সিএএ-বিতর্কের জেরে বাংলাদেশের তিনজন মন্ত্রী পরপর ভারত সফর বাতিল করেছিলেন৷ তারপর মঙ্গলবার আবার ভারত ও বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হলো৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের সাহায্যে গড়ে উঠবে ঢাকার ফিল্ম সিটি৷ ভারতে একাধিক ফিল্ম সিটি থাকলেও বাংলাদেশে এই প্রথম ফিল্ম সিটি হবে৷ ভারত ও বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের সঙ্গে মঙ্গলবার আলোচনায় বসেছিলেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ৷ সেই আলোচনায় বেশ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল, ঢাকায় ফিল্ম সিটি তৈরিতে ভারতের সাহায্যের বিষয়টি৷
বৈঠকের পর হাসান বলেন, ''আমরা ভারতের কাছে ফিল্ম সিটি তৈরির জন্য সাহায্য চেয়েছিলাম৷ কারণ, ভারতের এ ব্যাপারে বিপুল অভিজ্ঞতা আছে৷ ভারতই এখন বিশ্বের সব চেয়ে বড় সিনেমা প্রস্তুতকারক দেশ৷ সে জন্যই তাঁদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছি৷'' আর প্রকাশ জাভড়েকর জানিয়েছেন, ''ফিল্ম সিটি করা নিয়ে কথা হয়েছে৷ দু'দেশের মধ্যে চলচ্চিত্রের ও সরকারি টিভির অনুষ্ঠান আদানপ্রদান নিয়ে কথা হয়েছে৷ আমরা বাংলাদেশে ফিল্ম সিটি করার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি৷''
সূত্র জানিয়েছে, ফিল্ম সিটি নিয়ে আলোচনার জন্য ভারত অবিলম্বে বাংলাদেশকে একটা প্রতিনিধদল পাঠাতে বলেছে৷ তারা এসে মুম্বই ও হায়দরাবাদে ফিল্ম সিটি দেখবে৷ তারপর কী ধরনের সাহায্য চাই, কোন ধরনের প্রযুক্তি তারা আশা করছে, সে বিষয়ে জানাবে৷ ভারত সে ভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে৷
হাসান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর শতবর্যে তাঁর ওপর সিনেমা নিয়ে সমঝেোতা চুক্তি হয়েছে৷ প্রকাশ জানিয়েছেন, শ্যাম বেনেগাল সিনেমাটি তৈরি করবেন এবং সঠিক সময়ে তা তৈরি হয়ে যাবে৷ বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ উদযাপন উৎসবের মধ্যে সিনেমাটি মুক্তি পাবে৷
সিএএ-বিতর্ক সামনে আসার পর বাংলাদেশের তিনজন মন্ত্রীরসফর বাতিল হয়েছে৷ তারপর হাসাম মাহমুদের ভারত সফর হল, মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা হল৷ তাই এই সফরের গুরুত্ব আলাদা৷ প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই বলেনি যে, এনআরসি ও সিএএ-র জেরে সফর বাতিল হয়েছে৷ কিন্তু সফর বাতিলের আসল কারণ এটাই৷ এনআরসি ও সিএএ নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষোভ ও আশঙ্কা আছে৷ সেই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা যে আবার শুরু হল, সেটা নিঃসন্দেহে সুখের ও স্বস্তির বিষয়৷
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর ওএসডি সত্যনারায়ণন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, বাংলাদেশ হল ভারতের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী৷ এ দিনের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত দু দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে৷
আগে বাংলাদেশের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী রাইসিনা ডায়লগে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন৷ বিদেশ মন্ত্রক এখন হাসান মাহমুদকে সেখানে থাকার অনুরোধ করেছে৷ তিনি সম্ভবত বুধবার সেখানে থাকবেনও৷ সব মিলিয়ে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীর ভারত সফর বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছে৷
বাংলা চলচ্চিত্রের এ কী দশা
চলছে বাংলা চলচ্চিত্রের চরম দুঃসময়৷ মানসম্পন্ন সিনেমার অভাবে দর্শকরা যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দেশীয় চলচ্চিত্র থেকে৷ দর্শকের অভাবে বহু সিনেমা হল বন্ধ৷ আর যেগুলো টিকে আছে সেগুলোও চলছে ধুকে ধুকে৷ ছবিঘরে থাকছে সেই গল্পই৷
ছবি: Getty Images
এখনো আছে মধুমিতা
ঢাকার প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো সিনেমা হল ‘মধুমিতা’ টিকে আছে এখনো৷ প্রায় ৬০ বছর আগে ‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের পথচলা শুরু হয়েছিল৷ মাঝে অনেকটা সোনালি সময় পার করেছে এই চলচ্চিত্র৷ কিন্তু পাঁচ যুগ পরে এসে এখন তা অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চলচ্চিত্র প্রদর্শনে বিপর্যয়
১৯৯৯ সাল থেকে এ দেশে ব্যাপক হারে অশ্লীলতানির্ভর নিম্নমানের ছবি নির্মাণ শুরু হয়৷ সাধারণ দর্শক তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে সেরকম ছবি দেখার কথা ভাবতেই পারেনি৷ এছাড়া সিনেমা হলে মৌলবাদীদের হামলার ঘটনাও চলচ্চিত্র প্রদর্শনে বিপর্যয়ের আরেক কারণ৷
ছবি: Getty Images
এক হলে ১৩ জন দর্শক!
হাটখোলা এলাকায় ঢাকার আরেকটি পুরনো সিনেমা হল ‘অভিসার’৷ এ ছবি তোলার সময় সেখানে প্রদর্শনী চলছিল প্রায় এক হাজার আসনের এ সিনেমা হলে এ প্রদর্শনীতে সর্বমোট দর্শক সংখ্যা ছিলেন মাত্র ১৩ জন৷
ছবি: DW/M. Mamun
দুরবস্থার কারণ
২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকার অভিসার সিনেমা হল পরিচালনায় যুক্ত কবির হোসেন৷ চলচ্চিত্রের এ দুর্দশার জন্য তিনি সিনেমার মান আর বিভিন্ন সহজলভ্য স্যাটেলাইট টেলিভিশনকেই দায়ী করেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভালো ছবির কদর
ঢাকার আরেকটি সিনেমা হলের পরিচালক মতিন মিয়া৷ ঢাকার ‘গীত সঙ্গীত’ সিনেমা হল পরিচালনা করছেন তিনি গত প্রায় আঠারো বছর ধরে৷ তাঁর মতে ভালো নির্মাতা, নায়ক-নায়িকার অভাবই চলচ্চিত্রের দুর্দশার মূল কারণ৷ কেননা, এখনো দু-একটি ভালো সিনেমা এলে হল ভর্তি দর্শক দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
ব্যবসা কোথায়?
ছবিটি ঢাকার ‘গীত’ সিনেমা হলের৷ প্রায় দর্শকশূন্য হল৷ প্রায় ১১০০ আসনের এ হলে সেদিন দর্শক ছিল মাত্র ৩৪ জন৷ হলমালিকরা এ পরিস্থিতি নিয়ে প্রায়ই হতাশা প্রকাশ করেন৷ তাঁদের প্রশ্ন – এমন চলতে থাকলে ব্যবসা চালানো কিভাবে সম্ভব?
ছবি: DW/M. Mamun
দুর্দশার আরেকটি চিত্র
ঢাকার আরেক সিনেমা হল ‘সঙ্গীত’-এরও একই অবস্থা৷ এ হলেও প্রায় সব আসন ফাঁকা রেখে শো চালানো প্রায় নিয়মিত ঘটনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
বন্ধ হলো ‘গীত’ ও ‘সঙ্গীত’
ঢাকার ধোলাইপাড় এলাকায় ‘গীত’ ও ‘সঙ্গীত’ সিনেমা হল৷ গত প্রায় দশ বছর ধরে ধুকে ধুকে চলার পর এ বছর রোজার আগেই বন্ধ করা হচ্ছে হল দুটি৷ এক সময় সারা দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল এক হাজার ২০০ টি৷ বন্ধ হতে হতে এখন সারা দেশে সিনেমা হল টিকে আছে ২০০টির মতো৷
ছবি: DW/M. Mamun
সিনেমা হলের জায়গায় মার্কেট কমপ্লেক্স
বাংলাদেশে সিনেমা হল বন্ধের হিড়িক শুরু হয় মূলত ২০০১ সাল থেকে৷ ঢাকার ‘গুলিস্তান’ ও ‘নাজ’ সিনেমা হল ভেঙে নির্মাণ করা হয় মার্কেট কমপ্লেক্স৷ একইভাবে পুরনো ঢাকার ‘মুন’ ও ‘স্টার’ সিনেমা হল ভেঙেও করা হয়েছে বিশাল মার্কেট৷ এভাবে পুরনো ঢাকার ‘শাবিস্তান’, পোস্তগোলার ‘পদ্মা’, ‘মেঘনা’, ‘যমুনা’ ইত্যাদি সিনেমা হলও একে একে বন্ধ হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
হল ভেঙে নতুন হল
ঢাকার ‘শ্যামলী’ সিনেমা হল ভেঙে মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হলেও সেখানে আধুনিক একটি সিনেমা হল রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
দর্শক অশ্লীলতাবিমুখ
ঢাকার মিরপুরের ‘সনি’ সিনেমা হলে ৩২ বছর ধরে কাজ করছেন সামাদ মিয়া৷ তাঁর হলে একসময় অনেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমা দেখতে আসতেন৷ কিন্তু এখন আর সে দৃশ্য তিনি দেখেন না৷ সেজন্য সিনেমার অশ্লীলতাকে দায়ী করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
টিকে থাকার কৌশল
ঢাকায় যে ক’টি হল টিকে আছে, তার মধ্যে মিরপুরের ‘সনি’ সিনেমা হল একটি৷ দীর্ঘ দিন লোকসান দিয়ে হলটি টিকিয়ে রেখেছেন এক সময়ের চলচ্চিত্র পরিচালক মোহামম্দ হোসেন৷ এই কমপ্লেক্সে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকায় লোকসান দিয়েও চালানো সম্ভব হচ্ছে হলটির কার্যক্রম৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকায় হল কমে প্রায় অর্ধেক
ঢাকার দারুসসালাম এলাকায় আরেকটি পুরনো সিনেমা হল ‘এশিয়া’৷ গাবতলী বাস স্টেশনের কাছাকাছি হওয়ায় এ সিনেমা হলটির দর্শক ঢাকার অন্যান্য হলের তুলনায় কিছুটা বেশি৷ আশির দশকে ঢাকা শহরে ছিল ৪৪টি সিনেমা হল৷ বর্তমানে কমতে কমতে সংখ্যাটি পঁচিশেরও নীচে নেমে এসেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সাধারণ দর্শক যা মনে করেন
ঢাকার সাধারণ হলগুলোতে নিয়মিত সিনেমা দেখেন রুবেল৷ তাঁর মতে, আগে সিনেমাগুলো অনেক কাহিনিনির্ভর ছিল, কিন্তু বর্তমানের সিনেমাগুলোর কাহিনি থেকে শুরু করে নির্মাণ কৌশল সবকিছুই খারাপ৷
ছবি: DW/M. Mamun
পরোক্ষে মৌলবাদ
অনেকেই মনে করেন, বাংলা চলচ্চিত্র থেকে দর্শকদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার অন্যতম কারণ অশ্লীলতা৷
ছবি: DW/M. Mamun
অপর্যাপ্ত আধুনিকায়ন
চলচ্চিত্রে সংকটময় এই পরিস্থিতির জন্য সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতাকে দায়ী করেন সংশ্লিষ্টরা৷ চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রযুক্তির ব্যবহারও খুব বেশি বাড়েনি৷ বিগত বছরগুলোতে বিএফডিসির কোনো আধুনিকায়নই হয়নি৷ সাভারের কবিরপুরে ফিল্ম সিটি গড়ে তোলার জন্য ১০৫ একর জমি বরাদ্দ হলেও আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
পর্নো ছবি
ঢাকার কিছু সিনেমা হলে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে বিদেশি সিনেমা৷ ‘এক টিকেটে ২ ছবি’-র এসব প্রদর্শনীতে মূলত দেখানো হয় পর্নো সিনেমা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাল্টিপ্লেক্সই ভরসা?
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন সিনেমা হল বন্ধের মহোৎসব চলছে, সে সময়ে কিছুটা হলেও দর্শক নিয়ে আসছে ঢাকার মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলগুলো৷ সংখ্যায় খুবই কম হলেও ভালো পরিবেশের কারণে এসব মাল্টিপ্লেক্স হলে দর্শকরা আসছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাল্টিপ্লেক্সে বেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র
বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রতিদিনই দর্শকরা ভিড় জমান বিভিন্ন সিনেমা দেখতে। তবে এসব সিনেমা হলে প্রদর্শিত সিনেমার অধিকাংশই বিদেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
পরিবারের সবার বিনোদনের স্থান
ঢাকার বসুন্ধরা সিটিতে স্টার সিনেপ্লেক্স মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলের একটি৷ পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে দর্শকরা আসেন সিনেমা দেখতে৷