খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। গত ৮ মে ভারতে একদিনে চার লাখ একশর বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত ১৯ এপ্রিল দিল্লিতে একদিনে ২৮ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হন। সেই সময় দিল্লি সহ ভারতের অবস্থা শোচনীয় জায়গায় পৌঁছেছিল। হাসপাতালে জায়গা নেই। অক্সিজেন নেই। ওষুধের দাম আকাশ ছোঁয়া। মৃতদের দেহ সৎকার করতে লম্বা লাইন। উত্তর প্রদেশ ও বিহারের গঙ্গায় মৃতদেহের মিছিল। গোটা ভারত জুড়ে ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাস আতঙ্ক।
সেখান থেকে ৪ অগাস্টে আসা যাক। সারা ভারতে দিনে এখন গড়ে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ। দিল্লিতে দিনে ৫০ থেকে ৬০ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে দিল্লিতে প্রায় সব কিছুই খুলে গেছে। মেট্রো ও বাসেও যাত্রী নেয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো সীমা নেই। ভারতে কেরালা, মহারাষ্ট্র, উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে এখনো করোনায় বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গও পুরো স্বাভাবিক হয়নি। এই রাজ্যগুলোকে বাদ দিলে ভারতের অন্যত্র পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই ভালো।
অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে
কী করে সম্ভব হলো এইভাবে করোনার নিয়ন্ত্রণ? এমনিতে বিশ্বজুড়ে করোনার প্রবণতাই হলো, এর রেখচিত্র ক্রমশ উপরে উঠতে থাকে। একেবারে উপরে উঠে তা নীচে নামতে থাকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু এই প্রবণতার কথা বলে ভারতের করোনা পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। যে দিল্লিতে দিনে ২৮ হাজার মানুষ একদিনে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেখানে সংখ্যাটা ৫০-৬০-এ নেমে আসার কারণ শুধু ভাইরাসের চরিত্র নয়।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহ স্মৃতি কাটিয়ে দিল্লি স্বাভাবিক হচ্ছে
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দিল্লির অবস্থা ছিল ভয়াবহ। সেই স্মৃতি কাটিয়ে রাজধানী এখন স্বাভাবিক হচ্ছে।
ছবি: Seerat Chabba/DW
পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল
কিছুদিন আগেও করোনায় বেহাল ছিল দিল্লি। প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলেন। মারা যাচ্ছিলেন প্রচুর মনুষ। হাসপাতালে বেড ছিল না। অক্সিজেনের আকাল। অক্সিজেন না পেয়ে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। ওষুধ পাওয়া যাচ্ছিল না। শ্মশানে, কবরস্থানে লম্বা লাইন। তারপর কড়া লকডাউন চালু হয়।
ছবি: Adnan Abibi/REUTERS
রাজধানীর অবস্থা
এখন দিল্লির অবস্থা অনেকটাই ভাল। দিনে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন একশর মতো মানুষ। লকডাউনের কড়াকড়ি অনেকটাই শিথিল হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে দিল্লির লাগোয়া গুরুগ্রাম, নয়ডা, ফরিদাবাদেও।
ছবি: Seerat Chabba/DW
বাজারে ভিড়
লকডাউন তুলে নেয়ার পর বাজারে আবার প্রবল ভিড়। ফিরে এসেছে চেনা ছবি। কিন্তু এর ফলে কি করোনার প্রকোপ আবার বাড়বে? দিন কয়েক আগে দিল্লিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমে হয়েছিল ৫৯। এখন তা আবার একশ ছাড়িয়েছে। গুরুগ্রামের একটি বাজারের ছবি।
ছবি: Seerat Chabba/DW
শপিং মলেও মানুষ
খুলে গেছে শপিং মল। যথারীতি সেখানেও ভিড় হতে শুরু করেছে।
ছবি: Seerat Chabba/DW
অফিস খোলা
সরকারি ও বেসরকারি অফিসও খুলেছে। তবে এখনো অফিসগুলিতে প্রতিদিন ৫০ শতাংশ কর্মী যাচ্ছেন। কনট প্লেসের গাড়ি পার্কিংয়ের এই ছবিই বলে দিচ্ছে দিল্লির পরিস্থিতি।
ছবি: Seerat Chabba/DW
খুলেছে অস্থায়ী বাজারও
রস্তার ধারের বাজারও খুলছে। ভিড়ও হচ্ছে। এতদিন ধরে বাড়িতে বন্দি মানুষ লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল হতেই নেমে পড়েছেন রাস্তায়। কেনাকাটা করতে।
ছবি: Seerat Chabba/DW
ভ্যাকসিনে জোর
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভ্যাকসিন দেয়ার গতি বাড়াতে চাইছে। রাজ্য সরকার এখন তাদের স্কুলেও ভ্যাকসিন সেন্টার খুলেছে। বিনা পয়সায় সেখানে টিকা দেয়া হচ্ছে। উপরের ছবিতে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন মানুষ।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
7 ছবি1 | 7
দক্ষিণ দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা ফুসফুসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থপ্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''দিল্লিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত, দিল্লিতে টিকা দেওয়ার হার যথেষ্ট ভালো। দ্বিতীয়ত, দিল্লিতে কড়া লকডাউন দীর্ঘদিন চলেছে। ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির স্মৃতি মাথায় থাকার কারণে মানুষ মাস্ক পরছেন, দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। সব চেয়ে বড় কথা, টিকার কারণে ও করোনা হয়ে যাওয়ার ফলে একটা বড় অংশের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।''
পার্থপ্রতিম বোস মনে করেন, ''করোনার গ্রাফ একবার উপরে উঠবে, তারপর নীচে নামবে এটা ঠিক। এটা সব ভাইরাসের চরিত্র। কিন্তু সে কথা মাথায় রেখেই বলতে হচ্ছে, মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি না হলে, হার্ড ইমিউনিটি তৈরি না হলে করোনাকে ঠেকানো যাবে না। দিল্লি আজ যে অবস্থায় পৌঁছেছে, সেই অবস্থায় পৌঁছনো যাবে না।''
দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে কড়া লকডাউন চালু ছিল। সেসময় কাছের দোকান-বাজার বা টিকা নিতে যাওয়া এবং খুব জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারতেন না। রাখলে পুলিশের কাছে জবাবদিহি করতে হত।
তিন কারণের মিলিত ফল
কলকাতার চিকিৎসক সাত্যকি হালদার মনে করেন, ভারতে যে করোনার বাড়বাড়ন্ত কমেছে, তার পিছনে তিনটি কারণ আছে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''ভারতে স্বাস্থ্য কর্মী, যারা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন, তারা আগে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। তাদের দুই ডোজ টিকা দেয়ার পর অসুস্থ হওয়ার হার অনেকটাই কমেছে। দ্বিতীয়ত সাধারণ মানুষ কিছুটা সচেতন হয়েছেন। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন। তৃতীয় কারণ হলো, ভাইরাসের এপিডোমিয়োলজিকাল চরিত্র।'' তার ব্যাখ্যা, ''ভাইরাসের উত্থান যেমন থাকে, তেমনই পতন থাকে। ভাইরাস সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছে গেলে, তার সক্রিয়তা কমতে থাকে। তখন গ্রাফ নীচের দিকে নামে। এই সবকটি কারণ মিলেই ভারতের করোনার ভয়ংকর পরিস্থিতি অনেকটা ভালো হয়েছে।''
ভারতে কবে সকলে ভ্যাকসিন পাবেন?
মোদী সরকার জানিয়েছে, এই বছরের মধ্যে সকলকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। বর্তমানে যে গতিতে টিকাকরণ চলছে, তাতে কি এটা সম্ভব?
সোমবার একদিনে ৮৮ লাখ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে ভারতে। এটা একটা রেকর্ড।
ছবি: Prabhat K. Verma/Zuma/imago images
পরের দিনই কমলো
মঙ্গলবার ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে ৫৪ লাখ ২২ হাজার। কেন এত কম? বিরোধীদের অভিযোগ, 'ম্যাজিক সোমবারের জন্য' মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্য ভ্যাকসিন জমিয়ে রেখেছিল। সোমবার যে দশটি রাজ্যে সব চেয়ে বেশি ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে সাতটি বিজেপি শাসিত।
ছবি: Prabhat K. Verma/Zuma/imago images
লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে
মোদী সরকার জানিয়েছে, এই বছরের মধ্যেই তারা দেশের সব নাগরিককে করোনার টিকা দিতে চায়। সেক্ষেত্রে দিনে ৯৭ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে। সে জায়গায় পৌঁছতে পারেনি ভারত।
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
অসুবিধা কোথায়
মোদী সরকার জানিয়েছে, টিকা সংরক্ষণে তাদের কোনো অসুবিধা নেই। তারা দৈনিক এক কোটি ২৫ লাখ টিকা নিরাপদে রাখতে পারবে। কিন্তু দেশে অত টিকার উৎপাদন হচ্ছে না। এখন ভারতে তিনটি টিকা দেয়া হচ্ছে। কোভিশিল্ড, কোভ্যাকসিন এবং স্পুটনিক ফাইভ।
ছবি: Francis Mascarenhas/REUTERS
নতুন টিকা আসবে
ফাইজার জানিয়েছে, তাদের টিকা ভারতে অনুমোদনের শেষ পর্যায়ে আছে। এছাড়া সেরাম ইনস্টিটিউট কোভোভ্যাক্স তৈরি করবে। অদূর ভবিষ্যতে আরো দুইটি ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার।
ভারতের মতো ১৩০ কোটির দেশে সকলকে ভ্যাকসিন দিতে গেলে ২৬০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন লাগবে। কোনো সন্দেহ নেই, এত ভ্যাকসিন উৎপাদন ও জোগাড় করাটা সহজ নয়। মাঝখানে আবার দেশের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকরা জানিয়েছিলেন, সরকার বেশি অর্ডার দেয়নি বলে তারা উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়ায়নি।
ছবি: Subhash Sharma/Zuma/picture alliance
কবে দেয়া যাবে
এখন ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সিদের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। যোগান ঠিক থাকলে এই বছরের মধ্যে বা ২০২২-এর প্রথমদিকে সকলকে ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব। তবে দৈনিক গড় লক্ষ্যমাত্রা বজায় রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
7 ছবি1 | 7
সাত্যকি হালদার একটা উদাহরণ দিয়েছেন। বানের সময় সুন্দরবনে বাঁধ ভেঙে জল চলে আসে গ্রামের ভিতর। আবার সেই জল নিজে থেকে পরে চলেও যায়। কিন্তু সরকার বা গ্রামবাসীরা বাঁধ তৈরি করে। তাতে জোয়ারের জল আটকায়। কিন্তু আবার ভয়াবহ বান এলে সেই বাঁধ ভেঙে যায়। তেমনই ভাইরাসের রেখচিত্র উপরে ওঠে এবং নীচে নামে এটা যেমন ঠিক, তেমনই এটাও ঠিক যে , করোনা প্রতিরোধে টিকা নিতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তাহলেই করোনার জোয়ার আটকানো যাবে।
দিল্লির সাফল্যের পিছনে
দ্য প্রিন্টের হেলথ এডিটর অবন্তিকা ঘোষ ভারতে করোনা নিয়ে একটি বই লিখেছেন। প্রথম ঢেউয়ের সময় ভারতের পরিস্থিতি, কারণ, প্রাসঙ্গিক সব ব্যাখ্যা আছে সেই বইতে। অবন্তিকা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দিল্লিতে সেরোপজিটিভিটির (অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া) হার ৮৬ শতাংশ। তার উপর দিল্লিতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষ টিকার অন্তত একটি ডোজ নিয়েছেন। ফলে তাদের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।''
অবন্তিকার মতে, ''বিশ্বের অন্য জায়গায় এখন ডেল্টা, ডেল্টা প্লাসের কারণে করোনা বাড়ছে। কিন্তু দিল্লি তথা ভারতে ডেল্টা ও ডেস্টা প্লাসের তাণ্ডব সহ্য করে নিয়েছে। এখন ভাইরাস আবার কবে মিউটেট করবে, অ্যান্টিবডি কতদিন থাকবে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে ভাইরাসের নতুন ও ভয়ংকর সংস্করণ যতদিন না আসছে, ততদিন আমরা কিছুটা ভালো সময় কাটাতেই পারি।''
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মধ্যে টিকাকরণ যতটা সম্ভব বাড়াতে হবে।
করোনার ভারতীয় রূপ কতটা ভয়ংকর?
প্রায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে ভারতে৷ ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন রূপের ভূমিকা থাকতে পারে৷ এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
বি.১.৬১৭
এমন নামেই পরিচিত করোনার নতুন ভারতীয় ধরনটি৷ দেশটিতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ এটি কীনা সেটি অবশ্য এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না৷ তবে সম্ভাব্য একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টকে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
কখন থেকে?
গত মার্চে ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টের কথা জানায়৷ ভাইরাসের এই ধরনটি দুইবার রূপ বদলেছে বলে সেসময় জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷ তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা সেটি এখন তৃতীয়বারের মতো রূপ বদলেছে৷ জিনগত উপাত্তের উন্মুক্ত তথ্য ভাণ্ডার জিআইএসএইড-এর (GISAID) তথ্য অনুযায়ী ভারতে বিদ্যমান করোনা ভ্যারিয়েন্টের ৬৩ ভাগই এখন বি.১.৬১৭৷
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
কতটা উদ্বেগের?
প্রথম রূপটি (E484Q) অনেকটা ব্রাজিলে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটানো ভ্যারিয়েন্টের মতো৷ দ্বিতীয়টি (L452R), এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া গেছে৷ এই ধরনটি টিকার রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম এবং বেশি মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে৷ আর তৃতীয় রূপটি (P681R) উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টটির কাছাকাছি৷
ছবি: picture-alliance/M. Schönherr
কতটা ছড়িয়েছে?
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যাচ্ছে৷ শুধু ভারত নয় এটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশগুলোতেও৷ জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও দেশগুলোতে বি.১.৬১৭ শনাক্ত করেছে৷
ছবি: Xavier Galiana/AFP
মানবদেহে কী করছে?
একাধিক রূপ বদলের কারণে ভাইরাসটি শরীরে দ্রুত ছড়াতে পারে৷ বিশেষ করে এর পক্ষে শরীরে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়াও সহজ হতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি বা যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরও এই ভ্যারিয়েন্টে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: AFP/National Institutes of Health
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় রেখেছে৷ অর্থাৎ, তারা ভাইরাসটি নজরদারিতে রেখেছে, তবে এখনও সেটি বড় ধরনের উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছালে এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করা হতে পারে৷
ছবি: Fabrice Coffrini/AFP/Getty Images
বেশি সংক্রামক নয়?
ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই রয়েছে মতপার্থক্য৷ যুক্তরাজ্যের কোভিড-১৯ জেনোমিকস ইনিশিয়েটিভ এর পরিচালক ড. জেফারি ব্যারেট এর মতে গত কয়েক মাসে ভ্যারিয়েন্টটি বেশ ধীর গতিতে ছড়িয়েছে৷ আর এজন্য তিনি এটিকে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৭ এর মত সংক্রামক নয় বলে মনে করছেন৷
ছবি: PAWAN KUMAR/REUTERS
উপাত্ত কী বলে?
জিনগত বিশ্লেষণে মহারাষ্ট্রে ৬০ শতাংশের বেশি করোনা আক্রান্তের নমুণায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে৷ তবে কর্তৃপক্ষ বলছে তারা যত নমুনা পরীক্ষা করেছেন সেটি উপসংহারে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট নয়৷
ছবি: Pradeep Gaur/ZUMA Wire/imago images
টিকায় কি কাজ হচ্ছে?
অন্তত দুইটি গবেষণা বলছে ভ্যারিয়েন্টের এল৪৫২আর রূপটি অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যেতে পারে৷ তবে এর একটি এখনও অপ্রকাশিত এবং অ্যাকাডেমিকভাবে পিআর রিভিউ সম্পন্ন হয়নি৷
ছবি: Anindito Mukherjee/Getty Images
অতিরঞ্জন হচ্ছে?
অনেকে অবশ্য বলতে চাইছেন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় যেসব তথ্য আসছে তার মধ্যে অতিরঞ্জন রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিয়োনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি পি কামিল তাদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন কোন নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই যেখানে বলা হয়েছে এল৪৫২ রূপটি সব ধরনের ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডিকে এড়াতে পারে৷’’ সেটি সম্ভব নয় বলেও মত তার৷
এরপরেও চিন্তা আছে। বেশ ভালোরকমই আছে। সরকার ও বিশেষজ্ঞরা আর ফ্যাক্টর নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত। আর ফ্যাক্টর মানে রিপ্রোডাকশন নম্বর বা আরটি। এর অর্থ হলো একজনের শরীর থেকে কতজনের মধ্যে করোনা ছড়াচ্ছে। ভারতে গড়ে আর ফ্যাক্টর হলো এক দশমিক দুই। তার কারণ, মহারাষ্ট্র, কেরালা সহ আটটি রাজ্যে আর ফ্যাক্টর বেশ বেশি। এখন তো যত মানুষের করোনা হচ্ছে, তার ৪৯ শতাংশই কেরালার।
কেন্দ্রীয় সরকারেরের করোনা টাস্ক ফোর্সের প্রধান ভি কে পল বলেছেন, ''আর ফ্যাক্টর শূন্য দশমিক ছয়ে নামিয়ে আনতে পারলে বলা যাবে করোনাকে বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। কিন্তু দেশের ৪৪টি জেলায় এই হার ১০ শতাংশের বেশি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল বলেছেন, "স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র শিথিলতা চলবে না। অতিমারির দপট এখনো আছে।"
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে, মাস্ক পরতে হবে, দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, দুই ডোজ টিকা নিতে হবে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাময়িক সাফল্য এসেছে মানে পরিস্থিতি যে আবার খারাপ হবে না, তার কোনো মানে নেই। বিশেষ করে এইমসের ডিরেক্টর গুলেরিয়া সহ অনেকের মতে, এরপর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। তবে তা দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো অত ভয়ংকর নাও হতে পারে। তখন দিনে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় লাখ মানুষ আক্রান্ত হবেন। সেই সংখ্যাটাও তো কম নয়। তাই তারা বারবার সেই প্রবাদটার কথাই শোনাচ্ছেন, সাবধানতার মার নেই।