1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের স্কুলে ১০ লাখ শূন্যপদ, শিক্ষার মানে অবনতি

১৭ আগস্ট ২০২৫

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারতেই স্কুলগুলোতে অসংখ্য শিক্ষক পদ ফাঁকা৷ এসব পদ পূরণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পথে হেঁটেছে সরকার৷ এর ফলে শিক্ষার মানেরও অবনতি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে সংসদীয় কমিটি৷

বিহারের একটি স্কুলের শ্রেণীকক্ষে লেখায় মনযোগী শিক্ষার্থীরা এবং পেছনে দাঁড়িয়ে শিক্ষক
স্ট্যান্ডিং কমিটি কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছে, ফাঁকা থাকা ১০ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকার পদ দ্রুত পূরণ করতে হবেছবি: Sajjad Hussain/AFP/Getty Images

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় পশ্চিমবঙ্গের স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে অচলাবস্থা চলছে৷ ভারতের অন্যত্রও পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়৷

স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিবেদনে যা আছে

সংসদের চলতি বাদল অধিবেশনে শিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি একটি রিপোর্ট পেশ করেছে৷ এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে স্কুল শিক্ষার স্তরে ১০ লাখেরও বেশি শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন কেন্দ্রীয় এবং নবোদয় বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই ছবি দেখা যাচ্ছে৷ এই শূন্যপদ পূরণ করার ক্ষেত্রে স্থায়ী নিয়োগের বদলে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে৷ এর ফলে শিক্ষার মান প্রভাবিত হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷

কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ দিগ্বিজয় সিং-এর নেতৃত্বে স্ট্যান্ডিং কমিটি এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে৷ এর মধ্যে শূন্যপদ পূরণ থেকে শুরু করে শিক্ষানীতি নিয়ে পুনরায় ভাবার কথা বলা হয়েছে৷ কমিটির সুপারিশগুলো সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরেছেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ৷

স্ট্যান্ডিং কমিটি কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছে, ফাঁকা থাকা ১০ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকার পদ দ্রুত পূরণ করতে হবে৷ স্থায়ী নিয়োগ করা হলে পড়ুয়ারা পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পঠনপাঠন চালাতে পারবে৷ এতে শিক্ষার মান হবে যথাযথ৷

চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের চলতি নীতিকে পুরোপুরি বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছে সংসদীয় কমিটি৷ তাদের মতে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে শুধু শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা-ই নয়, একইসঙ্গে তপশিলি জাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে৷

শিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি ব্যাচেলারস ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন বা বিএলএড কোর্স চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য যে কোর্স চালু রয়েছে, তার মধ্যে বিএলএড অন্যতম৷ দীর্ঘ সময় ধরে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক তৈরিতে এই কোর্সের ভূমিকা রয়েছে বলে মত স্ট্যান্ডিং কমিটির৷

ভারতের যে সরকারি স্কুল সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের শিক্ষায় এগিয়ে

03:14

This browser does not support the video element.

শূন্যপদ ও ড্রপআউট

ইউনেস্কো ভারতের স্কুলে শিক্ষকের অভাব নিয়ে ২০২১ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯ শতাংশ শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে৷ গ্রামের ক্ষেত্রে এই চিত্র আরো ভয়াবহ৷ এক্ষেত্রে শূন্যপদ ৬৯ শতাংশ৷ উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গের মতো ভারতের জনবহুল রাজ্যগুলিতে বিপুল সংখ্যক শূন্যপদের কথা ইউনেস্কোর রিপোর্টে বলা হয়েছিল৷ এমনকী মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছে, এমন স্কুলও নজরে এসেছিল সমীক্ষকদের৷

দারিদ্র্য, রোজগারের চাহিদা, করোনা অতিমারির চাপ, এমন নানা কারণে ২০২০ সালের পর থেকে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে৷ সে বছরই চালু হয় জাতীয় শিক্ষানীতি৷ তার অনেক আগে ২০০৯ সালে শিশুদের জন্য শিক্ষার অধিকার আইন পাশ করায় কেন্দ্রীয় সরকার৷ ২০১৪ সালের চালু হয় চাইল্ডহুড কেয়ার অ্যান্ড এডুকেশন অ্যাক্ট৷

অর্থাৎ, আইনের সংস্থান রয়েছে একাধিক৷ কিন্তু সেই অনুযায়ী বাস্তবের চিত্র কতটা বদলেছে? ছবিটা যে আশানুরূপ নয়, সেটা বোঝা যাচ্ছে স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্টে৷

ভারতে জাতীয় পরিবার সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, স্থায়ীভাবে শিক্ষক নিযুক্ত না হওয়ায় স্কুলে ছাত্র ও শিক্ষকের অনুপাত ক্রমশ কমেছে৷ কোনো কোনো স্কুল হয়ে পড়েছে শিক্ষকবিহীন৷ এর ফলে ড্রপআউট বেড়ে চলেছে৷ কোনো জায়গায় শিক্ষক ও পড়ুয়ার সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সমান-সমান৷

পশ্চিমবঙ্গে স্কুল শিক্ষার কোন স্তরে কত শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে গত জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে তা জানিয়েছে৷ প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে শিক্ষা মিশনের টাকা বরাদ্দ নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক হয়৷ সেখানে প্রতিটি রাজ্যের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করেন কেন্দ্রের কর্তারা৷ এই বৈঠকে শূন্যপদ ও ড্রপআউট নিয়ে আলোচনা হয়৷

যদিও স্কুলছুটের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে৷ গত বৃহস্পতিবার কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য স্কুল স্তরে ছাত্রীদের ড্রপআউট কমানো গিয়েছে৷ তিনি জানান, প্রাথমিকে ২০১১-১২ সালে ছাত্রীদের ড্রপআউট ছিল তিন দশমিক ছয় শতাংশ৷ গত বছরে সেটা কমে শূন্যতে এসে দাঁড়িয়েছে৷ উচ্চ প্রাথমিকের ক্ষেত্রেও এই হার শূন্য৷

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

সুবিধা পাওয়ার জন্য ছেলেমেয়েরা স্কুলে নাম লেখাচ্ছে: শাশ্বতী

This browser does not support the audio element.

মুখ্যমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুসারে, ৯৩ লাখ ছাত্রীকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে৷ এই সংখ্যা এক কোটিতে নিয়ে যেতে চায় রাজ্য সরকার৷ যদিও নারী আন্দোলন কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন, যদি কন্যাশ্রী প্রকল্প স্কুলছুট কমাতে পারে, তাহলে কেন এত বাল্যবিবাহ দেখা যাচ্ছে?

নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, "বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য ছেলেমেয়েরা স্কুলে নাম লেখাচ্ছে৷ কিন্তু তারা পড়াশোনা শেষ করে স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষায় বসছে না৷ কেউ কন্যাশ্রীর জন্য নাম লেখাচ্ছে, কেউ ট্যাব পাওয়ার জন্য৷ তাই আমাদের রাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষায় বসা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কম৷ কতজন ভর্তি হচ্ছে ও কতজন পরীক্ষায় বসছে, এই সংখ্যার পার্থক্য দেখলে বিষয়টা বোঝা যাবে৷ একই সঙ্গে এটাও উদ্বেগের, ইউনিসেফের রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের রাজ্যে নাবালিকা মায়ের সংখ্যা বাড়ছে৷ তারা স্কুলে নাম লিখিয়ে বিয়ে করে ফেলছে, সন্তানের মা হচ্ছে৷"

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার বলেন, "আমাদের দেশে এখন আর সরকার নেই৷ কেন্দ্র এবং রাজ্যে শুধু শাসক দল৷ তাই শিক্ষা বাণিজ্যিকরণের চেষ্টা চলছে৷ কর্পোরেটের হাতে শিক্ষা তুলে দেওয়াই তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য৷ যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাজের মেরুদণ্ড, সেই শিক্ষাটুকু দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা নিতে পারবে না৷"

তার বক্তব্য, "আমরা জানতাম, ফেলো কড়ি মাখো তেল৷ এখন সেটা হয়েছে ফেলো কড়ি, নাও শিক্ষা৷ শিক্ষা নয়, দেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠা৷"

বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘২০২০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রকাশের সময় সরকার তথ্য প্রকাশ করেছিল, দেশে এক কোটি ১০ লক্ষ স্কুল একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে৷ এর মধ্যে ৮৬ হাজার প্রাথমিক স্কুলে একজন শিক্ষক রয়েছেন৷ প্রাথমিক থেকে সব স্তরের স্কুল শিক্ষা সেই পর্যায়েই থেকে গিয়েছে৷ তা হলে গত পাঁচ বছরে কতটা অগ্রগতি হলো? একজন শিক্ষক থাকলে স্কুলে পড়াশোনা করানো সম্ভব নয়৷ কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ না করলে কীভাবে পঠনপাঠন চলবে? আমরা নিজেদের কাজের সময় বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি, অন্যদিকে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের উপরে চাপ তৈরি করছি যাতে দ্রুত নিয়োগ করা হয়৷"

এসব সত্ত্বেও আশার আলো রয়েছে৷ শাশ্বতী বলেন, ‘‘এখন বহু মেয়ে পড়াশোনার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে৷ তারা বিয়ে করতে চাইছে না, পড়তে চাইছে৷ অনেকে যোগাযোগ করছে প্রশাসনের সঙ্গে৷ এটা খুবই আশার কথা৷"

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ