1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের বাজারে বাংলাদেশের সুবিধা

সমীর কুমার দে ঢাকা
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে৷ সরকার আশা করছে, আগামী দুই বছরে তা দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে৷ ভারতের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে এই ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণ কী?

ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman

২০১১ সাল থেকেই ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় তৈরি পোশাক রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের৷ তাহলে এতদিন কেন বাড়ানো যায়নি পোশাক রপ্তানি?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের বাজারে সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন৷ স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিতে গেল বছর ভারত সরকার চীন থেকে আমদানি পণ্যের শুল্ক দ্বিগুন করে৷ ফলে সুযোগ বেড়ে যায় বাংলাদেশের৷ আগে চীন থেকে পণ্য আমদানিতে ভারতে শুল্ক ছিল ১০ ভাগ৷ গেল বছর সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ ভাগ৷ আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে পেরেছে বাংলাদেশ৷ তাছাড়া ভারতে মধ্যবিত্তের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে৷ ফলে তৈরি পোশাকের বাজারও বড় হচ্ছে৷

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-যুদ্ধের কারণে চীন তার পোশাক পণ্য তুলনামূলক কম দামে ভারতে রপ্তানি করছিল৷ এর ফলে দেশটির স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে ভারত বস্ত্র ও পোশাক খাতের কিছু পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করে৷ এতে করে পোশাক খাতে বাংলাদেশের সাময়িক কিছুটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, কেননা, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সাফটার আওতায় শূন্য শুল্কে বাংলাদেশ ভারতে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পায়৷’’

বাংলাদেশের সাময়িক কিছুটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে: খন্দকার মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘ভারতের উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় চীনের একই পণ্যে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে৷ ফলে ভারত চীন থেকে পণ্য আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে যে প্রতিকার পেতে চায়, সেই লক্ষ্য কার্যকর কঠিন হয়ে পড়বে৷ তাই দেশটির উদ্যোক্তাদের দাবি, বাংলাদেশ থেকেও কোনো রকম ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে কিনা সে বিষয়ে ভারত সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে৷ তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত সরকারকে আশ্বস্ত করতে হবে, বাংলাদেশের মাধ্যমে তাদের উদ্যোক্তারা কোনো রকম ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না৷ এবং সাফটার আওতায় দেওয়া সুবিধা যেন অব্যাহত থাকে৷ এখানে কূটনৈতিক বাণিজ্য সম্পর্কও বাড়াতে হবে৷ তাদের আশ্বস্ত করতে হবে যে, চীনের পণ্য এখান দিয়ে যাবে না৷ কারণ, ভারত ইতিমধ্যে আমাদের পাট ও কস্টিক সোডা রপ্তানিতে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে৷’’

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আদর্শ সোয়াইকা৷ বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গেল দুই বছর ভারতে আমাদের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে৷’’ তিনি আশা করেন, আগামী দুই বছরে ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি দুই বিলিয়ন হবে৷

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার আয় করেছে, যার ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে৷ চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন হাজর ৯০০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি৷ এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে দুই হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার আসবে বলে ধরা হয়েছে, যা মোট রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ৷

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতে আমাদের পোশাক রপ্তানি উল্লেখ করার মতো বাড়ছিল৷ কিন্তু এখন সেই গ্রোথটা ধরে রাখা কঠিন হবে৷ কারণ, এখানে শ্রমিকদের মজুরি অনেক বেড়ে গেছে৷ পাশাপাশি ডলারের দামের বিপরীতে ভারতের মুদ্রার দরপতন হয়েছে৷ সবকিছু মিলিয়ে আগামী দুই বছরে দুই বিলিয়ন মার্কেট সাইজ করার যে পরিকল্পনা সেটা কঠিন হতে পারে৷’’ ভারত, না বাংলাদেশ– কোথায় শ্রমিকদের মজুরি কম? জনাব সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘ভারতের একেক রাজ্যে শ্রমিকদের মজুরি একেক রকম৷ তবে সব মিলিয়ে হিসাব করলে দেখা যাবে, ভারতের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রমিকদের মজুরি অনেকখানিকই বেশি হবে৷’’

ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে শ্রমিকদের মজুরি অনেকখানিকই বেশি হবে: সিদ্দিকুর রহমান

This browser does not support the audio element.

গত বছরের মাঝামাঝিতে ভারত সরকার চীন থেকে আমদানি করা ৩২৮টি বস্ত্র ও পোশাক খাতের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করে৷ কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাষ্ট্রি (সিআইটিআই)-র বরাত দিয়ে ভারতের দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তুলা উৎপাদনকারী দেশ হওয়ার পরও গত অর্থবছরে বস্ত্র ও পোশাক খাতের পণ্য আমদানিতে দেশটিতে চীনের আয় বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ৷ ভারত এ সময় ৭০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে৷ এর মধ্যে ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য আসে চীন থেকে৷ ফলে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ভারসাম্য আনতে চায় তারা৷

ভারতের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়লেও বাণিজ্য-ঘাটতি আগের মতো বিশালই রয়েছে৷ বছরে ভারত যেখানে বাংলাদেশে রপ্তানি করে ৮ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, সেখানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয় মাত্র ৮৭৩ মিলিয়ন ডলার৷ তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়লে এই বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের৷ বিজিএমইএ-র সভাপতি বলেন, ‘‘আমাদের অনেকগুলো নতুন বাজার আসছে৷ তার মধ্যে ভারতও একটা৷ এই বাজারটা ধরে রাখতে গেলে সরকারের কিছু নগদ প্রণোদনাও লাগবে৷’’

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, প্রবৃদ্ধির হিসেবে দেড় বছর ধরেই প্রতিবেশী দেশ ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক নিজেদের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছে৷ গত অর্থবছরে ভারতের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১৫ শতাংশ বেশি৷ তবে চলতি অর্থবছরের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি গত বছরকেও ছাপিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলছে৷ এই অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ডলারের মতো, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ৷ এই ধারা অব্যহত থাকলে বাংলাদেশের টার্গেট পুরোপুরি পূরণ হবে৷

আমাদের পোশাকের কোয়ালিটিও ভালো: বিজয় ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস প্রেসিডেন্ট বিজয় ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাক একটা জায়গা করে নিয়েছে৷ এটা ধরে রাখতে হবে৷ শুধু শুল্ক-মুক্ত সুবিধাই নয় বা চীনের শুল্ক বাড়ানো নয়, আমাদের পোশাকের কোয়ালিটিও ভালো৷ সবকিছু মিলিয়েই ব্যবসায়ীরা যখন দেখেন কোথায় ব্যবসা করলে বেশি লাভ, তারা তো সেখানেই ব্যবসা করবেন৷ সেই হিসেবে ভারতের মার্কেট বড়, প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় ‘ট্রান্সপোর্ট কস্ট’ও কম৷ সেখানে মধ্যবিত্তও বাড়ছে, যারা বাজার থেকে পোশাক কিনেই গায়ে দিতে চায়৷ সেই ধরনের মানুষদের কাছে বাংলাদেশের পোশাক জনপ্রিয় হয়েছে বলেই রপ্তানি বাড়ছে৷’’

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২৮ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১৮ সালের পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি৷ তবে ব্যবসায়ীরা যা বলছেন, তাতে ৩০ বিলিয়ন ডলার পার হয়েছে৷ ২০২১ সাল নাগাদ এটা ৫০ বিলিয়নে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার৷ সেটা কি পূরণ হওয়া সম্ভব? এ বিষয়ে গবেষক জনাব মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘এভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকলে ২০২১ সালে না হলেও ২০২৪ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আমি আশা করি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ