বড়দিন ও নতুন বছরের উৎসবের জন্য পশ্চিমবঙ্গে কোনো কড়াকড়ি ছিল না। কড়াকড়ি শুরু হলো সোমবার থেকে। স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পুরো বন্ধ। এমনই একটি বন্ধ স্কুলের ছবি।

লোকাল ট্রেন চলবে। তবে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে। যত বসার জায়গা আছে, তার অর্ধেক যাত্রী একটি কামরায় উঠতে পারবেন। কিন্তু সন্ধ্যা সাতটার পর আর ট্রেন চলবে না।

ট্রেনের কামরায় ৫০ শতাংশ যাত্রী আছেন না বেশি আছেন, তা কে দেখবে? সোমবার সকালেও স্টেশনে প্রচুর মানুষের ভিড় ছিল। গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়াও ছিল। এর আগেও দেখা গেছে, ট্রেনে ৫০ শতাংশ যাত্রীর বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি।

বাসও ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়েই চলতে পারবে। সোমবার সকালে দেখা গেছে, বাসের সব সিট ভর্তি।

কলকাতায় অটোরিক্স চলবে। সোমবার সকালের ছবি। প্রচুর অটো রাস্তায়। তবে সকালের দিকে যাত্রী কিছুটা কম।

সরকারি ও বেসরকারি অফিসে অর্ধেক কর্মী যাবেন, বাকি অর্ধেক বাড়ি থেকে কাজ করবেন। তা সত্ত্বেও অবশ্য অফিস টাইমে ভিড় কম ছিল না। দুয়ারে সরকারের মতো সরকারি অনেক প্রকল্পই আপাতত বন্ধ থাকবে।

দোকান, বাজার, শপিং মল, মার্কেট কমপ্লেক্স সবই খোলা। কিন্তু মলের দোকানগুলিতে যত মানুষ যেতে পারেন, এখন তার অর্ধেক যেতে পারবেন।

মানিকতলার মাছের বাজার। এমনি সময়ে ভয়ংকর ভিড় থাকে। সোমবার সকালে ভিড় নেই।

সোমবার সকালের ছবি। শাক-সবজির বাজারে যথেষ্ট ভিড়। করোনার দূরত্ব বিধি মানা হচ্ছে না।

সিনেমা হল খোলা। তবে মোট আসনের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা যাবে।

বন্ধ থাকবে সেলুন, বিউটি পার্লার, ওয়েলনেস সেন্টার, সুইমিং পুল, স্পা, জিম, এন্টারটেনমেন্ট পার্ক, ট্যুরিস্ট সেন্টারগুলি।

সব রেস্তোরাঁ, পানশালা রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে যত বসার জায়গা আছে, তার অর্ধেক মানুষ সেখানে যেতে পারবেন।

শ্মশানঘাটে, কবরস্থানে, শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে কুড়িজনের বেশি মানুষ থাকতে পারবেন না।

নিমতলা শ্মশানঘাটের ছবি। প্রচুর মানুষ সোমবার সেখানে ছিলেন।

রাত দশটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলবে কার্ফিউ। জরুরি পরিষেবা ছাড়া কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে না। জমায়েত হতে দেয়া হবে না।

কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গে করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে। রোববার পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্ত ছয় হাজারের বেশি মানুষ। তিন হাজারের বেশি আক্রান্ত শুধু কলবকাতায়। কলকাতা পুলিশের দুই আইপিএস অফিসার সহ ৫০ জন কর্মী করোনায় আক্রান্ত। বাংলা ক্রিকেট টিমের সাতজন আক্রান্ত। তাও হুঁশ নেই মানুষের। রোববারও পথে নেমেছিল মানুষের ঢল। মেলা ভিড়ে ভিড়াক্কার।

করোনা লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৭৫২। দেশজুড়ে একদিনে করোনা বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। ওমিক্রন ছড়াচ্ছে। কিন্তু কলকাতার মানুষ সে সব পাত্তা না দিয়ে, করোনা বিধি ভেঙে নেমে পড়েছেন বর্ষশেষের উৎসবে।

কলকাতায় করোনার কারণে রাতের কার্ফিউ ছিল। কিন্তু উৎসবের সময়ে রাতের কার্ফিউ বাতিল করা হয়েছে। বর্ষশেষ ও নতুন বছরের উৎসব শেষ হলে আবার ২ জানুয়ারি থেকে তা চালু হবে। কড়াকড়ি তুলে নেয়ার পর মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন উৎসব পালন করতে।

বড়দিন থেকে নতুন বছরের শুরুর দিনগুলিতে অসাধারণভাবে সেজে ওঠে পার্ক স্ট্রিট। আলো দিয়ে সাজানো হয় পুরো রাস্তা। বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। এ বছর করোনার মধ্যেও পার্ক স্ট্রিটের রাস্তায় ভিড় জমিয়েছিলেন এবং জমাচ্ছেন কাতারে কাতারে মানুষ। করোনা ভুলে, ওমিক্রনকে আমল না দিয়ে তারা নেমে পড়েছেন রাস্তায়।

পার্ক স্ট্রিটের ছবি এখন ভাইরাল। চিকিৎসকরা বলেন, করোনা ঠেকাতে গেলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। কিন্তু পার্ক স্ট্রিট ভিড়ে ঠাসা। সেখানে সামাজিক দূরত্বের বিধি মানা সম্ভবই নয়।

উৎসব করতে পথে নেমেছেন, অথচ, অনেকের মুখে মাস্ক নেই। এই বেপরোয়া কলকাতাবাসী ভুলে গেছেন, করোনা ছড়াচ্ছে, প্রতিদিন তার সংখ্যা বাড়ছে। ওমিক্রন আতঙ্কে ভুগছে গোটা বিশ্ব।

কলকাতা চিড়িয়াখানাও ভিড়ে ঠাসা। এতদিন ধরে ঘরবন্দি মানুষ এই শীতে নিজেদের মনোরঞ্জনের সঙ্গে আপস করতে চাইছেন না।

দুর্গাপুজোর সময় শ্রীভূমিতে বুর্জ খালিফার অনুকরণে প্যান্ডেল দেখতে জড়ো হয়েছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। বড়দিন থেকে নতুন বছরের প্রথম কয়েকটা দিন সুন্দর আলোয় সাজানো থাকে শ্রীভূমির এই এলাকা। মেলা বসে। সেখানেও প্রচুর ভিড়।

শুধু পার্ক স্ট্রিট নয়, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ভিড় হচ্ছে মারাত্মক। যেমন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। তার সামনে প্রচুর মানুষ।

একটু বেলা বাড়তেই ময়দানে মানুষের ঢল। পিকনিক চলছে সারাদিন। দিনশেষে ময়দানের এই ছবিই বুঝিয়ে দিচ্ছে, কীরকম ভিড় হচ্ছে সেখানে।

ময়দানে এখন গেলেই চোখে পড়বে এই ঘোড়ার গাড়িগুলি। অত্যন্ত সুসজ্জিত। দেখলেই মনে হবে, কয়েকটা পাক দেয়া যাক এই গাড়িতে। এই গাড়ি চড়ার জন্যও উদগ্রীব মানুষ।