জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে ভারতে কনডম একেবারেই জনপ্রিয় নয়৷ কিন্তু জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে যৌনরোগের প্রকোপ৷ তাই এর ব্যবহার বাড়াতে এবার ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার৷ চালু করা হয়েছে অনলাইনে কনডম বিক্রির ব্যবস্থা৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের অনেক এলাকায় জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বেশিরভাগ মানুষ সচেতন নন৷ সরকারি নানা প্রচার-প্রচারণার পরও গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহারে তেমন কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়নি৷ আগামী ছ'বছরে দেশটির জনসংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আশংকা রয়েছে৷ এখন ভারতের জনসংখ্যা ১৩২ কোটি, চীনের বর্তমান জনসংখ্যা ১৩৭ কোটি৷ ২০৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির জনসংখ্যা ১৭০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ইউরোপের দেশগুলোর ৩০ ভাগ মানুষ যেখানে কনডম ব্যবহার করে, ভারতে সেখানে ৬ ভাগেরও কম মানুষ কনডম ব্যবহার করে৷ অথচ বিশ্বে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর দিক থেকে ভারতের অবস্থান তৃতীয়৷ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত আট বছরে কমডম ব্যবহারের হার ৫২ শতাংশ কমে গেছে৷ ভ্যাসেক্টমি করার সংখ্যাও কমে গেছে ৭৩ ভাগ৷ এছাড়া গর্ভনিরোধক পিলের ব্যবহারও কম৷
ভারতের জনস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি শ্রীনাথ রেড্ডি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এই ‘ট্রেন্ড' আসলেই খুব উদ্বেগজনক৷ নিরাপদ যৌন সম্পর্কের পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে আমাদের আরো প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে৷''
গর্ভনিরোধক পদ্ধতি সম্পর্কে ৮টি ভুল ধারণা
গর্ভনিরোধক বড়ি, পিল, কনডোম, কপার টি- এগুলো জন্মনিয়ন্ত্রণের নানা পদ্ধতি৷ কিন্তু এগুলো সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে আটটি তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/ANP XTRA
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে ওজন বাড়ে
অনেক বছর আগে যখন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বাজারে আসে, তখন তাতে এমন কিছু পদার্থ ছিল, যার কারণে মেয়েরা সহজে মুটিয়ে যেতো৷ কিন্তু আধুনিক গর্ভনিরোধক বড়িতে এ ধরনের কোনো সমস্যার ঝুঁকি নেই৷ তারপরও অবশ্য অনেকেই প্রাচীন ধারণাটিই পোষণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Stockhoff
কন্ডোমের ব্যবহার যৌন আনন্দ কমায়
কন্ডোম ভীষণ পাতলা পর্দা দিয়ে তৈরি আর এতে আছে লুব্রিকেন্ট, তাই এর উপস্থিতি অনুভবই করা যায় না৷ কিন্তু অনেকেরই ধারণা, এতে যৌন আনন্দ অনেকটা কমে যায়, যা একেবারেই ভুল৷ বরং লুব্রিকেন্টের উপস্থিতি আনন্দকে আরো বাড়াতে সাহায্য করে৷
ছবি: picture alliance/chromorange
পিল সন্তান ধারণ ক্ষমতা কমায়
অনেকের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে গর্ভনিরোধক বড়ি বা পিল গ্রহণ করলে সন্তানধারণ ক্ষমতা কমে যায়৷ এটাও ভুল৷ আপনি যখন সন্তান নিতে চাইবেন, তখন বড়ি সেবন বন্ধ করে দিলেই হবে৷ কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Brichta
দু’টি কন্ডোমে অতিরিক্ত সুরক্ষা
জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কন্ডোমই যথেষ্ট৷ দু’টি কন্ডোম ব্যবহারে হিতে বিপরীত হতে পারে৷ অর্থাৎ কন্ডোম দু’টি ফেটে গিয়ে দেখা দিতে পারে বিপত্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gambarini
স্তন্যদানের সময় বড়ি খাওয়া উচিত নয়
এটি একেবারেই ভুল ধারণা৷ আপনি যদি গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকতে চান, তবে নিয়মিত আপনাকে পিল সেবন করতে হবে৷ শিশু বুকের দুধ খেলে তা গর্ভনিরোধের কাজ করবে, এমনটা ভাবা ভুল৷
ছবি: Fotolia/evgenyatamanenko
মাসিকের সমস্যায় গর্ভনিরোধক বড়ি কাজে দেয় না
এমন ধারণা বা বিশ্বাসের পক্ষেও কোনো যুক্তি নেই৷ অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা ‘মাসিক’ অনিয়মিত হলে চিকিৎসক প্রায় সময়ই পিল সেবনের পরামর্শ দেন৷ এতে ‘মাসিক’ সমস্যায় সমাধান পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কন্ডোম শুধু পুরুষরাই ব্যবহার করতে পারে
বাজারে কিন্তু নারীদের কন্ডোমও পাওয়া যায়৷ এটাও পুরুষদের কন্ডোমের মতোই৷ তবে তা নারীদের যোনিতে স্থাপন করতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/ANP XTRA
আই পিল এ গর্ভপাতের সম্ভাবনা
আই পিল বা এমারজেন্সি পিল ব্যবহার করলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে অনেকের ধারণা, যা ভুল, কেননা, এমারজেন্সি পিল সহবাস করার ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রহণ করতে হয়৷ আর আপনি যদি গর্ভবতী হন, তাহলে নিশ্চয়ই এটা ব্যবহার করবেন না৷ সে অবস্থায় ব্যবহার করলে কোনো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
সামাজিক কুসংস্কার এবং গোপনীয়তা
সামাজিক কুসংস্কার এবং দোকান থেকে কনডম কেনার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ এছাড়া প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে যৌনস্বাস্থ্য এবং নিরাপদ যৌন সম্পর্কের বিষয়ে সচেতন নয় মানুষ৷ এগুলো নিয়ে তারা খোলাখুলি আলোচনাও করে না৷ এছাড়া বিয়ের আগে যৌনমিলনকে আজও প্রথা বিরুদ্ধ মনে করা হয় ভারতে৷ ফলে তরুণ-তরুণীরা অনিরাপদ যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়৷
সরকার সম্প্রতি কনডম বিক্রির জন্য একটি অনলাইন সেবা চালু করেছে৷ এতে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে৷ এ পর্যন্ত অনলাইনে ১০ লাখ মানুষ কনডমের অর্ডার দিয়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইনে এত সংখ্যক মানুষের অর্ডারই প্রমাণ করে ভারতীয়রা দোকানে গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রক কিছু কিনতে লজ্জা পান৷ সাবেক স্বাস্থ্য সচিব জে. ভি. আর. প্রসাদ রাও ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জনগণকে সচেতন করে তুলতে হলে আরও উদ্যোগ এবং মার্কেটিং দরকার৷''
এইচআইভি জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে কাজ করছেন ডাক্তার প্রীতি কুমার৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে যদি কনডম ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ে, তাহলে তা নির্দ্বিধায় গর্ভনিরোধে সাহায্য করবে, পাশাপাশি কমাবে যৌনরোগের বিস্তার৷''
মুরালি কৃষ্ণান/এপিবি
এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷
সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসঘাতক কারা?
নারী কখন অসতী হন? পুরুষ কেন তাঁর স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেন – সেটা কি তাঁদের জাতি বা দেশের ওপর নির্ভর করে? কনডম তৈরির আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘ডিউরেক্স’ কিন্তু তাদের এক সমীক্ষায় এমনই একটি তালিকা তৈরি করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময় তাদের পার্টনারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে৷ হ্যাঁ, এমনটাই বলছে সমীক্ষার ফলাফল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেনমার্ক
ডেনমার্কের প্রায় ৪৬ শতাংশ নারী-পুরুষ জীবনে অন্তত একবার হলেও জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ছলনা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইটালি
প্রাচীন সভ্যতা আর আধুনিকতার পাশাপাশি মনোরম সমুদ্রসৈকত, আলপাইন লেক, আল্পস পর্বতমালার সমন্বয়ে গঠিত ইটালি পর্যটকদের জন্য এক অনন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য৷ কিন্তু সেই ইটালিরও প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ বিশ্বাসঘাতক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানি
ইটালির মতো কর্মনিষ্ঠ জার্মানদের মধ্যেও ছলনার প্রবণতা প্রবল৷ এ দেশেরও মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ নারী-পুরুষ জীবনে নিজ পার্টনারকে ঠকিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Joker/A. Stein
ফ্রান্স
ফ্রান্স বললেই মনে পড়ে ভালোবাসার ‘পারি’, মানে প্যারিসকে৷ অথচ এই ভালোবাসা কিন্তু সারা জীবনের জন্য কাউকে ভালোবাসা না-ও হতে পারে৷ একই সময়ে একাধিক মানুষের প্রতি ভালোবাসা কোনো অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড নয় ফরাসিদের কাছে৷ আর সে কারণেই হয়ত ফরাসিদের ৪৩ শতাংশ মানুষ নিজের সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাসী নয়৷
ছবি: Reuters
নরওয়ে
নরওয়ের মোট ৪১ শতাংশ নারী-পুরুষ দাম্পত্য সম্পর্কে ছলনা বা মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয় বলে জানাচ্ছে ‘ডিউরেক্স’-এর এই সমীক্ষা৷
ছবি: picture alliance/ dpa
বেলজিয়াম
বেলজিয়ামের ৪০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময় তাদের পার্টনারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে৷