ভারতে প্রথমবারের মতো রিটেল স্টোর খুলতে যাচ্ছে অ্যাপল৷ চলতি মাসেই মুম্বইয়ে এটি চালু হতে পারে বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ ২০২১ সালে এটি খোলার পরিকল্পনা থাকলেও করোনার কারণে সম্ভব হয়নি৷
মুম্বাইয়ে অ্যাপলের রিটেল স্টোরছবি: Francis Mascarenhas/REUTERS
বিজ্ঞাপন
২০২০ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় স্মার্টফোন বাজার ভারতে অনলাইন রিটেল স্টোর চালু করেছিল অ্যাপল৷
তবে উচ্চমূল্যের কারণে ভারতের স্মার্টফোন বাজারের মাত্র তিন শতাংশ অ্যাপলের দখলে আছে৷
অ্যামাজন, মার্কিন রিটেল চেইন ওয়ালমার্টের ফ্লিপকার্টসহ আরও কয়েকটি রিসেলারের মাধ্যমে ভারতে অ্যাপল পণ্য বিক্রি হচ্ছে৷
অ্যাপলের আইফোন প্রস্তুতকারী কোম্পানি তাইওয়ানের ‘ফক্সকন' ও ‘উইস্ট্রন কর্পোরেশন' আইফোন অ্যাসেম্বলের কিছু কাজ ভারতে করে থাকে৷ এছাড়া আইপ্যাড ও এয়ারপড অ্যাসেম্বলের কিছু কাজ ভারতে করার পরিকল্পনা করছে অ্যাপল৷
অ্যাপল নিয়ে ২০১৬ সালের একটি গ্যালারি দেখতে পারেন এখানে :
বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি ‘অ্যাপল’
১৯৭৬ সালের পয়লা এপ্রিল তিনজন মার্কিন তরুণ মিলে অ্যাপল কম্পিউটার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ তারপর ৪০ বছর কেটে গেছে৷ আজ অ্যাপল এ পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিগুলির মধ্যে গণ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Apple
বাবার গ্যারেজে যার সূচনা
স্টিভ জবসের তখন ২১ বছর বয়স (ছবিতে ডানদিকে)৷ ক্যালিফর্নিয়ার লস আল্টসে বাবার গ্যারেজে দুই সাথি স্টিভ ওয়জনিয়াক (ছবিতে বাঁদিকে) আর রোনাল্ড ওয়েইনকে নিয়ে অ্যাপল কম্পিউটার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন স্টিভ জবস৷ ঠিক এগারো দিন পরে ওয়েইন তাঁর শেয়ার বেচে দেন মোট ২,৩০০ ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Apple
ক্যাসেট প্লেয়ারের প্রযুক্তি
কোম্পানির প্রথম প্রোডাক্টের নাম ছিল অ্যাপল-ওয়ান৷ তা-তে ছিল একটি তৈরি অ্যাসেম্বলি বোর্ড, কিবোর্ড, মনিটর, এমনকি আলাদা কেস-ও কেনা যেত৷ একমাত্র পেরিফেরাল ডিভাইস হিসেবে ছিল একটি ক্যাসেট ইন্টারফেস, যার মাধ্যমে একটি ক্যাসেট রেকর্ডারে রাখা অডিও ক্যাসেটে কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলি রেকর্ড করা যেত, আবার সেখান থেকে লোড করা যেত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Ben Margot
দু’শ থেকে ২০ লাখ
অ্যাপল-টু তৈরি হয় ১৯৭৭ সালে৷ অ্যাপল-ওয়ানের দাম ছিল ৬৬৬ ডলার ৬৬ সেন্ট৷ দু’শটি অ্যাপল-ওয়ান বেচে অ্যাপল-টু’র বিকাশের খরচ ওঠেনি; কাজেই ১৯৭৭ সালে অ্যাপলকে একটি কোম্পানি লিমিটেডে পরিণত করা হয়৷ মাইক মারকুলা আড়াই লাখ ডলার দিয়ে কোম্পানির ২৬ শতাংশ শেয়ার পান৷ ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩ সাল অবধি তিনি অ্যাপলের প্রধান ছিলেন৷ ১৯৯৩ সালের মধ্যে ২০ লাখ অ্যাপল-টু বা অ্যাপেল-দুই কম্পিউটার তৈরি হয়৷
ছবি: cc-by-2.0 Marcin Wichary
স্টিভ জবসকে যেতে হলো
১৯৮৩ সালে জন স্কালি নতুন অ্যাপল প্রধান হলেন (ছবিতে ডানদিকে, বাঁয়ে স্টিভ জবস)৷ দু’জনে মিলে ‘‘লিজা’’ পার্সোনাল কম্পিউটারটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবেশন করছেন, যা-তে মাউস আছে এবং গ্র্যাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস যুক্ত অপারেটিং সিস্টেম আছে৷ ১৯৮৫ সালে জবস আর স্কালির মধ্যে বিরোধ বাঁধে৷ জবস কোম্পানি ছেড়ে ‘নেক্সট’ কম্পিউটার তৈরির কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷
ছবি: Imago/United Archives International
সংকটের মুখে অ্যাপল
আশির দশকের শেষে অ্যাপল তাদের প্রথম পোর্টেবল কম্পিউটার তৈরি করে৷ ১৯৯০ সাল থেকে মাইক্রোসফটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে অ্যাপল ; ১৯৯৩ সালে কোম্পানি প্রথমবারের মতো লোকসান করে, যে কারণে স্কালিকে যেতে হয়৷ একটি উন্নততর অপারেটিং সিস্টেম পাবার আশায় অ্যাপল নেক্সট-কে কেনে ১৯৯৬ সালে, মোট ৪০ কোটি ডলার মূল্যে৷ এর আরেকটি ফলশ্রুতি: স্টিভ জবসের অ্যাপলে প্রত্যাবর্তন৷
ছবি: Delsener
ঘরে ফেরা
রঙিন, কোণ আর গোল রূপরেখা, ঋজু নয়, সেই সঙ্গে স্বচ্ছ পদার্থ দিয়ে তৈরি কম্পিউটার ‘আইম্যাক’ বাজারে আসে ১৯৯৮ সালে৷ এসেই বাজার মাত করে তার বৈপ্লবিক ডিজাইন দিয়ে৷ ফলে অ্যাপল হালে পানি পায়, বিশেষ করে বাণিজ্যিক বিচারে৷
ছবি: Imago/UPI Photo
আইপড
২০০১ সালে জন রুবিনস্টাইন অ্যাপল প্রধান স্টিভ জবসকে মাত্র এক দশমিক আট ইঞ্চি মাপের একটি হার্ডডিস্ক দেখান ও স্ক্রল হুইল লাগানো একটি এমপিথ্রি প্লেয়ারের কথা বলেন৷ জব্স-এর উত্তর ছিল, ‘গো ফর ইট!’ আইপড-এর দুনিয়া জয় করতে বিশেষ সময় লাগেনি, সেই সঙ্গে চলেছে আইটিউন্স মিউজিক স্টোর থেকে মিউজিক বিক্রি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইফোন
২০০৭ সালে অ্যাপল আইফোন আর অ্যাপল-টিভি বাজারে আনে৷ সেই সঙ্গে অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেটেড হয়ে দাঁড়ায় অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড৷ আইফোন-এর জয়যাত্রা সম্ভবত একবিংশ শতাব্দীর প্রথম আশ্চর্য: ২০১৫ সালের মধ্যে ৯০ কোটি আইফোন বিক্রি হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Images/P. Sakuma
আইপ্যাড
২০১০ সালে স্টিভ জবস তাঁর কোম্পানির সর্বাধুনিক আবিষ্কারটি পেশ করেন৷ পরের বছরই অসুস্থতার কারণে তাঁকে সরে দাঁড়াতে হয়; অ্যাপলের দায়িত্ব নেন টিম কুক৷ ২০১১ সালের ৫ই অক্টোবর পরলোকগমন করেন স্টিভ জবস৷
ছবি: cc-by William Avery/Matt Buchanan
সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি
২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে অ্যাপলের সামগ্রিক মূল্য ৭০ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করে, যা এর আগে আর কোনো কোম্পানি করতে পারেনি৷ আপাতত ‘অ্যাপল ওয়াচ’ নামধারী একটি স্মার্টওয়াচ দিয়ে আবার বাজার মাত করার চেষ্টায় আছে অ্যাপল: এই ঘড়ি দিয়ে টেলিফোন করা যায়, আবার নাড়ি মাপা যায়৷
ছবি: Reuters/S. Lam
দিন বদলায়
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যাপলকে শুনতে হয়, গুগল-এর মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট অ্যাপলকে সিংহাসনচ্যুত করে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পশ্চিমি বিশ্বে স্মার্টফোনের চাহিদা মোটামুটি মিটেছে; বছরে দশ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির দিন সম্ভবত ফুরোতে চলেছে৷ অ্যাপলকে শুধু নিত্যনতুন বাজারই নয়, নিজেকেও পুনরাবিষ্কার করতে হবে৷