দেশটির বাণিজ্যিক নগরী মুম্বইয়ে প্রথমবারের মতো ১৯ জন নারী অটোরিকশা চালানো শুরু করেছেন৷ সরকারি এক কর্মসূচির আওতায় তাঁরা কাজ করছেন৷
বিজ্ঞাপন
মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার গত বছর অটোরিকশার মোট লাইসেন্সের পাঁচ শতাংশ নারীদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷মুম্বই ও তার নিকটবর্তী শহর থানেতে নারীদের ৪৬৫টি লাইসেন্স দেয়া হবে বলে জানানো হয়৷
দু'মাস ধরে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর মুম্বইয়ের রাস্তায় নেমেছেন ১৯ নারী৷ তাঁদের একজন ৪৫ বছর বয়সি ছায়া মোহিতে৷ তিন সন্তানের এই জননী বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, তিনি আগে কখনও সাইকেল চালাননি৷ তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অটোরিকশা চালানো শিখতে সমস্যা হয়নি৷ ঘরের কাজকর্মের চেয়ে এই কাজটি ভালো বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ ছায়া মোহিতের আশা, অটোরিকশা চালিয়ে তিনি দিনে প্রায় এক হাজার রূপি (১৫ ডলার) আয় করতে পারবেন৷
মুম্বইয়ের রাস্তায় এমনিতে কালো-হলুদ অটো চলে৷ তবে নারীদের জন্য অন্য রঙের অটো চালু করা হয়েছে৷
আরেক নারী চালক অনিতা কাড়াক বলেন, ‘‘শুরুতে মানুষ আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করেছিল৷ তবে আমরা চাই আমাদের দেখে অন্য মেয়েরাও উৎসাহী হোক৷''
ছায়া, অনিতাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন সুধীর ধৈপোড়ে৷ তিনি বলেন, দুই মাসে তাঁরা অটো চালানোয় পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং রাস্তায় চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় পাস করেন৷ সুধীর জানান, এখন তিনি ৪০ জনের বেশি নারীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন৷ আরও প্রায় ৫০০ নারী প্রশিক্ষণ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে ভারতের নতুন দিল্লি ও রাঁচিতে নারীরা গোলাপি রঙের অটো চালাচ্ছেন৷ তবে সেসব অটোতে শুধু নারীরাই যাত্রী হন৷ কিন্তু মুম্বইয়ের নারী চালকদের অটোতে নারী-পুরুষ উভয়ইউঠতে পারবেন৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি)
কেমন লাগলো ভারতের নারী রিকশাচালকদের গল্প? লিখুন নীচের ঘরে৷
ঢাকার রাস্তায় ‘মেয়ে’র অন্যরকম রংবাজি
নারীর অবমাননা, নির্যাতন আর ধর্ষণের বিরুদ্ধে তুলি ধরেছে ‘মেয়ে’৷ ঢাকার রাস্তায় শুরু করেছে ‘রংবাজি’৷ সেই রংবাজি ফুটে ওঠে রিকশার পেছনে লেখা নানা কথা আর তুলির আঁচড়ে আঁকা ছবিতে৷
ছবি: Meya online netwark
নারীর ‘রংবাজি’
নারীবান্ধব অনলাইন কমিউনিটি ‘মেয়ে’-র এক উদ্যোগের নাম ‘রংবাজি’৷ ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল ঢাকার এশিয়াটিক সোসাইটির সামনে এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাতে রং-তুলি তুলে নেয় তারা৷ রিকশার পিছনে ফুটে ওঠে সমাজে নির্যাতিত, নিপীড়িত, ধর্ষিত নারীদের মনের কথা৷ রং-তুলির ভাষায় প্রতিবাদের এই উদ্যোগেরই নাম ‘রংবাজি’৷
ছবি: Meya online netwark
‘জোর করে ভালোবাসা যায় না’
মন না পেলে নারীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ থেকে শুরু করে নানা ধরণের নির্যাতন চালায় এক ধরণের পুরুষ৷ তাদের জন্যই রিকশার পেছনে লিখে দেয়া হয়েছে একটি সহজ সত্যি কথা – ‘জোর করে ভালোবাসা যায় না’৷
ছবি: Meya online netwark
বউয়ের দোয়া
বাংলাদেশে ‘মায়ের দোয়া’ লেখা রিকশার অভাব নেই৷ মা নারী৷ সন্তান অথবা সন্তানতুল্যদের কাছে তিনি সবসময়ই শ্রদ্ধেয়৷ কিন্তু স্ত্রী-ও যে নারী; নারী হিসেবে, আগামী দিনের মা হিসেবে তাঁরও যে সম্মান প্রাপ্য – সে কথা অনেকেরই মনে থাকে না৷ সে কারণেই রিকশার পেছনে ‘মেয়ে’ লিখে দিয়েছে ‘বউয়ের দোয়া’৷ জীবনের শুধু মায়ের নয়, বউয়ের দোয়াও দরকারি৷
ছবি: Meya online netwark
‘ঘরের কাজ ফেলনা নয়, বাইরের কাজ খেলনা নয়’
বাংলাদেশে কর্মজীবী নারী বাড়ছে৷ কিন্তু সমাজের একটি মহল নারীর কর্মসংস্থানের বিরুদ্ধে৷ যেসব নারী ঘরের যাবতীয় কাজ করেন, তাঁরা কিন্তু কাজের স্বীকৃতি পান না৷ ঘরের কাজ যেন কোনো কাজই নয়! আসলে ঘরে এবং বাইরে নারীদের কাজের মর্যাদা দেয়ার বিষয়টি অনেক পুরুষই এখনো গুরুত্ব দেয় না৷ গৃহকর্মে সুনিপুনা এবং কর্মজীবী নারীদের হয়ে তাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে ‘ঘরের কাজ ফেলনা নয়, বাইরের কাজ খেলনা নয়’৷
ছবি: Meya online netwark
‘নজর সামলে রাখুন’
তথাকথিত ‘শালীন’ পোশাক পরে না, শালীনতা বজায় রেখে চলাফেরা করে না বলেই নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার – এমন অদ্ভুত যুক্তির প্রবক্তা এবং অনুসারীদের প্রতি ‘মেয়ে’র পরামর্শ, ‘নজর সামলে রাখুন’৷
ছবি: Meya online netwark
‘লজ্জা ধর্ষকের, ধর্ষিতের নয়’
অন্যায়কারীরই লজ্জিত হওয়া উচিত, যিনি অন্যায়ের শিকার তাঁর আবার লজ্জা কিসের? ধর্ষণ প্রসঙ্গে সবাইকে এই কথাটা মনে করিয়ে দিতেই ‘রংবাজি’-র একটি উদ্যোগের স্লোগান, ‘লজ্জা ধর্ষকের, ধর্ষিতের নয়’৷
ছবি: Meya online netwark
অন্যায়ের প্রতিবাদে নারী-পুরুষ
সব অন্যায় রোধেই ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ দরকার৷ নারীর বিরুদ্ধে সব ধরণের অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধেও তাই পুরুষদেরও নারীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ‘মেয়ে’৷
ছবি: Meya online netwark
সবাই নারীর অধিকার রক্ষায় উদ্বুদ্ধ হোক
‘মেয়ে’ নামের সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা এবং সমন্বয়কারী তৃষিয়া নাশতারান৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘রংবাজি’ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘রিকশা পেইন্টিং আমাদের ঐতিহ্য৷ এর ব্যাপক সামাজিক প্রভাব আছে৷ যাত্রীরা যখন রিকশায় চড়েন, জ্যামে বসে থাকেন, তখন রিকশা পেইন্টিং গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখেন তাঁরা৷ আমরা সেটাই কাজে লাগাতে চেয়েছি৷ আমরা চাই এই চিত্রগুলো দেখে মানুষ সচেতন হোক৷ নারীর অধিকার রক্ষায় উদ্বুদ্ধ হোক৷’’