ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাড়ছে বেকারত্ব
৯ জুন ২০২১২০২০ সালে লকডাউনের সময় ভারতের রাজপথ দেখেছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুমিছিল। ভিন রাজ্যে কাজ হারিয়ে তারা পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছিলেন। গত বছর এ নিয়ে দেশ জুড়ে রাজনীতি, আন্দোলন কম হয়নি। ভারত সরকারের উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই সম্প্রতি যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালেও অবস্থা প্রায় একরকম। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং লকডাউনের কারণে লাখ লাখ মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। অদূর ভবিষ্যতে তারা ফের কাজে যোগ দিতে পারবেন, এমন আশাও কম।
গত এপ্রিল মাস থেকে ভারতের বিভিন্ন শহরে নতুন করে লকডাউন এবং কারফিউ জারি করা হয়। মে মাসে সংস্থাটি যে সমীক্ষা চালিয়েছিল, তাতে দেখা গেছিল বেকারের সংখ্যা শতাংশের নিরিখে দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই তা ১৯ শতাংশে পৌঁছে গেছিল। সর্বশেষ সমীক্ষা করা হয়েছে গত ৬ জুন। সেখানে দেখা গেছে সব মিলিয়ে গোটা দেশে কাজ হারিয়ে নতুন করে বেকার হয়েছেন ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে অধিকাংশ মানুষই গ্রামের। ২০২০ সালে সংখ্যাটি ২০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন। যার মধ্যে আট শতাংশ মানুষের একক রোজগারে সংসারে চলে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে লকডাউন ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করার পর নতুন করে কাজ পেতে শুরু করেছিলেন বহু মানুষ। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি থেকে যদি ডেটা দেখা যায়, অর্থাৎ, যখন লকডাউন ছিল না, তখন থেকেই নতুন করে কাজ হারানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বহু ছোট সংস্থা প্রথম লকডাউনের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। ফলে লকডাউনের পরে অফিস খুললেও তা বেশিদিন চালানো যায়নি।
পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ কাজের প্রয়োজনে ভিন রাজ্যে যান। মুর্শিদাবাদ এবং সুন্দরবন থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যান। গত এপ্রিল এবং মে মাসে তেমনই বেশ কিছু শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছিল ডিডাব্লিউ। মুর্শিদাবাদের শ্রমিক মহম্মদ শামসের ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন, ''১৫ বছর ধরে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেছি। কিন্তু লকডাউনের পর দেশে ফিরে এসেছি। আর কাজ করতে যাব না। যেটুকু জমি আছে, তাতে চাষাবাদ করেই সংসারের চালানোর চেষ্টা করব।'' মালদার শ্রমিক হাবিবুর রহমানও একই কথা বলেছিলেন ডয়চে ভেলেকে।
সুন্দরবনের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। ইয়াস ঝড়ের পরে সন্দেশখালির কেদার বারুইয়ের সঙ্গে কথা বলেছিল ডয়চে ভেলে। তিনি জানিয়েছিলেন, দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। কিন্তু লকডাউন পর্বে মালিক তাদের খাবারটুকু পর্যন্ত দেননি। ফলে দেশে ফিরে এসেছিলেন চাষাবাদ করবেন বলে। কিন্তু ইয়াসের ফলে জমিতে নোনা জল উঠে গেছে। এখন চাষ করাও সম্ভব নয়।
সিএমআইই-র রিপোর্টের সঙ্গে শ্রমিকদের কথা মিলে যাচ্ছে। সিএমআইই জানিয়েছএ, শহরে কাজ হারানো মানুষরা কম বেতনে নতুন করে কাজ জুটিয়ে নিতে পারলেও, গ্রামের মানুষ নতুন কাজ পাচ্ছেন না। অনেকেই নির্ভর করছেন একশ দিনের কাজ অথবা দিনমজুরির উপর। সিএমআইই-র আশঙ্কা, লকডাউন উঠে গেলেও আগামী কয়েকবছর কাজ হারানোর প্রবণতা বাড়তে থাকবে। এর প্রভাব সার্বিকভাবে অর্থনীতির উপর পড়বে বলে তারা মনে করছে।