তাহেলকা প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল৷ নারদ তৃণমূল নেতাদের প্রোমোশন আটকাতে পারেনি৷ এটাই ছিল ম্যথুর আক্ষেপ৷
বিজ্ঞাপন
'গলি গলি মে শোর হ্যায়, জর্জ ফার্নান্ডেজ চোর হ্যায়’৷ দেশের অলি-গলি ছেয়ে গিয়েছিল এই স্লোগানে৷ টেলিভিশনের পর্দায় তখনো প্রতিদিন সান্ধ্য বিচারসভা বসার চল শুরু হয়নি৷ কিন্তু আপাত মেদুর টিভি শো তখন রীতিমতো ফুটন্ত৷ দেশের সামরিক কর্তারা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা এবং নেতা-মন্ত্রীরা কি সবাই চোর?
ঘটনার সূত্রপাত সদ্য তৈরি হওয়া একটি পত্রিকার গোপন স্টিং অপারেশন নিয়ে৷ যেখানে গোপন ক্যামেরার সামনে ঘুস নিতে দেখা গিয়েছিল একাধিক নেতা এবং কর্মকর্তাকে৷ রিপোর্টাররা ভূয়া কোম্পানির প্রতিনিধি সেজে সামরিক অফিসার এবং নেতা-মন্ত্রীদের কাছে গিয়েছিলেন৷ সেনা বাহিনীর জন্য থারমাল ক্যামেরা বিক্রি করতে চেয়েছিলেন তারা৷ আর তাতেই দেখা যায়, নেতা-মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা কীভাবে তাদের কাছে ঘুস চাইছেন৷ ওই ঘটনার প্রায় এক দশক পরে তৎকালীন বিজেপি সভাপতি বঙ্গারু লক্ষ্মণকে অভিযুক্ত ঘোষণা করেছিল আদালত৷ তার জেলও হয়েছিল৷ কিন্তু শারীরিক কারণে পরে তিনি জামিন পান৷ কিছুদিনের মধ্যে তার মৃত্যুও হয়৷
তাহেলকা ওই স্টিং অপারেশনের নাম দিয়েছিল 'অপারেশন ওয়েস্ট এন্ড'৷ গোটা দেশকে ওই স্টিং অপারেশন কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ বিরোধীদের চাপে, সরকারের চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ৷ পরে অবশ্য তিনি ওই ঘটনায় গঠিত বিশেষ কমিশনের কাছে ক্লিন চিট পেয়েছিলেন৷ তবে তার সেই ক্লিন চিট পাওয়া নিয়েও প্রচুর জলঘোলা হয়েছিল৷ ফার্নান্ডেজের রাজনৈতিক কেরিয়ার কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছিল ওই ঘটনায়৷
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগে ভূমিকা রাখা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা ‘ওয়াটারগেট কেলেংকারি’৷ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার দুই সাংবাদিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পদত্যাগে ভূমিকা রেখেছিল৷
ছবি: Simon & Schuster
ঘটনার শুরু
১৯৭২ সালের ১৭ জুন ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট ভবনে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কমিটির সদরদপ্তরে পাঁচ ব্যক্তি অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করেন৷ তাদের মধ্যে একজন সিআইএ-র সাবেক কর্মকর্তা জেমস ম্যাকর্ড৷ ঘটনার সময় তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনি প্রচারণার জন্য গঠিত সংস্থায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন বলে ১৯ জুন জানায় ওয়াশিংটন পোস্ট৷ তবে নিক্সনের রি-ইলেকশন ক্যাম্পেন প্রধান জন মিচেল তা অস্বীকার করেন৷
ছবি: Paul J. Richard/AFP/GettyImages
চোরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিক্সন ক্যাম্পেনের টাকা
ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন ১৯৭২ সালের ১ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানান, ডেমোক্রেটিক পার্টির অফিসে ঢোকার চেষ্টা করা এক ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার ডলারের ক্যাশিয়ার্স চেক পাওয়া গেছে৷ চেকটি আপাতদৃষ্টিতে নিক্সনের রি-ইলেকশন ক্যাম্পেনের বলে জানায় পত্রিকাটি৷
ছবি: washingtonpost.com
ডেমোক্রেটদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ
বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন ১৯৭২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে জানান, অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জন মিচেল নিক্সনের রিপাবলিকান দলের একটি গোপন তহবিল নিয়ন্ত্রণ করতেন, যেটা ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য জোগাড়ে ব্যবহার করা হতো৷
ছবি: washingtonpost.com
ওয়াটারগেট ঘটনার সঙ্গে নিক্সন ক্যাম্পেনের সম্পৃক্ততা
বব উডওয়ার্ড (ডানে) ও কার্ল বার্নস্টিন (বামে) ১০ অক্টোবর জানান, ওয়াটারগেটের ব্রেক-ইন ছিল নিক্সনের রি-ইলেকশন ক্যাম্পেনের পক্ষ থেকে চালানো রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি ও ডেমোক্রেটদের নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা তৈরির চেষ্টার অংশ৷ অর্থাৎ ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনি প্রচারণা সম্পর্কে তথ্য পেতে তাদের অফিসের টেলিফোনে আড়িপাতার যন্ত্র বসাতে ঐ পাঁচ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন নিক্সন ক্যাম্পেনের কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘ডিপ থ্রোট’
বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন তাদের কয়েকটি প্রতিবেদনে সূত্রের নাম উল্লেখ করেননি৷ পরে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত তাদের ‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’ বইতে ‘ডিপ থ্রোট’ নামে একটি সূত্রের কথা জানানো হয়৷ সব সূত্রের মধ্যে এই সূত্রটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলা জানা যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কিন্তু কে ছিলেন ‘ডিপ থ্রোট’?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উডওয়ার্ডকে তথ্য দিয়েছিলেন ‘ডিপ থ্রোট’৷ তাই উডওয়ার্ডও ডিপ থ্রোটের পরিচয় গোপন রেখেছিলেন৷ তবে প্রতিবেদনগুলোতে গোপন সব তথ্যের উপস্থিতি দেখে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ডিপ থ্রোটের পরিচয় জানতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন৷ কিন্তু পারেননি৷ অবশেষে নিক্সনের পদত্যাগের ৩১ বছর পর ২০০৫ সালে জানা যায় এফবিআই-এর সেই সময়কার দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি মার্ক ফেল্ট ছিলেন সেই ডিপ থ্রোট৷ ফেল্টের বয়স তখন ৯১৷
ছবি: picture-alliance/FBI Collection at NARA
কেন ডিপ থ্রোট তথ্য ফাঁস করেছিলেন?
ফেল্টের পরিবারের দাবি, নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের কারণে ফেল্ট তথ্য ফাঁস করেন৷ এদিকে, উডওয়ার্ড তার ‘দ্য সিক্রেট ম্যান’ বইয়ে জানান, ১৯৭২ সালের মে মাসে এডগার হুভারের মৃত্যুর পর ফেল্ট মনে করেছিলেন, ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকায় এবার তাকে এফবিআই প্রধান করা হবে৷ কিন্তু তা না করে আইন প্রয়োগের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা নৌ কর্মকর্তা প্যাট্রিক গ্রে’কে প্রধান করা হয়েছিল৷ এতে ফেল্ট অসন্তুষ্ট ছিলেন৷
ছবি: FBI Collection at NARA/Consolidated/picture alliance
ফেল্টের সঙ্গে উডওয়ার্ডের যোগাযোগ পদ্ধতি
গোপনে কথা বলতে তারা দুটি পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন৷ ফেল্টের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে উডওয়ার্ড নিজের ব্যালকনিতে টবে লাল পতাকা ঝুলিয়ে দিতেন, যা দেখে ফেল্ট বুঝতেন, উডওয়ার্ড কথা বলতে চান৷ আর ফেল্ট কথা বলতে চাইলে উডওয়ার্ডের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের রিসিপশনে উডওয়ার্ডের নামে থাকা ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার ২০ নম্বর পাতায় ‘২০’ লেখাটি গোল করে সেখানে দাগ কেটে সময়টা বলে দিতেন৷ মাঝেমধ্যে ফেল্টের বাসায়ও ফোন করতেন উডওয়ার্ড৷
ছবি: AP
হোয়াইট হাউসের তোপের মুখে ওয়াশিংটন পোস্ট
ওয়াশিংটন পোস্টে একের পর এক প্রতিবেদন নিয়ে খুশি ছিল না নিক্সন প্রশাসন৷ নিক্সনের এক মুখপাত্র বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত যুদ্ধ শুরু করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট৷ এসব প্রতিবেদন মিথ্যা তথ্যে পরিপূর্ণ বলেও দাবি করা হয়েছিল৷ এছাড়া ওয়াটারগেট নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস ও টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে কিছু না বললেও ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের সমালোচনায় মুখর ছিল হোয়াইট হাউস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ওয়াশিংটন পোস্ট নিয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমের সন্দেহ
ওয়াটারগেট নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে শুরুর দিকে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছিল তার গুরুত্ব অন্যান্য গণমাধ্যম বুঝতে পারেনি৷ শুধু তাই নয়, ‘লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস’ ও ‘ওয়াশিংটন স্টার-নিউজ’ ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে প্রতিবেদন করেছিল৷ এছাড়া পোস্টের একটি প্রতিবেদনের তথ্য না ছাপিয়ে হোয়াইট হাউসের ঐ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যানের সংবাদ ছেপেছিল ‘শিকাগো ট্রিবিউন’ ও ‘ফিলাডেলফিয়া ইনক্যোয়ারার’৷
ছবি: AP
তথ্য ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা
ওয়াটারগেটে অবৈধ প্রবেশের পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্ভবত জানতেন না নিক্সন৷ তবে এফবিআই এক চোরের খাতায় হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার নাম পেলে চিন্তিত হয়ে ওঠেন নিক্সন৷ তিনি এফবিআই-এর তদন্ত বন্ধের চেষ্টা করেছিলেন বলে ‘স্মোকিং গান’ শীর্ষক অডিও টেপগুলো থেকে জানা যায়৷ এসব টেপে নিক্সন ও তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কথা রেকর্ড করা ছিল৷
ছবি: picture alliance/dpa/Everett Collection
নিক্সনের পদত্যাগ
ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, এফবিআই-এর তদন্ত ইত্যাদি কারণে নিক্সন প্রশাসনের উপর চাপ বাড়ছিল৷ এই ঘটনা তদন্তে সেনেটে একটি কমিটিও গঠন করা হয়৷ শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, নিক্সন ইম্পিচমেন্টের শিকার হতেন৷ সেটা আঁচ করতে পেরেই ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন তিনি৷ ফলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে মাত্র দেড় বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি৷
ছবি: Everett Collection/imago images
‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’
ওয়াটারগেট কেলেংকারি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বিস্তারিত ১৯৭৪ সালে ‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’ নামে প্রকাশিত এক বইয়ে তুলে ধরেছিলেন বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টিন৷ বইয়ে ওয়াটারগেট কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত নিক্সন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও নিক্সনের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের ‘প্রেসিডেন্ট’স মেন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়৷ ঐ ঘটনায় নিক্সন ক্ষমা পেলেও অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল৷
ছবি: Simon & Schuster
13 ছবি1 | 13
তাহেলকার আগেও ভারতে স্টিং অপারেশন হয়েছে৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হয়েছে অনেক৷ তবে একুশ শতকে অপারেশন ওয়েস্ট এন্ডই সম্ভবত সব চেয়ে বড় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উদাহরণ৷ গোটা দেশে যা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল৷
লম্বা লাফে বেশ কয়েক বছর এগিয়ে যাওয়া যাক৷ ২০১৪ সাল৷ আবার সেই তাহেলকা৷ ততদিনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য রীতিমতো প্রসিদ্ধ হয়ে গিয়েছে তাহেলকা৷ তার ম্যানজিং এডিটর বা সম্পাদক তখন ম্যাথু স্যামুয়েল৷ বছর দুয়েকের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন৷ ম্যাথু আবার একটি ভূয়া সংস্থা তৈরি করে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক রাজনীতিবিদের সঙ্গে দেখা করতে শুরু করেন৷ শাসক দলের সেই রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দেখা করে ঘুস দিয়ে কোম্পানিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করেন তিনি৷ সবটাই হয় গোপন ক্যামেরার সামনে৷ তৃণমূলের নেতাদের ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে দেখা যায়৷
সারদা কাণ্ড নিয়ে ততদিনে এমনিই উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি৷ ম্যাথুর ওই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির হাওয়া গরম করে দেয়৷ বিজেপি কলকাতার সদর দপ্তরে স্ক্রিন টাঙিয়ে ওই স্টিং অপারেশন দেখায়৷ পরে অবশ্য ওই স্টিং অপারেশনে টাকা নিতে দেখা বেশ কিছু তৃণমূল নেতা বিজেপিতে যোগ দেন৷ বিজেপিও নারদ নিয়ে রাজনৈতিক হইচই অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে৷ ম্যাথুর বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার৷ কোথা থেকে তিনি টাকা জোগার করেছিলেন, মূলত সেই বিষয়ে মামলা৷
মনে আছে, সে সময় অধম পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের রিপোর্টার৷ একটি বারে আচমকাই দেখা ম্যাথুর সঙ্গে৷ এক কোণে বসে রাম পান করছেন৷ সাংবাদিকের সঙ্গে সেদিন বহু গল্প করেছিলেন ম্যাথু৷ একটি স্টিং অপারেশনের জন্য কতদিন ধরে পরিকল্পনা করতে হয়, তা বুঝিয়েছিলেন৷ কীভাবে পরিকল্পনার সময় আইনজ্ঞদের সাহায্য নিয়েছেন তিনি, তা-ও জানিয়েছিলেন তিনি৷ সংবাদপত্রে ম্যাথুর সঙ্গে সেই মোলাকাতের কিছু কিছু ঘটনা ছাপাও হয়েছিল৷
একটি কথা সেদিন বলেছিলেন ম্যাথু৷ ২০০১ সালে স্টিং অপারেশনের যে ইমপ্যাক্ট পড়েছিল ভারতে, ২০১৪ সালের ইমপ্যাক্ট তার চেয়ে খানিকটা হলেও কম৷ যত দিন যাবে, ইমপ্যাক্ট আরো কমবে৷ কারণ, এই ধরনের বিষয়ের সঙ্গেও রাজনীতিবিদেরা এবং সমাজ নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে৷ যাকে বলে সিজনড হয়ে নেওয়া৷ ২০০১ সালের ঘটনায় লজ্জায় জর্জ ফার্নান্ডেজ পদত্যাগ করেছিলেন৷ যদিও পরে তিনি ক্লিন চিট পান৷ আর ২০১৪ সালের ঘটনায় ক্যামেরার সামনে যাঁদের দেখা গেল, রাজনীতি ছাড়া তো দূরের কথা, বরং রাজনীতিতে প্রোমোশন হয়েছে তাঁদের৷ দল বদল করার সময়েও তাদের সেই ছবি কোনোরকম সমস্যা তৈরি করেনি৷ সমাজে মাথা তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা৷ সমাজও কিছুদিনের মধ্যেই কার্যত তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছে৷ তদন্তেও বিশেষ হাওয়া আছে বলে মনে হচ্ছে না৷
এখানেই সমস্যা৷ এক সময় ভারতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে রীতিমতো চর্চা হতো৷ যত দিন যাচ্ছে, তার পরিমাণ কমছে৷ কারণ, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সেই ধরনের ইমপ্যাক্ট বা প্রভাব তৈরি করতে পারছে না৷ দ্রুত তৈরি হয়ে যাচ্ছে কাউন্টার ন্যারেটিভ৷ অন্য দিকে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ তাঁদের বিরুদ্ধে এমনকি, মিথ্যা মামলাও হচ্ছে৷ ফলে সময় খরচ করে, সাহস সঞ্চয় করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দিকে খুব বেশি ঝুঁকছেন না পেশাদার সাংবাদিকরা৷ একেবারেই কি হচ্ছে না কিছু? অবশ্যই হচ্ছে৷ কোনো কোনো ইনডিপেন্ডেন্ট সাংবাদিক এখনো এ ধরনের কাজ করছেন৷ অজানা তথ্য সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন৷ তবে সংখ্যায় তা নেহাতই কম৷
তবে একই সঙ্গে আরো একটি কথা বলা দরকার৷ এ ধরনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা যে সব সময় সত্য সামনে আনতে পারে, তা কিন্তু নয়৷ বোফর্স কেলেঙ্কারি সম্ভবত তার সব চেয়ে বড় উদাহরণ৷ আশির দশকের সেই মামলায় সংবাদপত্র রাজবী গান্ধীকে কার্যত চোর প্রমাণিত করে দিয়েছিল৷ সে সময় দিকে দিকে দেওয়াললিখন হয়েছিল-- গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়৷ পরে আদালতে প্রমাণিত হয়, বোফর্স নিয়ে কোনো কেলেঙ্কারি হয়নি৷ রাজীব গান্ধী ক্লিনচিট পেয়েছিলেন৷