পাকিস্তানের কাছে ভারত হারার পরেই কাশ্মীরের দুইটি মেডিক্যাল কলেজে ভারত-বিরোধী স্লোগান। এফআইআর দায়ের।
বিজ্ঞাপন
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর এই ধরনের ঘটনা এতটা ব্যাপকভাবে ঘটেনি। পাকিস্তানের সমর্থনে স্লোগান এবং ভারত ম্যাচ হারায় বিজয়োল্লাসের ঘটনা। আর সেটাও হয়েছে যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কাশ্মীরে উপস্থিত ছিলেন, সেই সময়। ফলে দুইটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র, পরিচালন সমিতির সদস্য এবং ওয়ার্ডেনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ (বেআইনি কার্যকলাপ রোধ আইন) অনুসারে এফআইআর করেছে পুলিশ।
শ্রীনগরের গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ (জিএমসি) এবং শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এসকেআইএমএস)-এ এই ঘটনা ঘটে। তারপরই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পাকিস্তানের সমর্থনে সোচ্চার ছিলেন ছাত্ররা। তারা ভারত-বিরোধী স্লোগানও দিতে থাকেন। এরপরই সৌরা ও করণনদর থানায় দুইটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। তারা আগে ভিডিওগুলি খতিয়ে দেখবেন। তারপর ব্যবস্থা নেবেন। কারণ, ইতিমধ্যে অভিযোগ উঠেছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলির মধ্যে কয়েকটি ২০১৬ সালের।
এসকেআইএমএস সূত্র জানাচ্ছে, একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেবে।
জম্মু-কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজাদ লোন টুইট করে বলেছেন, ‘‘অন্য একটি দলের সমর্থনে সোচ্চার হওয়ার জন্য যদি মনে করেন অভিযুক্তরা দেশপ্রেমী নন, তা হলে সেই অভ্যাস ফিরিয়ে আনার সাহস থাকা দরকার। ছাত্রদের শাস্তি দিয়ে কোনও লাভ নেই।''
ট্রোলড শামির পাশে শচিন-শেহবাগ-রাহুল গান্ধী
পাকিস্তানের সঙ্গে হারের পরই শুরু হয়েছে ভারতীয় পেসার মহম্মদ শমির বিরুদ্ধে ট্রোলিং। তবে তার পাশে শচিন থেকে রাহুল গান্ধী।
ছবি: Reuters/Action Images/P. Childs
শামির বিরুদ্ধে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে শামি ভালো বল করতে পারেননি। তিন দশমিক পাঁচ ওভার বল করে ৪৩ রান দিয়েছেন। সেদিন কোনো ভারতীয় বোলারই ভালো বল করতে পারেননি। পাকিস্তানের একটা উইকেটও নিতে পারেননি ভারতীয় বোলাররা। বুমরা, ভুবনেশ্বর, জাদেজা, বরুণ সকলেই ব্যর্থ। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে নিশানা করা হচ্ছে শামিকে।
ছবি: Getty Images/A. Davidson
কেন শামিকে আক্রমণ?
অতীতে বল হাতে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন শামি। দুরন্ত বল করেছেন। উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ হয়েই লাগামছাড়া আক্রমণের মুখে পড়েছেন। সেই আক্রমণের সময় অবাঞ্ছিত ও কুৎসিতভাবে টেনে আনা হয়েছে ক্রিকেট মাঠের বাইরের প্রসঙ্গ। বলা হয়েছে, তিনি পাকিস্তান চলে যান। সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পুরো বিষয়টা দেখা হয়েছে এবং সেইমতো আক্রমণ করা হয়েছে ভারতীয় দলের এই পেসারকে।
ছবি: Reuters/Action Images/P. Childs
শচিনের প্রতিবাদ
শামির পাশ দাঁড়িয়েছেন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা। দাঁড়িয়েছেন শচিন টেন্ডুলকর। তিনি টুইট করে বলেছেন, ''আমরা যখন টিম ইন্ডিয়াকে সমর্থন করি, তখন ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে থাকা প্রতিটি প্লেয়ারকে সমর্থন করি। মহম্মদ শামি একজন নিবেদিতপ্রাণ বিশ্বমানের বোলার। বিশ্বের সব ক্রীড়াবিদের একেকটা দিন অফ ডে থাকে। শামিরও তাই ছিল। আমি শামি ও টিম ইন্ডিয়ার পাশে আছি।''
অত্যন্ত কড়াভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শেহবাগ। তিনিও টুইট করে বলেছেন, ''মহম্মদ শামির বিরুদ্ধে যে অনলাইন আক্রমণ হচ্ছে, তা ভয়াবহ। শামি একজন চ্যাম্পিয়ন। আর যে প্লেয়াররা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন, তারা ওই অনলাইন মবের তুলনায় অনেক বেশি ভারতীয়। শামি, আমরা তোমার সঙ্গে আছি। পরের ম্যাচে দেখাও তোমার জাদু।''
ছবি: AP
পাশে রাহুল গান্ধীও
কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীও শামির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তিনিও টুইট করে বলেছেন, ''মহম্মদ শামি, আমরা সবাই আপনার পাশে আছি। আপনাকে যারা আক্রমণ করেছে, তাদের অন্তরে শুধু ঘৃণা আছে, কারণ, কেউ তাদের কখনো ভালোবাসা দেয়নি। ওদের আপনি ক্ষমা করুন।''
ছবি: Ians
ক্ষুব্ধ ভিভিএস
সাবেক ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণও শামির বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে বিষোদ্গারে ক্ষুব্ধ। তিনি টুইট করে বলেছেন, ''গত আট বছর ধরে শামি অনেক নজরকাড়া পারফরমেন্স উপহার দিয়েছেন। ভারতকে জিততে সাহায্য করেছেন। একটা পারফরম্যান্স দিয়ে তার বিচার হয় না। আমার শুভকামনা তার প্রতি রয়েছে। আমি সব ক্রিকেটভক্তের কাছে অনুরোধ করছি, শামির পাশে দাঁড়ান। ভারতীয় দলের পাশে দাঁড়ান।''
ছবি: Getty Images/AFP
পাশে বর্তমান ক্রিকেটাররাও
লেগ স্পিনার চাহাল সংক্ষিপ্ত একলাইনের টুইট করে বলেছেন, ''আমরা তোমার পাশে আছি, শামি ভাইয়া।'' অফ স্পিনার হরভজন সিংয়েরও সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ''আমরা তোমাকে ভালোবাসি শামি।'' উপরের ছবিটি চাহালের।
ছবি: AFP/J. Samad
প্রীতি জিন্টার প্রতিবাদ
ক্রিকেট মাঠে এখন হামেশাই দেখা যায় বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিন্টাকে। আইপিএলে পাঞ্জাব টিমের সঙ্গে তিনি যুক্ত। প্রীতি বলেছেন, ''ভারত হারায় আমি হতাশ। কিন্তু তার থেকেও বেশি হতাশ যেভাবে সামাজিক মাধ্যমে ক্রিকেটারদের আক্রমণ করা হচ্ছে, তা নিয়ে। এটা খেলা। আর সব ক্রিকেটার মানুষ। তাদের কেন এই গালগালি শুনতে হবে এবং নেতিবাচক মনোভাবের শিকার হতে হবে?''
ছবি: AP
আজহারউদ্দিনের প্রতিক্রিয়া
সাবেক ভারতীয় ক্যাপ্টেন আজহারউদ্দিন বলেছেন, ''খেলায় হার-জিত আছে। শামির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ একেবারেই কাম্য নয়। আমি শামির পাশে দাঁড়াচ্ছি।''
ছবি: AP
ইরফান পাঠানের মতে
ইরফান পাঠান টুইট করে বলেছেন, ''আমিও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ খেলেছি। ম্যাচ হেরেছি। কিন্তু আমায় কেউ পাকিস্তান চলে যেতে বলেনি। এই কুৎসা অবিলম্বে বন্ধ হোক।'' তাকে সমর্থন করেছেন আরেক সাবেক ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ।
ছবি: AP
শামির সমর্থনে
শামির বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে আক্রমণ একতরফা হয়নি। অনেক সাধারণ মানুষ শামির পক্ষে টুইট করেছেন। তারা এই পেসারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শামির বিরুদ্ধে যারা আক্রমণ শানিয়েছে তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন তারা।
ছবি: Getty Images/C. Mason
11 ছবি1 | 11
ইউএপিএ আইন ২০০৯ সালে সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে 'দেশবিরোধী' কাজ করলে কাউকে জঙ্গি আখ্যা দেয়ার অধিকার সরকারের আছে। ছয় মাস অভিযুক্তকে আটকে রাখা যায়। তার সাত বছর পর্যন্ত শাস্তি হতে পারে।
ম্যাচ নিয়ে
পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্ররা যে ভারত-বিরোধী স্লোগান দিয়েছে, তা বেআইনি। তবে শুধু এই ছাত্ররাই নয়, ম্যাচ শেষ হওয়ার পর কয়েকশ মানুষ শ্রীনগরের রাস্তায় নেমে নাচতে থাকেন। তারা বাজি ফাটিয়েছেন, 'লং লিভ পাকিস্তান' স্লোগানও দিয়েছেন।
অমিত শাহের সফর
এই ঘটনা যখন হয়েছে, তখন অমিত শাহ কাশ্মীরে ছিলেন। তিনি পুলওয়ামায় গিয়ে রাত কাটান। পুলওয়ামাতে সিআরপি শিবিরে জঙ্গিদের আক্রমণে ৪০ জন আধাসেনা মারাগেছিলেন। ২০১৯ সালে এই ঘটনা ঘটে। অমিত শাহ বলেছেন, কাশ্মীরে সম্পূ্ণ শান্তি না ফেরা পর্যন্ত স্বস্তি নেই।