1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে আজও মানুষ মরছে অনাহারে!‌

রাজীব চক্রবর্তী
১ ডিসেম্বর ২০১৮

দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে ৭০ বছর আগে৷ আজও না খেতে পেয়ে মানুষ মরছে৷ এমন সংবাদে লজ্জায় মুখ ঢাকে মানবতা৷ তবে চলছে সংবাদের সত্যতা অস্বীকারের পালা৷ তাতে কি সত্য বদলে যায়?

ছবি: DW/R. Chakraborty

মাস দুয়েক আগে গত সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ভারতে ধুমধাম করে পালিত হলো ‘‌জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ'‌‌৷ সরকারি অনুষ্ঠানে প্রচারিত হলো অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা৷ কিন্তু সেসব কথার কথা৷ বাস্তবে আজও ভারত জুড়ে অনাহারে মৃত্যুর সংবাদ আসছে অহরহ৷ এমনকি রাজধানী দিল্লি, পার্শ্ববর্তী উত্তরপ্রদেশ অথবা ওড়িশা, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য থেকে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঘটনা৷

সম্প্রতি এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যু প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চেয়ে কেন্দ্র সরকার ও দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট৷ জানতে চাওয়া হয়েছে এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷

দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজেন্দ্র মেনন এবং বিচারপতি ভি কে রাওয়ের বেঞ্চে শুনানি হবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি৷ মামলায় দাবি করা হয়েছে, বিশেষত বস্তি ও ঝুপড়িবাসীদের মধ্যে অনাহার ও অপুষ্টির কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে৷ সরকারি নিয়মে রেশন কার্ড ধারকদের ভর্তুকি দরে খাদ্যশষ্য দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু, আশ্চর্যজনকভাবে বস্তি, ঝুপড়ি ও ফুটপাথবাসীদের অনেকের কাছেই রেশন কার্ডটুকুও নেই!‌ 

ছবি: DW/R. Chakraborty

এখন প্রশ্ন, কেন রেশন কার্ড নেই?‌ নানা সমীক্ষায় উঠে এসেছে, দেশের নানা প্রান্ত থেকে দিল্লির মতো বড় শহরগুলিতে বসবাসকারী অত্যন্ত গরিব মানুষদের কাছে স্থানীয় এলাকায় বসবাসের গ্রহনযোগ্য প্রমাণপত্র নেই৷ প্রমাণপত্র না থাকলে রেশন কার্ড দেওয়ার নিয়ম নেই৷ অতএব, রেশনে স্বল্পমূল্যে খাদ্যশষ্য থেকে বঞ্চিত হন এইসব মানুষ৷ জনৈক আইনজীবী মণীশ পাঠক তাঁর মামলায় অভিযোগ তুলেছেন, দেশের নির্বাচিত সরকার আইন করে খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু করেছে৷ কিন্তু শর্তসাপেক্ষে খাদ্য সুরক্ষা বস্তুত সংবিধানপ্রদত্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করার শামিল৷ এই মামলাটি প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হয়েছিল৷ দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, আগে দিল্লি হাইকোর্টে আপিল করতে হবে৷ মামলায় দাবি করা হয়েছে, সমাজের প্রান্তিক মানুষের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্য ও পানীয় জল পৌঁছে দিতে সঠিক ও উপযুক্ত নীতি নির্ধারণ করুক সরকার৷ আরো আর্জি, গরিব মানুষদের বিনামূল্যে, নিঃশর্তে খাদ্যবস্তু বিতরণের জন্য দক্ষ গণবন্টন ব্যবস্থা প্রণয়ন করার নির্দেশ দিক আদালত৷ বিচারপতিরা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পাশাপাশি এই মামলায় যুক্ত হওয়ার জন্য দিল্লি সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর, সমাজ কল্যাণ দফতর এবং মহিলা ও শিশু কল্যাণ দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন৷

বস্তিবাসীদের একটা বড় অংশের রেশনকার্ড না থাকায় তাঁরা ভর্তুকির খাদ্যদ্রব্য থেকে বঞ্চিত হন৷ এ কারণে এসব এলাকায় অপুষ্টি এবং অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে৷

পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম দক্ষিণ-‌পশ্চিম দিল্লির কয়েকটি বস্তি এলাকায়৷ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অভিযোগ অনেকাংশেই সত্য৷ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ভোটবাক্সের লোভ বেশকিছু বস্তিবাসীর হাতে রেশনকার্ড, আধারকার্ড পৌঁছে দিয়েছে৷ কিন্তু ফুটপাথবাসীদের কারো কাছেই সরকারি কোনো প্রমাণপত্র নেই৷ স্বভাবতই তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন ভর্তুকির খাদ্যশষ্য থেকে৷ সাগরপুর এলাকায় বড় রাস্তার পাশে অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করেন পান্নালাল৷ বাবা-‌মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মোট ১২ জনের সংসার তাঁর৷ পেশা ভিক্ষা৷ পান্নালালের স্ত্রী কবিতা জানালেন, ‘‘‌যেদিন কিছু টাকা-‌পয়সা জোটে, সেদিন সবাই মিলে আধপেটা খাবার খাই৷ যেদিন ভিক্ষা জোটে না, সেদিন ভরসা শুধুই জল৷''‌

প্রসঙ্গত, গত জুলাইয়ে এই দিল্লিতেই অনাহারে একসঙ্গে ৩ শিশুকন্যার মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছিল৷ টানা আটদিন ধরে অভুক্ত ছিল ২, ৪ ও ৮ বছরের ওই শিশুরা৷ পূর্ব দিল্লির মান্ডাওয়ালি এলাকার ঘটনা৷ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে মা-‌এর কাছে শিশুদের আর্তি ছিল, ‘‘‌মা খেতে দাও৷'‌'

ওই ঘটনার সমাধান তেমন কিছু না হলেও শিশুমৃত্যু নিয়ে রাজনীতির খেলায় মেতে উঠেছিল রাজনৈতিক পক্ষগুলি৷ আম আদমি পার্টি, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং কংগ্রেসের নেতারা একে অপরের ঘাড়ে দোষা চাপানোর পালা আজও চালিয়ে যাচ্ছেন৷ 

ছবি: DW/R. Chakraborty

এমন ঘটনা ঘটেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-‌শাসিত পশ্চিমবঙ্গেও৷ ঝাড়গ্রাম জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বসবাস করেন আদিবাসী জনজাতি লোধা-শবররা৷ তুলনায় ধনীদের চাষের জমিতে দিনমজুর খেটে অথবা স্থানীয় জঙ্গল থেকে কাঠকুটো কুড়িয়ে জীবনযাপন করেন তাঁরা৷ সন্তানসন্ততিদের স্কুল, লেখাপড়া নেই বললেই চলে৷ ক'‌দিন আগে জঙ্গলমহলের লালগড়ে পূর্ণাপানিতে অনাহারে ৭ জন শবরের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে এক দৈনিক৷ অভিযোগ– এই এলাকায় অনাহার ও অপুষ্টির কারণে মৃত্যু হয়েছে মঙ্গল শবর (২৮), কিসান শবর (৩৪), লেবু শবর (৪৬), সুধীর শবর (৬৩), সাবিত্রী শবর (৫১), পল্টু শবর (৩৩) ও লাল্টু শবরের (৩৮), যা মানতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা৷ কিছুদিন আগেই একই ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরের মুশাহররা থেকে৷ গত সেপ্টেম্বরেই সেখানে খেতে না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের, যদিও সরকারি হিসেব তা মানতে চায়নি৷ মহাদলিত মুসাহর সম্প্রদায়ের প্রধান খাদ্য ইঁদুরের মাংস৷ মূলত স্বাভাবিক খাদ্যবস্তুর অভাবে ইঁদুর খেতে বাধ্য হন তাঁরা৷ সবার রেশনকার্ড নেই৷ ৫ জনের মত্যুর পর বস্তা ভরে খাদ্যশষ্য পাঠিয়েছে সরকার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ