আগামী ২৬ জানুয়ারি ভারতে আসার কথা ছিল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর। করোনার কারণে তিনি সেই সফর বাতিল করেছেন।
বিজ্ঞাপন
ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে আসছেন না যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। মঙ্গলবার রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে এ কথা জানিয়েছেন বরিস নিজেই। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের অফিস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ এবং লকডাউনের কারণে ভারতে আসতে পারছেন না বরিস। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর জায়গায় অন্য কাউকে ভারতে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাজ্যে যেভাবে শুরু হল করোনা ভ্যাকসিনের বিশাল কার্যক্রম
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বায়োনটেক-ফাইজার ভ্যাকসিন দিতে শুরু করেছে যুক্তরাজ্য৷ ডিসেম্বরের ৮ তারিখে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের প্রথম ধাপে দেয়া হবে আট লাখ ডোজ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
এক সেকেন্ডের ব্যাপার
মার্গারেট কিনান, ম্যাগি হিসেবে পরিচিত৷ যুক্তরাজ্যে ফাইজার-বায়োনটেকের প্রথম ভ্যাকসিন দেয়া হয় ৯০ বছরের এই ব্রিটিশ নারীকে৷ ভোর ছয়টা ৩১ মিনিটে তাকে প্রথম ডোজটা দেয়ার পর থেকে খুব খুশি তিনি৷ জুয়েলারি দোকানের এক সময়ের সহকারী ম্যাগি ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি হসপিটাল কভেন্ট্রিতে টিকা নেন৷ টিকা দিতে মাত্র এক সেকেন্ড সময় লাগে৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
ম্যাগির প্রতিক্রিয়া
প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেয়ে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান আর সুবিধাভোগী মনে করছেন তিনি৷
ছবি: NHS England and NHS Improvement/REUTERS
ম্যাগির পরামর্শ
‘‘সবার জন্য আমার পরামর্শ, আমি যদি ৯০ বছরে এটা নিতে তোমরা অবশ্যই পারবে৷’’ টিকা নেয়ার পর হাসপাতালের হলওয়েতে হুইলচেয়ারে করে যখন তাঁকে নেয়া হয় হাসপাতালের কর্মীরা হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানান তাঁকে৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার
ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ইমিউনাইজেশন কর্মসূচিতে টিকা নেয়ার প্রথম সারিতে ছিলেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বিল৷ ৮১ বছর বয়সি বিল ভ্যাকসিন নেন কভেনট্রির ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
পশ্চিমা বিশ্বে প্রথম ভ্যাকসিন
বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বর্তমানে ৬ কোটি ৭০ লাখ৷ মারা গেছে ১৫ লাখ ৪০ হাজার মানুষ৷ সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রথম কার্যক্রম শুরু করলেন৷ মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট ফাইজার এবং জার্মান দম্পতির ছোট্ট কোম্পানি বায়োনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে তারা৷
ছবি: Ben Birchall/REUTERS
কর্মযজ্ঞ
গণহারে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রমে নার্স, ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান, সেচ্ছ্বাসেবী, ব্রিটিশ সেনাসহ অনেক মানুষ কাজ করছেন৷
ছবি: Owen Humphreys/REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ভ্যাকসিন
যুক্তরাষ্ট্র এই সপ্তাহেই ফাইজার-বায়েনটেকের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে পারে৷ আর ইউরোপে ২৯ ডিসেম্বর অনুমোদন হতে পারে এটি৷
ছবি: Liam McBurney/REUTERS
উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী
যাদের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে এমন কয়েকজনকে সাহস দিতে লন্ডন হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ তিনি এই কার্যক্রমকে ‘পুরো জাতির জন্য টিকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন৷ যারা টিকা নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘টিকা দেয়ার সময় শান্ত থাকুন, মনে হবে টিকার সূঁচ আপনাকে কবিতা শোনাচ্ছে৷’’
ছবি: Frank Augstein/REUTERS
চার কোটি ডোজ
প্রথম কয়েক সপ্তাহে আট লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে৷ যুক্তরাজ্য চার কোটি ডোজ অর্ডার দিয়েছে৷ ফলে সেখানে দুই কোটি মানুষ টিকা পাচ্ছেন বলে আশা করা যাচ্ছে৷ তবে সব ডোজ কখন কর্মকর্তারা হাতে পাবেন, তা নির্ভর করছে বেলজিয়ামে ভ্যাকসিন উৎপাদন কোম্পানির ক্ষমতার উপর৷ ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে ৪০ লাখ ডোজ খুব শিগগিরই তাদের হাতে পৌঁছাবে৷
ছবি: Ben Birchall/REUTERS
দুই ডোজ
একজন ব্যক্তির দুই ডোজ লাগে৷ তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দেয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ৷
ছবি: Andrew Milligan/REUTERS
সংরক্ষণ
এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করতে হয় মাইনাস ৯৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে৷ বেশি নড়াচড়া করলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ তাই তিনবারের বেশি যাতে হাত বদল না হয় সে চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Victoria Jones/AFP/Getty Images
স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা
স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় ওয়েস্টার্ন জেনারেল হাসপাতালের ক্লিনিকাল নার্স ম্যানেজার ভিভিয়ান টিকা নেয়ার পর দুই হাত আকাশে তুলে যেনো ঈশ্বরকে কিছু বলছেন৷
ছবি: Andrew Milligan/REUTERS
ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তুতি
কার্ডিফে স্বাস্থ্যকর্মীরা ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন্৷ ভ্যাকসিন দেয়ার আগে সে বিষয়ে সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Liam McBurney/REUTERS
রেকর্ড কার্ড
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন রেকর্ড কার্ডটি দেখতে এমন হবে৷ এখানেই ব্যক্তির নাম পরিচয় এবং কয়টা ডোজ নিলেন লেখা থাকবে৷
সোমবারই বরিস জনসন যুক্তরাজ্যে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করেছেন। আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত লকডাউন চলার কথা। যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন স্ট্রেইন আসার পরেই এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন জনসন। ডিসেম্বরের শেষ দিনে আশি হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন স্ট্রেইন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। তারই জেরে লকডাউন ঘোষণা করেছেন বরিস। মঙ্গলবার তিনি মোদীকে ফোন করে বলেছেন, যে ভাবে করোনা ছড়াচ্ছে তাতে এই মুহূর্তে দেশ ছাড়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সে কারণেই ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে আসতে পারবেন না তিনি। ব্রেক্সিটের পরে এটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদেশ সফর।
জনসনের আসা অনিশ্চিত হয়েছিল আগেই। দেশের মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রধান মাসখানেক আগেই জানিয়েছিলেন, যে ভাবে যুক্তরাজ্যে নতুন স্ট্রেইন ছড়াচ্ছে, তাতে কোনো ভাবেই বরিসের বিদেশ সফর করা উচিত হবে না। তাঁর শরীরেও নতুন স্ট্রেইন থাকতে পারে এবং তাঁর মাধ্যমে অন্য দেশে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অন্য দিকে ভারতে কৃষক আন্দোলন চলছে। বহু শিখ পাঞ্জাবি কৃষক সেই আন্দোলনে রয়েছেন। তাঁরা ব্রিটিশ শিখ রাজনীতিবিদদের সাহায্যে জনসনের অফিসে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। যেখানে তাঁরা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন, তিনি যেন ভারতে না আসেন। কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে যেন তিনি এই পদক্ষেপ নেন। বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও আলোচনা হয়েছে।
মঙ্গলবার মোদী এবং জনসনের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে অবশ্য এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেননি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।