1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিন্দুরা ‌পাকিস্তানে ফেরত যেতে চাইছেন!

রাজীব চক্রবর্তী নতুনদিল্লি
২৬ জুলাই ২০১৮

পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুরা অনেকেই ভারতে চলে এসেছিলেন৷ আশা করেছিলেন, আরও ভালো ভবিষ্যত হবে তাঁদের৷ কিন্তু নাগরিকত্ব না পেয়ে আবার পাকিস্তানে ফিরছেন অনেকেই৷ এর প্রধান কারণ, ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা৷

প্রতীকী ছবি (ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে অপেক্ষারত মানুষ)
প্রতীকী ছবি (ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে অপেক্ষারত মানুষ)ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Anand

কেউ বলছেন, জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করানোর ভয়ে তাঁরা পাকিস্তান ছেড়েছেন৷ কারও দাবি, মহিলাদের ওপর ক্রমশ অত্যাচার বাড়ছিল বলেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা৷

ভারতের পশ্চিমের রাজ্য গুজরাট ও রাজস্থানে পাকিস্তান থেকে চলে আসা হিন্দুদের সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়৷ তবে সরকারি কোনো তথ্য নেই৷ যতদূর জানা গেছে, গত তিন বছরে পাকিস্তান থেকে এই দুই রাজ্যে এসে বসবাস করছেন পাকিস্তানের প্রায় ২,০০০ হিন্দু নাগরিক৷ তাঁদেরই দাবি, বহু হিন্দুকে জোর করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে৷

‌পাকিস্তানে আশেপাশের দেশ থেকে বহু মানুষ যাচ্ছেন৷ ফলে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে৷ আফগানিস্তানের মতো দেশ থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁরা প্রায় সবাই মুসলিম৷ ক্রমশ সেদেশে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, যাতে নাকি হিন্দুদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ তার ফলে তাঁরা ভারত‌সহ অন্য দেশে চলে যেতে চাইছেন৷

‘স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়ার প্রধান কারণ হলো, তুলনামূলক উন্নত জীবনযাপনের লক্ষ্য’

This browser does not support the audio element.

এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি-‌শাসিত সরকার রয়েছে৷ সরকারে আসার পর থেকে বহুবার হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলেছে শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি৷ তাদের মেন্টর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পক্ষেও তেমনই দাবি করা হয়েছিল৷ কিন্তু বাস্তবে হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া আজও সেই জটিল হয়ে রয়েছে৷ যদিও সরকার পক্ষের বক্তব্য, গত কয়েক বছরে পাকিস্তান থেকে কয়েক হাজার মানুষ এদেশে এসেছেন৷ সরকার তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে৷ তাদের এদেশে থাকা, ব্যবসা করা, শিশুদের লেখাপড়া করানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে৷

নাগরিকত্ব পেতে লাগে ১৭ বছর!

এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, নাগরিকত্ব দেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিটি কবে পরিবর্তন হবে?‌ গোটা দুনিয়ায় কোনো দেশে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছরের বেশি সময় লাগে না৷ সেখানে ভারতে একজন ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব পেতে কমপক্ষে ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়৷ পরিবারের সব সদস্যদের নাগরিকত্ব পেতে ২৫ বছরের বেশি সময় পার হয়ে যায়৷

দেশভাগের দুঃসহ ক্ষত

02:59

This browser does not support the video element.

নব্বইয়ের দশকে ভারতে এসে গুজরাটের আমেদাবাদে উঠেছিলেন পাকিস্তানি চিকিৎসক ডাঃ রাজেশ মাহেশ্বরী৷ কয়েকবছর আগে তিনি ভারতীয় নাগরিক হতে পেরেছেন৷ এখন তিনি লড়ছেন পাকিস্তান থেকে চলে আসা অন্য হিন্দুদের জন্য৷ ডাঃ মাহেশ্বরী ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‌‘ভারতে ভিনদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান নিয়ম হলো, যে-কোনো ব্যক্তির পিতা, প্রপিতামহের যদি এদেশে জন্ম হয়ে থাকে, তাহলে তাঁকে ৭ বছরের মধ্যে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়৷ তা না হলে এবং ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর কারও জন্ম হলে তাঁকে নাগরিকত্ব দিতে অনেক বেশি সময় লাগে৷'‌'‌

মাহেশ্বরীর দাবি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নাগরিকত্ব আইন পাস হোক সংসদে৷ তাঁর কথায়, ‘‘‌গুজরাট, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ‌সহ যে যে রাজ্যে পাকিস্তানি হিন্দুরা এসে বসবাস করছেন, তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন৷ বর্তমান পদ্ধতিতে পরিবারের প্রধানের নাগরিকত্ব পেতে ১৫-‌১৭ বছর সময়ের প্রয়োজন৷ গোটা পরিবারের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব পেতে কমপক্ষে ২৫ বছর সময়ের প্রয়োজন৷ এটা সঠিক পদ্ধতি নয়৷ এই সমস্যার সমাধানে সংসদে নাগরিকত্ব বিল এনেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ এই বিষয়ক সংসদীয় কমিটি এই সময়সীমাকে সর্বোচ্চ ৫ বছর এবং একসঙ্গে পরিবারের সব সদস্যদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়টি বিবেচনা করছে৷'‌'

২০১৬ সালে‌র ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালে‌র ডিসেম্বর পর্যন্ত দু-‌বছর নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি দেখভালের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের৷ পাকিস্তান থেকে গুজরাটে এসে বসবাস করছেন প্রায় ৫ হাজার অভিবাসী৷ এঁদের মধ্যে ৩ হাজার মানুষ আমেদাবাদ শহরের আশেপাশে বসবাস করছেন৷ বাকি দু-‌হাজার মানুষ রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় রয়েছেন৷ তাঁদের অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন৷

পশ্চিম রাজস্থানের বহু এলাকায় কয়েক দশক ধরে পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুরা বসবাস করছেন৷ তাঁদের এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য সরকারি শিবির খোলা হয়েছিল৷ ফর্ম পূরণ করানো হয়েছিল৷ কিন্তু কেউই এখনও নাগরিকত্ব পাননি৷

আদালতে জমা দেওয়া সিআইডি-‌র এসপি শ্বেতা ধানকরের একটি হলফনামা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ৯৮৬ পাকিস্তানি হিন্দু তাদের দেশে ফিরে গেছেন৷ সূত্রের খবর, গতবছর পাকিস্তানে ফিরে গেছেন ৪৪ জন হিন্দু৷ চলতি বছর এখনও পর্যন্ত সেই সংখ্যা ৫৯৷ ২০১৬ সালে সংখ্যাটা ছিল ৯৷

দাবার ঘুঁটি?

ভারতের নাগরিকত্ব বিষয়ক সংসদীয় যৌথ কমিটির অন্যতম সদস্য পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম৷ পাকিস্তানি হিন্দুরা এদেশে নাগরিকত্ব না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন, এই খবর নিয়ে আলোচনায় ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‌‘‌যে-কোনো দেশ থেকে অন্য কোনো দেশে মানুষ যখন পাকাপাকিভাবে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকে৷ স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়ার প্রধান কারণ হলো, তুলনামূলক উন্নত জীবনযাপনের লক্ষ্য৷ ভারত-‌বাংলাদেশ-‌পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পরেও মূলত সেই কারণেই মানুষ এক দেশে থেকে অন্য দেশে যায়৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এদেশে এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণ হিসেবে দেখা হয়৷'‌'‌ গত একবছর ধরে ভারতের সংসদে নাগরিকত্ব বিলটি ঝুলে রয়েছে৷ দীর্ঘসূত্রিতার পথ নিয়েছে সরকার৷ কেউ বলছেন, নির্বাচনি গিমিক৷ কেউ বলছেন, ভারত-‌পাক সম্পর্ককে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে এই বিল এনেছিল সরকার৷

সেলিমের কথায়, ‘‌‘‌যে কারণেই হোক না কেন কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব আইন আনার কথা বলেছিল৷ সেই বিল সংসদে পেশ হয়েছে৷ তারপর সব চুপচাপ৷ আগে থেকেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশে নিপীড়িত হিন্দুদের এদেশে আনার কথা বলা হয়৷ পাকিস্তান থেকে কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ এদেশে এসেছেন৷ আমরা সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে যখন গুজরাট, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে গিয়েছি, তখন আমরা দেখেছি, গরিব মানুষের পাকিস্তান ছেড়ে চলে আসার কারণ, এদেশে একটু বেশি রোজগারের আশা৷ কিন্তু, তাঁরা মুখে বলছেন, ‘‘‌আমাদের মেয়েদের ওপর অত্যাচার হয়েছে (‌কিছু ঘটনা অবশ্যই ঘটছে)৷ কিন্তু এটা নাগরিকত্ব দেওয়ার কারণ হতে পারে না৷ আসলে এর পেছনে রয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি৷ ভারতের মুসলিমদের পাকিস্তানে পাঠানো আবার পাকিস্তানেও সেদেশের হিন্দুদের ভারতে ফেরত পাঠানোর কথা বলে ভোট আদায় করা হয়৷ এঁরা আসলে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হন৷ যাঁরা পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন, তাঁদের পেশাগত অসুবিধা হচ্ছে৷ সে চিকিৎসক হোক বা সাধারণ মজুর৷ এ থেকেই প্রমাণ হয়, তাঁরা ধর্মীয় কারণে এদেশে আসেননি৷ এসেছিলেন রুটিরুজির কারণে৷''‌

এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া প্রসঙ্গে ইউরোপের উদাহরণ টেনে সেলিম আরও বলেন, ‌‘‌‘মেক্সিকো ও আমেরিকার মধ্যে সীমান্তে বরাবর যে অভিবাসন হয় তা নিয়ে গন্ডগোল দেখা দিয়েছে৷ অভিবাসন বাতিল করার কথা বলছেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সেক্ষেত্রেও অভিবাসন ধর্মীয় কারণে হয়না৷ সেখানে তো দু-‌দিকেই খ্রিস্টান৷ মানুষ আরও ভালোভাবে বাঁচার জন্য যেতে চাইছে৷ যেভাবে ভারত থেকে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ কন্টেনার ভর্তি হয়ে ক্যানাডা যাওয়ার চেষ্টা করে, তার কারণ কী ধর্ম?‌ সেক্ষেত্রেও আছে ভালো জীবনযাপনের হাতছানি৷'‌'‌

উল্লেখ্য, ভারত সরকার ২০১৬ সালে ঘোষণা দিয়েছিল যে, প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ‌ও আফগানিস্তান‌সহ অন্যান্য দেশের হিন্দুরা ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হলে ভারত তাঁদের স্বাগত জানাবে, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে৷

এ বিষয়ে আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ