কংগ্রেস জোটের খতিয়ান
২৩ মে ২০১৩মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় কংগ্রেস-জোট সরকারের চার বছর পূর্ণ হলো৷ আগামী বছরে সাধারণ নির্বাচনের আগে এটাই সরকারের শেষ রিপোর্ট কার্ড৷ সরকারের বিগত বছরগুলি গেছে এক টালমাটাল সময়ের মধ্য দিয়ে৷ একের পর এক দুর্নীতিতে সরকার জর্জরিত৷ জনমানসে একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি৷ সরকারের কথিত ব্যর্থতাকে হাতিয়ার করে সরকারকে বিদ্ধ করতে কসুর করেনি বিরোধী দলগুলি সংসদের ভেতরে ও বাইরে৷
বিরোধীদের আক্রমণকে ভোঁতা করতে বুধবার প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে দেশের সামনে তুলে ধরলেন সরকারের কাজকর্মের সাফল্যের খতিয়ান৷ যেমন, দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে ভরতুকির টাকা নগদে সরাসরি হস্তান্তর করা, ১০০ দিনের কাজ সুনিশ্চিত করা, মুদ্রাস্ফীতি চলতি বছরে হয়েছে নিম্নমুখী৷
প্রধানমন্ত্রী ফিরিস্তি অনুযায়ী, মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি স্কিমে প্রায় পাঁচ কোটি পরিবারের কর্মসংস্থান হয়েছে৷ মিড-ডে মিল স্কিমে ১২ লাখ প্রাথমিক স্কুলের ১০ লাখ পড়ুয়া খাবার পাচ্ছে৷ গত ৯ বছরে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে পাঁচ বছর৷ জননী শিশু সুরক্ষা প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন ১ কোটি ২০ লাখ গর্ভবতী মহিলা৷ আনা হয়েছে দুর্নীতি বিরোধী লোকপাল আইন, লোকায়ুক্ত আইন, সংসদে পেশ করা হয়েছে খাদ্যসুরক্ষা বিল ও জমি অধিগ্রহণ বিল৷ মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ দমনে বলবৎ করা হয়েছে সংশোধিত ফৌজদারি বিধি৷
সাফল্যের দাবি নস্যাৎ করে বিরোধী দল বিজেপি মনে করে, মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, আসলে তিনি না সরকারের নেতা, না দলের নেতা৷ মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন, কিন্তু সমাধানের জন্য তাকিয়ে থাকেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর দিকে৷ কংগ্রেস-জোট সরকার বিভাজিত৷ জোট সরকারের জন্য দরকার শক্তিশালী নেতা৷ অন্যদিকে নানা কেলেঙ্কারিতে সরকার জেরবার৷ মুদ্রাস্ফীতি আকাশছোঁয়া৷ বিনিয়োগ বাড়েনি৷ আর্থিক সংস্কার স্রেফ নামেই, কাজে কিছু হয়নি৷ পররাষ্ট্র নীতি দুর্বল৷ তৃণমূল কংগ্রেস এবং ডিএমকে-র মতো শরিকদলগুলি জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেছে৷ সরকার কার্যত হয়ে পড়েছে সংখ্যালঘু৷
ছোট এবং আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে নামার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি মনে করে, তৃতীয় ফ্রন্টের কোনো অস্তিত্ব নেই৷ উল্লেখ্য, সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়েম সিং-এর তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার চেষ্টা আপাতত ভেস্তে গেছে৷
সম্প্রতি এক জনমত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বর্তমানে একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া বইছে৷ ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর কংগ্রেস জোট সরকারের পায়ের নীচের মাটি ক্রমশই আলগা হয়ে আসছে৷ কয়েক মাসের মধ্যে যদি ভোট হয়, তাহলে কংগ্রেসের ঝুলিতে যাবে গতবারের চেয়ে অনেক কম আসন৷ গত নির্বাচনে তারা পেয়েছিল ২০৬টি আসন৷
বিজেপিও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই৷ একা সরকার গড়া তো দূরের কথা – শরিক দল জোটাতেও মুশকিল হবে, যদি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরা হয়৷ ২০০৪ সালের বিজেপি-জোটের শরিক দলগুলি বেঁকে বসতে পারে৷ যেমন জেডি (ইউ) নেতা নীতিশ কুমার৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, আঞ্চলিক দলগুলি এবং নির্দল প্রার্থীরা আগামী সংসদীয় ভোটে বড় ভূমিকা নিতে পারে৷
একথা ঠিক, সমীক্ষার ফলাফল সবসময় সঠিক হয়না৷ তবে সমীক্ষার একটা বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে৷ হালের কর্ণাটক বিধানসভা ভোটের সমীক্ষার ফলাফল মিলে গিয়েছিল৷