বর্ষীয়ান চিত্রনাট্য ও গীতিকার জাভেদ আখতার বলেছেন, ভারতে মুসলিমরা বহুদিন ধরেই চাপে আছেন৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে মুসলিমদের নিজেদের ভূমিকারও সমালোচনা করতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি জাভেদ আখতার রিচার্ড ডকিন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন৷ এ পুরস্কার জেতা তিনিই প্রথম ভারতীয়৷ রাজনীতি, ধর্ম ও সমাজ জীবন নিয়ে তার বিশ্লেষণের জন্য এ পুরস্কারটি দেয়া হয়৷ ৭৫ বয়সি এই ভারতীয় প্রখ্যাত গীতিকার যেমন ভারতে মুসলিমবিদ্বেষের জন্য হিন্দু ডানপন্থিদের সমালোচনা করেন, তেমনি মুসলিমদের অতি রক্ষণশীলতার বিরোধিতাও করেন৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মোটা দাগে এটা (ভারত) অত্যন্ত রক্ষণশীল সমাজ৷ কোনো কিছু বিশ্বাস না করা খুবই ভয়ংকর৷ এ দেশে অনেক গোপন নাস্তিক ও যুক্তিবাদী মানুষ আছেন, যারা মনে করেন সন্মুখে আসলে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়বেন৷''
নরেন্দ্র মোদীর সরকারের আমলে মুক্তচিন্তা আরো সংকুচিত হচ্ছে বলে মনে করেন জাভেদ আখতার৷ তিনি বলেন, ‘‘যাদের হুমকি বলে ভাবা হয়, তাদের জেলে পুরে দেয়া হয়৷ যেমন সুধা ভারদওয়াজ (মানবাধিকার কর্মী) কেন জেলে বলুন?''
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনাকারীকে দেশবিরোধী বলে মনে করা হয়৷ অথচ প্রধানমন্ত্রী ও দেশ দু'টো ভিন্ন বিষয় বলে মন্তব্য করেন এই গীতিকার৷ নরেন্দ্র মোদীর আমলে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘তবে (মুসলিমদের ওপর) চাপ আগে থেকেই ছিল৷ এর জন্য শুধু একটি রাজনৈতিক সংগঠন বা দলকে দায়ী করা ঠিক হবে না৷ এর দায়দায়িত্ব অনেকের৷ এমনকি মুসলিম সমাজের কথিত কয়েকজন নেতাও এর জন্য দায়ী,'' বলেন জাভেদ৷ ‘‘আমরা আগে অন্যকে সমালোচনা করার আগে, নিজেদেরও সমালোচনা করতে হবে৷''
ভারতে রাজনৈতিক পরিসরে অসাম্প্রদায়িকতার অর্থ বিকৃত করা হচ্ছে বলে মনে করেন সাবেক এই সাংসদ৷ ‘‘অনেক রাজনৈতিক সংগঠন মৌলবাদকে মেনে নিয়ে বলছেন তারা অসাম্প্রদায়িক,'' বলেন জাভেদ আখতার৷
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুরালি কৃষ্ণান
২০১৭ সালের ছবিঘরটি দেখুন
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷