ভারত জানিয়েছে, পাকিস্তানে ভুল করে ক্ষেপণাস্ত্র চলে গিয়েছিল। তদন্ত করে তিনজন অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়। পাকিস্তান সেই তদন্ত রিপোর্ট খারিজ করেছে।
বিজ্ঞাপন
গত মার্চে ভারত থেকে একটি সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ে পাকিস্তানে। ভারত জানিয়েছিল, এটা ছিল নিছক দুর্ঘটনা। রক্ষনাবেক্ষণের সময় ভুল করে ক্ষেপণাস্ত্রটি চলে যায়। তারপর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়। বৃহস্পতিবার ভারত জানিয়েছে, এই ভুলের জন্য তিনজন সেনা অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিষয়টি এখন ক্লোজড চ্যাপ্টার।
কিন্তু পাকিস্তানের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ভারতের এই সিদ্ধান্ত মানছে না। তারা যৌথ তদন্তের দাবিতে অনড় রয়েছে। তারা এখনও যৌথ তদন্তই চায়।
গত ৯ অগাস্ট ভারত থেকে ভুল করে পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। তদন্ত রিপোর্ট বলছে, বিমান বাহিনীর তিনজন অফিসার এর জন্য দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের বক্তব্য হলো, শব্দের থেকে তিনগুণ বেশি গতিতে গিয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র তাদের জমিতে আছড়ে পড়ে। কোনো বিস্ফোরক না থাকায় বিস্ফোরণ হয়নি ঠিকই, কিন্তু যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। বিমানে গিয়ে লাগতে পারতো।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতি আগ্রহী কেন ভারত?
ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ‘এস-৪০০ মিশাইল ডিফেন্স সিস্টেম’ কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত৷ রুশ প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় পাঁচ দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Malgavko
মজবুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
গত সপ্তাহে ‘মিশাইল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’-এ স্বাক্ষর করার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এক যৌথ বিবৃতিতে নতুন দিল্লি এবং মস্কোর মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমশ আরো মজবুত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন৷ চলতি বছর মোদী এবং পুটিনের এই নিয়ে তৃতীয়বার সাক্ষাৎ হলো৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Y. Kadobnov
এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম আসলে কী?
রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০০ সার্ফেস-টু-এয়ার মিশাইল ডিফেন্স সিস্টেম মূলত ধেয়ে আসা ‘ব্যালেস্টিক মিশাইল’ প্রতিরোধ করে৷ এটাকে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আধুনিক এবং মোক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Malgavko
ভারতের আগ্রহ
মূলত চীন এবং পাকিস্তান থেকে কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের দিকে নিক্ষেপ করা হলে, তা যাতে প্রতিরোধ সম্ভব হয়, সেজন্য এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করতে চাচ্ছে ভারতের সামরিক বাহিনী৷ এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে ভারতের পক্ষে অনেক দূরে অবস্থান করা যুদ্ধবিমান, এমনকি রাডার সোনার সিস্টেম সনাক্ত করতে অক্ষম বিমানও ধ্বংস করে দিতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo
আরো চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায়
রাশিয়ার কাছ থেকে চারটি ‘ক্রিভেক-ক্লাস ফ্রিগেট’ কেনারও পরিকল্পনা করছে ভারত৷ এগুলোর মধ্যে দু’টি যুদ্ধজাহাজ গোয়ার শিপইয়ার্ডে জোড়া দেয়া হবে৷ অন্য দু’টো একেবারে তৈরি অবস্থায় রাশিয়া থেকে আনা হবে৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
মার্কিন সতর্কবার্তা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, যেসব দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা খাতের জন্য সমরাস্ত্র কিনবে, সেসব দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে৷ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় সিএএটিএসএ আইন গতবছর অনুমোদন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
মার্কিন সমরাস্ত্রও কেনে ভারত
শীতল যুদ্ধের সময় ভারতের সামরিক সমরাস্ত্রের আশি শতাংশই এসেছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে৷ তবে নব্বইয়ের দশক থেকে আরো কয়েকটি উৎস থেকে সমরাস্ত্র কিনতে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ গত দশ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পনের বিলিয়ন মূল্যমানের সমরাস্ত্র কিনেছে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
ভারত কি ছাড় পাবে?
রাশিয়ার কাছ থেকে ‘এস-৪০০ মিশাইল সিস্টেম’ কেনায় চীনের সামরিক বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ যদিও ভারত আশা করছে, মার্কিন মিত্র দেশ হিসেবে তাদের এ ধরনের নিষেধজ্ঞায় পড়তে হবে না, তবে ট্রাম্প প্রশাসন ছাড় দেয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Dufour
7 ছবি1 | 7
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান ভারতের এই তদন্ত রিপোর্ট খারিজ করছে। তারা আবার যৌথ তদন্তের দাবি জানাচ্ছে। তাদের মতে, ভারতের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এবং তিনজন বিমান বাহিনীর অফিসারকে সাসপেন্ড করার ঘটনা মোটেই যথেষ্ট নয়। তাই পাকিস্তান এই ব্যবস্থায় একেবারেই খুশি হতে পারছে না।
নিরাপত্তা নিয়ে
এই প্রথম ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই ধরনের ঘনা ঘটেছে। এরপরই এই ক্ষেপণাস্ত্রের সেফটি মেকানিজম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অ্যামেরিকা ভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ব্রহ্মস হলো মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। তিনশ থেকে পাঁচশ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত করতে পারে। উত্তর ভারতের লঞ্চিং প্যাড থেকে তা ইসলামাবাদে গিয়ে আঘাত করতে সক্ষম।
ব্রহ্মস আছড়ে পড়ার পর পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে বলেছিল, এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। ভারতীয় সেনা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এটা ঘটেছে বলে তারা জানায়।