দিল্লির মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে ঠিক তাই নিয়েই কথা চলেছে, বলে জানিয়েছেন ভারতে জার্মান রাষ্ট্রদূত মিশায়েল স্টাইনার৷ মাত্র কয়েক বছরের জন্য জার্মান না শিখিয়ে দশম শ্রেণির পরেও জার্মান শেখার আয়োজন দেখতে চায় জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
লক্ষ্য হল: ‘‘ভারতীয় পাঠক্রমের অঙ্গ হিসেবে একটি পূর্ণাঙ্গ জার্মান ভাষাশিক্ষা কর্মসূচি,'' বলেছেন রাষ্ট্রদূত স্টাইনার৷ রাজধানীর কার্মেল কনভেন্ট স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার সময় স্টাইনার এই মন্তব্য করেন৷ ইতিপূর্বে স্কুলটিকে একটি ‘পাশ' বা ‘পার্টনার্স ফর দ্য ফিউচার' অর্থাৎ জার্মানির সহযোগী স্কুলের মর্যাদা প্রদান করেন তিনি৷ স্কুলের ক্যাম্পাসে ‘পাশ' ফলকটিও স্থাপন করা হয়েছে৷
সেরা শিক্ষার্থীদের রাজ্যসভা ভবনে থাকার সুযোগ
জার্মানির মিউনিখ শহরের কেন্দ্রস্থলে বাভেরিয়ার রাজ্যসভা ভবনে সেরা শিক্ষার্থীরা বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সুযোগ পাচ্ছেন৷ সংসদ সদস্যদের কাছাকাছি থেকে অনেক কিছু শেখারও সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা৷
ছবি: Andreas Praefcke
৫০ জন সেরা শিক্ষার্থী
জার্মানির মিউনিখ শহরের কেন্দ্রস্থলে বাভেরিয়ার রাজ্যসভা ভবনে ৫০ জন সেরা শিক্ষার্থী বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সুযোগ পাচ্ছেন৷ এঁদের মধ্যে এই দু’জন ভাগ্যবান শিক্ষার্থীও রয়েছেন৷
ছবি: Gerhard Brack
বিশাল প্রাসাদ
বিশাল প্রাসাদের লোহার গেট দিয়ে ঢুকছেন কালো ব্রিফকেস বগলে নিয়ে স্যুট পরা কোনো এক রাজনীতিবিদ৷ তাঁর গাড়ির পাশেই সাইকেল দাঁড় করিয়ে মাথায় বেসবল ক্যাপ পরে কোনো একজন ছাত্র প্রাসাদের ঐ একই গেট দিয়ে ঢুকছেন নিজের থাকার ঘরে৷
ছবি: Bayerischer Landtag
রাজকীয় ব্যাপার
প্রাসাদের ঝকঝকে মেঝেতে লাল কার্পেট, দেয়ালে সব বড় বড় পেইনটিং আর লম্বা করিডোর পেরিয়ে ছাত্রদের যেতে হয় নিজেদের ঘরে৷
ছবি: Bayerischer Landtag
দ্বিতীয় রাজা মাক্সিমিলিয়ন
১৮৫২ সালে বাভেরিয়ার দ্বিতীয় রাজা মাক্সিমিলিয়ন ছাত্রদের জন্য একটি ফাউন্ডেশন গঠন করেন৷ তাঁর লক্ষ্য ছিল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া৷ ছাত্ররা বাবা-মায়ের আর্থিক সাহায্য ছাড়া এবং পড়াশোনার পাশাপাশি টাকা রোজগারের কোনো চিন্তা না করে পুরো মনোযোগ যেন লেখাপড়ায় খরচ করতে পারে৷
ছবি: picture alliance/akg
‘এক্সক্লুসিভ’ ছাত্রদের হোস্টেল
এই লক্ষ্য নিয়েই দ্বিতীয় রাজা মাক্সিমিলিয়ন সেরা ছাত্রদের জন্য এই বৃত্তির সুযোগ করে দেন৷ এটা জার্মানির ‘এক্সক্লুসিভ’ ছাত্রদের হোস্টেল৷ ছাত্র আন্দ্রেয়াস বলেন, ‘‘কারো প্রতিভা থাকলে এখানে তারা তাদের সে চাহিদা পূরণের সুযোগ পায়৷’’
ছবি: Fotolia/mylivi
বৃত্তি পাওয়ার প্রধান শর্ত
সংসদ সদস্যদের পাশে থেকে নিজেদের যোগ্য মানুষ হিসেবে তৈরি করার সুযোগ পাওয়ার জন্য এই ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ পাওয়া একেবারে সহজ ব্যাপার নয়৷ ‘‘এখানে বৃত্তি পাওয়ার প্রধান শর্ত, আবিট্যুর, অর্থাৎ স্কুল ফাইনালের ফলাফল হতে হবে ১,০ গ্রেড এবং নিজ স্কুল থেকে সুপারিশ করা চিঠি৷
ছবি: Bayerischer Landtag
চেয়ারম্যান হান্সপেটার বাইসার
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছেও ছাত্রদের প্রমাণ করতে হয় যে, তাঁরা শুধু স্কুলে মেধাবী ছাত্রই নন, তাঁরা অন্য ছাত্রদের চেয়ে ব্যক্তিত্ব সম্পন্নও৷ এছাড়া, থাকতে হবে সামাজিক সচেতনতাবোধ এবং বিভিন্ন কর্মতৎপরতায় নিয়োজিত করার মানসিকতা’, বলেন এই ছাত্রাবাস কমিটির সম্মানিক চেয়ারম্যান হান্সপেটার বাইসার৷
ছবি: Gerhard Brack
বিশাল ডাইনিং হল
হান্সপেটার বাইসার নিজেও একসময় এই বৃত্তি পেয়ে এই হোস্টেলেই ছিলেন৷ তিনি প্রতিদিন ঠিক দুপুর একটায় প্রাসাদের বিশাল ডাইনিং হলে বসার পর, ছাত্ররা যাঁর যাঁর আসন নেন৷ সবাইকে যে প্রতিদিন খাবার টেবিলে হাজির হতে হবে, তেমন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই৷ প্রতিবছরই কয়েকজন করে নতুন ছাত্রকে এই বিশেষ ছাত্রাবাসে থাকার জন্য বৃত্তির সুযোগ দেওয়া হয়৷
ছবি: Bayerischer Landtag
লোভনীয় লাইব্রেরি
ছাত্রী ইভা মনে করেন, ছাত্রাবস্থায় এমন রাজকীয়ভাবে থাকা খাওয়া বা জীবনযাপন অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো৷ তিনি আরো বলেন, পরীক্ষার আগে বেশিরভাগ সময়ই লাইব্রেরিতে কাটে, এখানেই অন্যদের সাথে আলোচনা হয়৷
ছবি: Bayerischer Landtag
মিউনিখের ম্যাক্সমিলেনিউম স্ট্রিট
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যেমন ফ্রান্স ইয়োসেফ স্ট্রাউস, যিনি দীর্ঘদিন বাভারিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তিনি এবং পদার্থবিদ্যায় নোবেল বিজয়ী ভ্যার্নার হাইসেনব্যার্গ-ও এই বিশেষ ধরণের বৃত্তি পেয়ে ছাত্রাবস্থায় এই বিলাসবহুল হোস্টেলে থাকতেন৷
ছবি: Andreas Praefcke
10 ছবি1 | 10
ইতিপূর্বে স্টাইনার তাঁর ভাষণে বলেন যে, বিশ্বায়নের বিশ্বে ভৌগোলিক দূরত্বের চেয়ে ‘‘মানসিক নৈকট্য'' অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিদেশি ভাষা সেই নৈকট্য এনে দেয়৷ এই প্রসঙ্গে স্টাইনার কার্মেল-এর ছাত্রীদের বলেন: ‘‘তোমরা ভাবছ তোমাদের মধ্যে অধিকাংশ ভারতেই বড় হয়ে উঠবে৷ কিন্তু সেটা সত্যি নয়... বস্তুত তোমরা একটি বিশ্বায়িত বিশ্বে বড় হয়ে উঠবে... তোমরা যেটাকে ভাবছ দূরের, সেটা হবে কাছের, এবং তোমরা যেটাকে ভাবছ কাছের, সেটা অতি দূরের হতে পারে৷''
ভাষাশিক্ষা প্রসঙ্গে স্টাইনার বলেন, সংস্কৃতের সঙ্গে জার্মানের অনেক সাদৃশ্য আছে এবং সেটা দু'টি দেশের সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রমাণ৷ ভৌগোলিক বিচারেও দূরত্বটা যতো বেশি বলে মনে হয়, ‘‘বাস্তবে আমরা ততোটা দূরে নই''৷ কার্মেলের কিছু ছাত্রী স্টাইনারের সঙ্গে জার্মানে কথা বলার পর স্টাইনার বলেন, তাদের জার্মান ভাষার দখল দেখে তিনি চমৎকৃত৷
পি-এ-এস-সি-এইচ অথবা ‘পাশ' কর্মসূচি চালু হয় ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে৷ এই কর্মসূচির উদ্যোক্তা জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এর উদ্দেশ্য হল সারা বিশ্বে এমন সব স্কুলের একটি নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা, যাদের জার্মানির সঙ্গে সংযোগ আছে৷ বর্তমানে সারা বিশ্বের দেড় হাজারের বেশি স্কুল এই নেটওয়ার্কে সংশ্লিষ্ট৷ শুধু ভারতেই ৪৪টি ‘পাশ'' স্কুল আছে, যাদের মধ্যে বারোটি আবার রাজধানী নতুন দিল্লিতে৷ গতবছর দেরাদুনের ঐতিহ্যমণ্ডিত ডুন স্কুলও এই কর্মসূচিতে যোগ দেয়৷