1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের পূর্ব উপকূলে কেন বারবার শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়?

২৪ অক্টোবর ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় দানা ধেয়ে আসছে ভারতের পূর্ব উপকূলে। কেন ঘনঘন এই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে এখানকার মানুষকে?

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ছবি।
বারবার শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ছে ভারতের পূর্ব তটভূমিতে।ছবি: Ashim Paul/AP Photo/picture alliance

এদেশের পূর্ব উপকূল ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী থাকে। লাগোয়া বাংলাদেশ অনেক সময়ই এই ঝড়ের মূল নিশানা হয়ে ওঠে। তার রেশ পড়ে পশ্চিমবঙ্গে। চলতি বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমাল ধেয়ে আসে বাংলাদেশের উপকূলে। ক্ষয়ক্ষতি হয় দুই দেশের সুন্দরবনে। 

এর আগে আয়লা, ফণী, আমফান, ইয়াসের মতো ভয়াল ঝড় হানা দিয়েছে পূর্ব উপকূলে। ২০০৯ সালের ২৫ মে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আয়লা। গতিবেগ ছিল সর্বাধিক ১২০ কিলোমিটার। ২০২১ সালে ২৬ মে আসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, যার সর্বাধিক গতিবেগ ছিল ১৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টা। মূলত বঙ্গোপসাগরের ত্রিভুজ আকৃতি এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের নিশানায় থাকে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা ও বাংলাদেশ।

২০২০ সালে ২০ মে ধেয়ে আসা আমফান অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল। বাংলার বুকে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ছিল এটিই। এই ঝড়গুলিতে সুন্দরবন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৯ সালে ফণীর প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল ওড়িশায়, যেমন এবার দানার ক্ষেত্রেও সেটাই হতে পারে।

সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ার ফলে

বছরের দুটি সময় সমুদ্রের বুকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবণতা বেশি থাকে। আবহবিদদের মতে, এই সময়টা এপ্রিল থেকে জুন এবং  অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। অর্থাৎ বর্ষার আগে ও পরে। এই সময়ে কোনো নিম্নচাপ ক্ষেত্র প্রস্তুত হলে তার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞানের অধিকর্তা, অধ্যাপক তুহিন ঘোষ ডিডাব্লিউকে বলেন, "সাধারণত গ্রীষ্মের শুরুতে বা শেষ শরতে এই নিম্নচাপগুলো তৈরি হয়। তবে সর্বদা নিম্নচাপ সাইক্লোনে পরিণত হয় না। বলা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এই কথাটা ঠিক নয়। কতগুলো নিম্নচাপ থেকে কতগুলো ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে সেটাকে বলা হয় ফ্রিকোয়েন্সি। সেটা দেখলে আগের তুলনায় সাইক্লোনের ফ্রিকোয়েন্সি কমে গেছে।"

বর্ষার আগে ও পরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল। অধ্যাপক ঘোষের বক্তব্য, "আমাদের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি বা তার উপরে থাকলে নিম্নচাপগুলো সাইক্লোন তৈরির ক্ষেত্রে উপযোগী হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা আগের তুলনায় এখন বেশি থাকছে। তাতে যে নিম্নচাপগুলো সাইক্লোনে পরিণত হচ্ছে, সেগুলির তীব্রতা বা ক্ষতি করার ক্ষমতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বয়স্ক মানুষদের কাছে এই ঘূর্ণিঝড় কিন্তু স্বাভাবিক। ৩০-৪০ বছর আগেও এই ঘূর্ণিঝড় স্বাভাবিকভাবেই হতো, তবে তার তীব্রতা কম ছিল।"

বিপজ্জনক ঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে একই মত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ জয়ন্ত বসুর। এর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই এলাকায় সিভিয়ার সাইক্লোন, এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোন বা সুপার সাইক্লোনের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। বঙ্গোপসাগরের ইতিহাসে প্রথম সুপার সাইক্লোন ছিল আমফান। এর আগে কখনো সুপার সাইক্লোন হয়নি। দানা একটি সিভিয়ার সাইক্লোন’’

তিনি বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীর সমুদ্রের তুলনায় বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ বেশি। তাই এই অঞ্চলে বারে বারে সিভিয়ার বা এক্সট্রিম সিভিয়ার সাইক্লোন তৈরি হচ্ছে। তবে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এত ঝড় আসছে বলাটা ঠিক নয়’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, উপকূল বিশেষজ্ঞ অভ্র চন্দ ডিডব্লিউকে বলেন, "প্রাক বর্ষা এবং বর্ষার পরের সময়ে অর্থাৎ মে মাসে এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় আসা খুব স্বাভাবিক। এখন সারা বছর ধরেই নিম্নচাপ চলে। বর্ষাকালে বৃষ্টি বাদ দিয়ে নিম্নচাপের বৃষ্টি হয়। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই হয়’’

মোকাবিলার উপায়

এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা কি মানুষের পক্ষে সম্ভব? অধ্যাপক ঘোষ বলেন, "ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলার জন্য যে সুসংহত পরিকল্পনা দরকার তা কিছুটা হলে ওড়িশায় আছে। অন্য জায়গায় খুব একটা নেই। সাইক্লোন অধ্যুষিত এলাকায় কিছু নিয়ম চালু করা উচিত। যেমন, কেমন ধরনের বাড়ি হবে, কেমন গাছ লাগানো হবে, কী কী করা যাবে না ইত্যাদি। স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নয়, বরং সারা বছর ধরে দীর্ঘ সময়ের জন্য সমন্বিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হবে’’

মোকাবিলা প্রসঙ্গে অধ্যাপক চন্দ বলেন, "বিপর্যয় মোকাবিলা পরিকল্পনা আরো উন্নত করতে হবে আমাদের। এখন আবহাওয়ার পূর্বাভাস আগের চেয়ে অনেক ভাল। আমাদের সুন্দরবন এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। ওড়িশায় অতটা দেখা যায় না এই সমস্যা।"

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রাও বাড়ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, গত এক শতকে এখানে তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। অথচ বদলের প্রক্রিয়া এতো দ্রুত হচ্ছে যে, ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে পারে প্রায় চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।

সারা পৃথিবীর সমুদ্রের তুলনায় বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ বেশি: জয়ন্ত বসু

This browser does not support the audio element.

জয়ন্ত বসুর মতে, "সর্বত্রই সমুদ্রতলের তাপমাত্রা বাড়ছে। এটা কোনো একটা দেশের বিষয় নয়,  আন্তর্জাতিক স্তরে কার্বন ডাই অক্সাইড কমিয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা কমাতে হবে। অন্যদিকে রাজ্য এবং স্থানীয় স্তরের ঝড়ের মোকাবিলায় যত প্রস্তুতি ভালো করা যাবে, তত এই বিপর্যয়ের ধাক্কা কম লাগবে’’

বিরূপ প্রভাব

নদী নিয়ে চিনের পরিকল্পনা ভারতের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। 

নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার ডিডাব্লিউকে বলেন, "বড় নদীগুলি যেমন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের জল নিয়ন্ত্রণের যে চেষ্টা চলছে, অর্থাৎ চিন যে বলছে নদীর গতিপথ বদলে দেবে, এটা হলে বঙ্গোপসাগরের ১০০ কিমি ব্যাপী যে শীতল জলস্তর প্রবাহিত হয়, সেই অংশের উষ্ণতা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হবে। এতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ আরো বাড়তে পারে। যেভাবেই হোক এই মহাসাগরগুলিতে জলের উষ্ণতার তারতম্য কমিয়ে আনতে হবে। সেজন্য আমাদের আন্তর্জাতিক নীতির ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে৷’’

সুন্দরবনের সমস্যা

১৮৮১ থেকে ২০০১ সালে সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০৪১ থেকে ২০৬০ সালের মধ্যে ঝড়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে ৫০ শতাংশ। তার ফলে সুন্দরবনের প্রকৃতি ও মানুষের স্থায়ী ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সুন্দরবন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সুপ্রতিম কর্মকার বলেন, "সুন্দরবন এলাকার বাড়িগুলির কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে হবে। বর্ষা আসার আগে পাড়-বাঁধগুলিকে বিভিন্নভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। উপকূল জুড়ে বাদাবনের জঙ্গলের সুন্দর নির্মাণ ছিল। সেটা প্রাচীর হিসেবে কাজ করত ঘূর্ণিঝড় আটকানোর জন্য। এই প্রাচীর বিপন্ন হতে আরম্ভ করেছে। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নতুন করে বাদাবনের প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ