ভারতীয় ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ড শোকজ নোটিস পাঠিয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউটকে। অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন ভারতে তৈরি করছে পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট। অ্যামেরিকায় সেই একই ভ্যাকসিন তৈরি করছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। দিন কয়েক আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায় ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালে এক রোগীর কিছু অসুস্থতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। তাই আপাতত ট্রায়াল বন্ধ রাখা হচ্ছে। কিন্তু সিরাম ইনস্টিটিউট জানিয়েছিল, ভারতে ট্রায়াল চলবে। কারণ, ভারতে কেউ অসুস্থ হননি। তারই জেরে ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ড বা ডিসিজিআই শোকজ করেছে সিরাম ইনস্টিটিউটকে।
বিশ্বের চারটি দেশে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা চালাচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। দিন কেয়ক আগে তারা জানায়, যুক্তরাজ্যে এক ব্যক্তির শরীরে কিছু সাইড এফেক্ট দেখা গিয়েছে। তাঁর নানা ধরনের পরীক্ষা হয়েছে। নিরপেক্ষ চিকিৎসকদের কাছে তার টেস্ট রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ছাড়পত্র এলে তবেই আবার নতুন করে ট্রায়াল শুরু হবে। এটাই যে কোনও ওষুধের ট্রায়ালের নিয়ম। কারও শরীরে কোনও সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ট্রায়াল বন্ধ করতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সঙ্গে সঙ্গে ট্রায়াল বন্ধ করে দেয় অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
করোনা সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ভারত
মোট করোনা সংক্রমণে ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে দিলো ভারত৷ এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাই ভারতের চেয়ে খারাপ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/Y. Nazir
দৈনিক সর্বোচ্চ নতুন সংক্রমণ
পরপর তিনদিন মোট সংক্রমণ ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে ভারতে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গত একমাস ধরেই বিশ্বে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড গড়ছে ভারত৷
ছবি: Reuters/A. Dave
গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে সংক্রমণ
এতদিন ভারতে সংক্রমণ বেশি ছিল শহরাঞ্চলে৷ কিন্তু এখন আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে চিত্র৷ দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণস্বাস্থ্য বিষয়ের অধ্যাপক রাজীব দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বর্তমানে সংকটটা দুই ভাগেই৷ শহরাঞ্চলে সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ নেই, গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে সংক্রমণ৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. S. Iyer
মৃত্যু এবং সুস্থ হওয়ার হার
সরকারী পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে এ পর্যন্ত ৭১ হাজার ৬৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়৷ পাশাপাশি, প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ সেরে উঠেছেন৷ সরকার বলছে, দেশের ‘টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট’ নীতির কারণে মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে৷ সারা ভারতে মোট আক্রান্তের ৭৭ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
পরীক্ষা কত?
গত ২৪ ঘন্টায় সাত লাখ ২০ হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত, প্রায় পাঁচ কোটি করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ভারতে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
তবুও ‘আনলক’
জুলাই মাস থেকে ধাপে ধাপে লকডাউনের পর ‘আনলক’ শুরু হয়েছে ভারতে৷ দীর্ঘদিন পর দিল্লিতে চালু হয়েছে মেট্রো পরিষেবা, দেশে চালু হয়েছে রেল, বিমান পরিষেবাও৷ খুলে গেছে বেশ কিছু মুক্তমঞ্চ, পাব, শপিংমলও৷ বলা হচ্ছে, থমকে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতেই এসব পদক্ষেপ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/H. Bhatt
অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব
করোনা সংকটে বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারতের অর্থনীতি৷ দেশের জিডিপি কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ৷ ফিনানশিয়াল টাইমস বলছে, করোনাকালে ভারতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন৷ ফোর্বস মার্শালের চেয়ারম্যান নওশাদ ফোর্বস বর্তমান অবস্থাকে দেশের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বলে মনে করছেন৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Wire/A. Vaishnav
যুক্তরাষ্ট্রেও বাড়ছে...
ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে ভারত৷ যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ ৬২ লাখ, মৃত্যু এক লাখ ৯৩ হাজারের কাছাকাছি৷ ৪১ লাখ জন সংক্রমিত নিয়ে ব্রাজিল ভারতের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও সেখানে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার জনের৷ অন্যদিকে রয়টার্সের জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি রাজ্যে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে৷ ফলে সেখানেও পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Willens
7 ছবি1 | 7
ভারতে পুনের সিরাম ইনস্টিটিউটও ওই একই ভ্যাকসিন তৈরি করছে। ভারতেও চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। দেশের ১৭টি সেন্টারে এক হাজার ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। শনিবার থেকে তাদের শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা। অ্যাস্ট্রাজেনেকার রিপোর্টের পরেও সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পুনাওয়ালা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভারতে ট্রায়াল বন্ধ হবে না। তারই জেরে বৃহস্পতিবার তাঁর কাছে শোকজ নোটিস পাঠানো হয়। নোটিসে প্রশ্ন করা হয়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার রিপোর্টের পরেও কেন সিরাম ইনস্টিটিউট ট্রায়াল বন্ধ করছে না? কেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে অসুস্থ রোগীর রিপোর্ট চাওয়া হয়নি?
শো-কজ নোটিসের উত্তরে সিরাম ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ডের কথা মেনে তারাও আপাতত ট্রায়াল স্থগিত রাখছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ট্রায়াল শুরু হলে তবেই ফের সিরাম ইনস্টিটিউট ট্রায়াল শুরু করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ বিষয়ে মন্তব্য করেছে। তাদের বক্তব্য, গোটা পৃথিবীতে দ্রুত করোনার ভ্যাকসিন ছাড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। অনেকে চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা না করেই করোনার টিকা বাজারে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার রিপোর্ট সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল কতটা জরুরি, তা এই ঘটনাই প্রমাণ করে।