1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রয়াত

২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারতীয় অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে তাকে উদারীকরণের পথে নিয়ে আসা মনমোহন সিংয়ের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

হাসিমুখে মনমোহন সিং। ২০০৬ সালের ছবি।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রয়াত। ছবি: B Mathur/REUTERS

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস(এইমস) জানিয়েছে, বয়সজনিত অসুস্থতার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালের তরফ থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়, ''সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাড়িতে আচমকা জ্ঞান হারান।  বাড়িতেই তার চিকিৎসা শুরু হয়। রাত আটটা বেজে ছয় মিনিট নাগাদ তাকে এইমসে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে রাত নয়টা ৫১ মিনিট নাগাদ তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।''

কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৪ ও ২০০৯ সালে পরপর দুইবার প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং। তার আগে ১৯৯১ সালে সেসময়ের কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাওয়ের সময় মনমোহন সিং ছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। তখন দেশের আর্থিক অবস্থা চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। মনমোহন কোটা-লাইসেন্সরাজ শেষ করে উদার  অর্থনীতির পথে দেশকে নিয়ে আসেন। তারপর ভারতীয় অর্থনীতিকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।

একেবারে সহজ জীবনযাপনে বিশ্বাসী, অসম্ভব ভদ্র, অর্থনীতি সম্পর্কে অগাধ জ্ঞানসম্পন্ন মনমোহন সিং ছিলেন আপাদমস্তক সৎ একজন রাজনীতিবিদ। তিন দশকের উপর রাজনীতিতে থাকলেও কোনো কেলেঙ্কারি তাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। এই সততার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষের জ্ঞান এবং সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, যার ফলে তিনি শুধু দেশকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলেন তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তিনি একের পর এক এমন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, যাতে গরিবদের সুবিধা হয়।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তার মৃত্যুতে সাতদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।  কংগ্রেসও জানিয়েছে, সাতদিন তাদের সব কর্মসূচি বাতিল থাকবে। 

শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে  সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন। 

'ভাবীকাল আমার বিচার করবে'

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বছরে একবার করে সাংবাদিক সম্মেলন করতেন মনমোহন সিং। তাছাড়া তিনি সাংবাদিকদের সামনে বিশেষ আসতেন না। শেষ সাংবাদিক সম্মেলন যখন হচ্ছে, তখন তার সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক কেলেঙ্কারির অভিয়োগ উঠেছে। কয়লা কেলেঙ্কারি, কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারি-সহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে সরকার বিপর্যস্ত। মনমোহনের ব্যক্তিগত সততা নিয়ে কারো মনে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে এবং দুর্নীতির অভিয়োগ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন হয়েছিল সেই সাংবাদিক সম্মেলনে।

মনমোহন সেই সময় বলেছিলেন, ''ভাবীকাল আমার কাজের বিচার করবে।'' আশা করেছিলেন, ইতিহাস তাকে মনে রাখবে।

তারপরও তিনি রাজ্যসভার সদস্য থেকেছেন। দেশের  অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেছেন, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন। প্রতিবার বাজেটের পর তিনি তার মতামত জানিয়েছেন।

'অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার'

২০০৪ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তখন কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সোনিয়া গান্ধী। কংগ্রেসের মধ্যে থেকে দাবি ওঠে, সোনিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হতে হবে।

কিন্তু বিজেপি-সহ সঙ্ঘ পরিবারের জানায়, তারা কিছুতেই 'বিদেশিনী' সোনিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মানবে না।  উমা ভারতী ঘোষণা করেন, সোনিয়া প্রধানমন্ত্রী হতে তিনি চুল কামিয়ে ফেলবেন। সুষমা স্বরাজও একই ঘোষণা করেন।

শেষপর্যন্ত সোনিয়া প্রধানমন্ত্রী হননি। তিনি জানিয়ে দেন, মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হবেন। সোনিয়া সরকারেও আসেননি। মনমোহন দায়িত্ব নেয়ার পর বিজেপি অন্য সমালোচনা শুরু করে।  তার পরের দশ বছর বিজেপি প্রচার করে, মনমোহন হলেন দেশের সবচেয়ে দুর্বল প্রধানমন্ত্রী এবং তার সময়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসকেই কেউ গুরুত্ব দেয় না। ক্ষমতার আসল চাবিকাঠি সোনিয়া গান্ধীর হাতে। তার কথাতেই সরকার চলে।

এই অভিযোগ নিয়ে আলোচনা কম হয়নি।  মনমোহনের মিডিয়া পরামর্শদাতা সঞ্জয় বারুও অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার নামে একটা বই লিখে ফেলেন। তবে কংগ্রেস নেতারা বারবার বলেছেন, এটা বিজেপি-র নিছক প্রচার কৌশল। এর মধ্যে বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই।

যাবতীয় অভিযোগ সত্ত্বেও মনমোহন ও সোনিয়ার মধ্যে পারষ্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্কে কখনো চিড় ধরেনি।

কিন্তু দুর্বল প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ মনমোহনকে ব্যথিত করেছিল। প্রয়াত বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ সেসময় লোকসভার বিরোধী নেতা। তার নেতৃত্বে বিজেপি সাংসদরা মনমোহনকে একটা স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন। সুষমা পরে জানান, মনমোহন সেই স্মারকলিপিতে চোখ বুলিয়ে সেটা টেবিলে ফেলে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি এটা মানতে পারবেন না। সুষমার ধারণা ছিল, দুর্বল প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা শুনতে শুনতে মনমোহন দেখাতে চেয়েছিলেন, তিনি কঠিন হতেও জানেন।

মনমোহনের পররাষ্ট্রনীতি

মনমোহন সবসময় প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক চেয়েছেন। তিনি চাইতেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে নিতে। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গেও আলোচনার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সেই আলোচনার পথে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হ.য়নি।

বাংলাদেশের সঙ্গেও তিনি তিস্তা চুক্তি করে ফেলতে চেয়েছিলেন। খসড়াও তৈরি ছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় বিরোধিতা করায় শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

তবে মনমোহনের আমলে অ্যামেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি হয়েছিল, যার জেরে বামপন্থি দলগুলি তার সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়। প্রকাশ কারাটের নেতৃত্বে বামপন্থিদের দাবি ছিল, অ্যামেরিকার সঙ্গে এই চুক্তি করা যাবে না। আর মনমোহনের বিশ্বাস ছিল, এই চুক্তিতে দেশের লাভ হবে. পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যাবতীয় বাধা কেটে যাবে।

এই ক্ষেত্রে মনমোহন জানিয়ে দেন, বামেদের দাবি তিনি মানবেন না। তিনি চুক্তি করবেনই। বামেরা সমর্থন তুলে নেয়। তারপর সমাজবাদী পার্টি এবং অন্যদের সমর্থন নিয়ে সরকার টিকিয়ে রাখেন মনমোহন।

প্রধানমন্ত্রীর শোক

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামাজিক মাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, ''মনমোহন সিং যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আমি তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় তাদের মধ্যে বহুবার প্রশাসনিক বিষয়ে কথা হয়েছে।  সবসময়ই তার জ্ঞান ও নম্রতার পরিচয় পেয়েছি। এই শোকের সময়ে আমি তার পরিবার ও অসংখ্য অনুগামীর পাশে আছি।''

কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রাতেই এইমস যান। মনমোহনের মৃত্যুর পর তিনি বলেছেন, ''রাজনীতির দুনিয়ায় খুব কম মানুষই মনমোহন সিংয়ের মতো শ্রদ্ধা পান। যারা দেশের জন্য কাজ করবেন, দেশকে ভালোবাসবেন, তাদের কাছে মনমোহন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।''

রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''মনমোহন সিং তার গভীর প্রজ্ঞা থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নম্রতা এবং অর্থনীতি সম্পর্কে জ্ঞান দেশকে অনুপ্রাণিত করবে। আমি আমার অভিভাবক ও পথপ্রদর্শককে হারালাম।''

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ