়া জীবন যাপন আজকাল কঠিন৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের এই সিস্টেম কোনো দিন কোনো কারণে বন্ধ করে দেয় তাহলে কী হবে? এই অবস্থায় যেন সমস্যায় পড়তে না হয় তাই ভারত নিজেই একটি সিস্টেম গড়ে নিয়েছে, যার নাম ‘নাভিক’ (ন্যাভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনসটেলেশন)৷ এটি ভারত ও তার সীমান্তের আশেপাশে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কাজ করতে পারে বলে দাবি করা হয়৷
ছবি: Reuters/U.S. Marine Corps
মঙ্গলযান
পোশাকি নাম ‘মার্স অর্বিটার মিশন’ বা এমওএম৷ ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে ভারতের মঙ্গলযান৷ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মঙ্গলের কক্ষপথে যেতে সক্ষম হয় ভারত৷ এছাড়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্রথম প্রচেষ্টাতেই কক্ষপথে ঢুকতে সফল হয় মঙ্গলযান৷ ভারতের আগে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মঙ্গলের কক্ষপথে গিয়েছিল৷ মঙ্গলযান এখনও কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Indian Space Research Organisation
স্যাটেলাইট
১৯৮৮ সালে ভারত প্রথম মহাকাশে রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট পাঠায়৷ এরপর একে একে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে৷ এগুলোর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ থেকে শুরু করে টেলিভিশন সম্প্রচার, আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজ করা হচ্ছে৷ বর্তমানে ভারতের ১৫টি রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট রয়েছে৷