প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতে এসেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। ফ্রান্সে ভারতীয় ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিরাট ঘোষণা।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার সকালে এক্স হ্যান্ডেলে মাক্রোঁ লিখেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজার ভারতীয় ছাত্র ফ্রান্সে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। একই পোস্টে মাক্রোঁ লিখেছেন, ফ্রান্স এই লক্ষ্যপূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রজাতন্ত্র দিবসে মাক্রোঁর এই উপহারে স্বাভাবিকভাবেই খুশি ভারতীয় ছাত্ররা।
২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস। ১৯৫০ সালে এই দিনেই ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। প্রতি বছরই এই দিনে রাজধানী দিল্লির রাজপথে কুচকাওয়াজ হয়। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় পৃথিবীর কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে। এবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁকে। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই ভারতে চলে আসেন মাক্রোঁ।
দিল্লি নয়, প্যারিস থেকে মাক্রোঁ প্রথম এসে নামেন রাজস্থানে। জয়পুরে আমের দুর্গ ঘুরে দেখেন তিনি। দেখেছেন যন্তর মন্তরও। দিল্লির নয়, জয়পুরের। রাজা মান সিং যে মাণমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি। একাধিক বিষয় নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। এরপরেই শুক্রবার সকালে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আগে এই ঘোষণা করেন মাক্রোঁ। মাক্রোঁ জানিয়েছেন, আগে ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলে ফরাসি ভাষা শিখতে হতো। কিন্তু এখন আর তা বাধ্যতামূলক নয়। ফরাসি না জেনেও ফ্রান্সে পড়তে যাওয়া যাবে। উচ্চশিক্ষায় ভারত এবং ফ্রান্স একসঙ্গে আরো অনেক কাজ করবে বলেও নিজের এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন মাক্রোঁ।
এদিন প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান মাক্রোঁ। কুচকাওয়াজ চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে বেশ কিছু বিষয়ে জানতেও চান তিনি। বছরকয়েক আগে ফ্রান্সের থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়েছে ভারত। এদিনের কুচকাওয়াজে সেই বিমানও অংশ নিয়েছিল। যা দেখে হাততালি দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
এর আগে গত জুলাই মাসে বাস্তিল ডে-র প্যারেডে ফ্রান্স নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীকে। সেখানে গিয়েই প্রজাতন্ত্র দিবসে মাক্রোঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন মোদী। বস্তুত, মাসকয়েকের মধ্যেই ভারতে জাতীয় নির্বাচন। তার আগে সম্ভবত এটিই মোদীর সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতার শেষ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই)
দেখুন ২০২২ সালের ছবিঘর...
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী মোদীর তিনদিনের ইউরোপ সফরের প্রথম গন্তব্য ছিল জার্মানি এবং শেষ গন্তব্য ফ্রান্স। প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করলেন মোদী।
ছবি: Mustafa Yalcin/AA/picture alliance
'দুই বন্ধুর বৈঠক'
জার্মানি থেকে ডেনমার্ক হয়ে প্যারিস পৌঁছান মোদী। মাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক হয়। দেখা হতেই মাক্রোঁ ও মোদী পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন। বৈঠকের পর মোদী জানান, 'দুই বন্ধুর সাক্ষাৎ হলো'। মাক্রোঁকে ভারত সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন মোদী।
ছবি: Gonzalo Fuentes/REUTERS
রাশিয়ার সমালোচনা করলেন না মোদী
মোদী-মাক্রোঁ বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে কথা হয়েছে। বৈঠকের পর জারি করা যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশই ইউক্রেনে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত। দুই দেশই মানবিক সংকট নিয়ে চিন্তিত। রাশিয়া ও ইউক্রেন আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যা মেটাক। মানুষের কষ্ট দূর হোক। কিন্তু ভারত তার আগের অবস্থান বজায় রেখেছে। মোদাীও রাশিয়ার নিন্দা বা সমালোচনা করেননি।
ছবি: Francois Mori/Pool/AP/picture alliance
ফ্রান্সের নিন্দা
ফ্রান্স অবশ্য ইউক্রেনে রাশিয়ার বাহিনীর বেআইনি ও অন্যায্য আগ্রাসনের নিন্দা করেছে। তবে ভারত ও ফ্রান্স দুই দেশই ইউক্রেনে আগ্রাসনের ফলে খাদ্যসংকট হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। কারণ, ইউক্রেনই বিশ্বের অন্যতম প্রধান গম উৎপাদক দেশ। এই সংঘাতের ফলে তাদের গম উৎপাদনে বিপুল প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ছবি: Raphael Lafargue/abaca/picture alliance
ফ্রান্সের বক্তব্য
দুই নেতার বৈঠক শুরুর আগেই মাক্রোঁর অফিসের তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বলবেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রতিক্রিয়া ইউরোপ ছাড়িয়ে এশিয়াতেও পড়বে। রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত তেল ও অস্ত্র কেনে। ভারতকে রাশিয়ার কাছ থেকে সরিয়ে আনার জন্য ফ্রান্স চেষ্টা করবে। তারা যাতে অন্য জায়গা থেকে তেল ও অস্ত্র পায়, তার ব্যবস্থা করা হবে।
ছবি: Mustafa Yalcin/AA/picture alliance
মোদী-শলৎস বৈঠক
মোদীর ইউরোপ সফর শুরু হয়েছিল জার্মানি থেকে। তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হয়েছে। শলৎসের সঙ্গে বৈঠকের পর মোদী বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে কেউ জিতবে না, সকলেই হারবে। কিন্তু জার্মানিতেও মোদী রাশিয়ার বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি।
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
সহযোগিতা বাড়ানো হবে
মোদী ও শলৎস দুজনেই বলেছেন, ভারত ও জার্মানির মধ্যে সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরো বাড়ানো হবে। দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি সই হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, গ্রিন এনার্জির ক্ষেত্রে জার্মানি ভারতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করবে। তারা প্রযুক্তি দেবে।
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
ডেনমার্কে মোদী
জার্মানি থেকে মোদী যান ডেনমার্ক। সেখানে নর্ডিক দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার আশা, যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য রাশিয়াকে প্রভাবিত করবেন মোদী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেখানেও বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ও কূটনৈতিক প্রয়াসের ফলে যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে। তবে ডেনমার্কে মোদীর লক্ষ্য ছিল, ভারতে নর্ডিক দেশগুলির বিনিয়োগ বাড়ানো।