ভারতে করোনা পরিস্থিতি শোচনীয়, দিল্লিতে ছয়দিনের লকডাউন
১৯ এপ্রিল ২০২১
ভারতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখের কাছে। হাসপাতালে বেড নেই। অক্সিজেনও পাওয়া যাচ্ছে না। ওষুধও। দিল্লিতে ছয়দিনের লকডউনের ঘোষণা।
বিজ্ঞাপন
ভারতে করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৭৩ হাজার ৮১০ জন। প্রতিটি রাজ্যেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শীর্ষে মহারাষ্ট্র। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ। রাজধানী দিল্লির অবস্থাও বেশ খারাপ। সেখানে একদিনে আক্রান্ত ২৫ হাজার ৪৬২ জন। তারপর দিল্লিতে আগামী সোমবার পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন. দিল্লিতে হাসপাতালে একশটিরও কম আইসিইউ বেড খালি আছে। দিল্লিতে প্রথমে ছয়দিনের কারফিউ জারির ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে কেজরিওয়াল জানান, ছয়দিন লকডাউন থাকবে দিল্লি। এছাড়া উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু প্রতিটি রাজ্যেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রবলভাবে বাড়ছে।
সব চেয়ে বড় কথা, প্রতিটি রাজ্যেই অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। মহারাষ্ট্র বারবার কেন্দ্রের কাছ থেকে অক্সিজেন চাইছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও জানিয়েছেন, অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি রাজ্য থেকে একই রিপোর্ট আসছে। তারপর কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২২ এপ্রিল থেকে শিল্পক্ষেত্রে অক্সিজেন ব্যবহার করা যাবে না। সেই অক্সিজেন হাসপাতালে সরবরাহ করা হবে। তবে ওষুধ, পরমাণু চুল্লির মতো নয়টি জরুরি জায়গায় আগের মতোই অক্সিজেন ব্যবহার করা যাবে।
করোনার এই বাড়বাড়ন্তে দেশজুড়ে হাসপাতালে কোনো বেড পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না জীবনদায়ী ওষুধ। সব হাসপাতালের আইসিইউ ভর্তি। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার হাসপাতালগুলি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেয়া হবে। হয় সেগুলিকে পুরোপুরি করোনার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে। তাতে অসুবিধা থাকলে একটা বড় অংশে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হবে।
কুম্ভমেলায় করোনার থাবা, ভারতের হাসপাতালে সব বেড ভর্তি
করেনাকালেও কুম্ভমেলায় লাখো মানুষের ভিড়। করোনা বাড়ছে সেখানেও। গোটা ভারতেই অবস্থা ভয়ঙ্কর। হাসপাতালে বেড খালি নেই।
ছবি: Money Sharma/AFP/Getty Images
কুম্ভের ভিড়
হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছেন। একমাস ধরে চলে কুম্ভমেলা। এর মধ্যে দুইবার শাহি স্নান হয়েছে। একটি হিসেব বলছে, একটি স্নানে একসঙ্গে ২৮ লাখ মানুষ ছিলেন সেখানে। করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে কুম্ভমেলায়। তাও মানুষের আসার শেষ নেই।
ছবি: Karma Sonam/AP Photo/picture alliance
৩০ জন সাধুর করোনা
একদিনেই ৩০ জন সাধু করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে পুণ্যলাভের আশায় যে অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়েছেন, তাদের মধ্যেও করোনা ছড়াচ্ছে দ্রুত।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
আখড়ার সিদ্ধান্ত
দুইটি আখড়া জানিয়ে দিয়েছে, তারা শনিবারই কুম্ভমেলা ছেড়ে চলে যাবে। নিরঞ্জনী আখড়া ও তপোধন শ্রী আনন্দ আখড়া। মোট ১৩টি প্রধান আখড়া কুম্ভে আসে। তার মধ্যে নিরঞ্জনী আখড়া যথেষ্ট প্রভাবশালী। প্রচুর নাগা সন্ন্যাসী এই আখড়ার সঙ্গে যুক্ত। তারা জানিয়েছে, আখড়ার সাধুরা শনিবার স্নান করে হরিদ্বার ছাড়বেন। কুম্ভের অবস্থা ভালো নয়। তাদের অনেক সাধুর মধ্যে করোনার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
ছবি: Money Sharma/AFP
সাধুর মৃত্যুর পর
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মধ্যপ্রদেশের নিরওয়ানি আখড়ার প্রধান মহামণ্ডলেশ্বর কপিল দেব দাসের মৃত্যু হয়েছে। তারপরই আখড়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আর কুম্ভে এত মানুষ এসেছেন ও স্নান করছেন যে সামাজিক দূরত্বের বিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না।
ছবি: Karma Sonam/AP Photo/picture alliance
করোনাকালে কেন এভাবে কুম্ভমেলা
এই অবস্থায় বারবার প্রশ্ন উঠছে, করোনাকালে কেন এইভাবে কুম্ভমেলা হচ্ছে? কেন কুম্ভে মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না? করোনার সময়ে দিল্লিতে সব ধরনের জমায়েত বন্ধ করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রেও তাই। সেখানে হরিদ্বারে লাখো মানুষ জমায়েত হয়েছেন। রাজ্য সরকার বলছে, তারা মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দেবে না।
ছবি: Karma Sonam/AP Photo/picture alliance
হাসপাতাল ভর্তি
এত দ্রুত করোনা ছড়ানোয় হাসপাতালের সব বেড ভর্তি। দিনভর চেষ্টা করেও করেনা আক্রান্তরা হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছেন না। দিল্লি, মুম্বই, লখনউ, কলকাতা সহ সব জায়গার ছবিই এক। উপরের ছবিটি নয়ডার হাসপাতালের।
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
ওষুধ নেই
করোনা রোগীকে অনেক সময়ই রেমডেসিভির দেন চিকিৎসকরা। সেই রেমডেসিভির পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকার আরো একশটি হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর অনুমতি দিয়েছে। অক্সিজেন পাওয়া নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ছবি: AFP/U. Perrey
উপচে পড়া রোগী
দিল্লিতে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না হাসপাতালগুলি। এইমসের মতো হাসপাতালের প্রধান জানিয়েছেন, তাদের প্রচুর নার্স করোনায় আক্রান্ত। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, দিল্লি সরকারের হাসপাতালে একটা সিঙ্গল বেডে দুইজন করোনা রোগীকে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে।
ছবি: Manish Kumar/DW
8 ছবি1 | 8
করোনা রোগীদের অনেক হাসপাতালে রেমডেসিভির দেয়া হয়। কিন্তু সেই ইঞ্জেকশনও পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অনেক রাজ্যই সমানে তা চাইছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে প্রচুর পরিমাণ রেমডেসিভির উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে তারপরই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী থানায় হাজির হয়ে বলেন, এটা দলীয় স্তরে সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছিল।
এবার কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন বা কোনো কড়াকড়়ির কথা ঘোষণা করছে না। তারা রাজ্যগুলিকে বলছে, কড়া ব্যবস্থা নিতে। প্রায় প্রতিটি রাজ্যই এখন রাতে কারফিউ জারি করছে। বিহার, রাজস্থান,. তামিলনাড়ু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব স্কুল, সিনেমা হল, ধর্মস্থান, শপিং মল বন্ধ থাকবে। রাজস্থানও ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা করেছে।
ভারতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ, দৈনিক সংক্রমণ তিন লাখ ছাড়ালো
ভারতে করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হলো। আক্রান্তের সংখ্যা দিনে তিন লাখ ছাড়ালো। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। গোরস্থান, শ্মশানে লম্বা লাইন।
ছবি: Niharika Kulkarini/REUTERS
তিন লাখ ছাড়ালো
ভারতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়ালো। এই প্রথমবার এত মানুষ একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন দুই হাজার একশর বেশি মানুষ। মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। দিল্লিতে আক্রান্ত ২৪ হাজারের বেশি। উপরের ছবিটি দিল্লির একটি হাসপাতালের।
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
দিল্লির পরিস্থিতি
দিল্লির শ্মশানঘাট ও কবরস্থানে লম্বা লাইন। আইটিও-র কবরস্থানে দেখা গিয়েছে সমানে মাটি খোড়ার কাজ চলছে। এরকম চলতে থাকলে স্থানাভাব দেখা দেবে। নিগমবোধ সহ অন্য শ্মশানে মৃতদেহ সৎকারে লম্বা লাইন পড়ছে। অন্ততপক্ষে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
হাসপাতালে চাপ
দিল্লিতে একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজারের বেশি মানুষ। হাসপাতাল ভর্তি। অক্সিজেনের সংকট তীব্র। সরকার অবিলম্বে বেড বাড়াবার কথা বলছে। রাজধানীতে এখন লকডাউন চলছে। তারপরেও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। ছবিতে করোনায় মৃত একজনের দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কবরস্থানে।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
মহারাষ্ট্রে কার্যত লকডাউন
মহারাষ্ট্রে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ছাড়া বাকি সব কাজ বাড়ি থেকে করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। রাস্তাঘাটে মানুষ নেই। গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার ছবি।
ছবি: Niharika Kulkarini/REUTERS
সরকারের নির্দেশ
মহারাষ্ট্রে যে সব দোকান খোলা থাকছে, যারা সেখানে যাচ্ছেন, তারা কোভিড-বিধি পালন করছে কি না, তা দেখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কেউ বিধি ভাঙলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। রাতের শুনশান মুম্বইয়ের ছবি।
ছবি: Niharika Kulkarini/REUTERS
রাজস্থানে লকডাউন
করোনা বাড়তে থাকায় রাজস্থানে ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। উপরের ছবিটি জয়পুরে স্বাভাবিক সময়ের।
ছবি: Vishal Bhatnagar/NurPhoto/picture alliance
একদিনে ৩৩ লাখ ভ্যাকসিন
গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ভ্যাকসিন দেয়া হলো ১১ কোটি ৪৫ লাখ মানুষকে।
ছবি: Amit Dave/REUTERS
ভোটের লাইন
করোনার এই বাড়বাড়ন্তের মধ্যে ভোট চলছে পশ্চিমবঙ্গে। প্রতিটি বুথে লম্বা লাইন। সেখানে সামাজিক দূরত্বের বিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। উত্তর প্রদেশেও পুরভোটে লম্বা লাইন পড়েছে।
ছবি: IANS
পশ্চিমবঙ্গে বাড়ছে
পশ্চিমবঙ্গেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তবে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ব্যস্ত ভোট নিয়ে ও নানা অনুষ্ঠান পালনে। পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক সংক্রমণ দশ হাজারের কাছে। কলকাতায় এক হাজার ৬০০ জন করোনায় আক্রান্ত। কবি ও প্রাবন্ধিক শঙ্খ ঘোষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সামসেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হকের। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী করোনায় আক্রান্ত।
ছবি: Rupak De Chowdhuri/REUTERS
9 ছবি1 | 9
মহারাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে, দিল্লি, কেরালা, তামিলনাড়ু, গোয়ার মতো রাজ্য থেকে তাদের রাজ্যে এলে ১৪ দিন বাড়িতে কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে। প্রত্যেক যাত্রীর হাতে তার জন্য বিশেষ ছাপ মেরে দেয়া হবে। করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া কাউকে রাজ্যে ঢুকতে দেয়া হবে না।
তবে রাজ্যগুলির আশঙ্কা, করোনা-সংকট আরো বাড়িয়ে দিতে পারেন কুম্ভমেলা ফেরত মানুষেরা। মহারাষ্ট্র সরকার ইতিমধ্যেই এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। দেশের অন্য রাজ্যও চিন্তিত।