1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের ভোটে মূল মন্ত্রই হলো, 'ক্যাচ দেম ইয়াং'

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জিততে গেলে নতুন ভোটারদের, যুবদের, তরুণদের সমর্থন পেতে হবে। তাই ভারতের ভোটে তাদের দিকেই নজর সব দলের।

২০২৪ সালে কংগ্রেসসহ ছোট দলগুলিও ইউটিউবার, ডিজিটাল মাধ্যম, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সারদের কাজে লাগানোর প্রবল চেষ্টা করেছে। এই চেষ্টার মূলে থেকেছে এই নবীন ভোটারদের, যুবদের কাছে টানার চেষ্টা।ছবি: AB Rauoof Ganie/DW

গত জানুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ভারতে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সি ভোটারের সংখ্যা ২১ কোটি ৭০ লাখ। বয়সের সীমাটা যদি আরো একটু বাড়িয়ে ৩৫ করে দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে ৬৬ শতাংশ ভোটদাতাই এর মধ্যে ঢুকে যাচ্ছেন। তার অর্থ, সদ্য যুব, যুব ও তরুণরাই ভারতে নির্বাচনে ফলাফল ঠিক করে দেন। ফলে তাদের কাছে যারা ভালোভাবে পৌঁছাতে পারবে, তাদের আবেগকে ছুঁতে পারবে, তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবে, তাদের মনে একটা ছাপ রাখতে পারবে, ধারণা তৈরি করতে পারবে, তারাই জিতবে।

ফলে নির্বাচনের প্রচারে, কৌশলে, ধারণা তৈরির খেলায় একটা অদ্ভূত পরিবর্তন এসেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথমবার দেখেছিলাম বিজেপি-র প্রচারে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাটসহ বিভিন্ন রাজ্যে মিডিয়া বলতে শুধু আর প্রিন্ট ও টেলিভিশন বোঝাচ্ছে না, ডিজিটাল মিডিয়া, ইউটিউবে খবরের চ্যানেলের প্রতিনিধিদের জন্য় প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে আলাদা করে একজন কর্মকর্তা থাকছেন। একজন কর্মকর্তা সেই কেন্দ্রের প্রধান শহরে থাকবেন। তার অধীনে বিভিন্ন ছোট ছোট শহর বা গঞ্জে ছিলেন আরো কয়েকশ কর্মী, যারা এই ডিজিটাল মিডিয়াকে সহায়তা করার জন্য সবসময় তৈরি ছিলেন।

২০১৯-এ শুরু হলো আরেকটি প্রয়াস। ইউটিউবার, যাদের ফলোয়ারের সংখ্যা ভালো, তাদের দিয়ে প্রচার করিয়ে যুব, তরুণদের প্রভাবিত করার চেষ্টা। ২০২৪ সালের নির্বাচনে সেই চেষ্টা প্রবল হলো। এখানেও বিজেপি অন্য দলগুলির থেকে অনেক যোজন এগিয়ে ছিল। তবে ২০২৪ সালে কংগ্রেসসহ ছোট দলগুলিও ইউটিউবার, ডিজিটাল মাধ্যম, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সারদের কাজে লাগানোর প্রবল চেষ্টা করেছে। এই চেষ্টার মূলে থেকেছে এই নবীন ভোটারদের, যুবদের কাছে টানার চেষ্টা। তারা যেদিকে যাবে, ভোটের ফলও সেদিকে হেলে পড়বে, এই সহজ অংকটা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা ধরতে পেরে বিজেপিতে বিশাল পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলতে পেরেছিলেন বলেই তারা তিনটি ভোটে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছিলেন। তারা সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে ধারণা তৈরির খেলাটাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন এবং অনেক সহজে এই জেন জি, জেন ওয়াইয়ের কাছে পৌঁছে গেছেন। 

এই কাজটা করেছেন অত্যন্ত দক্ষ পেশাদাররা। তারা দেশ ও বিদেশের বড় বড় সংস্থা থেকে এসে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা তাদের হয়ে যে সংস্থাগুলি এই কাজ করছে সেখানে, তাদের বেতন তাক লাগানোর মতো। হবে নাই বা কেন, তারা তো জেন জি, জেন ওয়াই, জেন এক্স থেকে শুরু করে বেবি বুমার্স, সাইলেন্ট জেনারেশন সকলেরই ধারণা বদল করে দিতে পারেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভাবাবেগ আন্দোলিত হয়েছিল কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে।দুর্নীতি, চাকরি, উন্নয়ন, মানুষের অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা এসে যাওয়ার মতো বিষয়ে যুবকরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। তারা বিশ্বাস করেছিল, সুসময় বা আচ্ছে দিন আসতে আর দেরি নেই।  তারপর ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি-র প্রচার ছিল, পাকিস্তানকে একমাত্র মোদীই শিক্ষা দিতে পারেন, একমাত্র মোদীর হাতেই ভারত নিরাপদ এই ধারণা তৈরি করাকে কেন্দ্র করে। তাতেও তারা সফল হয়। ফলে সেই নবীন প্রজন্ম, তরুণ প্রজন্ম, তাদের থেকে সামান্য় বেশি বয়সিদের ভোট তারা পায়।

কিন্তু ২০১৪ সালের স্বপ্ন তখনো পূর্ণ হয়নি। ২০২৪ সালে দেখা গেল যুবরা, তরুণরা বেকারত্ব নিয়ে, চাকরি না পাওয়া নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ। সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ ও সংবাদপত্র মিন্ট-এর সমীক্ষা জানিয়েছিল, ৫৭ শতাংশ যুব ও তরুণ মনে করছেন, আগামী পাঁচ বছরেও কর্মসংস্থানের পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হবে না। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ৪১ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট, যাদের বয়স ২৫ বছর বা তার কম, তাদের কোনো কর্মসংস্থান নেই।

ওই একই সমীক্ষা বলেছিল, ৪৪ শতাংশ যুব ও তরুণ এরপরেও বলেছিলেন তারা নরেন্দ্র মোদীকেই ভোট দেবেন। কিন্তু ৫৪ শতাংশ তা বলেননি। এর প্রভাব ভোটের বাক্সে দেখা গেছে। বিজেপি একার ক্ষমতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তাদের আসন কমেছে, এনডিএ-র শরিক দলগুলিকে নিয়ে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। এখানেই ভারতে তরুণ ভোটদাতার গুরুত্ব। তারা ভোটে অনেক হিসাব বদলে দিতে পারেন। তাই বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এখন কোনো বিষয় তুললেই বলেন, ‘‘আমি দেশের তরুণদের কাছে আবেদন করছি।'' এই যে রাহুল ভোট চুরি নিয়ে এতটা সোচ্চার, সেখানেও তিনি বারবার বলছেন, ‘‘তরুণদের বলছি, দেখুন কী হচ্ছে?''

রাহুলের এই প্রচারে কতটা কাজ হচ্ছে? এই বিষয়ে কোনো সমীক্ষা সামনে নেই। এই মুহূর্তে কোনো ভোট হচ্ছে না। বিহারে ভোট হবে কয়েক মাস পরে। তখন বোঝা যাবে, রাহুলের প্রচারে কতটা প্রভাবিত হলো জেনজি, জেন এক্স, জেন ওয়াই। তবে কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, রাহুলের উচিত অনেক বেশি করে কর্মসংস্থান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম, পেট্রোল-ডিজেলের দামের মতো যে বিষয়গুলি সাধারণ মানুষকে, দেশের তরুণদের, যুবদের প্রভাবিত করে, তা আরো জোরালোভাবে তোলা। তবে রাহুল বলেছেন এবার তিনি ভোট চুরি নিয়ে ‘হাইড্রোজেন বোমা' ফেলবেন, যাতে সবকিছু কেঁপে যাবে। তার অপেক্ষায় আছে ভারতের মানুষ।

ফলে ভোটের ময়দানে সাফল্যের একমাত্র মন্ত্র হলো, ‘‘ক্যাচ দেম ইয়াং, ক্যাচ ইয়াং মাইন্ডস।'' তার জন্যই রাজনৈতিক দলগুলির যত তোডজোর। বিজেপির সামাজিক মাধ্যম সেল হলো স্টেট অফ দ্য আর্ট প্রযুক্তির। দিল্লি থেকে শুরু করে গোটা ভারতে বিজেপির হয়ে সামাজিক মাধ্যমে বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন লাখো মানুষ। যে কোনো বিষয় ভারতজুড়ে ভাইরাল করতে তাদের আধঘণ্টারও কম সময় লাগে।

কংগ্রেসও এখন সেদিকে হাঁটছে। তারাও সামাজিক মাধ্যমে জোর দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তৃণমূলের সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের দায়িত্ব রয়েছে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা আইপ্যাকের হাতে। সব দলের হাতে রয়েছে এরকমই পেশাদাররা। তাদের নিয়োগ করতে অর্থ তো কম লাগে না। কিন্তু যুব, তরুণদের ভোট পেতে গেলে, তাদের ধারণা বদল করতে গেলে এটা করতেই হবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ