ভারতের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি বাংলাদেশ নিয়ে যেসব নেতিবাচক কথা বলেছে, তার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ জানানো উচিত৷ আর এ প্রতিবাদ শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতের ভিতর থেকেও হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের নির্বাচনে, বিশেষ করে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় বাংলাদেশের নানা ইস্যু উঠে এসেছে৷ বিজেপি এবং বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর নানা বক্তব্য বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে৷ সর্বশেষ বিজেপির এক নেতার বাংলাদেশের ভূখণ্ডের এক তৃতীয়াংশের মালিকানা দাবি বিস্ময় এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে৷ আবারো এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, বিজেপি যেসব কথা বলছে তা নেতিবাচক উগ্র ধর্মীয় রজিনীতির বৈশিষ্ট্য৷
এর আগেও মোদীর ‘বাংলাদেশি হিন্দুদের ভারতে পুনর্বাসন' এবং ‘পূর্বভারতীয় রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কারণে বেকারত্ব' – এ দুটি বক্তব্য সমালোচনার জন্ম দেয়৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মোদী বা বিজেপির এ সব বক্তব্য ভারতে ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের ভোট টানার একটি কৌশল৷ তবে ভোটের পর হয়ত তাদের এই অবস্থান থাকবে না৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের ভুখণ্ডের এক তৃতীয়াংশের মালিকানা দাবি তো রীতিমত হাস্যকর৷ কেউ চাইলেও তাঁর সে আশা পূরণ হবে না৷''
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘ভোট টানার এই কৌশল শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের আরো অনেক দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেখা যায়৷ যেমন বাংলাদেশ সাম্প্রতিক এক পক্ষ ভোটের সময় ভারতবিরোধী নানা প্রচারণা চালিয়েছিল৷''
অবশ্য মোদীর বা বিজেপির এ সব কথার শক্ত প্রতিবাদ হওয়া উচিত বলেও মনে করেন শান্তনু মজুমদার৷ ‘‘আর সেটা হওয়া উচিত শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও৷ দুই দেশের যে প্রগতিশীল শক্তি আছে, তাঁদের এই সব ‘ভোটবাজদের' বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত৷''
শান্তনু মজুমদার বলেন, ভারতে এ ধরণের কথার যে প্রতিবাদ হচ্ছে না, তা নয়৷ তবে এই প্রতিবাদকে তিনি যথেষ্ট এবং বলিষ্ঠ বলে বলে মনে করেন না৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মোদীর বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক এবং অনাকাঙ্খিত৷ মোদীও ভোট টানার জন্য হিন্দু-মুসলমান ইস্যু ছাড়া বাংলাদেশের ভূখণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন৷ শুধু ভোটের জন্য একজন রাজনীতিবিদ কতটা নীচু মানসিকতার পরিচয় দিতে পারেন, মোদী তার উদাহরণ৷''
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘তবে এই ধর্ম, সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র নিয়ে প্রচারণার রাজনীতি বাংলাদেশেও আছে৷ আসলে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সবখানেই সক্রিয়৷'' তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি এবং মোদীর বক্তব্য ও আচরণের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে৷ তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যদি তার তৎপরতা অব্যাহত রাখেন, তাহলে প্রতিক্রিয়া আরো স্পষ্ট হবে৷ প্রতিক্রিয়াশীলরা ফায়দা লোটার সুযোগ পাবে৷''
অধ্যাপক হাফিজুর রহমান মনে করেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশ নয়, মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো উপমহাদেশের রাজনীতিতে৷ যা উপমহাদেশের রাজনীতির জন্য এক অশনিসংকেত৷ আর এ আশঙ্কা ভারতের প্রগতিশীল শক্তিরও৷ নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তো আগেই তাঁর এ আশঙ্কার কথা বলেছিলেন৷''