প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে অস্থির সম্পর্কের কথা জি-টোয়েন্টি সম্মেলনেও জানান দিয়েছে ভারত৷ হামবুর্গে শনিবার শেষ হওয়া সম্মেলনে অন্যান্য ইস্যুর চেয়ে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের দিকেই জোর দিয়েছে ভারত৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির হামবুর্গ শহরে অনুষ্ঠিত জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে আলোচনার টেবিলে ছিল জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, মুক্তবাণিজ্য, শরণার্থী সংকট, সিরিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু৷ সে সবের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ বিষয়ক আলোচনাতেই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ভারত, জানিয়েছেন সেদেশের জি-টোয়েন্টি বিষয়ক শেরপা অরবিন্দ পানগারিয়া৷
সম্মেলনের গণমাধ্যম কেন্দ্রে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আলোচনাগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে ভারত৷ এছাড়া বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বিষয়ক আলোচনাতে অবদান রেখেছে দেশটি৷''
প্রসঙ্গত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে যাওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক যে কোনো আলোচনায় সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করেন মোদী৷ জি-টোয়েন্টি সম্মেলনেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি৷ হামবুর্গে মোদীসহ অন্যান্য বিশ্বনেতারা সন্ত্রাসবাদ দমনের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের অর্থ উৎস বন্ধের দিকেও জোর দেয়ার অঙ্গীকার করেন৷ এ জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান, বিচারিক ব্যবস্থায় সহায়তা বাড়ানোর অঙ্গীকারও করা হয়েছে৷
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এই অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে পানগারিয়া বলেন, ‘‘শুরুতে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের বিষয়টি শুধুমাত্র জি-টোয়েন্টির যৌথ প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করার পরিকল্পনা থাকলেও ভারতের আগ্রহতে সেটি আলাদা বিবৃতি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে৷''
সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের এই যৌথ বিবৃতিকে ভারতের জন্য এক সাফল্য হিসেবে দেখছেন জি-টোয়েন্টি সম্মেলন কভার করতে আসা ভারতীয় সাংবাদিক মনীষ চাঁদ৷ ইন্ডিয়া রাইটস পত্রিকার এই প্রধান সম্পাদক বলেন, ‘‘বিবৃতিতে সন্ত্রাসীদের ‘নিরাপদ আশ্রয়' বন্ধের কথাও বলা হয়েছে, যা দিয়ে প্রকারান্তরে আসলে পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস প্রতিরোধে যে অ্যাকশন প্ল্যান সম্মেলনে দিয়েছেন, তাতে সন্ত্রাসবাদে সমর্থন যোগায় এমন দেশগুলোর কর্মকর্তাদের জি-টোয়েন্টিভুক্ত দেশগুলোতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছে৷ এধরনের উদ্যোগ নেয়া হলে তা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখবে৷''
উল্লেখ্য, সম্মেলনের শেষদিনেই ভারতের উদ্দেশ্যে জার্মানি ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ আগামী বছর আর্জেন্টিনার বুয়েনেস আয়রেসে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷
পাকিস্তান: অগুনতি সন্ত্রাসী হামলার একটি দশক
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সঙ্গীদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে যোগ দেয়ার পর, চড়া মূল্য দিতে হয়েছে পাকিস্তানকে৷ উগ্রপন্থিদের হাতে দেশটির কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ ছবিঘরে দেখুন সেই মর্মান্তিক কাহিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A Majeed
২০০৭ – সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাবর্তনের দিন করাচিতে হামলা
২০০৭ সালের ১৮ অক্টোবর করাচিতে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর গাড়িবহরে জোড়া বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ সে সময় দীর্ঘ আট বছর পর দেশে ফিরছিলেন তিনি৷ হামলায় বেনজির বেঁচে গেলেও, প্রাণ হারায় ১৩৯ ব্যক্তি৷ কিন্তু এর মাত্র দু’মাস পর, ২৭ ডিসেম্বর, রাওয়ালপিন্ডিতে অপর এক হামলায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Khawer
২০০৮ – ওয়াহ বোমা হামলা
ওয়াহ-তে অবস্থিত ‘পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিস’-এ জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারায় ৬৪ ব্যক্তি৷ ২০০৮ সালের ২১ আগস্টের সেই হামলাই এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানে কোনো সামরিক স্থাপনায় সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘তাহরিক-ই-তালেবান’ (টিটিপি) সে সময় ঐ হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
২০০৮ – রাজধানীর হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত মারিয়ট হোটেলে বিস্ফোরকভর্তি ট্রাক দিয়ে হামলা চালানো হয়৷ ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের সেই হামলায় প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৬০ ব্যক্তি, আহত ২০০৷ হতাহতদের মধ্যে ২০ জন বিদেশিও ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Matthys
২০০৯ – পেশোয়ারে হামলা
পাকিস্তানের পেশোয়ারে নারী ও শিশুদের বাজার হিসেবে পরিচিত ‘মিনা বাজারে’ একটি গাড়ি বোমা হামলায় ১২৫ ব্যক্তি নিহত ও ২০০ ব্যক্তি আহত হয়৷ পাকিস্তান সরকার এই হামলার পেছনে তালেবান জড়িত বলে দাবি করলেও, জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান এবং আল-কায়দা – উভয়েই সেই হামলার দায় অস্বীকার করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A Majeed
২০১০ – ভলিবল ম্যাচে আত্মঘাতী হানা
পাকিস্তানের বানুর একটি গ্রামে ভলিবল খেলা চলাকালে আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারায় ১০১ ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Azam
২০১১ – চারসাদার পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা
পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখার চারসাদা জেয়া একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জোড়া বোমা হামলায় ৯৮ ব্যক্তি নিহত ও ১৪০ জন আহত হয়৷ ২০১১ সালে ১৩ মে ক্যাডেটরা যখন প্রশক্ষিণ শেষে দশদিনের ছুটিতে নিজ নিজ বাড়ি যাওয়ার পথে বাসে উঠছিল, তখন হামলার ঘটনাটি ঘটে৷ বলা হয়ে থাকে, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই নাকি ঐ হামলা চালায় তালেবান৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Ahmed
২০১৩ – পেশোয়ারে চার্চে বোমা হামলা
২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পেশোয়ারের ‘অল সেইন্ট চার্চে’ জোড়া আত্মঘাতী হামলায় ৮২ ব্যক্তি প্রাণ হারায়৷ ‘তাহরিক-ই-তালেবান’ বা টিটিপি সংশ্লিষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী জুনদাল্লাহ সেই হামলার দায় স্বীকর করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
২০১৪ – পেশোয়ারে স্কুলে হত্যাযজ্ঞ
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর টিটিপি-র সাতজন বন্দুকধারী পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলা চালায়৷ তারা ১৫৪ ব্যক্তিকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে ১৩২টি শিশু ছিল৷ পাকিস্তানের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা৷
ছবি: AFP/Getty Images/A Majeed
২০১৫ – করাচিতে বাসে হামলা
২০১৫ সালের ১৩ মে আটজন বন্দুকধারী করাচিতে একটি বাসে হামলা চালিয়ে ৪৬ ব্যক্তিকে হত্যা করে৷ নিহতদের সবাই শিয়া মুসলমান ছিল৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করে জুনদাল্লাহ বা ‘আল্লাহ-র সেনা’ নামের জঙ্গি গোষ্ঠী৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
২০১৬ – হাসপাতালে বোমা হামলা
চলতি বছরের ৮ আগস্ট পাকিস্তানের কোয়েটায় সরকারি হাসপাতালে আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং গুলিতে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়৷ নিহতদের অধিকাংশই আইনজীবী, যাঁরা অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত বেলুচিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিলাল আনওয়ার কাসির মরদেহ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন৷