ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান নিয়ে বাংলাদেশে চলছে তুমুল আলোচনা৷ ভারতে প্রথমবারের মতো তা চালু হওয়ায়, বাংলাদেশে আবারো ‘না’ ভোটের বিধান চালুর দাবি করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ‘না' ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল৷ ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচনি আইন সংশোধন করে ‘না' ভোটের বিধান চালু করা হয়৷ তবে সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নির্বাচনি আইন সংশোধন করে ‘না' ভোটের বিধান বাতিল করা হয়৷ কিন্তু বুধবার ভারতের লোকসভা নির্বানের তফসিল ঘোষণা এবং প্রথমবারের মতো সেখানকার নির্বাচনে ‘না' ভোটের বিধান চালু হওয়ায়, তা বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে৷
সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাংলাদেশে যে ‘না' ভোটের বিধান করা হয়েছিল, তা ছিল ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷ পরে সরকার ‘না' ভোটের বিধান তুলে দিয়েছে, যা দুঃখজনক৷ এটা ভোটারদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে৷ কারণ ভোটারের কোনো প্রার্থী পছন্দ না হলে তা জানানোর সুযোগ এখন আর নেই৷ তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত ‘না' ভোটের বিধান চালু করায় বাংলাদেশের পুনরায় এটা চালুর দাবি প্রশস্ত হলো৷ বাংলাদেশ ‘না' ভোটের বিধান চালু করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল৷ আবারো সেই দৃষ্টান্ত ফিরিয়ে আনতে হবে৷
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘না' ভোট গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভারত এ নিয়মটি চালু করে সেদেশের ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার আরো সংহত করল৷ আর আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সম্ভবত ‘না' ভোটকে ভয় পান৷ তাই চালু করেও তা বাতিল করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, ভারতের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্যও ইতিবাচক৷ বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন চাইলে এখন নিজোরাই ভারতের উদাহরণ দেখিয়ে ‘না' ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনতে পারে৷ এছাড়া সুশীল সমাজসহ সবাই এর জন্য জোড়াল দাবি তুলতে পারে৷
উল্লেখ্য, ভারত হলো বিশ্বের ১৪তম দেশ যারা ব্যালট পেপারে ‘না' ভোটের বিধান চালু করেছে৷ ভারত ছাড়াও ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, গ্রিস, ইউক্রেন, চিলি, স্টেট অফ নেভাডা, ফিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, স্পেন এবং সুইডেনে নির্বাচনে ‘না' ভোট দেয়ার সুযোগ আছে৷ আর বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা ‘না' ভোটের বিধান চালু করে পরে তা বাতিল করেছে৷
নতুন ভোটারদের নির্বাচনি ভাবনা
যারা প্রথমবার ভোটার হয়েছেন সেরকম কয়েকজনের কাছে তাঁদের নির্বাচনি ভাবনা জানতে চাওয়া হয়েছিলো৷ ছবিঘরের মধ্য দিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিভ্রান্ত দিলরুবা
দিলরুবা নোমানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী৷ নির্বাচন না হয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রতিনিধির নির্বাচিত হওয়া একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না তিনি৷ ভোট দিবেন কিনা এখনো ঠিক করেন নি ঢাকার এই প্রথম ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
আগ্রহে ভাটা পড়লেও ভোট দেবেন
আনন্দকুমার শীল৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র৷ বাড়ি যশোরের কেশবপুরে৷ প্রথম ভোটার হিসেবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাঁর উৎসাহ ছিল অনেক বেশি৷ তবে বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচনের কারণে তাঁর সে উৎসাহে ভাটা পড়েছে৷ তারপরেও একজন সুনাগরিক হিসেবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঈশান দ্বিধাগ্রস্ত
ঈশান ভূঁইয়া৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী৷ ঢাকার ভোটার তিনি৷ দেশের অন্য ১৫৪টি আসনের মতো হতভাগ্য ভোটার কিনা সেটাও তিনি জানেন না এখনো৷ ভোটের আমেজও চোখে পড়ছে না তাঁর৷ বিদেশি কোনো পর্যবেক্ষকও আসছেন না ৫ জানুয়ারির ভোট দেখতে৷ এধরণের একটি নির্বাচনে ভোট দেয়ার আপাতত পরিকল্পনা নেই তাঁর৷
ছবি: DW/M. Mamun
নির্বাচনে বিশ্বাস নেই, তবুও ভোট দেবে
ফাহিম হাসান৷ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র৷ ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার টিকবে না এই বিশ্বাস তাঁর৷ তারপরেও প্রথম ভোটার হিসেবে নিজের মত প্রকাশ করতে চান তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ ইশরাত রেজা
ইশরাত রেজা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে পড়েন৷ ঢাকার ভোটার তিনি৷ ইতিমধ্যেই তাঁর এলাকার জনপ্রতিনিধি একক প্রার্থী নিসেবে নির্ধারিত হয়ে গেছে৷ প্রথম ভোটার হিসেবে অংশগ্রহণ করতে না পেরে ক্ষুব্ধ তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
হতাশ, তাই ভোট দেবেন না
মোলাব্বিয়া সুলতানা৷ হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রীর বাড়ি চাঁদপুরে৷ প্রথমবারের মতো ভোটার হওয়া দেশের এই নাগরিক রাজনীতিবিদদের উপর কোনোরকম আস্থা খুঁজে পান না৷ এতো চেষ্টার পরেও রাজনীতিবিদরা কোনো সমঝোতায় আসতে না পারায় হতাশ তিনি৷ রাজনীতিবিদদের এই স্বার্থপর মনোভাব থেকে দেশের মুক্তি চান তিনি৷ ৫ জানুয়ারির মতো একটি একদলীয় নির্বাচনে ভোট দেয়া তাঁর মতে অর্থহীন৷
ছবি: DW/M. Mamun
দুই দলের কবল থেকে মুক্তি
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমঝোতায় বিশ্বাসী রিফাত বিন তারেক৷ পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে৷ ঢাকার ভোটার তিনি৷ তাঁর এলাকার জনপ্রতিনিধিও ইতিমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গেছে৷ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কবল থেকে দেশের মুক্তি চান তরুণ এই ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
সহিংসতা না হলে ভোট দেবেন জাবেদ
জাবেদ ইবেনে ওয়াহেদ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র তিনি৷ বাড়ি নোয়াখালীতে৷ প্রতিদিন যে হারে দেশে সহিংসতা হচ্ছে ভোটের দিনও হয়ত এর রেশ থাকতে পারে৷ তারপরেও নিরাপদ মনে করলে ভোট দিতে যাবেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুজন তাঁর মতামত দেবে
সুজন কুমার কুণ্ডু৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র৷ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি অনেকটাই একনায়কতন্ত্রের ছোঁয়া দেখতে পাচ্ছেন৷ দেশের প্রধান দুই দলই ক্ষমতার লোভে পাগল৷ দেশের উন্নতি নিয়ে তাদের চিন্তা আছে বলে মনে হয় না৷ তারপরেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেয়ার ইচ্ছা আছে ঝিনাইদহের তরুণ এই ভোটারের৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোট দিয়ে লাভ নেই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন দাস৷ ৫ জানুয়ারির মতো একটি নির্বাচনে ভোট দেয়ার প্রয়োজন দেখছেন না তিনি৷ প্রধান বিরোধী দল বিহীন নির্বাচন তাঁর কাছে অনেকটা সাজানো নাটকের মতো মনে হয়৷ যাকেই ভোট দিন না কেন জনপ্রতিনিধি নির্ধারিতই আছেন৷ কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগেরই এক দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাঁর কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে৷ এই নির্বাচনে ভোট দিবেন না তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ
সৈয়দ মোহাম্মদ সাদাত৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেয়ার ইচ্ছা আছে তাঁর৷ তবে বাইরে থেকে কোনো পর্যবেক্ষক না আসায় এ ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তাঁর মনে সন্দেহ আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্থায়ী হবে না, তাই ভোট দেবেন না
খুলনার ভোটার মেহজাবিন পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে৷ তাঁর মতে এ ধরনের একটি সরকারের স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত হবে না৷ বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য বারবার ব্যয়বহুল নির্বাচন খুবই ক্ষতিকর৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দেবেন না তিনি৷