ভারতে এবার জাতিগত সমীক্ষার উদ্যোগ
২৯ জানুয়ারি ২০২০ভারত জুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) নিয়ে তুমুল বিবাদের মধ্যে আদমশুমারি নিয়েও বিতর্ক দানা বেধেছে৷ দেশে জাতি ও সম্প্রদায় ভিত্তিক পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ এর আগে ২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের সরকার গোটা দেশে ‘আর্থ-সামাজিক এবং জাতিগত জনগণনা' করেছে৷ কিন্তু, সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ হয়নি৷
একই ধরনের শুমারি আবার করার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ আর এই উদ্দেশ্য সফল করতে সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে তৈরি হচ্ছে তাদের কয়েকটি ‘বন্ধু' দল৷ শাসক দল বিজেপিও পাশে চাইছে তাদের শরিক ও সহযোগী দলগুলিকে৷ সরকারি ভাবে অবশ্য কেউ কোনও মন্তব্য করেনি৷
আপাতত ঠিক হয়েছে, সংসদে বিজেপি সাংসদরা এই দাবি তুলবেন৷ সমর্থন জানাবেন বিজেডি-সহ আরও কয়েকটি দলের সাংসদরা৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দাবি, জাতি ও সম্প্রদায় ভিত্তিক জনগণনার পরিসংখ্যান জনগণের স্বার্থেই কাজে লাগানো হবে৷ সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে তা ব্যবহার করতে চায় সরকার৷ তবে, পূর্বের মতো পরিসংখ্যান গোপন রাখা হবে নাকি প্রকাশ করা হবে, তা সরকারের বিবেচ্য৷
এদিকে, বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রয়োগ বিধি তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ বিধিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা মানুষরা নাগরিকত্বের আবেদন জানাতে পারবেন৷ জেলাস্তরে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের দপ্তরে এই আবেদন করতে হবে৷ তবে, আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে ধর্মীয় প্রমাণপত্রের প্রতিলিপি৷
অমুসলিম ছয়টি (হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রীষ্টান এবং পারসি) ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্বের আবেদন নেওয়া হবে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সূত্রের খবর, শীঘ্রই এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নাগরিকত্বের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হতে পারে৷
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্লেষক সুজিত রায় বলেছেন, ‘‘জাতি ও সম্প্রদায়ের গণনা আগেও হয়েছে৷ সরকার তা জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি৷ এবার ২০২১ সালের জনগণনার সঙ্গে জাতিগত সমীক্ষা অত্যন্ত জরুরি৷ তপশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে৷ কিন্তু, আমরা জানি না তাদের সংখ্যা কত৷ এই হিসেব সবার জানা উচিত৷ সংরক্ষণ দেওয়া হোক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে৷''
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একদিকে জাতি ও সম্প্রদায় ভিত্তিক জনগণনার প্রস্তুতি, অন্যদিকে নাগরিকত্বে ধর্মের প্রমাণপত্র, এই দুই নিয়ে আবারও উত্তাল হতে চলেছে দেশের রাজনীতি৷ তবে, পক্ষে ও বিপক্ষে উভয় যুক্তিই সামনে আসছে৷ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘‘জনগণনার এবং জাতিগত সমীক্ষা মোটেই এক বিষয় নয়৷ মোদী সরকার সবকিছুতেই জাতিগত বিভাজনে বিশ্বাসী৷ তাই গোপনে এমন সমীক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে৷''
অন্যদিকে, এর মধ্যেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করার দাবি সম্বলিত প্রস্তাব পাশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, পাঞ্জাব, রাজস্থান বিধানসভায়৷ এছাড়াও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও বিধানসভায় সিএএ বাতিলের প্রস্তাব পাশ করতে চলেছেন৷ এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকত্বের আবেদনে ধর্মীয় প্রমাণ পেশের উল্লেখ করা হলে দেশের রাজনীতিতে তা নতুন মোড় আনতে পারে৷ পাশাপাশি জনগণনার মাধ্যমে জাতি ও সম্প্রদায় ভিত্তিক পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে তা প্রকাশ করা হলে তার বিরোধিতা হতে পারে৷
সংসদে বাজেট অধিবেশন শুরু হবে ৩১ জানুয়ারি৷ প্রথম পর্যায়ে চলবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ পয়লা ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ৷ সম্প্রতি ওড়িশার বিজু জনতা দলের সাংসদীয় কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এনপিআর ফর্ম থেকে ১৩ (২) অনুচ্ছেদটি বাতিল করার দাবি জানাবেন তাঁরা৷ সংসদে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হবে ২০২১-এর জাতি ভিত্তিক জনগণনা প্রস্তুত করার জন্য৷ দলের সাংসদ পিনাকী মিশ্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে তারা রাজি হয়েছে৷''