বিতর্কিত ধর্মীয় গুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ধর্ষণের অভিযোগে সাজা দেয়ায় শুরু হয়েছে সহিংসতা৷ এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ জন৷ ২০০২ সালে দুই নারী অনুসারীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় শুক্রবার এ রায় দেয় হরিয়ানার এক আদালত৷
বিজ্ঞাপন
কে এই রাম রহিম!
ভারতের পঞ্চকুলায় বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা গুরমিত রাম রহিমের সমর্থকেরা সহিংস হয়ে উঠেছিল৷ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Topgyal
‘রকস্টার বাবা’
শুরুতে এই নামেই পরিচিত ছিলেন রাম রহিম৷ উজ্জ্বল, রংবেরংয়ের কাপড়, এবং গহনা ছিল তার পছন্দের জিনিস৷ স্বঘোষিত এই ‘ঈশ্বরের দূত’ বেশ কয়েকটি সিনেমা প্রযোজনা করেছেন, কয়েকটিতে অভিনয়ও করেছেন৷ তবে তার অর্থ ও সম্পদের উৎস এখনও অজানা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Topgyal
সমাজকর্মী সাধু
শুরুতে নিজেকে ‘সামাজিক সাধু’ এবং ‘মানবপ্রেমী’ বলে দাবি করেন রাম রহিম৷ তার অনুসারীদের উদ্যোগে বেশকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং রক্তদান কর্মসূচি আয়োজন হয়৷ ২০১০ সালে একটি গণবিয়ের আয়োজনের করা হয়, যেখানে রাম রহিমের ১০০ অনুসারী স্বেচ্ছায় সাবেক যৌনকর্মীদের বিয়ে করেন৷ তার এ ধরনের কাজ বিপুল পরিমাণ অনুসারীদের আকৃষ্ট করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Topgyal
অপরাধমূলক অভিযোগ
নিজের প্রযোজিত ও অভিনীত একটি চলচ্চিত্রে গোবিন্দ সিং নামে এক শিখ গুরুর বেশ ধরায় শিখ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়৷ পরবর্তীতে এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে হয় রাম রহিমকে৷ তবে তার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর সব অপরাধের অভিযোগও রয়েছে৷ ২০০২ সালে একজন সাংবাদিক হত্যার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে৷ তবে ২০০২ সালে নিজের দুই নারী অনুসারীকে ধর্ষণের অভিযোগেই শেষ পর্যন্ত সাজা হচ্ছে রাম রহিমের৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/R. Prakash
রায়ের পর সহিংসতা
রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে বলে হাই কোর্টের দেয়া রায়ের পরপরই পঞ্চকুলা, চণ্ডীগড়, দিল্লি এবং সিরসা শহরে বিক্ষোভ শুরু করে তার সমর্থকরা৷ সহিংসতার শুরু হয় পঞ্চকুলায়৷ সেখানে এক লাখেরও বেশি রাম রহিম সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.Qadri
অনেকের মৃত্যু
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী সহিংসতা শুরু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিভিন্ন শহর মিলিয়ে অন্তত ৩১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ তবে নিহতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ
পঞ্চকুলা, সিরসা, সঙ্গরুর এবং মোগা জেলায় অনির্দিষ্টকালের কালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ দিল্লিতেও একটি ট্রেনের কয়েকটি বগিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা৷
ছবি: Getty Images/M.Sharma
প্রশাসনিক ব্যর্থতা
হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব সরকার আগে থেকেই পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেছিল৷ কিন্তু তারপরও দুই রাজ্যই হাজার হাজার রাম রহিম সমর্থককে পঞ্চকুলায় প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল৷ আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এ অবস্থা সৃষ্টি হতো না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
সহিংসতা চলাকালে বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে চণ্ডীগড়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল৷ ভারতীয় রেলওয়ের দুই শতাধিক ট্রেন বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Pal Singh
8 ছবি1 | 8
অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সাত থেকে দশ বছর কারাদণ্ড হতে পারে রাম রহিমের৷ তবে দণ্ড ঘোষণা করা হবে সোমবার৷ রায় ঘোষণার পরপরই বিতর্কিত এ ধর্মীয় নেতার অনুসারীরা সহিংস বিক্ষোভ শুরু করে৷ আদালত চত্ত্বরে অবস্থান করা সাংবাদিকদের আক্রমণ করা হয়৷ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে৷
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জনতা৷ টিয়ার গ্যাস, জলকামান, এমনকি ফাঁকা গুলি ছুঁড়েও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি রাম রহিমের অনুসারীদের৷
পঞ্চকুলায় এরই মধ্যে পুলিশ ও প্যারামিলিটারির পাশাপাশি সেনা মোতায়েনও করা হয়েছে৷ হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷
Protests after Indian guru convicted of rape
00:32
রাম রহিমের মূল ঘাঁটি বলে পরিচিত হরিয়ানার সিরসা শহরেও চলে তাণ্ডব৷ পার্শবর্তী রাজ্য পাঞ্জাব ও দিল্লিতেও কিছু বাস এবং দু'টি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা৷
রণক্ষেত্র পঞ্চকুলা
রায় কেমন হতে পারে আগে থেকেই অনুমান করতে পারছিলেন বিতর্কিত এ ধর্মীয় নেতার অনুসারীরা৷ ফলে আগের রাত থেকেই তারা দলে দলে জড়ো হতে থাকেন শহরটিতে৷ বিভিন্ন পার্ক, সুপারমার্কেট, রাস্তায় রাত কাটিয়ে আদালত চত্ত্বরে জড়ো হয় অনুসারীরা৷
পরিস্থিতি মোকাবেলায় শহরজুড়ে ১৫ হাজার পুলিশ সদস্য এবং প্যারামিলিটারি মোতায়েন করা হয়েছিলে৷ এমনকি উত্তর ভারতের বেশ কিছু শহরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ইন্টারনেট সংযোগও৷ কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি পরিস্থিতি৷
এর আগেও শীর্ষ ধর্মীয় নেতাদের কারণে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ ২০১৪ সালে আরেক প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা গুরু রামপালকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার অনুসারীরা পুলিশের ওপর লাঠি ও পাথর নিয়ে চড়াও হয়৷
এডিকে/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স, এপি)
ভারতে সাংস্কৃতিক অসহিষ্ণুতা বাড়ছে
বহু জাতি-ধর্ম-বর্ণের দেশ ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্র৷ কিন্তু মত প্রকাশের অধিকারের প্রশ্নে ইদানীং অসহিষ্ণুতার নানা দৃষ্টান্ত উঠে আসছে৷ সেই সঙ্গে অবশ্য সহিষ্ণুতার সীমা নিয়েও চলছে ব্যাপক বিতর্ক৷
ছবি: AP
আশিষ নন্দী ও অনগ্রসর শ্রেণি
সম্প্রতি জয়পুর সাহিত্য উৎসবের মঞ্চে প্রখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ আশিষ নন্দীর এক মন্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক৷ ভারতের অনগ্রসর শ্রেণির মানুষেরাই মূলত দুর্নীতির সঙ্গে বেশি যুক্ত, তিনি নাকি এমন কথা বলেছিলেন৷ বহুজন সমাজ পার্টি সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আশিষ নন্দীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়৷ তিনি অবশ্য এর প্রেক্ষাপট খোলসা করে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
কমল হাসান ও তাঁর ‘বিশ্বরূপম’
দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাডুর বিখ্যাত অভিনেতা ও বহুমুখী প্রতিভা কমল হাসান দেশে-বিদেশে পরিচিত৷ আফগানিস্তানের পটভূমিকায় তৈরি তাঁর সাম্প্রতিকতম ছবি ‘বিশ্বরূপম’ চরম বিরোধিতার মুখে পড়েছিল৷ তামিলনাডুর কিছু মুসলিম সংগঠনের আপত্তিতে ছবিটির মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে৷ নিজের গাড়ি-বাড়ি বন্ধক রেখে ছবিটি তৈরি করেছেন কমল হাসান৷ অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে রফা হয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কলকাতায় ‘অনভিপ্রেত’ সলমান রুশদি
ভারতের ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ বলে পরিচিত শহর কলকাতায় আমন্ত্রণ সত্ত্বেও পা রাখতে পারলেন না ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সলমান রুশদি৷ তাঁর উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি চলচ্চিত্র সম্প্রতি ভারতে মুক্তি পেয়েছে৷ পরিচালক দীপা মেহতার সঙ্গে দেশের অন্যান্য শহরে যেতে পারলেও তিনি কলকাতায় ‘অনভিপ্রেত’ রয়ে গেলেন৷ বিষয়টি নিয়ে এখনো চলছে বিতর্ক৷
ছবি: DW/H. Kiesel
তোপের মুখে পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংস্কৃতিপ্রেমি হিসেবে পরিচিত৷ অথচ তাঁর শাসনকালেই সলমান রুশদির মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক কলকাতায় পা রাখতে না পারায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ পূর্বসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময় বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকেও কলকাতা ছাড়তে হয়েছিল৷
ছবি: Prabhakar Mani Tewari
তসলিমা নাসরিনকে ফিরিয়ে দিয়েছে কলকাতা
বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন ভারতে আশ্রয় নিয়ে কলকাতায় থাকতে চেয়েছিলেন৷ তসলিমাকে ঘিরে লাগাতার বিতর্কের জের ধরে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থি সরকার তাঁকে কলকাতায় থাকতে দেয় নি৷ তাঁর নিরাপত্তা ও জনজীবনে অশান্তির আশঙ্কা প্রকাশ করেই এমনটা করা হয়েছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
শশী থারুরের সতর্কতাবাণী
প্রাক্তন কূটনীতিক, লেখক, চিন্তাবিদ, রাজনীতিক, মন্ত্রী শশী থারুর ভারতের সমাজে বেড়ে চলা অসহিষ্ণুতা সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন৷ আশিষ নন্দীর মন্তব্য বা ‘বিশ্বরূপম’ ছবি নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, মত প্রকাশের অধিকার ও অন্যদের আবেগে আঘাত করার অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে৷ তাঁর মতে, ভারত এখনো ‘আঘাত করার অধিকার’ মেনে নেওয়ার অবস্থায় পৌঁছে নি৷
ছবি: AP
6 ছবি1 | 6
ভারতীয় সংস্কৃতিতে সত্যিই কি অসহিষ্ণুতা বাড়ছে? লিখুন নীচের ঘরে৷