জিততে গেলে নতুন ভোটারদের, যুবদের, তরুণদের সমর্থন পেতে হবে। তাই ভারতের ভোটে তাদের দিকেই নজর সব দলের।
বিজ্ঞাপন
২০২৪ সালে কংগ্রেসসহ ছোট দলগুলিও ইউটিউবার, ডিজিটাল মাধ্যম, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সারদের কাজে লাগানোর প্রবল চেষ্টা করেছে। এই চেষ্টার মূলে থেকেছে এই নবীন ভোটারদের, যুবদের কাছে টানার চেষ্টা।ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
গত জানুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ভারতে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সি ভোটারের সংখ্যা ২১ কোটি ৭০ লাখ। বয়সের সীমাটা যদি আরো একটু বাড়িয়ে ৩৫ করে দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে ৬৬ শতাংশ ভোটদাতাই এর মধ্যে ঢুকে যাচ্ছেন। তার অর্থ, সদ্য যুব, যুব ও তরুণরাই ভারতে নির্বাচনে ফলাফল ঠিক করে দেন। ফলে তাদের কাছে যারা ভালোভাবে পৌঁছাতে পারবে, তাদের আবেগকে ছুঁতে পারবে, তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবে, তাদের মনে একটা ছাপ রাখতে পারবে, ধারণা তৈরি করতে পারবে, তারাই জিতবে।
ফলে নির্বাচনের প্রচারে, কৌশলে, ধারণা তৈরির খেলায় একটা অদ্ভূত পরিবর্তন এসেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথমবার দেখেছিলাম বিজেপি-র প্রচারে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাটসহ বিভিন্ন রাজ্যে মিডিয়া বলতে শুধু আর প্রিন্ট ও টেলিভিশন বোঝাচ্ছে না, ডিজিটাল মিডিয়া, ইউটিউবে খবরের চ্যানেলের প্রতিনিধিদের জন্য় প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে আলাদা করে একজন কর্মকর্তা থাকছেন। একজন কর্মকর্তা সেই কেন্দ্রের প্রধান শহরে থাকবেন। তার অধীনে বিভিন্ন ছোট ছোট শহর বা গঞ্জে ছিলেন আরো কয়েকশ কর্মী, যারা এই ডিজিটাল মিডিয়াকে সহায়তা করার জন্য সবসময় তৈরি ছিলেন।
নির্বাচনে প্রথম ভোটারদের প্রত্যাশার কথা
নির্বাচন নিয়ে সব ভোটারেরই কিছু প্রত্যাশা থাকে৷ পরবর্তী নির্বাচনে এই প্রথম যারা ভোট দেবেন, তারা কী আশা করছেন? কেমন প্রার্থী পছন্দ তাদের? এসব জানতে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার প্রথম ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে...
ছবি: NurPhoto/IMAGO
নির্বাচন নিয়ে আশাভঙ্গ হবার ইঙ্গিতই পাচ্ছি: ইমরান নাফিস, লেখক ও চাকুরিজীবী
বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ নিয়ে যারাই কাজ করছে বা করবে, আমার ভোটটা তাদেরই দেয়ার চিন্তা করছি। কারণ, নির্বাচিত প্রতিনিধি বাচাই করার মধ্যেই বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্তে একটা ব্যাপার খুবই হতাশাজনক, সেটা হলো, এখানে রাজনৈতিক বিশ্বস্ততার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সামনের নির্বাচনেও এমন হতে পারে।আমি আগামী নির্বাচন নিয়ে আশাভঙ্গ হবার ইঙ্গিতই পাচ্ছি।
ছবি: DW
পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ চাই: অন্নি ইসলাম, চাকুরীজীবি
একটি স্বাধীন দেশে সরকার নির্বাচিত হবে ভোটের মাধ্যমে। সে দেশের সরকার পরিচালিত হবে আইনের শাসন এবং মেধাবীদের মাধ্যমে। এটিকে রাজনীতি বললে এটাই আমার রাজনৈতিক আদর্শ। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন হবে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন, যেখানে দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন ভোটকে একটি উৎসব মনে করবে। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো- দেশের বহুল প্রচলিত এ ধারণাকে আমি লালন করে আমার প্রথম ভোট প্রদান করবো।
ছবি: DW
নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে: আবির মিনহাজ, আইনজীবী
আমার রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। কিন্তু শুধু দলীয় আদর্শে জাতীয়তাবাদ থাকা মুখ্য নয়, বরং জাতীয়তাবাদের আদর্শকে ধারণ করে যারা রাজনীতি করবে, তাদের পক্ষেই আমার সমর্থন। আগামী নির্বাচন নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী, কারণ, জীবনের প্রথম ভোট প্রদান করবো একটি ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে। তবে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারা, সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে।
ছবি: DW
আশা করছি আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে: আদিবা সায়মা খান, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের বৈধতা নিয়ে ফ্যাসিবাদী সিস্টেম চালু করবে না, যে জুলাই গণহত্যার বিচারের নিশ্চিত আস্বাস দিতে পারবে এবং নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং নিপীড়িত শ্রেণির অধিকার লঙ্ঘন করবে না - আমি তাদেরই সাপোর্ট দেবো। আগামী নির্বাচন আশা করছি অংশগ্রহণমূলক হবে এবং নাগরিকরা নিজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সঠিক প্রার্থী বেছে নেবে।
ছবি: DW
দলগুলো নিজেদের বিভিন্ন দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যস্ত, তাই এখনো কারো প্রতি আশা রাখতে পারছি না: মোঃ মিরাজুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
প্রথমবার ভোটার হিসেবে আমি আশাবাদী। আমার আদর্শ এমন দলকে সমর্থন দেওয়া, যারা খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা খাতে উন্নয়ন করবে, সেই সাথে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও বাক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বাস্তবেই কাজ করবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বা অন্যান্য দলগুলো নিজেদের বিভিন্ন দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যস্ত৷ তারা এখন পর্যন্ত কোনো আশানুরূপ প্রতিশ্রুতি বা বাস্তবায়নের রূপরেখা দেয়নি। তাই এখন পর্যন্ত কারো প্রতি আশা রাখতে পারছি না।
ছবি: DW
নির্বাচন হোক শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের: ম্যাগনোলিয়া মন্ডল রিয়া, শিক্ষার্থী, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
একজন নতুন ভোটার হিসেবে ভোট দেওয়ার সুযোগকে শুধু একটি অধিকার নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব মনে করি। ভোট দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আমার অংশগ্রহণের সুযোগ। আমার কাছে রাজনীতি মানে, মানুষের কল্যাণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আমি চাই এমন প্রার্থীরা নির্বাচিত হোক, যারা সৎ, যোগ্য এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে এবং দেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করবে। নির্বাচন হোক শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং সমান সুযোগ নিশ্চিতের।
ছবি: DW
নির্বাচনে আমরা সকলের রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমাদের ভোটাধিকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পারবো: দনওয়াই ম্রো, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম ভোটার হিসেবে দেশের বৈচিত্র্যময় জাতিস্বত্বার অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে আমি ডানে বাম, বামে ডান, তথা মধ্যম পন্থা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে, দেশের স্থিতিশীলতা অর্জনে নির্বাচন ছাড়া আমাদের আর দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। আমি বিশ্বাস করি, বহুলপ্রত্যাশিত নির্বাচনটি হবে এবং আমরা সকলের রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমাদের পবিত্র আমানত ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবো।
ছবি: DW
জনগণকে খুশি করাই যে রাজনীতির মূল কাজ, সেটি আশা করছি নেতা এবং নেতা হতে ইচ্ছুকগণ বুঝতে পারবেন: দীপ্তি চৌধুরী, গণমাধ্যম ও উন্নয়ন কর্মী
আমার ধারণা, এবারের নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘোরানো ঘটনা হবে। এখানে চিরকাল রাজনীতিবিদরা এলিট শ্রেণি এবং জনগণ প্রলেতারিয়েত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।দলীয় নেতা নয়, বরং জনগণকে খুশি করাই যে রাজনীতির মূল কাজ, সেটি আশা করছি নেতা এবং নেতা হতে ইচ্ছুকগণ বুঝতে পারবেন।
ছবি: DW
আশা করি নির্বাচন অবাধ, রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপহীন ও উৎসবমুখর হবে: হাবিবুর রহমান মোল্লা, চোখ হারানো জুলাই যোদ্ধা ও শিক্ষার্থী
যারা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস করবে না, নিজেদের নতুন করে বাহুবলী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না করে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবে, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪-এর জুলাইকে লালন করবে, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করবে, তাদেরকেই বিবেচনায় নেয়া হবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, যেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকবে না, উৎসবমুখর নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী। এর জন্য কমিশনকে নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামোর উন্নয়নে মনযোগী হতে হবে।
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
২০১৯-এ শুরু হলো আরেকটি প্রয়াস। ইউটিউবার, যাদের ফলোয়ারের সংখ্যা ভালো, তাদের দিয়ে প্রচার করিয়ে যুব, তরুণদের প্রভাবিত করার চেষ্টা। ২০২৪ সালের নির্বাচনে সেই চেষ্টা প্রবল হলো। এখানেও বিজেপি অন্য দলগুলির থেকে অনেক যোজন এগিয়ে ছিল। তবে ২০২৪ সালে কংগ্রেসসহ ছোট দলগুলিও ইউটিউবার, ডিজিটাল মাধ্যম, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সারদের কাজে লাগানোর প্রবল চেষ্টা করেছে। এই চেষ্টার মূলে থেকেছে এই নবীন ভোটারদের, যুবদের কাছে টানার চেষ্টা। তারা যেদিকে যাবে, ভোটের ফলও সেদিকে হেলে পড়বে, এই সহজ অংকটা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা ধরতে পেরে বিজেপিতে বিশাল পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলতে পেরেছিলেন বলেই তারা তিনটি ভোটে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছিলেন। তারা সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে ধারণা তৈরির খেলাটাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন এবং অনেক সহজে এই জেন জি, জেন ওয়াইয়ের কাছে পৌঁছে গেছেন।
এই কাজটা করেছেন অত্যন্ত দক্ষ পেশাদাররা। তারা দেশ ও বিদেশের বড় বড় সংস্থা থেকে এসে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা তাদের হয়ে যে সংস্থাগুলি এই কাজ করছে সেখানে, তাদের বেতন তাক লাগানোর মতো। হবে নাই বা কেন, তারা তো জেন জি, জেন ওয়াই, জেন এক্স থেকে শুরু করে বেবি বুমার্স, সাইলেন্ট জেনারেশন সকলেরই ধারণা বদল করে দিতে পারেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভাবাবেগ আন্দোলিত হয়েছিল কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে।দুর্নীতি, চাকরি, উন্নয়ন, মানুষের অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা এসে যাওয়ার মতো বিষয়ে যুবকরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। তারা বিশ্বাস করেছিল, সুসময় বা আচ্ছে দিন আসতে আর দেরি নেই। তারপর ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি-র প্রচার ছিল, পাকিস্তানকে একমাত্র মোদীই শিক্ষা দিতে পারেন, একমাত্র মোদীর হাতেই ভারত নিরাপদ এই ধারণা তৈরি করাকে কেন্দ্র করে। তাতেও তারা সফল হয়। ফলে সেই নবীন প্রজন্ম, তরুণ প্রজন্ম, তাদের থেকে সামান্য় বেশি বয়সিদের ভোট তারা পায়।
কিন্তু ২০১৪ সালের স্বপ্ন তখনো পূর্ণ হয়নি। ২০২৪ সালে দেখা গেল যুবরা, তরুণরা বেকারত্ব নিয়ে, চাকরি না পাওয়া নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ। সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ ও সংবাদপত্র মিন্ট-এর সমীক্ষা জানিয়েছিল, ৫৭ শতাংশ যুব ও তরুণ মনে করছেন, আগামী পাঁচ বছরেও কর্মসংস্থানের পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হবে না। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ৪১ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট, যাদের বয়স ২৫ বছর বা তার কম, তাদের কোনো কর্মসংস্থান নেই।
ওই একই সমীক্ষা বলেছিল, ৪৪ শতাংশ যুব ও তরুণ এরপরেও বলেছিলেন তারা নরেন্দ্র মোদীকেই ভোট দেবেন। কিন্তু ৫৪ শতাংশ তা বলেননি। এর প্রভাব ভোটের বাক্সে দেখা গেছে। বিজেপি একার ক্ষমতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তাদের আসন কমেছে, এনডিএ-র শরিক দলগুলিকে নিয়ে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। এখানেই ভারতে তরুণ ভোটদাতার গুরুত্ব। তারা ভোটে অনেক হিসাব বদলে দিতে পারেন। তাই বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এখন কোনো বিষয় তুললেই বলেন, ‘‘আমি দেশের তরুণদের কাছে আবেদন করছি।'' এই যে রাহুল ভোট চুরি নিয়ে এতটা সোচ্চার, সেখানেও তিনি বারবার বলছেন, ‘‘তরুণদের বলছি, দেখুন কী হচ্ছে?''
রাহুলের এই প্রচারে কতটা কাজ হচ্ছে? এই বিষয়ে কোনো সমীক্ষা সামনে নেই। এই মুহূর্তে কোনো ভোট হচ্ছে না। বিহারে ভোট হবে কয়েক মাস পরে। তখন বোঝা যাবে, রাহুলের প্রচারে কতটা প্রভাবিত হলো জেনজি, জেন এক্স, জেন ওয়াই। তবে কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, রাহুলের উচিত অনেক বেশি করে কর্মসংস্থান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম, পেট্রোল-ডিজেলের দামের মতো যে বিষয়গুলি সাধারণ মানুষকে, দেশের তরুণদের, যুবদের প্রভাবিত করে, তা আরো জোরালোভাবে তোলা। তবে রাহুল বলেছেন এবার তিনি ভোট চুরি নিয়ে ‘হাইড্রোজেন বোমা' ফেলবেন, যাতে সবকিছু কেঁপে যাবে। তার অপেক্ষায় আছে ভারতের মানুষ।
ফলে ভোটের ময়দানে সাফল্যের একমাত্র মন্ত্র হলো, ‘‘ক্যাচ দেম ইয়াং, ক্যাচ ইয়াং মাইন্ডস।'' তার জন্যই রাজনৈতিক দলগুলির যত তোডজোর। বিজেপির সামাজিক মাধ্যম সেল হলো স্টেট অফ দ্য আর্ট প্রযুক্তির। দিল্লি থেকে শুরু করে গোটা ভারতে বিজেপির হয়ে সামাজিক মাধ্যমে বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন লাখো মানুষ। যে কোনো বিষয় ভারতজুড়ে ভাইরাল করতে তাদের আধঘণ্টারও কম সময় লাগে।
কংগ্রেসও এখন সেদিকে হাঁটছে। তারাও সামাজিক মাধ্যমে জোর দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তৃণমূলের সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের দায়িত্ব রয়েছে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা আইপ্যাকের হাতে। সব দলের হাতে রয়েছে এরকমই পেশাদাররা। তাদের নিয়োগ করতে অর্থ তো কম লাগে না। কিন্তু যুব, তরুণদের ভোট পেতে গেলে, তাদের ধারণা বদল করতে গেলে এটা করতেই হবে।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে কার লাভ, কার ক্ষতি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কিনা তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভক্ত। এই নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত।
ছবি: Abdul Goni
বাকের মজুমদার (আহ্বায়ক, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
গত বছরের ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী হল প্রশাসনের সঙ্গে বসে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে হলে ছাত্র রাজনীতি করা যাবে না। এখানে লাভ-ক্ষতির চেয়ে বড় কথা হলো শিক্ষার্থীরা কি চায়? তারা একমত যে, হলে তারা ছাত্ররাজনীতি চায় না। আমরা যেহেতু শিক্ষার্থীদের পক্ষে, তাদের চাওয়াই আমাদের চাওয়া। আমরা হলে যেমন ওপেন রাজনীতির বিরোধিতা করছি, তেমনি গুপ্ত রাজনীতির যে কথা শুনতে পাই, সেটাও বন্ধ হওয়া উচিৎ।
ছবি: Samir Kumar De/DW
নুজিয়া হাসিন রাশা (সভাপতি, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নিজেই একটি রাজনৈতিক প্রজেক্ট - জনগণকে রাজনৈতিকভাবে নিরস্ত্র করার, তাদের সংগঠিত প্রতিরোধ ভেঙে দেওয়ার এবং শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থ সুরক্ষিত করার কৌশল। রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ মূলত গুপ্ত সংগঠন, সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থগোষ্ঠী, কর্পোরেট এনজিও ও ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজ করে, যা জনগণের গণতান্ত্রিক স্পেসকে সংকীর্ণ করে। প্রতিরোধের রাজনীতি করা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার।
ছবি: Samir Kumar De/DW
মেঘমল্লার বসু (সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
রাজনীতি বন্ধ করা সম্ভব না, হয় তা প্রকাশ্যে থাকে নয়তো তা গুপ্ত পথ নেয়। রাজনীতি নিষিদ্ধ করার অর্থ, প্রকাশ্য রাজনীতিকে নিরুৎসাহিত করে গুপ্তপন্থাকে প্রণোদনা দেওয়া। এহেন পদক্ষেপ অন্তর্ঘাতের দরজা খুলে দেয়।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
আরমানুল হক (সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
আমি যখন হলে অবস্থান করব, তখন তো আমার পরিচয়কে লুকাতে পারি না! হলে ছাত্র রাজনীতি সমস্যা, নাকি হলের দখলদারিত্ব সমস্যা? হলে যদি ১ম বর্ষ থেকেই প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে বৈধ সিটের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে কীভাবে একটা নির্দিষ্ট দল দখল করতে পারে? আর ডাকসু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হল সংসদকে প্রশ্ন করার জন্য ছাত্র রাজনৈতিক দল ছাড়া ভিন্ন কোন ফোরাম আছে কিনা, তা একটা বড় প্রশ্ন।
ছবি: Samir Kumar De/DW
আশরেফা খাতুন (মুখপাত্র, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, হলে নিয়োজিত হাউজ টিউটররাও ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গণরুম, গেস্টরুমের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারেন নাই। হলভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কমিটি দেওয়া শুরু হলে আবারও এক চিত্রের আবির্ভাব ঘটবে। আমি চাই, আবাসিক হলগুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই প্রতিনিধিত্ব করুক যাতে দখলদারিত্ব, গণরুম, গেস্টরুমের বিভীষিকা ফিরে না আসে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নাহিদুজ্জামান শিপন (সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনগুলোর সূত্রপাত ঘটে হলগুলোর শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে। হলে রাজনীতি বন্ধ রাখার এমন সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অগণতান্ত্রিক। এমন অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে ডাকসু নির্বাচনকে অর্থবহ করা যাবে না।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
এস এম সাইফ কাদের রুবাব (মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
হল রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা আদতে ডাকসুকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যন্ত্রের হাতে কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া। এমন অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কোন কল্যাণে আসবে না।
ছবি: Samir Kumar De/DW
জাহিদুল ইসলাম তাহসিন (শিক্ষার্থী, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
ক্যাম্পাসের বড় সমস্যাগুলোর একটি সিট সংকট, আর হলে রাজনীতি ফিরে এলে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নেতারা প্রশাসনকে প্রভাবিত করে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের অগ্রাধিকার দিতে পারে। একই সঙ্গে হলে একক প্রশাসনিক কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে, কারণ ভিন্ন ভিন্ন দল নিজেদের অ্যাজেন্ডা নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠবে। এর ফলে হলের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে এবং পড়াশোনার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।
ছবি: Samir Kumar De/DW
মারুফ হাসান শাহিন (শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
হলে ছাত্র রাজনীতি চালু হলে আগের মতো গণরুম প্রথা ফিরে আসতে পারে, কারণ অতীতে দেখা গেছে সরকার দলের রাজনৈতিক নেতারা প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে বছরের পর বছর অবৈধভাবে হলে অবস্থান করত। একইভাবে পরিচয় পর্ব ও ম্যানার শেখানোর নামে গেস্টরুম প্রথাও আবার শুরু হতে পারে। দলীয় কোন্দল বেড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কেননা আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলো প্রায়ই ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকে।