ভারতের ভাষায় কথা বলছেন ট্রাম্প, অভিযোগ পাকিস্তানের
৫ জানুয়ারি ২০১৮
বছরের প্রথম টুইটেই সতর্ক করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এবার তা কার্যকর হলো৷ যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, সামরিক খাতে পাকিস্তানকে আপাতত আর সহায়তা করা হবে না৷
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানকে সামরিক খাতে ২৫৫ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দিতো যুক্তরাষ্ট্র৷ মার্কিন সামরিক অস্ত্রও পেত পাকিস্তান৷ নতুন নীতি অনুযায়ী এর কোনো কিছুই আর পাবে না ইসলামাবাদ৷ বৃহস্পতিবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট হোয়াইট হাউসের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে৷
বছরের প্রথম দিন ট্রাম্প টুইট করে জানিয়েছিলেন, প্রতি বছর পাকিস্তানকে লক্ষ লক্ষ ডলার সাহায্য দেয় অ্যামেরিকা৷ কিন্তু তার বিনিময়ে পাকিস্তান কেবল অসত্যই ফেরত দেয় অ্যামেরিকাকে৷
বস্তুত, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার উপর তালেবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের লাগাতার হামলার দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন ট্রাম্প৷ অভিযোগ, বারংবার বলা সত্ত্বেও হাক্কানি নেটওয়ার্ক এবং তালেবানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পাকিস্তান৷ বরং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে বাড়তে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে৷
দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঠিক এই অভিযোগই করে আসছে ভারত৷ বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে অশান্তি সৃষ্টির জন্য আফগান তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে ব্যবহার করে পাকিস্তান৷ কিছুদিন আগে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পাকিস্তানকে ‘জঙ্গি তৈরির কারখানা' বলেও অভিহিত করেছিলেন৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও অ্যামেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার প্রক্রিয়া চালিয়ে গিয়েছিলেন৷ রাজনৈতিক মহলের ধারণা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকার অবস্থানকে নিজেদের জয় হিসেবেই বিবেচনা করবে ভারত৷
পাকিস্তানের আপত্তির জায়গাও ঠিক সেখানেই৷ উপমহাদেশে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বরাবরই মধ্যস্থতা করেছে অ্যামেরিকা৷ দু'দেশের মধ্যে শক্তি ভারসাম্য রক্ষার প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছে৷ ওবামা সরকারও দু'দেশের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে নীতি প্রণয়ন করেছে৷ ট্রাম্পের নয়া ঘোষণার পর অনেকেই মনে করছেন, শক্তি ভারসাম্য অনেকটাই ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়ল৷ পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী খাজা আসিফও ঠিক সেই কথাই বলেছেন৷ তাঁর মতে, ভারতের সুরেই কথা বলছে অ্যামেরিকা৷
১ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের পরেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল পাকিস্তান৷ ইসলামাবাদ ডেকে পাঠিয়েছিল মার্কিন দূতকে৷ যদিও বৈঠকে কী কথা হয়েছে সে বিষয়ে তখন মুখ খুলতে চাননি মার্কিন দূত৷
এখন দেখার অ্যামেরিকা ‘এইড' বন্ধ করে দেওয়ার পর ইসলামাবাদ কোন কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে৷
জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের ইতিহাস
সম্প্রতি আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে মার্কিন ড্রোন হামলায় অন্তত ২৬ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যও রয়েছে৷ কেন এ সংগঠনকে এ অঞ্চলের অন্যতম ভীতিকর জঙ্গি সংগঠন মনে করা হয়?
ছবি: picture-alliance/dpa
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা যোদ্ধাদের সংগঠন
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা জালালউদ্দিন হাক্কানি ১৯৮০-র দশকে মুজাহিদিনের হয়ে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন৷ সেই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ আনুকুল্য পেয়েছিলেন মুজাহিদিন৷ সেই যোদ্ধাদের নিয়েই গড়ে তোলা হয় হাক্কানি নেটওয়ার্ক৷ ১৯৯৫ সালে হাক্কানি জোট বাঁধে তালিবানের সঙ্গে৷ ১৯৯৬ সালে দখল করে নেয় আফগান রাজধানী কাবুল৷ ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র হাক্কানি নেটওয়ার্ককে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষনা দেয়৷
ছবি: AP
কে এই জালালউদ্দিন হাক্কানি?
জালালউদ্দিন হাক্কানি ১৯৩৯ সালে আফগানিস্তানের পাকতিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন৷ পাকিস্তানের প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতা মওলানা সামি উল হকের বাবার প্রতিষ্ঠা করা দারুল উলুম হাক্কানি নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন তিনি৷ দারুল উলুম হাক্কানির বিরুদ্ধেও তালেবানসহ অন্যান্য উগ্রপন্থি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: AP
তালেবান মন্ত্রী জালাল উদ্দিন হাক্কানি
তালেবানের শাসনামলে আফগানিস্তানের আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন জালালউদ্দিন হাক্কানি৷ ২০১১ সালে মার্কিন বাহিনীর হাতে তালেবানদের পতনের আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে বহাল ছিলেন৷ তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের পর তাঁকেই আফগানিস্তানের অন্যতম প্রভাবশালী জঙ্গি নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়৷ আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সাথেও তাঁর ছিল ঘনিষ্ট যোগাযোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাক্কানি নেটওয়ার্ক কোথায়?
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগান সীমান্ত সংলগ্ন পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মিরানশাহ শহরে এর কমান্ড সেন্টার৷ যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তান মনে করে, হাক্কানি নেটওয়ার্ক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মদদপু্ষ্ট, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে৷ আফগানিস্তানের ভেতরে সাধারণ মানুষ ও আন্তর্জাতিক বাহিনীর উপর হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ী করে আসছে ওয়াশিংটন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tanveer
হাক্কানির উত্তরসুরি
২০১৫ সালে জালালউদ্দিন হাক্কানির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারনা করা হয়৷ কিন্তু তার সংগঠন সেসময় খবরটি অস্বীকার করে৷ বর্তমানে জালালউদ্দিন হাক্কানির ছেলে সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এ নেটওয়ার্কের প্রধান৷ সিরাজউদ্দিন হাক্কানি তালেবানেরও উপ প্রধান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সিরাজউদ্দিন হাক্কানি কে ?
সিরাজউদ্দিন হাক্কানি সম্পর্কে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য না থাকলেও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর ছোটবেলা কেটেছে পাকিস্তানের মিরানশাহ শহরে৷ লেখাপড়া পেশোয়ারের দরুল উলুম হাক্কানিতে৷ সিরাজউদ্দিনকে একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ অনেকে মনে করেন, তিনি তাঁর বাবার চেয়েও কট্টরপন্থি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আনাস হাক্কানি
সিরাজউদ্দিন হাক্কানির ছেলে আনাস হাক্কানি বর্তমানে আফগানিস্তানের কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি আছেন৷ আনাসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে কাবুলের পরিণতি ভয়ংকব হবে বলে হুশিঁয়ারি উচ্চারণ করেছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/National Directorate of Security
হাক্কানি নেটওয়ার্ক কত বড়?
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও আফগান বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংগঠনে তিন থেকে দশ হাজার যোদ্ধা রয়েছে৷ এর মূল তহবিল আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে৷ তহবিল সংগ্রহ করতে হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tanveer
অন্য জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা
আল কায়েদা, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান, লস্কর-ই-তৈয়বাসহ এশিয়ার জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে হাক্কানি গ্রুপের রয়েছে ঘনিষ্ট যোগাযোগ৷ ওসামা বিন লাদেনের মতো আল কায়েদার বর্তমান নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির সাথেও এ সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে৷