এদিকে নিউ ইয়র্কে সুগন্ধিযুক্ত ই-সিগারেট নিষিদ্ধের একদিন পর ভারতে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হলো৷
ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বুধবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, "ই-সিগারেটের প্রভাব আজকের যুব সমাজের উপর কীভাবে পড়েছে তা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷''
এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, সম্প্রতি মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য ই-সিগারেট নিষিদ্ধকরণ অধ্যাদেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটা নিষিদ্ধের সুপারিশ করেন৷
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করলে কোনো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে৷ দ্বিতীয়বার এটা অমান্য করলে তখন যদি জেল না-ও দেওয়া হয় তবে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে৷
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতের বিজেপি জোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম একশ দিনের কর্মসূচির অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে ছিল ই-সিগারেট, হিট-নট-বার্ন স্মোকিং ডিভাইস, ভেপ এবং ই-নিকোটিন স্বাদযুক্ত হুকাগুলোর মতো বিকল্প ধূমপানযন্ত্র নিষিদ্ধ করা৷
ধোঁয়া আছে, কিন্তু আগুন নেই৷ আর হ্যাঁ, সিগারেটের মতো দুর্গন্ধও নেই ই-সিগারেটে৷ তাই বলে সত্যিই কি ইলেকট্রনিক সিগারেট একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হয়ে উঠতে পেরেছে? দেখুন আমাদের গ্যালারি৷
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৬৩ সালে হার্বার্ট এ গিলবার্ট নামের এক ব্যক্তি ‘ধোঁয়াহীন তামাকমুক্ত সিগারেট’ নামে একটি ডিভাইসের পেটেন্ট নিলেও সেটি কখনো বাজারে আসেনি৷ আর যাঁকে আজকের ই-সিগারেটের উদ্ভাবক বলা হয়, তিনি চীনা ফার্মাসিস্ট হন লিক৷ যতো দিন যাচ্ছে, এর জনপ্রিয়তাও ততো বাড়ছে৷ ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে ৫০ হাজার ই-সিগারেট বিক্রি হয়েছে, সেখানে ২০১২ সালে বিক্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখে৷
ছবি: Getty Imagesপ্রায় সব ই-সিগারেটের তিনটি অংশ থাকে৷ একদম সামনে থাকে একটি এলইডি লাইট, তার পাশেই ব্যাটারি, যেটি ইউএসবি কানেকটরের মাধ্যমে চার্জ করা যায়৷ এর সঙ্গেই থাকে নিকোটিনের দ্রবণ ও বাষ্প তৈরির যন্ত্র, যাকে বলা হয় অটোমাইজার৷ শেষে থাকে কার্টিজ৷ ব্যাটারির সহায়তায় ওই দ্রবণ বাষ্পে পরিণত হলে কার্টিজে ঠোঁট লাগিয়ে সিগারেটের মতো টেনে নেয়া যায়৷
ই-সিগারেটের বিভিন্ন ধরনের দ্রবণের মধ্যে টোব্যাকো ও টোব্যাকো মেনথল ফ্লেভারই সবচেয়ে জনপ্রিয়৷ এছাড়া স্ট্রবেরি বা আপেল ফ্লেভারের দ্রবণও পাওয়া যায়৷ নিকোটিন কতোটা শক্তিশালী হবে – তার ওপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা মাত্রার দ্রবণ বেছে নিতে পারেন একজন ধূমপায়ী৷ আবার নিকোটিন বা ফ্লেভার নেই – এমন দ্রবণও আছে৷
ছবি: picture alliance/Fredrik von Erichsenএকই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ইলেকট্রনিক সিগার, পাইপ ও মিনি সিগারেটও বাজারে পাওয়া যায়৷ একটি সিগারেট কিনতে খরচ হতে পারে ১০ ইউরোর মতো৷ ই-সিগারেটের জনপ্রিয়তা যতো বাড়ছে, এটি কতোটা স্বাস্থ্যসম্মত – সে বিতর্কও ততো জোরালো হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaধূমপানের সংজ্ঞা হলো – তামাকজাতীয় কিছু পুড়িয়ে শ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া সেবন করা৷ তবে ই-সিগারেটে কোনো কিছু পোড়াতে হয় না৷ এ কারণে এটি সাধারণ তামাকের সিগারেটের চেয়ে কম ক্ষতিকর বলে কেউ কেউ দাবি করেন৷ কিন্তু ই-সিগারেটে নিকোটিন থাকে বলে তাতেও আসক্তি তৈরি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpaসিগারেটের আইন ই-সিগারেটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কি না – সেটি একটি বড় প্রশ্ন৷ যদি তাই হয়, সে ক্ষেত্রে জার্মানিসহ ইউরোপের বহু দেশেই রেস্তোরাঁ আর পাবে ই-সিগারেট সেবন নিষিদ্ধ হয়ে যাবে৷ যদিও এখন ‘টেকনিক্যালি’ তা চলছে৷ আবার যুক্তরাজ্যে ওষুধের দোকানেও ই-সিগারেট বিক্রি হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaই-সিগারেটে ব্যবহৃত দ্রবণে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক থাকে, যেমন প্রোপিলিন গ্লাইকল৷ বর্ণহীন ও প্রায় গন্ধহীন এই জৈব যৌগটি ধোঁয়া তৈরির স্মোক মেশিন, বিভিন্ন ধরনের ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, টুথপেস্ট ও খাবারে ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpaকোনটিতে ক্ষতি কম – সিগারেট, না ই-সিগারেট? বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, ই-সিগারেটে ক্ষতি তুলনামূলক কম৷ কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কোনো গবেষণা এখনো না হওয়ায় ই-সিগারেটের ক্ষতিকর দিকগুলো এখনো অজ্ঞাত৷ সুতরাং সবচেয়ে ভালো হলো ধূমপানই ছেড়ে দেয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দিন দিন ব্যবহারের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া এবং স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি থাকায় গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে সুগন্ধিযুক্ত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়৷
যুক্তরাষ্ট্রে ই-সিগারেট পানে শ্বাসযন্ত্রে গুরুতর জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের ওই বাসিন্দার বয়স ১৭ থেকে ৩৮'র মধ্যে ছিল বলে জানালেও কর্তৃপক্ষ তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি৷
যুক্তরাষ্ট্রে জুড়ে সম্প্রতি ফুসফুসজনিত নানা রোগে ভোগা মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে ই-সিগারেট পানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অভিমত দিয়েছিলেন৷
ইলেকট্রিক সিগারেট, ই-সিগ, ভেপ ইত্যাদি পরিচিত এই সিগারেট ব্যবহারের হার আশঙ্কাজনকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিশোর, তরুণদের মধ্যে বাড়ছে৷
যন্ত্রটিকে ধূমপায়ীরা ধূমপান ছাড়ার উপায় হিসেবে দেখলেও বর্তমানে এটি নতুন ধরনের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলুর এক গবেষণায় দেখা যায়, কম বয়সে ভেপ ব্যবহার করা ছেলেমেয়েদের অধিকাংশই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে সিগারেট মুখে তুলে নিচ্ছে৷
এসআই/কেএম (এফপি, রয়টার্স)