ভারতের দুর্ঘটনায় টাকা দেয় বিমা সংস্থা
৬ অক্টোবর ২০২৩ভারতে অন্তত ৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি ঘণ্টায় ১৮ জন মারা যান, দিনে ৪২২জন। সড়ক দুর্ঘটনার সমস্যাটা এতটাই গভীর যে, যখনই কোনো নতুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দায়িত্ব নেন, তিনি চেষ্টা করেন, কিছু পদক্ষেপ নিতে। বর্তমান সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতীন গড়করি তো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারপরেও সমস্যা প্রবলভাবেই থেকে গেছে।
তার অনেক কারণও আছে। বোঝার সুবিধার জন্য বলি, হামেশাই ভারতের ওয়ান ওয়ে রাস্তায় উল্টোদিক থেকে তীব্র গতিতে গাড়ি আসে। বেআইনিভাবে চলা উল্টোদিক থেকে আসা এই গাড়ির জন্য ঠিক পথে চলা গাড়ি বা বাসের চালক তোপ্রস্তুত থাকেন না। ফলে অনেক সময়ই মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। কিছুদিন আগে একটি স্কুল বাস এরকমই বেআইনিভাবে উল্টো দিক থেকে আসতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। তাতে বেশ কয়েকজন স্কুলের পড়ুয়া মারা যায়।
ভারতে পথ দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা মারা গেলে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে আহত ব্যক্তি বা মৃতের আত্মীয়রা টাকা পান বিমা সংস্থার কাছ থেকে। প্রতি বছর গাড়ির বিমা করাতে হয়। সেই বিমায় যেমন গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে বা সামান্য আঘাত লাগলে., চুরি-ডাকাতি হলে মালিক টাকা পান, তেমনই দুর্ঘটনায় অন্য কেউ আহত বা নিহত হলে বিমা সংস্থা তাদের টাকা দেয়। বিমা ছাড়া গাড়ি রাস্তায় নামানো যায় না।
ভারতে এর জন্য মোটর ভেহিকেলস আইন আছে। ট্রাইবুন্যাল আছে। ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে কোনো বিরোধ হলে সেই ট্রাইব্যুনালে যাওয়া যায়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ন্যূনতম ৫০ হাজার ও আহত হলে ২৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তারপর দুর্ঘটনার চরিত্র ও দায় অনুসারে ক্ষতিপূরণের সংখ্যাটা কম বা বেশি হয়।
আর যখন বড় বাস দুর্ঘটনা হয়, তখন তো রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে। সেই পরিমাণটা নির্ভর করে রাজ্য সরকারের উপর। ২৫ হাজার থেকে ১০ লাখ বা তার বেশি টাকারও ক্ষতিপূরণ দেয়ার নজির আছে। আর ট্রেন দুর্ঘটনা হলে কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই ক্ষতিপূরণ দেয়। কেন্দ্র দেয়, কারণ, রেল হলো কেন্দ্রের অধীনে। আর দুর্ঘটনায় যে রাজ্যের মানুষ মারা যান বা আহত হন, সেই রাজ্য সরকারও ক্ষতিপূরণ দেয়। ফলে সেখানে ক্ষতিপূরণের পরিমাণটা বেশি থাকে।
ভারতের মধ্যে তামিলনাড়ুতে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তারপরেই আছে উত্তরপ্রদেশ। তিন নম্বরে অন্ধ্রপ্রদেশ, চার নম্বরে কেরালা ও পাঁচ নম্বরে মহারাষ্ট্র। আর শহরের ক্ষেত্রে দিল্লিতে সবচেয়ে বেশি গাড়ি দুর্ঘটনা হয়। তার কারণও আছে। দক্ষিণের রাজ্যগুলি এবং উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে সড়কের পরিমাণ অনেক বেশি। আর দিল্লিতে গাড়ির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বই মিলিয়ে যা গাড়ি আছে, তার থেকে বেশি গাড়ি আছে দিল্লিতে। আর বিশেষ করে রাতের বেলায় দিল্লির চালকেরা যে গতিসীমা মেনে গাড়ি চালাবেন, তার কোনো গ্যারান্টি কেউ দেবে না। যত রাত বাড়ে, তত গাড়ির গতি বাড়ে, এ হলো দিল্লির অলিখিত নিয়ম।
তবে ভারতে সাধারণভাবে এত সড়ক দুর্ঘটনা হওয়ার কারণ অনেক। একে তো ভারতের আবহাওয়া খুবই চরম। প্রতিবছর শীতে রাস্তা ঢাকা পড়ে যায় ঘন কুয়াশায়। তার সঙ্গে ধোঁয়া আর ধুলো মিশে যায়। ফলে সামান্য দূরের জিনিসও দেখা যায় না। প্রতিবারই শীতে ঘন কুয়াশার কারণে একের পর এক গাড়ির ধাক্কা লাগে। কখনো কখনো ১২টা, ১৪টা গাড়ি একে অন্যকে ধাক্কা মারে।
তাছাড়া ভারতে ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কে সচেতনতা খুবই কম। কোন সাইনের কী অর্থ তা অনেকে জানেন না। তাই তারা সেসব মানেন না। তার উপর মুম্বই বাদে অন্য শহরে লেন ড্রাইভিং হয় এমন অপবাদ কেউই দিতে পারবে না। ফলে কখন যে কোথা থেকে গাড়ি, মোটরসাইকেল, স্কুটার, অটো, বাস একেবারে ঘাড়ের উপর এসে যায় তা বলা যায় না। তাই দুর্ঘটনা হয়, হতে থাকে। তার উপর প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা তরুণদের মধ্যে প্রবল। কখনো দুইটি বাস প্রতিযোগিতা করে দুর্ঘটনায় পড়ে।
আর ক্ষতিপূরণ যাই হোক না কেন, তা কি একটা প্রাণের দামের থেকে বেশি হতে পারে! ফলে ওই ৫০ হাজার, এক লাখ, পাঁচ লাখ ক্ষতিপূরণ যাই হোক না কেন, তা দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না। দুর্ঘটনার সংখ্যা ন্যূনতম করতে হবে। করতেই হবে। না হলে এই মৃত্যুমিছিল বন্ধ করা যাবে না।