1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১৫ জুন ২০১৬

পরিসংখ্যান তাই বলছে৷ গোটা বিশ্বে বছরে গড় আত্মহত্যার সংখ্যা যেখানে প্রায় ৮ লাখের মতো, সেখানে শুধু ভারতেই প্রায় ১লাখ ৩৫ হাজার৷ তবে সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে সবথেকে বেশি হলেও, জনসংখ্যার মাথাপিছু হিসেবে অবশ্য সবথেকে বেশি নয়৷

আত্মঘাতীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মোটামুটি শিক্ষিত
প্রতীকী ছবিছবি: picture alliance/dpa

আত্মহত্যা সব দেশে সবকালেই ছিল, আছে এবং থাকবে৷ সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান বলছে, বছরে গোটা দুনিয়ায় যত মানুষ আত্মহত্যা করে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতীয়৷ সংখ্যার বিচারে বিশ্বে বছরে গড়ে আট লাখের মতো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ঘটে ভারতে৷ এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা দেখা যায় ভারতের দক্ষিণী রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রে৷

জাতীয় ক্রাইম ব্যুরো রেকর্ডের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ভারতে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় আত্মহত্যা করেছে ১৫ জন৷ অবাক করার মতো বিষয় হলো, এই আত্মঘাতীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মোটামুটি শিক্ষিত৷ আর গড়ে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, প্রায় দ্বিগুণ৷ তবে আঞ্চলিক ভিত্তিতে অনুপাতটা সমান নয়৷ মহিলাদের মধ্যে সবথেকে বেশি আত্মহত্যার ঘটে ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে৷ উল্লেখ্য বছরে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার৷ এছাড়া মোট আত্মঘাতীদের বেশির ভাগের বয়স ১৫ থেকে ২৯ এবং ৩০ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে৷ জানা যায় আত্মহত্যা সাধারণত হয়ে থাকে বিষ খেয়ে, গলায় দড়ি দিয়ে অথবা গায়ে আগুন লাগিয়ে৷ দেখা গেছে, এ সমস্ত আত্মহত্যার প্রধান কারণ দুরারোগ্য অসুখ, দাম্পত্য তথা পারিবারিক বিবাদ এবং আর্থিক সমস্যা৷ তাছাড়াও আছে পরীক্ষায় ফেল, প্রেমে ব্যর্থতা বা বেকারত্ব৷

ভারতে আত্মহত্যা সবথেকে বেশি হয় কেন? আত্মহত্যা নিবারণের উপায়ই বা কী? এ সব প্রশ্নের উত্তরে এক নামকরা বেসরকারি হাসপাতালের মনোবিজ্ঞানী ড. অয়নাংশু নায়ক ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ভারতে আত্মহত্যার যে পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে, সেই হিসেবের গোড়ায় গলদ৷ কারণ প্রথমেই মনে রাখতে হবে ভারতের বিপুল জনসংখ্যার কথা৷ জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভারতে মাথা পিছু আত্মহত্যার সংখ্যা সর্বাধিক নয়৷ সেদিক থেকে দেখতে গেলে এশিয়া তথা বিশ্বে আত্মহত্যার ঘটনা সবথেকে বেশি জাপানে৷''

তিনি বলেন, ‘‘পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতাজনিত মানসিক চাপ ও হতাশার মোকাবিলা করার শক্তি মানুষ যখন হারিয়ে ফেলে তখনই আত্মহত্যার মতো অন্তিম পদক্ষেপ বেছে নেয় মানুষ৷ এটা কমাতে হলে মনোরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে তার প্রতিকারের কথা চিন্তা করতে হবে৷ এখনও ভারতের মতো দেশে মনোরোগ একটা লোকলজ্জার বিষয়৷ তাই তা গোপন রাখার প্রবণতা প্রবল৷ তাই সেটা বিপরীতমুখী করতে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে৷''

‘‘মনে রাখতে হবে, ক্যানসার, হৃদরোগ বা অন্য আর পাঁচটা রোগের মতো মানসিক হতাশা, বিষাদ ও জীবনবিমুখতা একটা বড় রোগ৷ দেহের অন্য অঙ্গের মতো মস্তিষ্কের রোগও হতে পারে৷ তাই তাকে লোকলজ্জা মনে করে চেপে রাখলে চলবে না৷ এখন তো মানসিক রোগের উন্নত ওষুধপত্র ও চিকিত্সা বেরিয়েছে৷ সেটাকে তুলে ধরতে হবে সামাজিক প্রচার অভিযানের মাধ্যমে৷ আমার মতে, অন্য রোগের চিকিত্সার মতো মানসিক রোগ চেপে না রেখে তার চিকিত্সা করা জরুরি৷''

মনস্তাত্ত্বিক অয়নাংশু নায়কের মতে, ‘‘কৃষকদের আত্মহত্যার পেছনেও রয়েছে কৃষি সংকটজনিত আর্থিক হতাশা৷'' আসলে ভারতে মানুষ সবথেকে বেশি আত্মহত্যা করে কীটনাশক খেয়ে৷ তাই এই মনোবিজ্ঞানীর মতে, ‘‘আত্মহত্যার পেছনে জীনঘটিত বা বংশগত কারণ না থাকলেও হতাশাবোধটা কিছুটা হলেও আছে৷''

তাঁর কথায়, ‘‘নিঃসঙ্গতাও আত্মহত্যার একটা বড় কারণ, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে৷ তাঁরা চিকিত্সকের কাছে আসেন না, চুপচাপ আত্মহত্যা করে বসেন৷ এর প্রতিকারের জন্য দরকার সামাজিক যোগাযোগ ও ‘সাপোর্ট'৷''

ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে ড. নায়ক তাঁর চিকিত্সাধীন এক রোগীর কথা উল্লেখ করেন, যিনি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন৷ বলেন, ‘‘কেন গিয়েছিলেন জানেন? নিজের ক্লাস টেনে পড়া ছেলে যাতে পরীক্ষায় সর্বাধিক নম্বর পায়, সেজন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২২-২৩ ঘণ্টা পড়ার জন্য তিনি চাপ দিতেন ছেলেকে৷ তার ওপর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিশতেও দিতেন না৷ কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে ছেলেটি ফেল করে৷ ছেলের ভবিষ্যত অন্ধকার ভেবে ভয়ংকর উদ্বেগে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন মা৷ এখনও তিনি আমার চিকিত্সাধীন৷''

মনোরোগ চিকিত্সক ড. নায়ক আরও যা বললেন, তার সারমর্ম হলো: এক, কৃষকদের আত্মহত্যা নিবারণে চাই সরকারি ও সামাজিক সমর্থন৷ এবং তাঁদের দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো৷ দুই, কমবয়সি ছেলে-মেয়েদের মানসিক সমস্যা বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিসঙ্গতার সমস্যা অনুধাবন করে তার প্রতিকারে মানসিক তথা সামাজিক সমর্থন দেওয়া৷ আর তিন, প্রাক-স্নাতক স্তরে মেডিক্যাল পঠন-পাঠনে ডাক্তার ও নার্সদের জন্য মানসিক চিকিত্সাকে পাঠ্যক্রমে আবশ্যক হিসেবে চিহ্নিত করা৷

বলা বাহুল্য, এ জন্য ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলকে এগিয়ে আসতে হবে৷ তবে এটা করতে পারলে ভারতে মাথাপিছু মনোরোগ চিকিত্সকের অনুপাত বাড়বে, যা কিনা ভারতের জনসংখ্যার তুলনায় নেহাতই কম৷

ভারতে এত বেশি আত্মহত্যার কারণ কি বলে আপনার মনে হয়? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ