জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও তাপমাত্রা আগের চেয়ে বাড়ছে৷ তীব্র গরম থেকে বাঁচতে মানুষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের উপর নির্ভর করছে৷ অথচ এই যন্ত্রই পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াতে ভূমিকা রাখে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালে রাজস্থানের ফালোদি শহরে তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল – যা একটি রেকর্ড৷ এমন অসহনীয় গরম থেকে মুক্তি পেতে ভারতের নাগরিকরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) যন্ত্রের উপর নির্ভর করেন৷ ফলে ৩০ বছর আগে যেখানে ভারতে এসি ব্যবহারের হার প্রায় শূন্যের কোটায় ছিল, সেখানে আজ প্রায় পাঁচ শতাংশ মানুষ এসি ব্যবহার করছেন৷ সংখ্যার হিসেবে সেটি প্রায় ৩০ মিলিয়ন ইউনিট৷
পরিসংখ্যান বলছে, গত এক দশকে ভারতে এসির বাজারে প্রবৃদ্ধির হার দশ শতাংশের বেশি ছিল৷ এছাড়া মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এসি চালানোর মতো বিদ্যুতের জোগান থাকায় ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে ব্যবহৃত এসি ইউনিটের সংখ্যা একশ কোটি হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
অর্থাৎ গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষ বিশ্বকে আরও গরম করে তুলবে৷ কারণ এসি তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণ এবং সেটি চালাতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উৎস, সেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ ভারতে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের দুই-তৃতীয়াংশ আসে কয়লা আর গ্যাস থেকে৷ যদিও সে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার বাড়ছে, তবুও আরও কয়েক দশক জীবাশ্ম জ্বালানির উপরই ভারতের নির্ভর করতে হবে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে৷
এই অবস্থায় ভারতের সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ী এসি ব্যবহারে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে৷ কিন্তু এমন এসির দাম সাধারণত বেশি হয়ে থাকে৷ তাছাড়া ভারতের মতো দেশে এসি নষ্ট হয়ে গেলে সেটি ফেলে না দিয়ে মেরামতের দিকেই মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি৷
গ্রীষ্মের গরম যেভাবে মোকাবিলা করে তারা
হ্যাঁ, জার্মানিতেও গরম পড়ে৷ মাঝেমাঝে তা অসহনীয় পর্যায়েও পৌঁছায়৷ এই ছবিঘরে থাকছে জার্মানিতে মানুষ এবং প্রাণিরা কিভাবে গরমে মানিয়ে চলে, সে সম্পর্কে কিছু তথ্য৷ ভালো কথা, জার্মানদের বাড়িতে কিন্তু এসি নেই!
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
সাঁতারের মৌসুম
বার্লিনে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সারব্রুকেনে ৩৭ ডিগ্রি – জার্মানিতে এসে গেছে গ্রীষ্মকাল৷ এখানে দাবদাহের আরেক অর্থ হচ্ছে সুইমিং পুলগুলোর ভালো ব্যবসা৷ আর সেই ব্যবসা শীঘ্রই আরো ভালো হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে৷ জার্মানির অনেক রাজ্যে গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হচ্ছে, ফলে শিক্ষার্থীদের ভিড় আরো বাড়বে সুইমিং পুলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Kahnert
হ্যাট হারাবেন না
প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে চাইলে কিছু আগাম সতর্কতা নিতে হবে আপনাকে৷ তার একটি হচ্ছে, যতটা সম্ভব ছায়ায় থাকা৷ এ ক্ষেত্রে শিশুদের এবং টাক মাথার মানুষদের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে হ্যাট৷ বাকিদেরও এটা পরা উচিত৷ হ্যাট পরলে সানস্ট্রোক থেকে বাঁচা যায়৷ মাথায় সরাসরি সূর্যের আলো দীর্ঘসময় ধরে পড়লে এটা হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
বয়োজ্যেষ্ঠদের ঝুঁকি
বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠদের সতর্ক থাকতে হবে৷ তাঁদের মধ্যে অনেকেরই তৃষ্ণার অনুভূতি কমে গেছে, ফলে তাঁরা পর্যাপ্ত পানি পান করেন না৷ ফলে গরম বাড়লে তাঁদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নানা রকমের জটিলতা দেখা দিতে পারে৷ জার্মানিতে ২০০৩ সালের দাবদাহে সাত হাজার মানুষ মারা যায়, যাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন প্রবীণ৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Gollnow
ঠাণ্ডা থাকুন
চলতি গ্রীষ্ম ২০০৩ সালের মতো গরম নয়৷ সেই বছর কার্লসরুয়েতে তাপমাত্রা ৪০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছিল৷ তবে এ বছরও গরম অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়তে পারে৷ ফলে ঠাণ্ডা থাকার যে কোনো সুযোগই আপনার নেয়া উচিত৷ নিরাপদ থাকতে গোসলের পরে কিংবা সুইমিং পুলে হাঁটাহাঁটির সময় সানস্ক্রিন ক্রিম লাগাতে ভুলবেন না৷
ছবি: Imago/epd/S. Arend
লিও গোসল করতে ভালোবাসে
প্রাণিদের মধ্যে যেগুলোর শরীরে লোমের মোটা আস্তরণ আছে, তাদের চামড়া রোদে পোড়ার ঝুঁকি নেই৷ তবে তাদেরও গরম লাগে৷ প্রাণিরা গরম থেকে বাঁচতে তাই ছায়ায় সময় কাটায় বা ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করে৷
ছবি: Getty Images/C. Sung-Jun
বরফজমাট খাবার
প্রচণ্ড গরমের সময় চিড়িয়াখানায় থাকা পশুদের বরফে জমে থাকা মাংস খেতে দেয়া হয়৷ ছবিতে একটি বাঘকে মুরগির মাংস খেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/C. Sung-Jun
আইসক্রিম ভালোবাসে জার্মানরা
আইসক্রিমে জার্মানদের প্রিয় ফ্লেভার হচ্ছে ভ্যানিলা বা স্ট্রবেরি৷ গতবছর একজন জার্মান গড়ে প্রায় আট লিটার করে আইসক্রিম খেয়েছেন৷ আর এর অধিকাংশই খাওয়া হয়েছে গ্রীষ্মকালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Rüsche
দাবানলের ঝুঁকি
গরমের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেলে বনরক্ষীদের চিন্তাও বেড়ে যায়৷ দীর্ঘ সময় ধরে আবহাওয়া গরম ও শুষ্ক থাকলে দাবানলের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ পর্তুগালে গত কয়েকদিনে বনে আগুন লাগার ঘটনায় কমপক্ষে ৬৪ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ জার্মানিতেও এ রকম প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্তুগালের মতো আগুনের পরিধি বাড়ার সুযোগ জার্মানিতে নেই, কেননা, এখানকার বনগুলো ছোট ছোট এবং বিচ্ছিন্ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Wolf
চা পান করুন
বাইরে যখন গরম, তখন আপনার শরীরের ভেতরেও গরমের দরকার আছে৷ হ্যাঁ, শুনতে অস্বাভাবিক শোনালেও কুসুম গরম চা আপনাকে গরমে স্বস্তি দিতে পারে৷ চা পান করলে আপনার শরীরে হালকা ঘাম হতে পারে, যা উপকারী৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
পোশাক নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ
চা পান করার পরও যদি আপনার গরম লাগে তাহলে বুঝতে হবে, সম্ভবত আপনি ভুল পোশাক পরেছেন৷ গ্রীষ্মের জন্য আদর্শ পোশাক হচ্ছে হালকা রংয়ের ঢিলাঢালা কাপড়৷ তখন আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে৷ লং স্লিভ ব্লাউজ এবং ভারী জিন্স গ্রীষ্মের জন্য আদর্শ নয়৷