ভারতের উপর ২৬ শতাংশ, বাংলাদেশের উপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক ট্রাম্পের
৩ এপ্রিল ২০২৫
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর চড়া হারে আমদানি শুল্ক বসানোর ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক বসানোর ঘোষণা সকরেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প।ছবি: Mark Schiefelbein/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প আগেই জানিয়েছিলেন, বুধবার হবে অ্যামেরিকার লিবারেশন ডে বা মুক্তি দিবস। কারণ, তিনি বিশ্বের অন্য দেশের উপরে সমহারে শুল্ক বসাবেন। অন্য দেশ যে হারে মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক বসায়, ঠিক ততটা শুল্ক তাদের উপর বসানো হবে। তবে, বুধবার বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক বসানোর ঘোষণা করে ট্রাম্প জানিয়েছেন, অন্য দেশের তুলনায় অর্ধেক বা তার কমবেশি শুল্ক বসানো হয়েছে। ৫ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে।
ট্রাম্প ভারতের পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ, বাংলাদেশের উপর ৩৭ শতাংশ, চীনের উপর ৩৪ শতাংশ, পাকিস্তানের উপর ২৯ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর ২০ শতাংশ, থাইল্যান্ডের উপর ৩৬ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার উপর ২৫ শতাংশ, জাপানের উপর ২৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের উপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার উপর ৪৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার উপর ৪৯ শতাংশ, আফ্রিকার দেশ লোসোথোর উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন।
ট্রাম্প এদিন প্রায় একশটি দেশের উপর শুল্ক বসানোর ঘোষণা করেছেন। সবচেয়ে কম ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, চিলি, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল, কলম্বিয়ার উপর। ইসরায়েল ও ফিলিপাইন্সের উপর ১৭ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। ৬০টির মতো দেশের উপর উচ্চহারে শুল্ক বসানো হয়েছে।
বিদেশি গাড়ির উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হয়েছে। সেই শুল্ক মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, জাপান থেকে শুরু করে অনেক দেশ মার্কিন গাড়ি কার্যত কেনে না, কিন্তু অ্যামেরিকায় তাদের গাড়ি ঢালাও বিক্রি হয়।
জার্মানিতে তৈরি গাড়ি অ্যামেোরিকায় প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হয়। তার মধ্যে এক নম্বরে আছে ফক্সভাগেন। জার্মান অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ট্রাম্পের এই শুল্কের ফলে প্রচুর ক্ষতি হবে।
বাংলাদেশ নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ হলো ৮৪০ কোটি ডলার বা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় এক লাখ এক হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। গতবছর তার মধ্যে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৮৮ হাজার ৪০২ কোটি টাকার।
প্রথম আলো জানাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রথম দুই রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে একটি হলো যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব বাংলাদেশের উপর, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের উপর পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের উপর শুল্ক
ট্রাম্প বলেছেন, ''ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমার বন্ধু। সবে তিনি অ্যামেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, আপনি আমার খুবই ভালো বন্ধু হতে পারেন, কিন্তু আপনি আমাদের সঙ্গে ঠিক ব্যবহার করছেন না। ভারত আমাদের পণ্যে ৫২ শতাংশ শুল্ক বসায়, আমরা ২৬ শতাংশ বসালাম।''
সূত্র জানাচ্ছে, ভারতের পণ্যের উপর আগে আড়াই শতাংশ মার্কিন শুল্ক বসানো ছিল। এখন তার উপর ২৬ শতাংশ শুল্ক বসবে। সবমিলিয়ে ২৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।
২০২০-২১ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ। ভারতের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে সাত হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ভারত রপ্তানি করেছে।
২০২৪ সালে ভারত থেকে ওষুধ, টেলিকম যন্ত্রাংশ, দামি ও মাঝারি দামের পাথর, পেট্রোলিয়াম পদার্থ, সোনা ও অন্য ধাতু, রেডিমেড পোশাক, লোহা-ইস্পাতের মতো পণ্য বেশি রপ্তানি হয়েছে।
ভারতে রপ্তানিকারকদের সংস্থা ফিকো জানিয়েছে, ট্রাম্পের নতুন পণ্যমাসুলের ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ধাক্কা খাবেন। ফিকোর ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সহায় বলেছেন, ''আমাদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হব। তবে অন্য অনেক দেশের তুলনায় আমরা কিছুটা ভালো অবস্থায় আছি।''
কী প্রতিক্রিয়া হলো?
চীন জানিয়েছে, তারা এই মার্কিন শুল্কের পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি বলেছেন, এটা বন্ধুর মতো কাজ হলো না। দক্ষিণ কোরিয়ার কার্যকরী প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু বলেছেন, সরকার সব ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এই বাণিজ্য সংকটের মোকাবিলা করার চেষ্টা করবে।
অস্ট্রেোলিয়ার শেয়ার বাজার পড়েছে এক দশমিক দুই শতাংশ।
জিএইচ/এসজি(এপি, এএফপি, রয়টার্স)
ডনাল্ড ট্রাম্প: ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট
রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী, জনপ্রিয় বইয়ের লেখক এবং রিয়েলিটি টিভি স্টার হিসেবে পরিচিত ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট৷ হোয়াইট হাউজে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিবার, সাম্রাজ্য
তিনি যাদের ভালোবাসেন তাদের নিয়ে তোলা ছবি৷ এখানে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে ইভানকা এবং টিফানি, ছেলে এরিক এবং ডোনাল্ড জুনিয়র এবং নাতি কাই ও ডোনাল্ড জন থ্রি৷ তাঁর তিন বড় সন্তান ট্রাম্প অরর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিলিয়নিয়ার থেকে বিলিয়নিয়ার
১৯৮৪ সালে তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিউ জার্সির ট্রাম্প প্লাজায় হারাহ’স ক্যাসিনো উদ্বোধন করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এটা অন্যতম এক খাত যেখানে বিনিয়োগ করে বাপের টাকায় মিলিয়নিয়ার হওয়া ট্রাম্প নিজেকে বিলিয়নিয়ারে পরিণত করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Lederhandler
বাপের টাকায় ব্যবসা শুরু
রিয়েল স্টেট সাম্রাজ্যের শুরুটা ট্রাম্প করেছিলেন তাঁর বাবা ফ্রিডরিকের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে৷ তিনি তাঁর ছেলেকে শুরুতে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন৷ এবং তাঁর মৃত্যুর পর ট্রাম্প এবং তাঁর তিন ভাইবোন উত্তরাধিকার সূত্রে চার’শ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক হন৷
ছবি: imago/ZUMA Press
একটি নামের মধ্যে কী আছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন এবং মার্কেটের উত্থান পতনের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন৷ নিউ ইয়র্ক সিটির ট্রাম্প টাওয়ার তাঁকে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য এনে দিয়েছে৷ ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর সম্পদের পরিমাণ দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তবে কখনো তিনি তাঁর এই দাবির পক্ষে কোনো আর্থিক কাগজপত্র প্রকাশ করেননি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাঁর সম্পদের পরিমাণ তিনি যা বলেন তাঁর এক-তৃতীয়াংশ মাত্র৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
‘খুব ভালো, খুব স্মার্ট’
ট্রাম্প নিজের সম্পর্কে নিজেই বলেন একথা৷ তিনি সুপরিচিত সুপরিচিত ‘ওয়ার্টন স্কুল অফ দ্য ইউনিভার্সিটি অফ পেনসেলভেনিয়ায়’ লেখাপড়া করেছেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.J. Harpaz
ক্যাপ্টেন ট্রাম্প
কলেজে পাঠানোর আগে ১৩ বছর বয়সে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে পাঠানো হয়েছিল ট্রাম্পকে৷ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের আগেই একাডেমি থেকে একটি অফিসার’স ব়্যাংক অর্জন করেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারাভিযানকালে তিনি জানান যে, তিনি স্কুলে কাঠামো এবং সামরিক সংস্কৃতি উপভোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/
ভিয়েতনাম যাওয়ার বদলে গোড়ালির চিকিৎসা
মিলিটারি শিক্ষা সত্ত্বেও ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাননি ট্রাম্প৷ পড়াশোনা করার সময় তিনি চারবার কালহরণ করেছিলেন এবং গোড়ালির চিকিৎসার জন্য একবার বিরতি নিয়েছিলেন৷ ট্রাম্প হবেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগ অবধি কোনো সরকারি কার্যালয় বা সামরিক বাহিনীতে কাজ করেননি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম স্ত্রী: ইভানা জেলনিউকোভা
১৯৭৭ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার ইভানা জেলনিউকোভাকে বিয়ে করেন ট্রাম্প৷ তাঁদের তিন সন্তান হয়৷ ডোনাল্ড জন জুনিয়র, ইভানকা মারি এবং এরিক ফ্রেডরিক৷ তবে বিবাহবহিভূর্ত সম্পর্কসহ নানা জটিলতায় ১৯৯০ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ ইভানা হচ্ছেন সেই নারী, যিনি ট্রাম্পের ডাক নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য ডোনাল্ড৷’
ছবি: Getty Images/AFP/Swerzey
দ্বিতীয় পরিবার
ট্রাম্প পরবর্তীতে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসকে বিয়ে করেন৷ ১৯৯৩ সালে তাঁদের মেয়ে টিফানির জন্ম দেন ম্যাপেলস৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/J. Minchillo
অন্য নারীদের সঙ্গে ট্রাম্প
ট্রাম্প সম্ভবত নিজের স্ত্রীর বদলে অন্য নারীদের সঙ্গে ছবি তুলতে ভালোবাসেন৷ তিনি প্রায়ই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যেতেন এবং তরুণী মডেলদের সঙ্গে ছবি তুলতেন৷ ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ অবধি আয়োজিত সব ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার একজন অংশীদার ছিলেন তিনি৷ নির্বাচনের আগে আগে এক অডিও প্রকাশ হয় যেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর খ্যাতি তাঁকে কোনোরকম পরিণতির ভয় ছাড়াই মেয়েদের ‘গায়ে হাত দেয়ার’ সুযোগ করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Lemm
বাণিজ্য এবং বিনোদনের মিশ্রণ
ট্রাম্প জানতেন কীভাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়৷ এই ছবিতে তাঁকে ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের’ একটি শোতে দেখা যাচ্ছে৷ রিয়েলিটি টিভি শো ‘দ্য এপ্রেন্টিস’, যেখানে প্রার্থীদের নিয়োগ অথবা বাতিল করা হতো, ট্রাম্পকে খ্যাতি অর্জনে সহায়তা করেছে৷ শোতে ট্রাম্পের প্রিয় লাইন ছিলে, ‘ইউ আর ফায়ার্ড!’
ছবি: Getty Images/B. Pugliano
রাজনীতিতে ট্রাম্প
যদিও অতীতে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর খুব কম যোগাযোগ ছিল, তারপরও ২০১৫ সালে সালের ১৬ জুলাই তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন৷ রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন৷’ নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় তিনি অভিবাসী, মুসলমান, নারী এবং তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রত্যেককে অপমান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lane
ওয়াশিংটনের পথে
প্রেসিডেন্ট হিসেবেও হোয়াইট হাউসে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প৷ ৷ সবশেষ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করল সে দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ। অ্যামেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্পই তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব আনা হয়েছে।